মৌলভীবাজার : বাইক্কা বিলের তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে অনেক ভূমি ভেসে উঠছে -সংবাদ
দিনে দিনে তলদেশ ভরাট হয়ে গভীরতা কমে যাচ্ছে মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম বাইক্কা বিলের। ফলে জীববৈচিত্র্য আর মিঠা পানির মাছের বিস্তার হুমকিতে পরেছে। বাইক্কা বিলকে অভয়াশ্রম ঘোষণা পর ২২ বছর কেটে গেলেও আজোবদি এ বিল সংরক্ষণ ও খননের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি। গত ফেব্রুয়ারিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বাইক্কা বিল পরিদর্শনে এসে বিলের খননের আশ্বাস দিয়ে গেছেন।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের পূর্ব দিকে প্রায় ১০০ হেক্টর আয়তনের একটি জলাভূমির নাম বাইক্কা বিল। বিভিন্ন সময় পলি জমে এ বিলের এক-তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে বলে বিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বাইক্কা বিলের আশপাশেই ফসলি জমিতে তৈরি করা হয়েছে হাইব্রিড মাছ চাষের জন্য মৎস খামার। এসব মৎস খামারের পুকুর খনন করে তোলা মাটির একাংশ বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে মিশে এই বাইক্তা বিলে যাচ্ছে। ফলে বিলের পূর্বাংশ ভরাট হয়ে গেছে। যেখানে দশ বছর আগের পানি ছিল সেখানে এখন নিয়মিত ঘাস জন্মে। পর্যটকদের ফেলা প্লাস্টিকের বোতল, পলিতিনসহ নানা অপচনশীল পণ্য বিলের পরিবেশ নষ্ট করে, এ দাবি বিলের পাহাড়ার দায়িত্বে থাকা লোকজনের।
বিলের আশপাশে নতুন করে ফিসারি খনন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণ এ বিল দিনে দিনে ভরাট হওয়ার জন্য দায়ি মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা। তাদের মতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে খনন করা না হলে ভরাট অংশ আরও বাড়িবে এবং জলাভূমির পরিমাণ কমে আসবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় মৎস্যসম্পদের নিরাপদ আবাসস্থলের অবক্ষয় রোধ ও পুনরুদ্ধার টেকসই ব্যবস্থাপনায় বাইক্কবিলকে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে ২০০৩ সনে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য়ের এ বিলটি দেশি-বিদেশি পাখির আশ্রয়স্থল। অতিথি পাখির আবাসের জন্য কৃত্রিম আবাসস্থল স্থাপন করা হয় বিলের তীরের হিজল-করচ বনে। তখন বিলের গভীরতা ছিল। সম্প্রতি বাইক্কা বিল ঘুরে দেখা গেছে, বাইক্কা বিলের প্রাণ খ্যাত বড়গাঙ্গিনা গাঙ্গ কচুরিপানায় পূর্ণ হয়ে আছে। এখানে মাছের বেচে থাকা ও বংশ বিস্তারের এত পরিবেশ নাট। বিভিন্ন সময় সরকারি দপ্তর থেকে এবং ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে বাইক্কা বিল খনন এবং সীমানা সংরক্ষণের দাবি করা হলেও কোনো প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। ফলে এ বিলটির দিনে দিনে তলদেশ ভরাট হয়েগেছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে জলজ প্রাণী, নানা উদ্ভিদসহ দেশীয় প্রজাতির মাছের নিরাপদ আবাসস্থল।
মৎস বিভাগ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে বাইক্কা বিল, চাপড়া, মাগুরা, যাদুরিয়া এবং এসব বিলসংলগ্ন ডোবা এলাকা নিয়ে প্রায় ১০০ হেক্টর জলাভূমিকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে বিলে পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে চোরা শিকারি ও বিল ভরাটের কারণে বিভিন্ন সময় বাধাগ্রস্ত হয়েছে পাখির বিচরণ।
এদিকে ২০০৮ সালের পর থেকে পরিচালিত পাখিশুমারি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাইক্কা বিলের অভয়াশ্রমে বিভিন্ন প্রজাতির গড় সংখ্যাও অনেক কমেছে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের তথ্য অনুসারে, ২০০৪ সালের পর থেকে এ বিলে প্রায় ১৯০ প্রজাতির স্থল, জল ও উভচর পাখির দেখা মিলেছে। তবে ২০২২-২৪ সালের দিকে পাখি কমে যায়। এ বছর (২০২৫ সালে) আবার কিছুটা বেড়েছে। বড়গাঙ্গিনা সম্পদ রক্ষা কমিটির সভাপতি মিন্নত আলী জানানম খননের অভাবে বিলের গভীরতা কমেছে। ফলে এবিলে দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মৎস অফিস মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহকারি পরিচালক মো. শাহ নেওয়াজ সিরাজী বলেন, এ অভয়াশ্রমটি মাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য ভালো জায়গা। তবে দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে পরিবেশ নষ্ট হয়েছে যার জন্য মাছ বংশবৃদ্ধি করার জন্য জায়গা পাচ্ছে না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার খননের আশ্বাস : এদিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইলহাওরের বাইক্কাবিল পরিদর্শন করেন এবং বাইক্কাবিল অভয়াশ্রমের উপকার ভোগী, ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। এ মতবিনিময় সভায় বাইক্কা বিল খনন করে গভীরতা বৃদ্ধি ও সীমানা নির্ধারণে বিলের ভূমির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের দাবি করেন একাধিক বক্তা। জবাবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বাইক্কা বিলে মাছের প্রজনন বাড়াতে চিহ্নিত এলাকায় খনন কাজ চালানোর আশ্বাস দিয়ে বলেন, যদিও একাজে টাকা পয়সার প্রয়োজন, তবুও কাজটি করতে হবে। তিনি বলেন, বাইক্কা বিলের আশপাশে জলা-জঙ্গলে বৈচিত্রময় পাখির বসবাস। পর্যটকদের পদচারণে বিলের মাছ, পাখি ও জীব-প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পর্যটকদের চলাফেরা, হইচই পাখিদের আতঙ্কিত করে, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
মৌলভীবাজার : বাইক্কা বিলের তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে অনেক ভূমি ভেসে উঠছে -সংবাদ
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
দিনে দিনে তলদেশ ভরাট হয়ে গভীরতা কমে যাচ্ছে মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম বাইক্কা বিলের। ফলে জীববৈচিত্র্য আর মিঠা পানির মাছের বিস্তার হুমকিতে পরেছে। বাইক্কা বিলকে অভয়াশ্রম ঘোষণা পর ২২ বছর কেটে গেলেও আজোবদি এ বিল সংরক্ষণ ও খননের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি। গত ফেব্রুয়ারিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বাইক্কা বিল পরিদর্শনে এসে বিলের খননের আশ্বাস দিয়ে গেছেন।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের পূর্ব দিকে প্রায় ১০০ হেক্টর আয়তনের একটি জলাভূমির নাম বাইক্কা বিল। বিভিন্ন সময় পলি জমে এ বিলের এক-তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে বলে বিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বাইক্কা বিলের আশপাশেই ফসলি জমিতে তৈরি করা হয়েছে হাইব্রিড মাছ চাষের জন্য মৎস খামার। এসব মৎস খামারের পুকুর খনন করে তোলা মাটির একাংশ বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে মিশে এই বাইক্তা বিলে যাচ্ছে। ফলে বিলের পূর্বাংশ ভরাট হয়ে গেছে। যেখানে দশ বছর আগের পানি ছিল সেখানে এখন নিয়মিত ঘাস জন্মে। পর্যটকদের ফেলা প্লাস্টিকের বোতল, পলিতিনসহ নানা অপচনশীল পণ্য বিলের পরিবেশ নষ্ট করে, এ দাবি বিলের পাহাড়ার দায়িত্বে থাকা লোকজনের।
বিলের আশপাশে নতুন করে ফিসারি খনন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণ এ বিল দিনে দিনে ভরাট হওয়ার জন্য দায়ি মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা। তাদের মতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে খনন করা না হলে ভরাট অংশ আরও বাড়িবে এবং জলাভূমির পরিমাণ কমে আসবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় মৎস্যসম্পদের নিরাপদ আবাসস্থলের অবক্ষয় রোধ ও পুনরুদ্ধার টেকসই ব্যবস্থাপনায় বাইক্কবিলকে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে ২০০৩ সনে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য়ের এ বিলটি দেশি-বিদেশি পাখির আশ্রয়স্থল। অতিথি পাখির আবাসের জন্য কৃত্রিম আবাসস্থল স্থাপন করা হয় বিলের তীরের হিজল-করচ বনে। তখন বিলের গভীরতা ছিল। সম্প্রতি বাইক্কা বিল ঘুরে দেখা গেছে, বাইক্কা বিলের প্রাণ খ্যাত বড়গাঙ্গিনা গাঙ্গ কচুরিপানায় পূর্ণ হয়ে আছে। এখানে মাছের বেচে থাকা ও বংশ বিস্তারের এত পরিবেশ নাট। বিভিন্ন সময় সরকারি দপ্তর থেকে এবং ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে বাইক্কা বিল খনন এবং সীমানা সংরক্ষণের দাবি করা হলেও কোনো প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। ফলে এ বিলটির দিনে দিনে তলদেশ ভরাট হয়েগেছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে জলজ প্রাণী, নানা উদ্ভিদসহ দেশীয় প্রজাতির মাছের নিরাপদ আবাসস্থল।
মৎস বিভাগ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে বাইক্কা বিল, চাপড়া, মাগুরা, যাদুরিয়া এবং এসব বিলসংলগ্ন ডোবা এলাকা নিয়ে প্রায় ১০০ হেক্টর জলাভূমিকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে বিলে পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে চোরা শিকারি ও বিল ভরাটের কারণে বিভিন্ন সময় বাধাগ্রস্ত হয়েছে পাখির বিচরণ।
এদিকে ২০০৮ সালের পর থেকে পরিচালিত পাখিশুমারি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাইক্কা বিলের অভয়াশ্রমে বিভিন্ন প্রজাতির গড় সংখ্যাও অনেক কমেছে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের তথ্য অনুসারে, ২০০৪ সালের পর থেকে এ বিলে প্রায় ১৯০ প্রজাতির স্থল, জল ও উভচর পাখির দেখা মিলেছে। তবে ২০২২-২৪ সালের দিকে পাখি কমে যায়। এ বছর (২০২৫ সালে) আবার কিছুটা বেড়েছে। বড়গাঙ্গিনা সম্পদ রক্ষা কমিটির সভাপতি মিন্নত আলী জানানম খননের অভাবে বিলের গভীরতা কমেছে। ফলে এবিলে দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মৎস অফিস মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহকারি পরিচালক মো. শাহ নেওয়াজ সিরাজী বলেন, এ অভয়াশ্রমটি মাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য ভালো জায়গা। তবে দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে পরিবেশ নষ্ট হয়েছে যার জন্য মাছ বংশবৃদ্ধি করার জন্য জায়গা পাচ্ছে না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার খননের আশ্বাস : এদিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইলহাওরের বাইক্কাবিল পরিদর্শন করেন এবং বাইক্কাবিল অভয়াশ্রমের উপকার ভোগী, ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। এ মতবিনিময় সভায় বাইক্কা বিল খনন করে গভীরতা বৃদ্ধি ও সীমানা নির্ধারণে বিলের ভূমির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের দাবি করেন একাধিক বক্তা। জবাবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বাইক্কা বিলে মাছের প্রজনন বাড়াতে চিহ্নিত এলাকায় খনন কাজ চালানোর আশ্বাস দিয়ে বলেন, যদিও একাজে টাকা পয়সার প্রয়োজন, তবুও কাজটি করতে হবে। তিনি বলেন, বাইক্কা বিলের আশপাশে জলা-জঙ্গলে বৈচিত্রময় পাখির বসবাস। পর্যটকদের পদচারণে বিলের মাছ, পাখি ও জীব-প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পর্যটকদের চলাফেরা, হইচই পাখিদের আতঙ্কিত করে, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।