হবিগঞ্জ : জেলার পাহাড় ও বনাঞ্চলে কাঁঠালের সমারোহ -সংবাদ
হবিগঞ্জ জেলা পাহাড়, বনাঞ্চল ও হাওরবেষ্টিত একটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অঞ্চল। সাম্প্রতিক সময়ে এই জেলায় গড়ে উঠেছে শিল্পাঞ্চলও। তবে এখানকার কৃষি এখনও জীবন্ত, শক্তিশালী এবং সম্ভাবনাময়। এ বছর জেলার পাহাড়ি এলাকায় ফলের রাজা কাঁঠালের গাছে গাছে ব্যাপক মুচি দেখা যাচ্ছে। এমন আশানুরূপ মুচি দেখে খুশি পাহাড়ি চাষিরা। বর্তমানে বৈশাখ মাস চলছে। এ সময় গাছে মুচি দেখা দিলেও জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে শুরু হবে পাকা কাঁঠালের মৌসুম। তখন কাঁঠালের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়বে বাতাসে, আর বাজারে শুরু হবে কেনাবেচার ধুম। ইতোমধ্যে পাহাড়িটিলা এবং সমতল অঞ্চল থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হবে পাইকারি বাজারে। অনেক চাষি অগ্রিম টাকায় মুচিসহ গাছ বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে তারা অন্য খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
পাশেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে অসংখ্য কাঁঠাল বাগান। শুধু পাহাড়েই নয়, গ্রামের বাড়ির আঙিনা, রাস্তার পাশেও চোখে পড়ে কাঁঠালের গাছ। এসব গাছ থেকে সংগ্রহ করা কাঁঠাল বিক্রি হয় জেলার বড় পাইকারি বাজার বাহুবলের মুছাই ও চুনারুঘাটের চন্ডিছড়া বাজারে। এখান থেকে পাইকাররা ট্রাকভর্তি করে কাঁঠাল নিয়ে যান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
চাষিরা জানান, কাঁঠাল উৎপাদনে আলাদা কোনো যত্ন নেয়ার প্রয়োজন হয় না। তাই উৎপাদন খরচও খুব কম। একই সঙ্গে এসব বাগানে সহকারী ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে লিচু, লেবু ও আনারস।
চুনারুঘাটের জাম্বুরাছড়ার পারুল মিয়া, নবীগঞ্জের দিনারপুরের সাজু মিয়া, বাহুবলের রশিদপুর এলাকার আমির উল্লা, নূরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান ও মর্তুজ আলী বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে তাদের কাঁঠালের গাছে এবার মুচি ভালো এসেছে। এতে তারা আশাবাদী।
মুছাই ফলের আড়তের ব্যবসায়ী সুমন চৌধুরী, ইব্রাহিম চৌধুরী ও সানু মিয়া চৌধুরীও এবারের ফলন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, বাজারে সরবরাহ বাড়লে ক্রেতারাও উপকৃত হবেন।
বাহুবলের পূর্ব ভাদেশ্বর গ্রামের সাইদুল ইসলাম জানান, ফয়জাবাদ হিলেস তাদের কাঁঠাল বাগান রয়েছে। এখানে কোনো রকম অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই ভালো ফলন পেয়েছেন। একই বাগানে তিনি লিচু, লেবু ও আনারসও চাষ করেন। তিনি বলেন, অনেক পাইকার এখনই গাছের মুচি কাঁঠাল কিনে নিচ্ছেন। পরে যখন ফল পাকে, তখন বেশি দামে বিক্রি করে লাভ করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আকতারুজ্জামান বলেন, কাঁঠাল একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। সরকারিভাবে এর উৎপাদন বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কাঁঠালের প্রতিটি অংশের ব্যবহার রয়েছে পাতা থেকে শুরু করে কাঁঠালের কোয়া, বিচি, এমনকি বাকলও কাজে লাগে। তিনি আরও বলেন, হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকা কাঁঠাল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এই গাছ বন্যা সহ্য করতে পারে না, তাই তাই অন্যান্য ফলের তুলনায় এটি অনেক বেশি লাভজনক। পাহাড়ি বা উঁচু এলাকায় বাগান করাই উত্তম। বর্তমানে গাছে গাছে মুচি এসেছে, আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে উঠবে পাহাড়ি কাঁঠালের সুবাসিত রসালো ফল।
হবিগঞ্জের কাঁঠাল শুধু দেশেই নয়, বিগত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক ও আড়তদারদের আশা, এই বছরও কাঁঠাল রপ্তানিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে এবং কৃষকরা ভালো লাভবান হবেন।
হবিগঞ্জ : জেলার পাহাড় ও বনাঞ্চলে কাঁঠালের সমারোহ -সংবাদ
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
হবিগঞ্জ জেলা পাহাড়, বনাঞ্চল ও হাওরবেষ্টিত একটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অঞ্চল। সাম্প্রতিক সময়ে এই জেলায় গড়ে উঠেছে শিল্পাঞ্চলও। তবে এখানকার কৃষি এখনও জীবন্ত, শক্তিশালী এবং সম্ভাবনাময়। এ বছর জেলার পাহাড়ি এলাকায় ফলের রাজা কাঁঠালের গাছে গাছে ব্যাপক মুচি দেখা যাচ্ছে। এমন আশানুরূপ মুচি দেখে খুশি পাহাড়ি চাষিরা। বর্তমানে বৈশাখ মাস চলছে। এ সময় গাছে মুচি দেখা দিলেও জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে শুরু হবে পাকা কাঁঠালের মৌসুম। তখন কাঁঠালের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়বে বাতাসে, আর বাজারে শুরু হবে কেনাবেচার ধুম। ইতোমধ্যে পাহাড়িটিলা এবং সমতল অঞ্চল থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হবে পাইকারি বাজারে। অনেক চাষি অগ্রিম টাকায় মুচিসহ গাছ বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে তারা অন্য খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
পাশেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে অসংখ্য কাঁঠাল বাগান। শুধু পাহাড়েই নয়, গ্রামের বাড়ির আঙিনা, রাস্তার পাশেও চোখে পড়ে কাঁঠালের গাছ। এসব গাছ থেকে সংগ্রহ করা কাঁঠাল বিক্রি হয় জেলার বড় পাইকারি বাজার বাহুবলের মুছাই ও চুনারুঘাটের চন্ডিছড়া বাজারে। এখান থেকে পাইকাররা ট্রাকভর্তি করে কাঁঠাল নিয়ে যান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
চাষিরা জানান, কাঁঠাল উৎপাদনে আলাদা কোনো যত্ন নেয়ার প্রয়োজন হয় না। তাই উৎপাদন খরচও খুব কম। একই সঙ্গে এসব বাগানে সহকারী ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে লিচু, লেবু ও আনারস।
চুনারুঘাটের জাম্বুরাছড়ার পারুল মিয়া, নবীগঞ্জের দিনারপুরের সাজু মিয়া, বাহুবলের রশিদপুর এলাকার আমির উল্লা, নূরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান ও মর্তুজ আলী বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে তাদের কাঁঠালের গাছে এবার মুচি ভালো এসেছে। এতে তারা আশাবাদী।
মুছাই ফলের আড়তের ব্যবসায়ী সুমন চৌধুরী, ইব্রাহিম চৌধুরী ও সানু মিয়া চৌধুরীও এবারের ফলন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, বাজারে সরবরাহ বাড়লে ক্রেতারাও উপকৃত হবেন।
বাহুবলের পূর্ব ভাদেশ্বর গ্রামের সাইদুল ইসলাম জানান, ফয়জাবাদ হিলেস তাদের কাঁঠাল বাগান রয়েছে। এখানে কোনো রকম অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই ভালো ফলন পেয়েছেন। একই বাগানে তিনি লিচু, লেবু ও আনারসও চাষ করেন। তিনি বলেন, অনেক পাইকার এখনই গাছের মুচি কাঁঠাল কিনে নিচ্ছেন। পরে যখন ফল পাকে, তখন বেশি দামে বিক্রি করে লাভ করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আকতারুজ্জামান বলেন, কাঁঠাল একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। সরকারিভাবে এর উৎপাদন বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কাঁঠালের প্রতিটি অংশের ব্যবহার রয়েছে পাতা থেকে শুরু করে কাঁঠালের কোয়া, বিচি, এমনকি বাকলও কাজে লাগে। তিনি আরও বলেন, হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকা কাঁঠাল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এই গাছ বন্যা সহ্য করতে পারে না, তাই তাই অন্যান্য ফলের তুলনায় এটি অনেক বেশি লাভজনক। পাহাড়ি বা উঁচু এলাকায় বাগান করাই উত্তম। বর্তমানে গাছে গাছে মুচি এসেছে, আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে উঠবে পাহাড়ি কাঁঠালের সুবাসিত রসালো ফল।
হবিগঞ্জের কাঁঠাল শুধু দেশেই নয়, বিগত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক ও আড়তদারদের আশা, এই বছরও কাঁঠাল রপ্তানিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে এবং কৃষকরা ভালো লাভবান হবেন।