মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ২০০ কেজি ওজনের একটি বোমা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে আশপাশের বেশকিছু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গজারিয়ার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে। থানার পুলিশ গেলে তাদের ওপরও হামলা চালায় স্থানীয়রা।
বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, মুন্সীগঞ্জের বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে উদ্ধার করা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ওই বোমা নিষ্ক্রিয় করেছে ডিএমপির বোম ডিসপোজাল ইউনিট।
ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, ৯৪ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের বোমাটির ওজন ২০০ থেকে ২৫০ কেজির মধ্যে। সেটি অপসারণে আট ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে।
তিনি বলেন, “বোমাটি নিষ্ক্রিয় করার জন্য মাইকিং করে আগে স্থানীয় লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এর বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়া এত বেশি ছিল যে আশপাশের আট দশটি বাড়ির টিনের চাল দুমড়ে মুচড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন তখন এসে হইহল্লা শুরু করে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসে ক্ষতিগ্রস্তদের টিন দেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা চলে যায়।”
গজারিয়া থানার ওসি আনোয়ার আলম আজাদ জানান, বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা বোমাটি নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করার সময় সেটি ২০০ মিটার এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এতে স্প্লিন্টারের আঘাতে দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও পশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ইউনিটের সদস্যদের কিছু সময় অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয়রা। বিস্ফোরণে ঘরে থাকা টিভি, ফ্রিজসহ ঘরের চাল উড়ে যায় অনেকের।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বোমাটি নিষ্ক্রিয় করতে মঙ্গলবার বিকাল থেকে কাজ শুরু করেন ইউনিটের সদস্যরা। রাত ৭টা ৫৬ মিনিটে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
বিস্ফোরণে গ্রামের সেলিম হোসেন, হারেস মিয়া, আব্দুর রশিদ, রফিজ মিয়া, রেনু মিস্ত্রী, ফরিদ হোসেন, আব্দুল হান্নান, মানিক মিয়া, আব্দুল জলিল, মুক্তার হোসেন, আব্দুল গাফফার, সেলিম মিয়া ও আব্দুল বারেকের বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী চা দোকানদার আব্দুর রশিদ মিয়া বলেন, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটা বেশি ছিল যে প্রায় তিনশ মিটার দূরে তার দোকানের প্রায় সব কিছু উড়ে যায়।
ঘটনাস্থলের চার কিলোমিটার দূরে বালুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা তানিয়া রহমান বলেন, “রাত ৮টার দিকে তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করি। আমরা ভূমিকম্প ভাবলেও পরে জানতে পারি আড়ালিয়া গ্রামের উদ্ধার হওয়া বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।”
ঘটনার পর পুলিশ ও সংবাদকর্মীরাও স্থানীয়দের রোষের কবলে পড়েন। গণমাধ্যম কর্মীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন স্থানীয় কয়েকজন। এ সময় গজারিয়া থানার চার পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হন। পুলিশের একটি ওয়াকিটকি খোয়া যায়।
সোমবার আড়ালিয়া গ্রামের মসজিদ সংলগ্ন হানিফের কৃষি জমিতে মাটি কেটে আইল বানানোর সময় বোমাটি পাওয়া যায়। স্থানীয়রা এটিকে প্রথমে সীমানা পিলার মনে করলেও পরে পুলিশ জানায় এটি একটি অবিস্ফোরিত বোমা।
বোমাটি দেখে নিষ্ক্রিয় করার কাজে যুক্ত থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বোমাটির ছবি তুলে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়েছি। তারা ছবি দেখে বলেছে এটা সম্ভবত এরিয়াল বোমা। অর্থাৎ উড়োজাহাজ থেকে এটি ফেলা হয়েছিল। এই সাইজের বোমাগুলোকে সেই সময় জার্মান বোমা নামে ডাকা হত।”
তিনি আরও জানান, “যেখান থেকে বোমাটি উদ্ধার হয়েছে সেটি মেঘনা নদীর এক কিলোমিটারের মধ্যেই। স্থানীয়রা আমাদের জানিয়েছেন, অনেক আগে এখানে একসময় নদী ছিল। বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে তারা শুনেছেন, বার্মা যুদ্ধের সময় জাপানি যুদ্ধবিমানগুলো এই অঞ্চলে এসে বোমা ফেলেছিল।”
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ২০০ কেজি ওজনের একটি বোমা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে আশপাশের বেশকিছু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গজারিয়ার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে। থানার পুলিশ গেলে তাদের ওপরও হামলা চালায় স্থানীয়রা।
বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, মুন্সীগঞ্জের বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে উদ্ধার করা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ওই বোমা নিষ্ক্রিয় করেছে ডিএমপির বোম ডিসপোজাল ইউনিট।
ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, ৯৪ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের বোমাটির ওজন ২০০ থেকে ২৫০ কেজির মধ্যে। সেটি অপসারণে আট ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে।
তিনি বলেন, “বোমাটি নিষ্ক্রিয় করার জন্য মাইকিং করে আগে স্থানীয় লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এর বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়া এত বেশি ছিল যে আশপাশের আট দশটি বাড়ির টিনের চাল দুমড়ে মুচড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন তখন এসে হইহল্লা শুরু করে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসে ক্ষতিগ্রস্তদের টিন দেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা চলে যায়।”
গজারিয়া থানার ওসি আনোয়ার আলম আজাদ জানান, বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা বোমাটি নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করার সময় সেটি ২০০ মিটার এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এতে স্প্লিন্টারের আঘাতে দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও পশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ইউনিটের সদস্যদের কিছু সময় অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয়রা। বিস্ফোরণে ঘরে থাকা টিভি, ফ্রিজসহ ঘরের চাল উড়ে যায় অনেকের।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বোমাটি নিষ্ক্রিয় করতে মঙ্গলবার বিকাল থেকে কাজ শুরু করেন ইউনিটের সদস্যরা। রাত ৭টা ৫৬ মিনিটে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
বিস্ফোরণে গ্রামের সেলিম হোসেন, হারেস মিয়া, আব্দুর রশিদ, রফিজ মিয়া, রেনু মিস্ত্রী, ফরিদ হোসেন, আব্দুল হান্নান, মানিক মিয়া, আব্দুল জলিল, মুক্তার হোসেন, আব্দুল গাফফার, সেলিম মিয়া ও আব্দুল বারেকের বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী চা দোকানদার আব্দুর রশিদ মিয়া বলেন, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটা বেশি ছিল যে প্রায় তিনশ মিটার দূরে তার দোকানের প্রায় সব কিছু উড়ে যায়।
ঘটনাস্থলের চার কিলোমিটার দূরে বালুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা তানিয়া রহমান বলেন, “রাত ৮টার দিকে তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করি। আমরা ভূমিকম্প ভাবলেও পরে জানতে পারি আড়ালিয়া গ্রামের উদ্ধার হওয়া বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।”
ঘটনার পর পুলিশ ও সংবাদকর্মীরাও স্থানীয়দের রোষের কবলে পড়েন। গণমাধ্যম কর্মীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন স্থানীয় কয়েকজন। এ সময় গজারিয়া থানার চার পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হন। পুলিশের একটি ওয়াকিটকি খোয়া যায়।
সোমবার আড়ালিয়া গ্রামের মসজিদ সংলগ্ন হানিফের কৃষি জমিতে মাটি কেটে আইল বানানোর সময় বোমাটি পাওয়া যায়। স্থানীয়রা এটিকে প্রথমে সীমানা পিলার মনে করলেও পরে পুলিশ জানায় এটি একটি অবিস্ফোরিত বোমা।
বোমাটি দেখে নিষ্ক্রিয় করার কাজে যুক্ত থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বোমাটির ছবি তুলে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়েছি। তারা ছবি দেখে বলেছে এটা সম্ভবত এরিয়াল বোমা। অর্থাৎ উড়োজাহাজ থেকে এটি ফেলা হয়েছিল। এই সাইজের বোমাগুলোকে সেই সময় জার্মান বোমা নামে ডাকা হত।”
তিনি আরও জানান, “যেখান থেকে বোমাটি উদ্ধার হয়েছে সেটি মেঘনা নদীর এক কিলোমিটারের মধ্যেই। স্থানীয়রা আমাদের জানিয়েছেন, অনেক আগে এখানে একসময় নদী ছিল। বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে তারা শুনেছেন, বার্মা যুদ্ধের সময় জাপানি যুদ্ধবিমানগুলো এই অঞ্চলে এসে বোমা ফেলেছিল।”