টাঙ্গাইলে একদিকে সরকারিভাবে বৃহৎ পরিমাণের কৃষককে বিনামূল্যে ভুট্টার বীজ ও সার প্রদান অপরদিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাম্বার ফলন হইয়েছে। এ ছাড়া চলতি রবি মৌসুমে হাইব্রিড জাতের ভুট্টার আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে।
জেলার ১২টি উপজেলায় বিশেষ করে চরাঞ্চলজুড়ে এখন শুধু ভুট্টার চাষ দিন দিন বাড়ছে। ভালো ফলনের আশায় কৃষকরাও অধীর আগ্রহে জমিতে কাজ করছেন।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে কৃষি বিভাগ ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল ৭৮০০ হেক্টর। আর আবাদ হয়েছে ৮৮১৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ২৫১ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। গত বছর অর্জন ৭৭৫৬ হেক্টর, গত বছর উৎপাদন ৭৩৩২০ মেট্রিক টন।
বিভিন্ন উপজেলার চরাঞ্চলের অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকরা রবি মৌসুমে গত কয়েক বছর যাবত আগাম জাতের হাইব্রিড ভুট্টার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। চরাঞ্চলে অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ বেশি হয়। কম পরিশ্রম ও কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় ভুট্টাচাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গমের পাশাপাশি ভুট্টার ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুট্টা গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের জন্যও ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যে খানে প্রতি বিঘা জমিতে ১৫-১৬ মন ধান আবাদ হয়। সেই প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ হয় ৪০ থেকে ৪৫ মণ। বিঘা প্রতি আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ করে চাষিরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারেন।
গোপালপুর উপজেলার আলমনগর চর নলহড়া গ্রামের হায়দার আলী বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে প্রণাদনার যুবরাজ ও গঙ্গা পদ্মা জাতের হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করেছি ওজন এবং ফলন ভালো পেয়েছি। একই গ্রামের আব্দুল খালেক জানান, আমার ৪০ শতাংশ জমিতে রবি মৌসুমে গো-খাদ্যের জন্য ২৪ হাজার টাকা বিক্রি করে, আবারও ভুট্টা লাগিয়েছি এখন থোর হয়ে গেছে ইনশাল্লাহ আরও ২৪-২৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব।
ঘাটাইল উপজেলার পাঁচটিকরি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের ভুট্টাচাষি হাছেন আলীর ভুয়াপুর ইব্রাহিমখাঁ কলেজে অনার্সে পড়ুয়া ছেলে রাকিব কে সঙ্গে নিয়ে জমি থেকে ভুট্টা সংরক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, এই সব জমিতে ধান চাষ হতো না। আমি এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে দুই বছর যাবত ভুট্টা চাষ করেছি। এ বছর ভুট্টা খুব ভালো ফলন হয়েছে। ধানের চেয়ে ভুট্টা চাষে পরিশ্রম একটু বেশি হলেও ভুট্টা চাষে খরচ অনেক কম লাভ তিনগুণ। ভুট্টা চাষে ফলন ভালো হওয়াতে আমরা খুশি।
এ সময় এক বাঁধা ভুট্টার ওজন দেখা যায় ৪৩০ গ্রাম ৯৩টি ভুট্টার বাঁধায় ওজন আসছে এক মন। এতে সারা টাঙ্গাইলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে।
কালিহাতী উপজেলার বেলেটিয়া গ্রামের আব্দুল আউয়াল বলেন, এখানকার মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ার আমাদের চরাঞ্চলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়। এবছর ৪ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। আশা করছি বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ফলন পাব। গত বছর চরাঞ্চলে ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ায় এবছর আরও অধিক জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। আমার দেখা-দেখি যারা অন্য ফসল আবাদ করতো তারাও এ বছর ভুট্টা চাষ করেছে।
সখীপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের ঘেচুয়া গ্রামের মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা জমিতে গত বছরও ভুট্টা চাষ করছিলাম গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন ভালো হয়েছে ওজন বাড়রছে।
গোপালপুর উপজেলার আলমনগর ইনিয়নের বাগুয়াটা ব্লক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নতুন ফসল হিসেবে কৃষক যেন চাষাবাদের ক্ষেত্রে সমস্যায় না পড়ে সেজন্য আমরা সরাসরি কৃষককে সঠিকভাবে ভুট্টাচাষ করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছি। ভুট্টায় বিভিন্ন রোগ ও পোকা আক্রমণ করলে সেগুলো দমনে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
পাইকড়া ইউনিয়নের বলিখন্ড গ্রামের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক এনামূল হাসান এলাহী জানান, আমার ৪০ শতাংশ জমিতে গতবছর ভুট্টা চাষ করেছিলাম গত বছরের তুলনামূলক হিসাবে এ বছর ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে। কালিহাতী উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. উজ্জ্বল হোসেন জানান, প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় একশ কৃষককে দুই কেজি করে ভুট্টার বীজ দেয়া হয়েছে বিনামূল্যে।
এ ছাড়া ২০ কেজি করে ডিএপি সার এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার দেয়া হয়েছে বিনামূল্যে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এ মৌসুমে বৃহৎ পরিমাণের কৃষক ভুট্টার প্রণোদনা পেয়েছেন।
টাঙ্গাইল খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আশেক পারভেজ মোবাইল ফোনে বলেন, চলতি মৌসুমে জেলার ভূট্টার টার্গেট ৭৮০০ হেক্টর, অর্জিত ৮৮১৫ হেক্টর উৎপাদন ৮৩৬৬৩ মেট্রিক টন, গত বছর অর্জন ৭৭৫৬ হেক্টর, গত বছর উৎপাদন ৭৩৩২০ মেট্রিক টন এ বছর প্রণোদনা দেয়া হয় ১৫০০ জন কৃষকে।
তিনি আরও জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় ভুট্টার রোগ-পোকমাকড় দমন ও অধিক ফলনের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫
টাঙ্গাইলে একদিকে সরকারিভাবে বৃহৎ পরিমাণের কৃষককে বিনামূল্যে ভুট্টার বীজ ও সার প্রদান অপরদিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাম্বার ফলন হইয়েছে। এ ছাড়া চলতি রবি মৌসুমে হাইব্রিড জাতের ভুট্টার আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে।
জেলার ১২টি উপজেলায় বিশেষ করে চরাঞ্চলজুড়ে এখন শুধু ভুট্টার চাষ দিন দিন বাড়ছে। ভালো ফলনের আশায় কৃষকরাও অধীর আগ্রহে জমিতে কাজ করছেন।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে কৃষি বিভাগ ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল ৭৮০০ হেক্টর। আর আবাদ হয়েছে ৮৮১৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ২৫১ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। গত বছর অর্জন ৭৭৫৬ হেক্টর, গত বছর উৎপাদন ৭৩৩২০ মেট্রিক টন।
বিভিন্ন উপজেলার চরাঞ্চলের অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকরা রবি মৌসুমে গত কয়েক বছর যাবত আগাম জাতের হাইব্রিড ভুট্টার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। চরাঞ্চলে অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ বেশি হয়। কম পরিশ্রম ও কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় ভুট্টাচাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গমের পাশাপাশি ভুট্টার ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুট্টা গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের জন্যও ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যে খানে প্রতি বিঘা জমিতে ১৫-১৬ মন ধান আবাদ হয়। সেই প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ হয় ৪০ থেকে ৪৫ মণ। বিঘা প্রতি আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ করে চাষিরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারেন।
গোপালপুর উপজেলার আলমনগর চর নলহড়া গ্রামের হায়দার আলী বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে প্রণাদনার যুবরাজ ও গঙ্গা পদ্মা জাতের হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করেছি ওজন এবং ফলন ভালো পেয়েছি। একই গ্রামের আব্দুল খালেক জানান, আমার ৪০ শতাংশ জমিতে রবি মৌসুমে গো-খাদ্যের জন্য ২৪ হাজার টাকা বিক্রি করে, আবারও ভুট্টা লাগিয়েছি এখন থোর হয়ে গেছে ইনশাল্লাহ আরও ২৪-২৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব।
ঘাটাইল উপজেলার পাঁচটিকরি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের ভুট্টাচাষি হাছেন আলীর ভুয়াপুর ইব্রাহিমখাঁ কলেজে অনার্সে পড়ুয়া ছেলে রাকিব কে সঙ্গে নিয়ে জমি থেকে ভুট্টা সংরক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, এই সব জমিতে ধান চাষ হতো না। আমি এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে দুই বছর যাবত ভুট্টা চাষ করেছি। এ বছর ভুট্টা খুব ভালো ফলন হয়েছে। ধানের চেয়ে ভুট্টা চাষে পরিশ্রম একটু বেশি হলেও ভুট্টা চাষে খরচ অনেক কম লাভ তিনগুণ। ভুট্টা চাষে ফলন ভালো হওয়াতে আমরা খুশি।
এ সময় এক বাঁধা ভুট্টার ওজন দেখা যায় ৪৩০ গ্রাম ৯৩টি ভুট্টার বাঁধায় ওজন আসছে এক মন। এতে সারা টাঙ্গাইলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে।
কালিহাতী উপজেলার বেলেটিয়া গ্রামের আব্দুল আউয়াল বলেন, এখানকার মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ার আমাদের চরাঞ্চলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়। এবছর ৪ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। আশা করছি বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ফলন পাব। গত বছর চরাঞ্চলে ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ায় এবছর আরও অধিক জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। আমার দেখা-দেখি যারা অন্য ফসল আবাদ করতো তারাও এ বছর ভুট্টা চাষ করেছে।
সখীপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের ঘেচুয়া গ্রামের মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা জমিতে গত বছরও ভুট্টা চাষ করছিলাম গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন ভালো হয়েছে ওজন বাড়রছে।
গোপালপুর উপজেলার আলমনগর ইনিয়নের বাগুয়াটা ব্লক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নতুন ফসল হিসেবে কৃষক যেন চাষাবাদের ক্ষেত্রে সমস্যায় না পড়ে সেজন্য আমরা সরাসরি কৃষককে সঠিকভাবে ভুট্টাচাষ করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছি। ভুট্টায় বিভিন্ন রোগ ও পোকা আক্রমণ করলে সেগুলো দমনে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
পাইকড়া ইউনিয়নের বলিখন্ড গ্রামের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক এনামূল হাসান এলাহী জানান, আমার ৪০ শতাংশ জমিতে গতবছর ভুট্টা চাষ করেছিলাম গত বছরের তুলনামূলক হিসাবে এ বছর ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে। কালিহাতী উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. উজ্জ্বল হোসেন জানান, প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় একশ কৃষককে দুই কেজি করে ভুট্টার বীজ দেয়া হয়েছে বিনামূল্যে।
এ ছাড়া ২০ কেজি করে ডিএপি সার এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার দেয়া হয়েছে বিনামূল্যে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এ মৌসুমে বৃহৎ পরিমাণের কৃষক ভুট্টার প্রণোদনা পেয়েছেন।
টাঙ্গাইল খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আশেক পারভেজ মোবাইল ফোনে বলেন, চলতি মৌসুমে জেলার ভূট্টার টার্গেট ৭৮০০ হেক্টর, অর্জিত ৮৮১৫ হেক্টর উৎপাদন ৮৩৬৬৩ মেট্রিক টন, গত বছর অর্জন ৭৭৫৬ হেক্টর, গত বছর উৎপাদন ৭৩৩২০ মেট্রিক টন এ বছর প্রণোদনা দেয়া হয় ১৫০০ জন কৃষকে।
তিনি আরও জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় ভুট্টার রোগ-পোকমাকড় দমন ও অধিক ফলনের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হয়েছে।