# ব্লক সুপারভাইজারা মাঠে যায়না, অভিযোগ কৃষককের # ৩ বার কীটনাশক স্প্রে করেও সাদা শীষ ঠেকাতে পারছি না: কৃষক মান্নান # ‘হামরা ভাই গরীব মানুষ, কেউ কী খোঁজ নেয়? আর বিএসকে তো হামরা চিনিইনা: দিনাজপুরের কৃষক
সারাদেশে বোরো ধানের ‘বাম্পার’ ফলনের আশা থাকলেও রোগবালাইয়ের আক্রমণে হতাশায় কৃষকরা। চলতি বোরো মৌসুমে অধিক ধান ফলন হতে যাচ্ছে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম থাকলেও ধানে মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ফলন নষ্ট হচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ করায় ধান রোপণের শুরু থেকেই ৫ থেকে ৬ বার কীটনাশক স্প্রে করেও প্রতিকার পায়নি তারা। এমনকি স্থানীয় কৃষি অফিসগুলো এই সময়ে কৃষকের পাশে নেই।
তবে, এলাকার বীজ বিক্রেতা ও ডিলাররা বলছেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার’ কারণে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। চাষিরা জমিতে বালাইনাশক স্প্রে না করায় মাজরাপোকা ধানের শীষ কাটছে। ‘ভালো মানের’ কীটনাশক স্প্রে করলে মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব। ধান চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ করে কীটনাশক স্প্রে করেও পোকা দমন করতে পারছেনা। এজন্য তারা কীটনাশকের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
চাষীদের অভিযোগ, উপজেলা কৃষি বিভাগের লোকজন শুধু উপজেলা ও ইউনিয়ন কৃষি অফিসে বসে সময় পার করে। তারা কথনো মাঠ পর্যায়ে গিয়ে আবাদের খোঁজ নেয়না।
কৃষি বিভাগের উপসহকারী রা জানান, হঠাৎ বৃষ্টি হয়েছে আর বৃষ্টির পরে যে সকল কৃষক ধানের জমিতে মাজরাপোকার দমনের জন্য দকীটনাশক প্রয়োগ করেছে তাদের জমিতে সাদা শীষ কম বের হয়েছে।
অথচ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রাম মতে, প্রতি ইউনিয়নে ৩ জন করে উপসহকারী কৃষি অফিসার আছে। বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, তারা কখনো মাঠে গিয়ে কৃষকের ক্ষেতের খোঁজ নেয়না। কিছু এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কিছু প্রদর্শনী থাকে সেখানে গিয়ে পরিদরশন আর ‘গল্প গুজবে’ সময় কাটায় বলে । তাদের কার্যাক্রম শুধু মাত্র অফিসে কাগজে কলমে, কৃষকের উন্নতিতে তাদের ‘কোন ভুমিকা নেই’।
রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বড় ভগবানপুর গ্রামের লোকনাথ রায় ২ একর জমিতে ধান আবাদ করেছেন। কিন্ত তার জমি সাদা শীষ দিয়ে ভরে গেছে। তার চোখে মুখে চিন্তার ভাঁজ। এবার ধান চাষ করে তাকে লোকসান গুনতে হবে।
জামালপুর গ্রামের কৃষক মান্নান মিয়া বলেন,‘৩ বার কীটনাশক স্প্রে করেও সাদা শীষ ঠেকাতে পারছি না।’ একই এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কীটনাশক দিয়েও লাভ হচ্ছে না চিটা শীষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ধান চাষে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে এখন খরচের টাকা তোলাই কঠিন হয়ে পড়বে।’
পানেয়া গ্রামের বাদশা মিয়া এবং তপন চন্দ্র অভিযোগ করে বলেন, ‘ হাইব্রিড জাতের বীজে এবছর ভ্যাজাল রয়েছে। সব কোম্পানির বীজের একই অবস্থা। তবে আগাম জাতের হাইব্রিড ধানে কিছুটা রোগবালাই কম। নমলা( লেট ভ্যারাইটি) ধানের চারা যেসব কৃষক রোপণ করেছে তাদের বেশি ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ ধানের জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণে সাদা শীষ দেখা যাচ্ছে। গোছা বা থোপের ভিতর মাজরা পোকার প্রবেশ করে চারার মাঝখানে কেটে দেয় যে কারনে ধানের শীষ সাদা হয়ে যায়। কীটনাশক দিয়েও সমস্যা সমাধান হচ্ছে না।’
দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার কুলানন্দপুর গ্রামের আতোয়ার রহমান বলেন, ‘এই এলাকায় ধান এখনো কেউ কাটেনাই, কলাপাকা হইছেঅ এবার ধানের ভিউত খালি সাদা শীষ দেখা যাওচে। একটা মোতাত একটা বা দুইটা কতেকটাত আবার নাই।’
‘হামরা ভাই গরীব মানুষ, কেউ খোঁজ নেয়, বিএসরাকে হামরা চিনিইনা।’
রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হাদি । তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ধান অল্প জমিত লাগাইছি মাত্র দুই আড়াই বিঘা, আদিবাড়িত দেওয়া আছে। দানের আবাদও ভালোই হইছে। তবে, ধানের শীষের সাথে সাদা শীষ দেকা যাওচে। আমরা মনে করোচি মাজরা পোকার কারণে হইছে মনে হওচে।
‘এই অসুখটা প্রায় সব জমিতেই দেখা যাইচে, কারো বেশি কারো কম। মনে হওচে বিঘা প্রতি একদুই মত করে দান কমে যাবি।’
‘কৃষি অফিসার খোঁজ খবর নিবে! তারা যে কোথায় থাকে, ওনাক পাওয়া যায়! কৃষি অফিসারকে খুঁজে পাওয়া যায়না। নিজেরাই যেটা চিন্তা ভাবনা করে করি ওইটাই’, বলে অভিযোগ তার।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী প্রতিনিধি জানান, উপজেলার পাইকড়া, হাসড়া, কালোহা, বল্লা, কোকডহরা, সহদেবপুর, বাংড়া, এলেঙ্গা, দশকিয়া, দুর্গাপুর, গোয়ালিয়াবাড়ী, সল্লা, নারান্দিয়া, কালিহাতী, নাগবাড়ী, বিরবাসিন্দা ও পারখী, এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে সোনালি ধানের শীষ থাকলেও কৃষকের মনে হতাশা বিরাজ করছে। ধান গাছে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের কারণে পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সদরপুর ইউনিয়নের মুন্দইল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘৩৫ শতাংশ জমিতে বি-২৯ ধান চাষ করেছি ভালো ফলন হলে ২০ মন ধান হতো। মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ধান মরে গেছে এখন ১০ মন হবে কিনা সন্দেহ।’ তিনি আরো জানান, কৃষি ব্লক সুপারভাইজার কখনো এলাকায় আসতে দেখি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সারের ডিলার বলেন, ‘উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সরকারি চাকরি করেন। তাদের কৃষকদের প্রতি কোন তদারকি নেই। কয়েক বছর আগে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদেরকে এলাকায় দেখা যাইতো, এখন তাদেরকে চোখে পড়ে না।’
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, আবহাওয়া ভালো ছিল না এবং বৃষ্টির কারনে প্রায় জমিতে মাজরাপোকা আক্রমণ করে। যতটুকু ক্ষতি হয়েছে সে পর্যন্তই শেষ। আর নতুন করে কোন ক্ষতি হবেনা।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ধান ক্ষেতে সাদা শীষ বের হওয়ার কারণ হিসেবে মাজরা পোকা বা ব্লাষ্টের আক্রমণকেই দায়ী করেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ যদি ব্লাষ্ট হয়ে থাকে তবে যা হবোর হয়ে গেছে। আর মাজরা পোকা হলে, ট্রুপার গ্রুপের কিটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেন।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর(ড্এিই) সূত্র জানায়, দেশের ধান উৎপাদনে সর্বাধিক উৎপাদনশীল মৌসুম বোরো। বোরোর ওপর ভিত্তি করেই দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি রচিত হয়। কেননা দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৫৮ ভাগ আসে এ মৌসুম থেকে। এবার বোরোর ফলন খুব ভালো হয়েছে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
চলতি মৌসুমে সারাদেশে ৫০ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ২ কোটি ২৬ লাথ ,ট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সাদাদেশে ২০-২২ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। যার মধ্য হাওর অঞ্চলের ৮৫ শতাংশ। তবে দেশের অনান্য কৃষি অঞ্চলের ধান কাটা তেমনভাবে শুরু হয়নি।
# ব্লক সুপারভাইজারা মাঠে যায়না, অভিযোগ কৃষককের # ৩ বার কীটনাশক স্প্রে করেও সাদা শীষ ঠেকাতে পারছি না: কৃষক মান্নান # ‘হামরা ভাই গরীব মানুষ, কেউ কী খোঁজ নেয়? আর বিএসকে তো হামরা চিনিইনা: দিনাজপুরের কৃষক
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
সারাদেশে বোরো ধানের ‘বাম্পার’ ফলনের আশা থাকলেও রোগবালাইয়ের আক্রমণে হতাশায় কৃষকরা। চলতি বোরো মৌসুমে অধিক ধান ফলন হতে যাচ্ছে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম থাকলেও ধানে মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ফলন নষ্ট হচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ করায় ধান রোপণের শুরু থেকেই ৫ থেকে ৬ বার কীটনাশক স্প্রে করেও প্রতিকার পায়নি তারা। এমনকি স্থানীয় কৃষি অফিসগুলো এই সময়ে কৃষকের পাশে নেই।
তবে, এলাকার বীজ বিক্রেতা ও ডিলাররা বলছেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার’ কারণে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। চাষিরা জমিতে বালাইনাশক স্প্রে না করায় মাজরাপোকা ধানের শীষ কাটছে। ‘ভালো মানের’ কীটনাশক স্প্রে করলে মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব। ধান চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ করে কীটনাশক স্প্রে করেও পোকা দমন করতে পারছেনা। এজন্য তারা কীটনাশকের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
চাষীদের অভিযোগ, উপজেলা কৃষি বিভাগের লোকজন শুধু উপজেলা ও ইউনিয়ন কৃষি অফিসে বসে সময় পার করে। তারা কথনো মাঠ পর্যায়ে গিয়ে আবাদের খোঁজ নেয়না।
কৃষি বিভাগের উপসহকারী রা জানান, হঠাৎ বৃষ্টি হয়েছে আর বৃষ্টির পরে যে সকল কৃষক ধানের জমিতে মাজরাপোকার দমনের জন্য দকীটনাশক প্রয়োগ করেছে তাদের জমিতে সাদা শীষ কম বের হয়েছে।
অথচ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রাম মতে, প্রতি ইউনিয়নে ৩ জন করে উপসহকারী কৃষি অফিসার আছে। বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, তারা কখনো মাঠে গিয়ে কৃষকের ক্ষেতের খোঁজ নেয়না। কিছু এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কিছু প্রদর্শনী থাকে সেখানে গিয়ে পরিদরশন আর ‘গল্প গুজবে’ সময় কাটায় বলে । তাদের কার্যাক্রম শুধু মাত্র অফিসে কাগজে কলমে, কৃষকের উন্নতিতে তাদের ‘কোন ভুমিকা নেই’।
রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বড় ভগবানপুর গ্রামের লোকনাথ রায় ২ একর জমিতে ধান আবাদ করেছেন। কিন্ত তার জমি সাদা শীষ দিয়ে ভরে গেছে। তার চোখে মুখে চিন্তার ভাঁজ। এবার ধান চাষ করে তাকে লোকসান গুনতে হবে।
জামালপুর গ্রামের কৃষক মান্নান মিয়া বলেন,‘৩ বার কীটনাশক স্প্রে করেও সাদা শীষ ঠেকাতে পারছি না।’ একই এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কীটনাশক দিয়েও লাভ হচ্ছে না চিটা শীষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ধান চাষে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে এখন খরচের টাকা তোলাই কঠিন হয়ে পড়বে।’
পানেয়া গ্রামের বাদশা মিয়া এবং তপন চন্দ্র অভিযোগ করে বলেন, ‘ হাইব্রিড জাতের বীজে এবছর ভ্যাজাল রয়েছে। সব কোম্পানির বীজের একই অবস্থা। তবে আগাম জাতের হাইব্রিড ধানে কিছুটা রোগবালাই কম। নমলা( লেট ভ্যারাইটি) ধানের চারা যেসব কৃষক রোপণ করেছে তাদের বেশি ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ ধানের জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণে সাদা শীষ দেখা যাচ্ছে। গোছা বা থোপের ভিতর মাজরা পোকার প্রবেশ করে চারার মাঝখানে কেটে দেয় যে কারনে ধানের শীষ সাদা হয়ে যায়। কীটনাশক দিয়েও সমস্যা সমাধান হচ্ছে না।’
দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার কুলানন্দপুর গ্রামের আতোয়ার রহমান বলেন, ‘এই এলাকায় ধান এখনো কেউ কাটেনাই, কলাপাকা হইছেঅ এবার ধানের ভিউত খালি সাদা শীষ দেখা যাওচে। একটা মোতাত একটা বা দুইটা কতেকটাত আবার নাই।’
‘হামরা ভাই গরীব মানুষ, কেউ খোঁজ নেয়, বিএসরাকে হামরা চিনিইনা।’
রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হাদি । তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ধান অল্প জমিত লাগাইছি মাত্র দুই আড়াই বিঘা, আদিবাড়িত দেওয়া আছে। দানের আবাদও ভালোই হইছে। তবে, ধানের শীষের সাথে সাদা শীষ দেকা যাওচে। আমরা মনে করোচি মাজরা পোকার কারণে হইছে মনে হওচে।
‘এই অসুখটা প্রায় সব জমিতেই দেখা যাইচে, কারো বেশি কারো কম। মনে হওচে বিঘা প্রতি একদুই মত করে দান কমে যাবি।’
‘কৃষি অফিসার খোঁজ খবর নিবে! তারা যে কোথায় থাকে, ওনাক পাওয়া যায়! কৃষি অফিসারকে খুঁজে পাওয়া যায়না। নিজেরাই যেটা চিন্তা ভাবনা করে করি ওইটাই’, বলে অভিযোগ তার।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী প্রতিনিধি জানান, উপজেলার পাইকড়া, হাসড়া, কালোহা, বল্লা, কোকডহরা, সহদেবপুর, বাংড়া, এলেঙ্গা, দশকিয়া, দুর্গাপুর, গোয়ালিয়াবাড়ী, সল্লা, নারান্দিয়া, কালিহাতী, নাগবাড়ী, বিরবাসিন্দা ও পারখী, এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে সোনালি ধানের শীষ থাকলেও কৃষকের মনে হতাশা বিরাজ করছে। ধান গাছে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের কারণে পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সদরপুর ইউনিয়নের মুন্দইল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘৩৫ শতাংশ জমিতে বি-২৯ ধান চাষ করেছি ভালো ফলন হলে ২০ মন ধান হতো। মাজরা, ব্লাস্ট ও কারেন পোকার আক্রমণে ধান মরে গেছে এখন ১০ মন হবে কিনা সন্দেহ।’ তিনি আরো জানান, কৃষি ব্লক সুপারভাইজার কখনো এলাকায় আসতে দেখি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সারের ডিলার বলেন, ‘উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সরকারি চাকরি করেন। তাদের কৃষকদের প্রতি কোন তদারকি নেই। কয়েক বছর আগে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদেরকে এলাকায় দেখা যাইতো, এখন তাদেরকে চোখে পড়ে না।’
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, আবহাওয়া ভালো ছিল না এবং বৃষ্টির কারনে প্রায় জমিতে মাজরাপোকা আক্রমণ করে। যতটুকু ক্ষতি হয়েছে সে পর্যন্তই শেষ। আর নতুন করে কোন ক্ষতি হবেনা।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ধান ক্ষেতে সাদা শীষ বের হওয়ার কারণ হিসেবে মাজরা পোকা বা ব্লাষ্টের আক্রমণকেই দায়ী করেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ যদি ব্লাষ্ট হয়ে থাকে তবে যা হবোর হয়ে গেছে। আর মাজরা পোকা হলে, ট্রুপার গ্রুপের কিটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেন।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর(ড্এিই) সূত্র জানায়, দেশের ধান উৎপাদনে সর্বাধিক উৎপাদনশীল মৌসুম বোরো। বোরোর ওপর ভিত্তি করেই দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি রচিত হয়। কেননা দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৫৮ ভাগ আসে এ মৌসুম থেকে। এবার বোরোর ফলন খুব ভালো হয়েছে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
চলতি মৌসুমে সারাদেশে ৫০ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ২ কোটি ২৬ লাথ ,ট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সাদাদেশে ২০-২২ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। যার মধ্য হাওর অঞ্চলের ৮৫ শতাংশ। তবে দেশের অনান্য কৃষি অঞ্চলের ধান কাটা তেমনভাবে শুরু হয়নি।