বরুড়া (কুমিল্লা) : ধান বিক্রির জন্য আড়তে ভিড় করছেন কৃষকরা -সংবাদ
কুমিল্লার শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত বরুড়ায় এবার প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেকাংশে অনুকূল থাকায় বোরো আবাদে বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষক। এতদ সত্ত্বেও কৃষকের ঘাম আর শ্রমে কষ্টার্জিতভাবে উৎপাদিত এ বোরো ধান স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। কৃষকদের অভিযোগ বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ধানের বাজার এক শ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগী কিংবা ফড়িয়ারা নিয়ন্ত্রণ করছেন যার ফলে বোরো ধান বিক্রিতে লাভের মুখ দেখছেন না তারা। ফলে বোরো ধানে বাম্পার ফলনেও লাভের মুখ না দেখে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবার বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় ১৩, ২৩৭ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাত ৯,২০৭ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাত ৪,০৬৬ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
এমতাবস্থায় আবাদকৃত মোট জমির প্রায় ৯৫ ভাগ পরিপক্ক হওয়া এসব ধান ইতোমধ্যে কৃষকরা জমি থেকে কর্তন করে মাড়াই ঝাড়াই সম্পন্ন করে গোলাজাত করেছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশ প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা ধার দেনা পরিশোধের নিমিত্তে স্থানীয় বাজারগুলোতে ধান বিক্রি করছেন। এ ছাড়া কৃষি বিভাগ আরোও জানায় প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় সার, কীট নাশকসহ বিভিন্ন উপকরণ নাগালে থাকায় আর মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শ থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এখানকার কৃষকরা বোরো ধান আবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এতে উচ্চ ফলনশীন জাত ধানের ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি চাল আকারে ৪.১ মে. টন এবং হাইব্রিড জাতের ধানের ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি চাল আকারে ৪.৭৫ মে.টন। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, এবার কৃষকদের উন্নত জাতের ধান বীজ সংগ্রহ, সুষম সার প্রয়োগ, এডব্লিউডি, পার্সিং, লোগো প্রযুক্তির ব্যবহার এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ গ্রহন করায় এ উপজেলার কৃষকরা বোরো আবাদে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এদিকে উপজেলার সদর বরুড়া বাজার, রামমোহন বাজার, ঝলম বাজার, আড্ডা বাজার এবং সুলতানপুর বাজারসহ বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের বোরো ধান বিক্রির উদ্দেশ্য বিভিন্ন ধান ব্যবসায়ীর আড়তে ভির করছেন। এ সময় দেখা গেছে প্রকারভেদে মণ প্রতি ধান সাড়ে ৯শ টাকা থেকে সাড়ে ১১শ টাকা দরে কৃষকরা ধান বিক্রি করছেন। এ সময় তাদের মধ্যে শাকপুর গ্রামের কৃষক মো. শাহ আলম জানান, তিনি তার মোট ৮০ শতক জমিতে ব্রি ধান ৫৮, বিনা ২৫ এবং ইস্পাহানি জাতের ধানের আবাদ করেছেন। এতে তিনি ৮ শতকে (গন্ডা প্রতি) প্রায় সাড়ে ৫ মণ ধান পেয়েছেন। পৌর শহরের শুশুন্ডা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি তার ২৮ শতক জমির মধ্যে ১৪ শতকে বিনা ২৫ এবং বাদবাকী জমিতে এসএলজি ৮ জাতের ধানের আবাদ করেছেন। এতে তিনি ৮ শতকে (গন্ডা প্রতি) গড়ে প্রায় সাড়ে ৫ মণ ধান পেয়েছেন।
তারাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক নিরোধ চন্দ্র ভৌমিক জানান, তিনি প্রায় ৬০ শতক জমিতে ব্রি ধান ১০৮ এর আবাদ করেছেন। এতে তিনি ৬ শতকে (গন্ডা প্রতি) প্রায় ৫ মণ ধান পেয়েছেন। এতে তারা বোরো ধান ফসল আবাদে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। তবে ফসল উৎপাদনে ধার দেনা পরিশোধের নিমিত্তে ধান বিক্রিতে তারা লাভবান হতে পারছেন না। সার, কীটনাশকের দাম, বদলা, মজুরী, সেচ পাম্প ভাড়া অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর অত্যধিক বেশি হওয়ায় ধানের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। এদিকে ধানের বাজার কম হওয়ায় ধান বিক্রিতে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না এমন অভিযোগ কৃষকদের।
অন্যান্য কৃষকরা ও একই অভিমত ব্যক্ত করেন। এদিকে গত ২২ এপ্রিল খাদ্য বিভাগের উদ্যোগে অভ্যন্তরিন বোরো ধান কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয়ের ব্যাপারে প্রস্তুতি সভা সম্পন্ন হওয়ার প্রায় ২ সপ্তাহের অতিক্রান্ত হওয়ার পরে ও এক ছটাক ধান ও ক্রয় করতে পারেননি খাদ্য বিভাগ। জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ৩৬ টাকা কেজি দরে ৯ মে.টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। আগামী আগষ্ট মাস পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। এক জন কৃষক সর্বোচ্চ ৩ মে.টন ধান খাদ্য গুদামে এসে ওই মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন। তবে এখন ও কোন কৃষক খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে আসেননি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (চ.দা) মোবারক হোসেন খান জানান, বোরো ধান ক্রয়ের ব্যাপারে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে মাইকিং করে প্রচারনা করা হচ্ছে। আশা করি কৃষকদের সাড়া মিলবে। ফলে কৃষকরা খাদ্য গুদামে ধান বিক্রিতে লাভবান হবেন বলে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বরুড়া (কুমিল্লা) : ধান বিক্রির জন্য আড়তে ভিড় করছেন কৃষকরা -সংবাদ
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
কুমিল্লার শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত বরুড়ায় এবার প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেকাংশে অনুকূল থাকায় বোরো আবাদে বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষক। এতদ সত্ত্বেও কৃষকের ঘাম আর শ্রমে কষ্টার্জিতভাবে উৎপাদিত এ বোরো ধান স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। কৃষকদের অভিযোগ বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ধানের বাজার এক শ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগী কিংবা ফড়িয়ারা নিয়ন্ত্রণ করছেন যার ফলে বোরো ধান বিক্রিতে লাভের মুখ দেখছেন না তারা। ফলে বোরো ধানে বাম্পার ফলনেও লাভের মুখ না দেখে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবার বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় ১৩, ২৩৭ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাত ৯,২০৭ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাত ৪,০৬৬ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
এমতাবস্থায় আবাদকৃত মোট জমির প্রায় ৯৫ ভাগ পরিপক্ক হওয়া এসব ধান ইতোমধ্যে কৃষকরা জমি থেকে কর্তন করে মাড়াই ঝাড়াই সম্পন্ন করে গোলাজাত করেছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশ প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা ধার দেনা পরিশোধের নিমিত্তে স্থানীয় বাজারগুলোতে ধান বিক্রি করছেন। এ ছাড়া কৃষি বিভাগ আরোও জানায় প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় সার, কীট নাশকসহ বিভিন্ন উপকরণ নাগালে থাকায় আর মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শ থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এখানকার কৃষকরা বোরো ধান আবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এতে উচ্চ ফলনশীন জাত ধানের ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি চাল আকারে ৪.১ মে. টন এবং হাইব্রিড জাতের ধানের ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি চাল আকারে ৪.৭৫ মে.টন। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, এবার কৃষকদের উন্নত জাতের ধান বীজ সংগ্রহ, সুষম সার প্রয়োগ, এডব্লিউডি, পার্সিং, লোগো প্রযুক্তির ব্যবহার এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ গ্রহন করায় এ উপজেলার কৃষকরা বোরো আবাদে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এদিকে উপজেলার সদর বরুড়া বাজার, রামমোহন বাজার, ঝলম বাজার, আড্ডা বাজার এবং সুলতানপুর বাজারসহ বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের বোরো ধান বিক্রির উদ্দেশ্য বিভিন্ন ধান ব্যবসায়ীর আড়তে ভির করছেন। এ সময় দেখা গেছে প্রকারভেদে মণ প্রতি ধান সাড়ে ৯শ টাকা থেকে সাড়ে ১১শ টাকা দরে কৃষকরা ধান বিক্রি করছেন। এ সময় তাদের মধ্যে শাকপুর গ্রামের কৃষক মো. শাহ আলম জানান, তিনি তার মোট ৮০ শতক জমিতে ব্রি ধান ৫৮, বিনা ২৫ এবং ইস্পাহানি জাতের ধানের আবাদ করেছেন। এতে তিনি ৮ শতকে (গন্ডা প্রতি) প্রায় সাড়ে ৫ মণ ধান পেয়েছেন। পৌর শহরের শুশুন্ডা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি তার ২৮ শতক জমির মধ্যে ১৪ শতকে বিনা ২৫ এবং বাদবাকী জমিতে এসএলজি ৮ জাতের ধানের আবাদ করেছেন। এতে তিনি ৮ শতকে (গন্ডা প্রতি) গড়ে প্রায় সাড়ে ৫ মণ ধান পেয়েছেন।
তারাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক নিরোধ চন্দ্র ভৌমিক জানান, তিনি প্রায় ৬০ শতক জমিতে ব্রি ধান ১০৮ এর আবাদ করেছেন। এতে তিনি ৬ শতকে (গন্ডা প্রতি) প্রায় ৫ মণ ধান পেয়েছেন। এতে তারা বোরো ধান ফসল আবাদে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। তবে ফসল উৎপাদনে ধার দেনা পরিশোধের নিমিত্তে ধান বিক্রিতে তারা লাভবান হতে পারছেন না। সার, কীটনাশকের দাম, বদলা, মজুরী, সেচ পাম্প ভাড়া অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর অত্যধিক বেশি হওয়ায় ধানের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। এদিকে ধানের বাজার কম হওয়ায় ধান বিক্রিতে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না এমন অভিযোগ কৃষকদের।
অন্যান্য কৃষকরা ও একই অভিমত ব্যক্ত করেন। এদিকে গত ২২ এপ্রিল খাদ্য বিভাগের উদ্যোগে অভ্যন্তরিন বোরো ধান কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয়ের ব্যাপারে প্রস্তুতি সভা সম্পন্ন হওয়ার প্রায় ২ সপ্তাহের অতিক্রান্ত হওয়ার পরে ও এক ছটাক ধান ও ক্রয় করতে পারেননি খাদ্য বিভাগ। জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ৩৬ টাকা কেজি দরে ৯ মে.টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। আগামী আগষ্ট মাস পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। এক জন কৃষক সর্বোচ্চ ৩ মে.টন ধান খাদ্য গুদামে এসে ওই মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন। তবে এখন ও কোন কৃষক খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে আসেননি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (চ.দা) মোবারক হোসেন খান জানান, বোরো ধান ক্রয়ের ব্যাপারে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে মাইকিং করে প্রচারনা করা হচ্ছে। আশা করি কৃষকদের সাড়া মিলবে। ফলে কৃষকরা খাদ্য গুদামে ধান বিক্রিতে লাভবান হবেন বলে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।