নেত্রকোনা : র্দীঘ পথ হেঁটে ভারত থেকে আসা ছড়ার পাশে ছোট ছোট কুয়া তৈরি করে খাবার পানি সংগ্রহ করেন স্থানীয়রা -সংবাদ
পাহাড়ি ঝরনা বা ছড়ার পানি পানাহার করেই বেঁচে আছে সীমান্ত এলাকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে জীবনযাপন। র্দীঘ পথ হেঁটে ভারত থেকে আসা ছড়ার পাশে ছোট ছোট কোয়া তৈরি করে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন স্থানীয়রা। তবে চলতি বছর সুপেয় পানির তীব্র সংকটের মুখে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর ও কলমাকান্দার গারো আদিবাসীসহ লক্ষাধিক মানুষ। ভারত থেকে প্রবাহিত ছড়া বা ঝরনার দূষিত পানিই এখান তাদের একমাত্র ভরসা। এই পানি পান করে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে স্থানীয়রা। তবে সংকট নিরসনে রিং-টিউবওয়েল নামমাত্র বরাদ্ধ হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এরমাঝে তা বাস্তবায়নেও করা হয় নয় ছয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিশুদ্ধ পানির অভাবে, টাইফয়েড, চর্মরোগ, ডায়রিয়া প্রভৃতি পানিবাহিত রোগ ভুগছেন অনেকে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা এ থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এলাকার একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, বছরের বিভিন্ন সময় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভিড় বাড়ে।
স্থানীয় আরাপাড়া এলাকার গারো যুবক বিনোদ সাংমা বলেন, সীমান্ত এলাকায় কয়েকটা কোয়া দিছে, কিন্তু ওগুলা সারাতে কেউ আসে না।
কয়েক বছর পর একবার দেখে, আবার চলে যায়। আমরা দিনে ২-৩ কিলোমিটার হেঁটে পানি নিতে যাই। এইভাবে আর কত দিন চলবে?
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু কোয়া তৈরি করে রিং বসিয়ে উপরে টিউবওয়েল বসানোর প্রকল্প হাতে নেয়। তবে বরাদ্দ অপ্রতুল হওয়ায় তা খুব সীমিত পরিসরে বাস্তবায়িত হয়। তদুপরি, যেখানে প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, সেগুলোর অনেকগুলো এখন অচল হয়ে পরে আছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্প এলেও তা রাজনৈতিক বিবেচনায় বণ্টিত হয়, ফলে প্রকৃত দরিদ্র ও অসুবিধাগ্রস্ত মানুষ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, নেত্রকোণার সীমান্ত উপজেলা কলমাকান্দা ও দূর্গাপুরে অধিকাংশ গ্রামইটিলা ও পাহাড় বেষ্টিত। বিজয়পুর, রংছাতি, পাঁচগাঁও, কোল্লাগড়া, বিপিনগঞ্জসহ অর্ধশত গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা ভারতীয় ময়লা পানি। কারণ এসব অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে রয়েছে পাথর- যা অতিক্রম করে গভীর নলকূপ কিংবা সাবমার্সেবল স্থাপন ব্যায়বহুল। সীমান্ত এলাকায় নামমাত্র কয়েকটি কোয়া স্থাপন করলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো অচল। ফলে দিনের পর দিন র্দীঘ পথ হেঁটে ভারতীয় ছড়া থেকে দূষিত পানিই সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয়রা।
তবে পানি সংকট সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণের চেষ্টা চলছে জানান সংশ্লিষ্টরা। দায়িত্বপ্রাপ্ত দূর্গাপুর উপজেলা জনসাস্থ্য কর্মকর্তা কাজী আমান উল্লাহ জানান, পাহাড়ি এলাকায় গভির নলকূপ তৈরিতে ডায়মন্ড কাটার মেশিন প্রয়োজন। সরকারিভাবে কাটার মেশিন সর্বরাহ করলে ভবিষ্যতে বিশুদ্ধ খাবর পানি সংকট অনেকাংশেই লাঘব হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সদ্য বদলি হওয়ায় নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান জানান, তার দায়িত্বকালীন সময়ে ত্রিশটি রিং ওয়েল বরাদ্ধে এসেছে- যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি স্থাপন করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। গারো আদিবাসীসহ দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ বছরের পর বছর ধরে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। এটি এক প্রকার ন্যায্যতার অবক্ষয়- যা শুধু ব্যর্থতাই নয়, পুরো সমাজের দায়।
নেত্রকোনা : র্দীঘ পথ হেঁটে ভারত থেকে আসা ছড়ার পাশে ছোট ছোট কুয়া তৈরি করে খাবার পানি সংগ্রহ করেন স্থানীয়রা -সংবাদ
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
পাহাড়ি ঝরনা বা ছড়ার পানি পানাহার করেই বেঁচে আছে সীমান্ত এলাকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে জীবনযাপন। র্দীঘ পথ হেঁটে ভারত থেকে আসা ছড়ার পাশে ছোট ছোট কোয়া তৈরি করে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন স্থানীয়রা। তবে চলতি বছর সুপেয় পানির তীব্র সংকটের মুখে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর ও কলমাকান্দার গারো আদিবাসীসহ লক্ষাধিক মানুষ। ভারত থেকে প্রবাহিত ছড়া বা ঝরনার দূষিত পানিই এখান তাদের একমাত্র ভরসা। এই পানি পান করে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে স্থানীয়রা। তবে সংকট নিরসনে রিং-টিউবওয়েল নামমাত্র বরাদ্ধ হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এরমাঝে তা বাস্তবায়নেও করা হয় নয় ছয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিশুদ্ধ পানির অভাবে, টাইফয়েড, চর্মরোগ, ডায়রিয়া প্রভৃতি পানিবাহিত রোগ ভুগছেন অনেকে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা এ থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এলাকার একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, বছরের বিভিন্ন সময় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভিড় বাড়ে।
স্থানীয় আরাপাড়া এলাকার গারো যুবক বিনোদ সাংমা বলেন, সীমান্ত এলাকায় কয়েকটা কোয়া দিছে, কিন্তু ওগুলা সারাতে কেউ আসে না।
কয়েক বছর পর একবার দেখে, আবার চলে যায়। আমরা দিনে ২-৩ কিলোমিটার হেঁটে পানি নিতে যাই। এইভাবে আর কত দিন চলবে?
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু কোয়া তৈরি করে রিং বসিয়ে উপরে টিউবওয়েল বসানোর প্রকল্প হাতে নেয়। তবে বরাদ্দ অপ্রতুল হওয়ায় তা খুব সীমিত পরিসরে বাস্তবায়িত হয়। তদুপরি, যেখানে প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, সেগুলোর অনেকগুলো এখন অচল হয়ে পরে আছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্প এলেও তা রাজনৈতিক বিবেচনায় বণ্টিত হয়, ফলে প্রকৃত দরিদ্র ও অসুবিধাগ্রস্ত মানুষ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, নেত্রকোণার সীমান্ত উপজেলা কলমাকান্দা ও দূর্গাপুরে অধিকাংশ গ্রামইটিলা ও পাহাড় বেষ্টিত। বিজয়পুর, রংছাতি, পাঁচগাঁও, কোল্লাগড়া, বিপিনগঞ্জসহ অর্ধশত গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা ভারতীয় ময়লা পানি। কারণ এসব অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে রয়েছে পাথর- যা অতিক্রম করে গভীর নলকূপ কিংবা সাবমার্সেবল স্থাপন ব্যায়বহুল। সীমান্ত এলাকায় নামমাত্র কয়েকটি কোয়া স্থাপন করলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো অচল। ফলে দিনের পর দিন র্দীঘ পথ হেঁটে ভারতীয় ছড়া থেকে দূষিত পানিই সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয়রা।
তবে পানি সংকট সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণের চেষ্টা চলছে জানান সংশ্লিষ্টরা। দায়িত্বপ্রাপ্ত দূর্গাপুর উপজেলা জনসাস্থ্য কর্মকর্তা কাজী আমান উল্লাহ জানান, পাহাড়ি এলাকায় গভির নলকূপ তৈরিতে ডায়মন্ড কাটার মেশিন প্রয়োজন। সরকারিভাবে কাটার মেশিন সর্বরাহ করলে ভবিষ্যতে বিশুদ্ধ খাবর পানি সংকট অনেকাংশেই লাঘব হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সদ্য বদলি হওয়ায় নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান জানান, তার দায়িত্বকালীন সময়ে ত্রিশটি রিং ওয়েল বরাদ্ধে এসেছে- যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি স্থাপন করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। গারো আদিবাসীসহ দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ বছরের পর বছর ধরে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। এটি এক প্রকার ন্যায্যতার অবক্ষয়- যা শুধু ব্যর্থতাই নয়, পুরো সমাজের দায়।