রাজশাহী : লিচু বিক্রিতে ব্যস্ত দোকানি -সংবাদ
বরেন্দ্র অঞ্চলে খরতাপে প্রকৃতিতে থাকে নাভিশ্বাস অবস্থা। এ সময়ে আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ প্রায় সব ধরনের মৌসুমি ফল পাকতে শুরু করে। বাতাসে থাকে মিষ্টি ফলের ম-ম গন্ধ। এ মাসে পাওয়া যাবে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, জামরুল, আনারস, লটকন, বাঙ্গি, তরমুজ, ডেউয়া, বেল, বেতফল, গাব, আতাফল, কাউ, শরীফা ইত্যাদি কতো না ফল। এখনো গাছেই দুলছে এসব ফল। বাগানে ছড়াচ্ছে ম ম ঘ্রাণ। তবে প্রথম অতিথি ফল হিসেবে রাজশাহীর এসছে লিচু।
আমের জন্য বিখ্যাত বরেন্দ্র হলের লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরের এক সময়ের নাম থাকলেও এখন তা দখল করে নিচ্ছে ঈশ্বরদী। পিছিয়ে নেই রাজশাহীও রাজশাহীর বাজারে উঠতে শুরু করেছে মৌসুমের রসালো ফল লিচু। মৌসুমে প্রথম বাজারে আসায় দেশি লিচুর দাম বেশ চড়া। নগরীর সাহেব বাজার, রেলস্টেশন বিন্দুর মোড় শাল বাগান এলাকায় লিচুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে দাম বেজায় চড়া। ১০০টি লিচুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার, বিন্দুরমোড়, লক্ষ্মীপুর, কোর্ট স্টেশন ও শালবাগান বাজার, কাজলা বাজার, বিনোদপুর বাজার, কাটাখালী বাজার, ছাড়াও শিরোইল বাস টার্মিনাল সংলগ্ন বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে বাহারি এ ফলের পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। ফল ব্যবসায়ীরা জানান, জানান, লিচুকে অতিথি ফল বলা হয়। কারণ এই ফল বাজারে মাত্র এক থেকে দেড় মাসে থাকে। এ কারণে লিচুর দাম বেশি। বাজারে দিনাজপুর ও রাজশাহীর লিচু এলেই দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে চলে আসবে। তখন সবাই লিচুর স্বাদ নিতে পারবেন।
লিচু বিক্রেতা মদন সরকার জানান, ১০০টি লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪০০টাকায়। বাগানেই দাম বেশি হওয়ার কারণে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। তবে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী লিচুর আমদানি হলে দাম কিছুটা কমবে বলে ওই বিক্রেতা জানান। টক নাকি মিষ্টি, এমন প্রশ্নের জবাবে লিচু বিক্রেতা জানান, দেশি লিচু হওয়ায় খুব বেশি মিষ্টি নয়। কিছুটা টক হবে। কয়েকদিন পর যেগুলো বাজারে আসবে সেগুলো মিষ্টি বেশি হবে। সাহেব বাজার ছাড়াও নগরের আরও ২-১টি বাজারে লিচু বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে কোনো স্থানেই ১০০ লিচুর দাম ৫০০ টাকার কমে বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
নাইমুল ইসলাম নামের এক লিচু ক্রেতা বলেন, বাজারে এই প্রথম লিচু এসেছে, তাই ৫০টি কিনলাম ২৫০ টাকায়। দাম কমায়নি বিক্রেতা। টক নাকি মিষ্টি তা খেয়ে দেখা হয়নি।
রাজশাহী মহানগরীর রায়পাড়া, বড়বনগ্রাম, পবা এবং মোহনপুর উপজেলার কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর বোম্বাই, কাদমি, মোজাফফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়ী, চায়না-৩, বারি-১, বারি-২ ও বারি-৩ জাতের লিচু বেশি চাষ হয়েছে। পবা উপজেলার নগর পারিলা এলাকার লিচু চাষি এরশাদ আলী জানান, তার বাগানে বোম্বে জাতের ৫০টি লিচু গাছ আছে। গত বছর দেড় লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার দুই লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি।
শালবাগান বাজারের লিচু ব্যবসায়ী ইয়াসিন আলী জানান, তিনি ১০ বছর ধরে এই লিচু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এবার প্রায় ১০ একর বাগান লিজ নিয়েছেন। বাগানগুলোতে চায়না-৩, বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকার পাইকাররা আগাম গাছের লিচু কিনতে শুরু করেছেন।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন ৪০ জন শ্রমিক লিচু বাগানে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের তিন বেলা খাবার ও পকেট খরচসহ শ্রমিকপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা দিতে হয়। নিয়মিত পরিচর্যা ও বালাইনাশক ওষুধ দিতে হয়। এ বছর খরচ বেশি হওয়ায়, লিচুর দামটাও একটু বেশি হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই বছর রাজশাহীর ৯টি উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় মোট ৫৩০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। আর লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাগমারা উপজেলায় ১১৫ হেক্টর, পুঠিয়া উপজেলায় ৭৮ হেক্টর, পবা উপজেলায় ৭৫ হেক্টর, দুর্গাপুরে ৭০ হেক্টর, মোহনপুরে ৫২ হেক্টর, চারঘাটে ৪৫ হেক্টর, তানোর উপজেলায় ৩০ হেক্টর, বাঘা উপজেলায় ২৮ হেক্টর, মতিহারে ২০ হেক্টর ও গোদাগাড়ী উপজেলায় ১৯ এবং রাজশাহী মহানগরীতে ১০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লিচু চাষ হয়েছে বাগমারা উপজেলায় ১১৫ হেক্টর জমিতে। এখান থেকে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮২৫ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরও জানায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বছর রাজশাহীতে লিচুর আশানুরূপ ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। রাজশাহীর প্রায় সব উপজেলাতেই লিচু বাগান রয়েছে। তাই এই ফলের চাষ খুবই লাভজনক। তবে কোনো মৌসুমে ফলন একটু কম আবার কোনো মৌসুমে বেশি হয়। তবে প্রতি বছর লিচুর আবাদ বাড়ছে। দেশি লিচুর পাশাপাশি উচ্চফলনশীল চায়না-৩ এবং বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচুর চাষ হচ্ছে। এখন রাজশাহীর কিছু কিছু জায়গায় বাড়িতেও লিচু চাষ করছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, এবার রাজশাহীতে লিচুর ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কোনো দুর্যোগের কবলে না পড়লে কৃষকরা লাভবান হবেন। প্রতি বছর রাজশাহীতে লিচু চাষ বাড়ছে। লাভ হওয়ায় কৃষকরা লিচু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বাজারে লিচু পর্যাপ্ত পরিমাণে আসতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।
রাজশাহী : লিচু বিক্রিতে ব্যস্ত দোকানি -সংবাদ
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
বরেন্দ্র অঞ্চলে খরতাপে প্রকৃতিতে থাকে নাভিশ্বাস অবস্থা। এ সময়ে আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ প্রায় সব ধরনের মৌসুমি ফল পাকতে শুরু করে। বাতাসে থাকে মিষ্টি ফলের ম-ম গন্ধ। এ মাসে পাওয়া যাবে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, জামরুল, আনারস, লটকন, বাঙ্গি, তরমুজ, ডেউয়া, বেল, বেতফল, গাব, আতাফল, কাউ, শরীফা ইত্যাদি কতো না ফল। এখনো গাছেই দুলছে এসব ফল। বাগানে ছড়াচ্ছে ম ম ঘ্রাণ। তবে প্রথম অতিথি ফল হিসেবে রাজশাহীর এসছে লিচু।
আমের জন্য বিখ্যাত বরেন্দ্র হলের লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরের এক সময়ের নাম থাকলেও এখন তা দখল করে নিচ্ছে ঈশ্বরদী। পিছিয়ে নেই রাজশাহীও রাজশাহীর বাজারে উঠতে শুরু করেছে মৌসুমের রসালো ফল লিচু। মৌসুমে প্রথম বাজারে আসায় দেশি লিচুর দাম বেশ চড়া। নগরীর সাহেব বাজার, রেলস্টেশন বিন্দুর মোড় শাল বাগান এলাকায় লিচুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে দাম বেজায় চড়া। ১০০টি লিচুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার, বিন্দুরমোড়, লক্ষ্মীপুর, কোর্ট স্টেশন ও শালবাগান বাজার, কাজলা বাজার, বিনোদপুর বাজার, কাটাখালী বাজার, ছাড়াও শিরোইল বাস টার্মিনাল সংলগ্ন বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে বাহারি এ ফলের পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। ফল ব্যবসায়ীরা জানান, জানান, লিচুকে অতিথি ফল বলা হয়। কারণ এই ফল বাজারে মাত্র এক থেকে দেড় মাসে থাকে। এ কারণে লিচুর দাম বেশি। বাজারে দিনাজপুর ও রাজশাহীর লিচু এলেই দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে চলে আসবে। তখন সবাই লিচুর স্বাদ নিতে পারবেন।
লিচু বিক্রেতা মদন সরকার জানান, ১০০টি লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪০০টাকায়। বাগানেই দাম বেশি হওয়ার কারণে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। তবে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী লিচুর আমদানি হলে দাম কিছুটা কমবে বলে ওই বিক্রেতা জানান। টক নাকি মিষ্টি, এমন প্রশ্নের জবাবে লিচু বিক্রেতা জানান, দেশি লিচু হওয়ায় খুব বেশি মিষ্টি নয়। কিছুটা টক হবে। কয়েকদিন পর যেগুলো বাজারে আসবে সেগুলো মিষ্টি বেশি হবে। সাহেব বাজার ছাড়াও নগরের আরও ২-১টি বাজারে লিচু বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে কোনো স্থানেই ১০০ লিচুর দাম ৫০০ টাকার কমে বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
নাইমুল ইসলাম নামের এক লিচু ক্রেতা বলেন, বাজারে এই প্রথম লিচু এসেছে, তাই ৫০টি কিনলাম ২৫০ টাকায়। দাম কমায়নি বিক্রেতা। টক নাকি মিষ্টি তা খেয়ে দেখা হয়নি।
রাজশাহী মহানগরীর রায়পাড়া, বড়বনগ্রাম, পবা এবং মোহনপুর উপজেলার কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর বোম্বাই, কাদমি, মোজাফফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়ী, চায়না-৩, বারি-১, বারি-২ ও বারি-৩ জাতের লিচু বেশি চাষ হয়েছে। পবা উপজেলার নগর পারিলা এলাকার লিচু চাষি এরশাদ আলী জানান, তার বাগানে বোম্বে জাতের ৫০টি লিচু গাছ আছে। গত বছর দেড় লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার দুই লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি।
শালবাগান বাজারের লিচু ব্যবসায়ী ইয়াসিন আলী জানান, তিনি ১০ বছর ধরে এই লিচু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এবার প্রায় ১০ একর বাগান লিজ নিয়েছেন। বাগানগুলোতে চায়না-৩, বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকার পাইকাররা আগাম গাছের লিচু কিনতে শুরু করেছেন।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন ৪০ জন শ্রমিক লিচু বাগানে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের তিন বেলা খাবার ও পকেট খরচসহ শ্রমিকপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা দিতে হয়। নিয়মিত পরিচর্যা ও বালাইনাশক ওষুধ দিতে হয়। এ বছর খরচ বেশি হওয়ায়, লিচুর দামটাও একটু বেশি হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই বছর রাজশাহীর ৯টি উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় মোট ৫৩০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। আর লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাগমারা উপজেলায় ১১৫ হেক্টর, পুঠিয়া উপজেলায় ৭৮ হেক্টর, পবা উপজেলায় ৭৫ হেক্টর, দুর্গাপুরে ৭০ হেক্টর, মোহনপুরে ৫২ হেক্টর, চারঘাটে ৪৫ হেক্টর, তানোর উপজেলায় ৩০ হেক্টর, বাঘা উপজেলায় ২৮ হেক্টর, মতিহারে ২০ হেক্টর ও গোদাগাড়ী উপজেলায় ১৯ এবং রাজশাহী মহানগরীতে ১০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লিচু চাষ হয়েছে বাগমারা উপজেলায় ১১৫ হেক্টর জমিতে। এখান থেকে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮২৫ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরও জানায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বছর রাজশাহীতে লিচুর আশানুরূপ ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। রাজশাহীর প্রায় সব উপজেলাতেই লিচু বাগান রয়েছে। তাই এই ফলের চাষ খুবই লাভজনক। তবে কোনো মৌসুমে ফলন একটু কম আবার কোনো মৌসুমে বেশি হয়। তবে প্রতি বছর লিচুর আবাদ বাড়ছে। দেশি লিচুর পাশাপাশি উচ্চফলনশীল চায়না-৩ এবং বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচুর চাষ হচ্ছে। এখন রাজশাহীর কিছু কিছু জায়গায় বাড়িতেও লিচু চাষ করছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, এবার রাজশাহীতে লিচুর ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কোনো দুর্যোগের কবলে না পড়লে কৃষকরা লাভবান হবেন। প্রতি বছর রাজশাহীতে লিচু চাষ বাড়ছে। লাভ হওয়ায় কৃষকরা লিচু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বাজারে লিচু পর্যাপ্ত পরিমাণে আসতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।