ভালুকা (ময়মনসিংহ) : মাঠে মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক -সংবাদ
ভরা মৌসুমে ভালুকার বিভিন্ন গ্রামে বোরো ধান কাটার শ্রমিক সংকটের কারনে বোরো ফসল ঘরে তুলতে কৃষকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। বোরো ধান মাড়াই করে ঘরে তুলতে হিমসিম খাচ্ছেন কৃষকরা। বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কৃষি কাজে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে বলে চাষীরা জানিয়েছেন। উপজেলার ধলিয়া গ্রামের কৃষক সাহাব উদ্দীন জানান তারা এক হাজার টাকা রোজে বেতন দিয়ে জমির ধান কাটাচ্ছেন তাও শ্রমিক সংখ্যা খুবই কম।
অনেকের খেতে শ্রমিকের জন্য কাচি ধরাতে পারেননি। এদিকে কাল বৈশাখীর আক্রমণে যে কোনো সময় পাঁকা ধানের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনায় কৃষকরা আতঙ্কিত। চাষীদের অনেকেই জানান গত অর্থবছরে কৃষি বিভাগ ৫০% ভর্তুকি দিয়ে বিভিন্ন এলাকার কিছু ব্যাক্তিদের মধ্যে ধান কাটার হারভেষ্টার মেশিন দিয়েছিলেন যা এলাকার চাষীদের সাশ্রয়ী খরচে অল্প সময়ে ধান কাটার কাজে ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই সব হারভেস্টার মেশিনগুলো এলাকার কোথাও ধান কাটার কাজে ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে না বলে চাষীদের অভিযোগ।
সময়মতো ধান কাটতে পারলে এ সময় কৃষকের আঙিনায় জড়োকরা সোনালী ধান গোছায় হাঁসি ছড়ায়। মহাব্যস্ততায় সময় কাটে কৃষক পরিবারের নারী পুরুষ ছোট বড় সকল সদস্যদের। সকাল হতেই বাহুক কাঁধে কাস্তে হাতে ধান কাটতে মাঠে ছুটেন কৃষকরা শ্রমিকদের সাথে নিয়ে। শুরু হয় পালাক্রমে ধান কেটে আঁটি বাধা। বেলা গড়াতেই ছেলে পুলেরা ভাতের তাগার মাথায় করে হাজির হয় খেতের পাড়ে খাবার নিয়ে। হাতে হাতে থালা নিয়ে শাক ভাত সিধল ভর্তা (গ্রামের ভাষায় চেপার ভর্তা) দিয়ে তৃপ্তিসহ ভাত খেয়ে আবার শুরু হয় ধানের গোছায় খেচাখেছ কাস্তে চালনা। পরন্ত বেলায় ধান কাটা শেষে ধানের আঁটি কৃষকের আঙিনায় জড়ো করার পালা।
বসে নেই কৃষাণ বউ ঝিরাও। রাত জেগে মাড়াই করা ধান সিদ্ধ করতে উঠানে চলে বড় কড়াইয়ে চুলায় জ¦াল দেয়ার কাজ। এ ভাবে সারারাত মণের পর মণ ধান সিদ্ধ করে পরদিন শুরু হয় রোদে ধান শুকানোর কাজ। ধান শুকানোর ফাঁকে ফাঁকে বউ শাশুরী মিলে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে লালচিনির গরম জিলাপি কিনে চুপি চুপি খাওয়ার আনন্দ কৃষক পরিবারে আবহমান কাল ধরে বোরো মাড়াইয়ের সময় চলে আসছে। এ সময় গরম জিলাপি, কাঠগজা, রসগজা, রসগোল্লা, চিনা বাদাম নানা রকম রসনাবিলাসী খাবার নিয়ে হাট বাজার থেকে ঘুষেরা গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করে থাকে। গৃহস্থ বউ ঝিরা ধান দিয়ে এসব কিনে ছেলে মেয়ে নিয়ে তৃপ্তি ভরে খেয়ে থাকেন। তবে এ বছর শ্রমিক সংকটের কারণে খেতের ধান গোলায় তুলতে চাষীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
পৌষ-মাঘ দুই মাস বোরো ধান রোপণের উপযুক্ত সময়। কোন কোন এলাকায় চৈত্রের শেষদিকে আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হলেও বৈশাখ মাসজুড়ে বোরো ধান কাটায় যেমন ব্যস্ত থাকেন কৃষকরা তেমনি আতঙ্কেও থাকতে হয়। এ সময়টায় কাল বৈশাখী শুরুর সময় হওয়ায় ঝড় বৃষ্টি ও শিলা বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
তাই কৃষকরা অনেকটা তাড়াহুড়োর মধ্য দিয়ে বোরো ধান মাড়াই করে ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় কাটান। উপজেলার বাটাজোর গ্রামের কৃষক হাফিজ উদ্দীনের ক্ষেতে তেজগুল হাইব্রিড জাতের বোরো ধান কাটছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। কৃষক হাফিজ উদ্দীন জানান তিনি প্রায় ২০ কাঠ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। শ্রমিক সংকটের কারণে প্রতি কাঠা ৮০০ টাকা রোজে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাচ্ছেন। বীজ, জমিচাষ, চারা রোপণ, সার কীটনাশক, পানি সেচ, আগাছা নিড়ানি ও ধান কাটা বাবদ প্রতি কাঠা জমি আবাদ করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার টাকার মতো। ধানের প্রাপ্ত ফলন অনুপাতে কাঠাতে সর্বোচ্চ ৫ মণ ধান পেলে বর্তমান বাজার মূল্যে বিক্রি হবে সারে ৫ হাজার টাকা। ধান চাষে তেমন লাভ না হলেও পরিবারের সদস্যদের সারাবছরের ভাত জোগাতে ধানের আবাদ করতে হয়। তবে উৎপাদন খরচ কম হলে ধান চাষে লাভবান হওয়া সম্ভব হতো। তিনি জানান বোরো ধানে নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানির সম্ভাবনা থাকে। তাই অনেকটা তড়িঘড়ি করেই কৃষকরা বোরো ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে যায়। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে চলতি মৌসুমে ভালুকা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। হাইব্রিড ২১৬৫ হেক্টর উফসি ১৬৪৮৬ হেক্টর ।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : মাঠে মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক -সংবাদ
শনিবার, ১০ মে ২০২৫
ভরা মৌসুমে ভালুকার বিভিন্ন গ্রামে বোরো ধান কাটার শ্রমিক সংকটের কারনে বোরো ফসল ঘরে তুলতে কৃষকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। বোরো ধান মাড়াই করে ঘরে তুলতে হিমসিম খাচ্ছেন কৃষকরা। বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কৃষি কাজে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে বলে চাষীরা জানিয়েছেন। উপজেলার ধলিয়া গ্রামের কৃষক সাহাব উদ্দীন জানান তারা এক হাজার টাকা রোজে বেতন দিয়ে জমির ধান কাটাচ্ছেন তাও শ্রমিক সংখ্যা খুবই কম।
অনেকের খেতে শ্রমিকের জন্য কাচি ধরাতে পারেননি। এদিকে কাল বৈশাখীর আক্রমণে যে কোনো সময় পাঁকা ধানের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনায় কৃষকরা আতঙ্কিত। চাষীদের অনেকেই জানান গত অর্থবছরে কৃষি বিভাগ ৫০% ভর্তুকি দিয়ে বিভিন্ন এলাকার কিছু ব্যাক্তিদের মধ্যে ধান কাটার হারভেষ্টার মেশিন দিয়েছিলেন যা এলাকার চাষীদের সাশ্রয়ী খরচে অল্প সময়ে ধান কাটার কাজে ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই সব হারভেস্টার মেশিনগুলো এলাকার কোথাও ধান কাটার কাজে ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে না বলে চাষীদের অভিযোগ।
সময়মতো ধান কাটতে পারলে এ সময় কৃষকের আঙিনায় জড়োকরা সোনালী ধান গোছায় হাঁসি ছড়ায়। মহাব্যস্ততায় সময় কাটে কৃষক পরিবারের নারী পুরুষ ছোট বড় সকল সদস্যদের। সকাল হতেই বাহুক কাঁধে কাস্তে হাতে ধান কাটতে মাঠে ছুটেন কৃষকরা শ্রমিকদের সাথে নিয়ে। শুরু হয় পালাক্রমে ধান কেটে আঁটি বাধা। বেলা গড়াতেই ছেলে পুলেরা ভাতের তাগার মাথায় করে হাজির হয় খেতের পাড়ে খাবার নিয়ে। হাতে হাতে থালা নিয়ে শাক ভাত সিধল ভর্তা (গ্রামের ভাষায় চেপার ভর্তা) দিয়ে তৃপ্তিসহ ভাত খেয়ে আবার শুরু হয় ধানের গোছায় খেচাখেছ কাস্তে চালনা। পরন্ত বেলায় ধান কাটা শেষে ধানের আঁটি কৃষকের আঙিনায় জড়ো করার পালা।
বসে নেই কৃষাণ বউ ঝিরাও। রাত জেগে মাড়াই করা ধান সিদ্ধ করতে উঠানে চলে বড় কড়াইয়ে চুলায় জ¦াল দেয়ার কাজ। এ ভাবে সারারাত মণের পর মণ ধান সিদ্ধ করে পরদিন শুরু হয় রোদে ধান শুকানোর কাজ। ধান শুকানোর ফাঁকে ফাঁকে বউ শাশুরী মিলে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে লালচিনির গরম জিলাপি কিনে চুপি চুপি খাওয়ার আনন্দ কৃষক পরিবারে আবহমান কাল ধরে বোরো মাড়াইয়ের সময় চলে আসছে। এ সময় গরম জিলাপি, কাঠগজা, রসগজা, রসগোল্লা, চিনা বাদাম নানা রকম রসনাবিলাসী খাবার নিয়ে হাট বাজার থেকে ঘুষেরা গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করে থাকে। গৃহস্থ বউ ঝিরা ধান দিয়ে এসব কিনে ছেলে মেয়ে নিয়ে তৃপ্তি ভরে খেয়ে থাকেন। তবে এ বছর শ্রমিক সংকটের কারণে খেতের ধান গোলায় তুলতে চাষীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
পৌষ-মাঘ দুই মাস বোরো ধান রোপণের উপযুক্ত সময়। কোন কোন এলাকায় চৈত্রের শেষদিকে আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হলেও বৈশাখ মাসজুড়ে বোরো ধান কাটায় যেমন ব্যস্ত থাকেন কৃষকরা তেমনি আতঙ্কেও থাকতে হয়। এ সময়টায় কাল বৈশাখী শুরুর সময় হওয়ায় ঝড় বৃষ্টি ও শিলা বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
তাই কৃষকরা অনেকটা তাড়াহুড়োর মধ্য দিয়ে বোরো ধান মাড়াই করে ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় কাটান। উপজেলার বাটাজোর গ্রামের কৃষক হাফিজ উদ্দীনের ক্ষেতে তেজগুল হাইব্রিড জাতের বোরো ধান কাটছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। কৃষক হাফিজ উদ্দীন জানান তিনি প্রায় ২০ কাঠ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। শ্রমিক সংকটের কারণে প্রতি কাঠা ৮০০ টাকা রোজে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাচ্ছেন। বীজ, জমিচাষ, চারা রোপণ, সার কীটনাশক, পানি সেচ, আগাছা নিড়ানি ও ধান কাটা বাবদ প্রতি কাঠা জমি আবাদ করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার টাকার মতো। ধানের প্রাপ্ত ফলন অনুপাতে কাঠাতে সর্বোচ্চ ৫ মণ ধান পেলে বর্তমান বাজার মূল্যে বিক্রি হবে সারে ৫ হাজার টাকা। ধান চাষে তেমন লাভ না হলেও পরিবারের সদস্যদের সারাবছরের ভাত জোগাতে ধানের আবাদ করতে হয়। তবে উৎপাদন খরচ কম হলে ধান চাষে লাভবান হওয়া সম্ভব হতো। তিনি জানান বোরো ধানে নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানির সম্ভাবনা থাকে। তাই অনেকটা তড়িঘড়ি করেই কৃষকরা বোরো ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে যায়। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে চলতি মৌসুমে ভালুকা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। হাইব্রিড ২১৬৫ হেক্টর উফসি ১৬৪৮৬ হেক্টর ।