রাজশাহী : সংরক্ষণ করার জন্য আলু বস্তায় ভরছে কৃষক -সংবাদ
রাজশাহী অঞ্চলে আলু লাগানো শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসে। এরপর শুরু হয় পরিচর্যা। আলু তোলার ধুম পড়ে ফাল্পুন ও চৈত্রজুড়ে। সে আলু করা হয় সংরক্ষণ। চাষিরা আলু লাগিয়ে স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু এবার সে স্বপ্ন ফিকে হয়ে হয়ে গেছে। চাষিদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। উল্টো লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু।
চাষিরা বলছেন, গেল এক যুগে আলু দামের এত পতন হয়নি। উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ আলু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে আলুচাষিরা। ক্রেতা না থাকায় কৃষকরা না পারছে জমি থেকে বিক্রি করতে আবার বুকিং না থাকায় হিমাগারেও রাখতে পারেননি। কৃষকরা বলছেন, মাঠ থেকে আলু বিক্রি করা হচ্ছে ৯ থেকে ১১ টাকা কেজিতে। যার মণ হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৪৪০ টাকা। এতে আরও লোকসান হচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ, হিমাগার মালিক ও মজুতদারদের কারসাজিতে আলুর দরপতন ঘটেছে। এবার রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে আলুর বাম্পার ফলন হলেও, ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গেল বছর রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে হিমাগার ভাড়া ছিল ৪ টাকা। এবার এক লাফে সংরক্ষণ ভাড়া বাড়িয়ে আট টাকা করা হয়েছে। হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৌশল করে হিমাগারের অগ্রিম বুকিং সম্পন্ন করে রেখেছে।
ভুক্তভোগী আলুচাষিরা আরও বলছেন, এবার সাধারণ কৃষকরা হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ফলে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের হাজারও আলু চাষি বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচের অর্ধেকও না উঠায় ব্যাংক ও মহাজনী ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, রাজশাহী জেলায় ৩৭ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। মৌসুমে জেলায় প্রায় ১১ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। রাজশাহীতে ৩৬টি হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা চার লাখ টন। প্রায় ৭ লাখ টন আলু থেকে যাবে সংরক্ষণের বাইরে আছে।
কৃষি সম্প্রসারণ রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ২৭ টন হিসাবে এই পরিমাণ জমি থেকে এবার প্রায় মোট ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার টন আলু ফলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের সর্বাধিক আলু উৎপাদনকারী জেলাগুলো হলো রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর।
উত্তরাঞ্চলে আলু সংরক্ষণের জন্য ২২১টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টন। এই পরিমাণ উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত মোট আলুর মাত্র ২৩ ভাগ। বাকি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ২৮৮ টন আলু সাময়িকভাবে গৃহ পর্যায়ে সংরক্ষণ করা হয় এবং কিছু আলু চলতি বাজারে বিক্রি করা হয়।
তানোর আলুচাষি রমজান আলী বলেন, মৌসুমে বীজ আলুর দাম দ্বিগুণ হওয়ায় এক বিঘা জমিতে আলু আবাদে ব্যয় হয়েছে ্ন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে এবার আলু হয়েছে ৪ হাজার ৪৫০ কেজি। প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছি ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি বিঘায় এবার আমার ক্ষতি দাঁড়াচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
বাগামারা উপজেলার বানাইপুর গ্রামের আলুচাষি জুয়েল রানা বলেন, আমরা কৃষক সবদিকেই ক্ষতিগ্রস্ত। এবার ফলন হয়েছে, কিন্তু লাভ হলো না। কোল্ড স্টোরেজে জায়গা পাইনি। গত বছর কেজি প্রতি কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া ছিল ৪ টাকা। এবার সেটি ৮ টাকা হয়েছে। এ বিপুল লোকসান কাটিয়ে ওঠা কঠিন। তাই আলু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। সেখানেও কোন লাভ উঠছে না।
রাজশাহী হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, হিমাগারের ভাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, হিমাগারে বুকিং শুরু হয় আবাদ শুরুর অনেক আগে। অনেক ক্ষেত্রে এক বছর আগেই বুকিং হয়ে যায়। এখানে সিন্ডিকেটের কিছু নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোতালেব হোসেন জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় এবার আলু দাম কমে গেছে।
রাজশাহী : সংরক্ষণ করার জন্য আলু বস্তায় ভরছে কৃষক -সংবাদ
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
রাজশাহী অঞ্চলে আলু লাগানো শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসে। এরপর শুরু হয় পরিচর্যা। আলু তোলার ধুম পড়ে ফাল্পুন ও চৈত্রজুড়ে। সে আলু করা হয় সংরক্ষণ। চাষিরা আলু লাগিয়ে স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু এবার সে স্বপ্ন ফিকে হয়ে হয়ে গেছে। চাষিদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। উল্টো লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু।
চাষিরা বলছেন, গেল এক যুগে আলু দামের এত পতন হয়নি। উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ আলু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে আলুচাষিরা। ক্রেতা না থাকায় কৃষকরা না পারছে জমি থেকে বিক্রি করতে আবার বুকিং না থাকায় হিমাগারেও রাখতে পারেননি। কৃষকরা বলছেন, মাঠ থেকে আলু বিক্রি করা হচ্ছে ৯ থেকে ১১ টাকা কেজিতে। যার মণ হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৪৪০ টাকা। এতে আরও লোকসান হচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ, হিমাগার মালিক ও মজুতদারদের কারসাজিতে আলুর দরপতন ঘটেছে। এবার রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে আলুর বাম্পার ফলন হলেও, ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গেল বছর রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে হিমাগার ভাড়া ছিল ৪ টাকা। এবার এক লাফে সংরক্ষণ ভাড়া বাড়িয়ে আট টাকা করা হয়েছে। হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৌশল করে হিমাগারের অগ্রিম বুকিং সম্পন্ন করে রেখেছে।
ভুক্তভোগী আলুচাষিরা আরও বলছেন, এবার সাধারণ কৃষকরা হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ফলে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের হাজারও আলু চাষি বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচের অর্ধেকও না উঠায় ব্যাংক ও মহাজনী ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, রাজশাহী জেলায় ৩৭ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। মৌসুমে জেলায় প্রায় ১১ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। রাজশাহীতে ৩৬টি হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা চার লাখ টন। প্রায় ৭ লাখ টন আলু থেকে যাবে সংরক্ষণের বাইরে আছে।
কৃষি সম্প্রসারণ রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ২৭ টন হিসাবে এই পরিমাণ জমি থেকে এবার প্রায় মোট ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার টন আলু ফলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের সর্বাধিক আলু উৎপাদনকারী জেলাগুলো হলো রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর।
উত্তরাঞ্চলে আলু সংরক্ষণের জন্য ২২১টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টন। এই পরিমাণ উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত মোট আলুর মাত্র ২৩ ভাগ। বাকি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ২৮৮ টন আলু সাময়িকভাবে গৃহ পর্যায়ে সংরক্ষণ করা হয় এবং কিছু আলু চলতি বাজারে বিক্রি করা হয়।
তানোর আলুচাষি রমজান আলী বলেন, মৌসুমে বীজ আলুর দাম দ্বিগুণ হওয়ায় এক বিঘা জমিতে আলু আবাদে ব্যয় হয়েছে ্ন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে এবার আলু হয়েছে ৪ হাজার ৪৫০ কেজি। প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছি ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি বিঘায় এবার আমার ক্ষতি দাঁড়াচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
বাগামারা উপজেলার বানাইপুর গ্রামের আলুচাষি জুয়েল রানা বলেন, আমরা কৃষক সবদিকেই ক্ষতিগ্রস্ত। এবার ফলন হয়েছে, কিন্তু লাভ হলো না। কোল্ড স্টোরেজে জায়গা পাইনি। গত বছর কেজি প্রতি কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া ছিল ৪ টাকা। এবার সেটি ৮ টাকা হয়েছে। এ বিপুল লোকসান কাটিয়ে ওঠা কঠিন। তাই আলু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। সেখানেও কোন লাভ উঠছে না।
রাজশাহী হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, হিমাগারের ভাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, হিমাগারে বুকিং শুরু হয় আবাদ শুরুর অনেক আগে। অনেক ক্ষেত্রে এক বছর আগেই বুকিং হয়ে যায়। এখানে সিন্ডিকেটের কিছু নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোতালেব হোসেন জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় এবার আলু দাম কমে গেছে।