রংপুরের বদরগঞ্জে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য শ্রম বিক্রি করছেন শিক্ষার্থীরা। কেউ এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শেষে ছুটিতে, কেউবা এসএসসি পরীক্ষার মাঝে দু’দিনের ছুটিতে, আবার কেউ কেউ স্কুল ছুটি শেষে মাঠে ধান কাটতে, ভুট্টা তুলতে কিংবা মাটি কাটতে। তাদের একটাই লক্ষ্য- টাকা উপার্জন করতে হবে। তবে সে টাকা নিজের ও পরিবারের জন্য নয়; লোহানীপাড়া ইউনিয়নের ঘিরনই এলাকার পানারহাট ঘোনাপাড়ায় মসজিদ নির্মাণের জন্য এভাবেই তারা কাজ করে যাচ্ছেন ফসলের মাঠে ও পুকুর পাড়ে।
জানা যায়, উপজেলা শহর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে লোহানীপাড়া ইউনিয়নের ঘিরনই এলাকার পানারহাট ঘোনাপাড়া অবস্থিত। এখানে ১২৫টি পরিবারের প্রায় ৬শ’ মানুষের বসবাস। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই কৃষি শ্রমিক। বাকীরা ক্ষুদ্র কৃষক। পাকিস্তান আমলে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য ৯শতক জমি দান করেন মোকলেছার রহমান নামে এক ব্যক্তি। এরপর ৫শতক জমিতে মাটি দিয়ে একটি মসজিদ ঘর নির্মাণ করা হয়। তখন থেকে এলাকার মানুষজন মাটির তৈরি ওই মসজিদ ঘরেই নামাজ আদায় করে আসছেন। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। তারপরও এলাকার লোকজন ঝুঁকি নিয়ে সেখানে নামাজ আদায় করতেন। কিন্তু মাস তিনেক আগে এলাকার শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নেন ওই মাটির তৈরি মসজিদ ঘর ভেঙ্গে সেখানে নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করবেন। এতে সম্মতি জানান এলাকার লোকজনও। একারণে যে যা পেরেছেন মসজিদ নির্মাণের জন্য দান করেন। যার পরিমাণ ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু ওই টাকা দিয়ে তো আর মসজিদ নির্মাণ সম্ভব নয়। একারণে শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেন তারা এক জোট হয়ে শ্রম বিক্রি করবেন। এ থেকে যা আয় হবে তা’ দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করা হবে। সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা মাঠে মাঠে ঘুরছেন আর কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন। তাদের উৎসাহ যোগাতে এলাকার কৃষি শ্রমিকরা নিজ এলাকায় কাজ না করে অন্য এলাকায় কাজ করছেন। সরেজমিন এলাকা ঘুরে এমনই দৃশ্য দেখা গেছে। এসময় কথা হয় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের দর্শণ বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের সাথে। তিনি বলেন, এটি একটি দরিদ্র এলাকা। এখানকার মানুষজনের পক্ষে মসজিদ নির্মাণের ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। তাই এলাকার শিক্ষার্থীরা ৪০জনের একটি দল গঠণ করে দিন মজুরি করছি। তিনি আরো বলেন, প্রতি একর ধান কাটতে ১২ হাজার টাকা ও ভুট্টা তুলতে ৮হাজার টাকা এবং মাটি কাটতে জনপ্রতি ৫শ’ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। মেহেদী বলেন, দলে নানা ক্লাসের শিক্ষার্থী থাকায় পড়াশোনা ও কাজে কোনটাতেই ব্যাঘাত ঘটছেনা। এসএসসি পরীক্ষার্থী মিল্লাত হোসেন বলেন, যেদিন পরীক্ষা থাকে সেদিন আমি থাকিনা তবে বন্ধের দিন পুরোটাই কাজে থাকি। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নহবীর আলম বলেন, ছুটির দিন মা-বাবাই আমাকে বড়ভাইদের সাথে কাজ করতে পাঠিয়ে দেন। তাদের একটাই কথা তোরা তো আর মোবাইলে গেম খেলে সময় নষ্ট করছিসনা। কিংবা টাকা আয় করে পরিবারে দিচ্ছিসনা। ভালো কাজের জন্য শ্রম দিয়ে টাকা আয় করছিস। এতে কোন সমস্যা নেই। জয়পুরহাট সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষা দিয়েই চলে এসেছি কাজ করতে। কারণ এখন পর্যন্ত মসজিদ নির্মাণে ৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আরো অনেক টাকার দরকার। তিনি বলেন, আমরা কারো কাছে সাহায্য চাইনা। আমাদের একটাই চাওয়া- কাজের বিনিময়ে টাকা দেন। ওই টাকা মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হবে।
ব্যবসায়ী ইউনুস আলী মিন্টু বলেন, আমাদের দেশে সাধারণতঃ মসজিদ নির্মাণের জন্য এলাকার লোকজন দল বেঁধে হাটে-বাজারে চাঁদা তোলেন, কখনো রাস্তায় মাইক বাজিয়ে পথচারিদের কষ্ট দিয়ে টাকা আদায় করেন। কিন্তু ওরা(শিক্ষার্থীরা) সেটা না করে মাঠে ঘুরে কাজ করে টাকা জোগাড় করছেন- এটা শুধু এলাকায় নয়, দেশের জন্যও এক অনন্য দৃষ্টান্ত। মসজিদ নির্মাণ কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যা হলেই ছেলেরা মাটি কেটে, ধান কেটে ও ভুট্টা তুলে টাকা নিয়ে আসে। যখন তারা আমার হাতে টাকা তুলে দেয় তখন চোখ দিয়ে পানি ঝরে। কারণ ছেলেরা কোদাল, কাইচা দেখে বড় হলেও এগুলো কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা’ জানতনা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানার পর থেকেই সেখানে যেতে ইচ্ছে করছে। এছাড়া ওই মসজিদ নির্মাণে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে।
সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
রংপুরের বদরগঞ্জে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য শ্রম বিক্রি করছেন শিক্ষার্থীরা। কেউ এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শেষে ছুটিতে, কেউবা এসএসসি পরীক্ষার মাঝে দু’দিনের ছুটিতে, আবার কেউ কেউ স্কুল ছুটি শেষে মাঠে ধান কাটতে, ভুট্টা তুলতে কিংবা মাটি কাটতে। তাদের একটাই লক্ষ্য- টাকা উপার্জন করতে হবে। তবে সে টাকা নিজের ও পরিবারের জন্য নয়; লোহানীপাড়া ইউনিয়নের ঘিরনই এলাকার পানারহাট ঘোনাপাড়ায় মসজিদ নির্মাণের জন্য এভাবেই তারা কাজ করে যাচ্ছেন ফসলের মাঠে ও পুকুর পাড়ে।
জানা যায়, উপজেলা শহর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে লোহানীপাড়া ইউনিয়নের ঘিরনই এলাকার পানারহাট ঘোনাপাড়া অবস্থিত। এখানে ১২৫টি পরিবারের প্রায় ৬শ’ মানুষের বসবাস। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই কৃষি শ্রমিক। বাকীরা ক্ষুদ্র কৃষক। পাকিস্তান আমলে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য ৯শতক জমি দান করেন মোকলেছার রহমান নামে এক ব্যক্তি। এরপর ৫শতক জমিতে মাটি দিয়ে একটি মসজিদ ঘর নির্মাণ করা হয়। তখন থেকে এলাকার মানুষজন মাটির তৈরি ওই মসজিদ ঘরেই নামাজ আদায় করে আসছেন। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। তারপরও এলাকার লোকজন ঝুঁকি নিয়ে সেখানে নামাজ আদায় করতেন। কিন্তু মাস তিনেক আগে এলাকার শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নেন ওই মাটির তৈরি মসজিদ ঘর ভেঙ্গে সেখানে নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করবেন। এতে সম্মতি জানান এলাকার লোকজনও। একারণে যে যা পেরেছেন মসজিদ নির্মাণের জন্য দান করেন। যার পরিমাণ ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু ওই টাকা দিয়ে তো আর মসজিদ নির্মাণ সম্ভব নয়। একারণে শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেন তারা এক জোট হয়ে শ্রম বিক্রি করবেন। এ থেকে যা আয় হবে তা’ দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করা হবে। সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা মাঠে মাঠে ঘুরছেন আর কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন। তাদের উৎসাহ যোগাতে এলাকার কৃষি শ্রমিকরা নিজ এলাকায় কাজ না করে অন্য এলাকায় কাজ করছেন। সরেজমিন এলাকা ঘুরে এমনই দৃশ্য দেখা গেছে। এসময় কথা হয় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের দর্শণ বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের সাথে। তিনি বলেন, এটি একটি দরিদ্র এলাকা। এখানকার মানুষজনের পক্ষে মসজিদ নির্মাণের ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। তাই এলাকার শিক্ষার্থীরা ৪০জনের একটি দল গঠণ করে দিন মজুরি করছি। তিনি আরো বলেন, প্রতি একর ধান কাটতে ১২ হাজার টাকা ও ভুট্টা তুলতে ৮হাজার টাকা এবং মাটি কাটতে জনপ্রতি ৫শ’ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। মেহেদী বলেন, দলে নানা ক্লাসের শিক্ষার্থী থাকায় পড়াশোনা ও কাজে কোনটাতেই ব্যাঘাত ঘটছেনা। এসএসসি পরীক্ষার্থী মিল্লাত হোসেন বলেন, যেদিন পরীক্ষা থাকে সেদিন আমি থাকিনা তবে বন্ধের দিন পুরোটাই কাজে থাকি। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নহবীর আলম বলেন, ছুটির দিন মা-বাবাই আমাকে বড়ভাইদের সাথে কাজ করতে পাঠিয়ে দেন। তাদের একটাই কথা তোরা তো আর মোবাইলে গেম খেলে সময় নষ্ট করছিসনা। কিংবা টাকা আয় করে পরিবারে দিচ্ছিসনা। ভালো কাজের জন্য শ্রম দিয়ে টাকা আয় করছিস। এতে কোন সমস্যা নেই। জয়পুরহাট সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষা দিয়েই চলে এসেছি কাজ করতে। কারণ এখন পর্যন্ত মসজিদ নির্মাণে ৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আরো অনেক টাকার দরকার। তিনি বলেন, আমরা কারো কাছে সাহায্য চাইনা। আমাদের একটাই চাওয়া- কাজের বিনিময়ে টাকা দেন। ওই টাকা মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হবে।
ব্যবসায়ী ইউনুস আলী মিন্টু বলেন, আমাদের দেশে সাধারণতঃ মসজিদ নির্মাণের জন্য এলাকার লোকজন দল বেঁধে হাটে-বাজারে চাঁদা তোলেন, কখনো রাস্তায় মাইক বাজিয়ে পথচারিদের কষ্ট দিয়ে টাকা আদায় করেন। কিন্তু ওরা(শিক্ষার্থীরা) সেটা না করে মাঠে ঘুরে কাজ করে টাকা জোগাড় করছেন- এটা শুধু এলাকায় নয়, দেশের জন্যও এক অনন্য দৃষ্টান্ত। মসজিদ নির্মাণ কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যা হলেই ছেলেরা মাটি কেটে, ধান কেটে ও ভুট্টা তুলে টাকা নিয়ে আসে। যখন তারা আমার হাতে টাকা তুলে দেয় তখন চোখ দিয়ে পানি ঝরে। কারণ ছেলেরা কোদাল, কাইচা দেখে বড় হলেও এগুলো কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা’ জানতনা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানার পর থেকেই সেখানে যেতে ইচ্ছে করছে। এছাড়া ওই মসজিদ নির্মাণে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে।