সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : নানা সংকটে জর্জরিত হাসপাতালের চিত্র -সংবাদ
সরাইল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার সরকারি একমাত্র ৫০ শয্যার হাসপাতালটি চিকিৎসকের অভাবে নিজেই যেন এখন রোগী। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, কর্মচারী, চাহিদা মাফিক ওষুধ, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সংকটে সুফল পাচ্ছ না দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। সরজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটির প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভবনের জন্য ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৬ তলা বিশিষ্ট ভবনের ৫ অগাস্টের পর নির্মাণাধীন কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানাভাবে জরুরি বিভাগ, চিকিৎসকের কক্ষের বারান্দাসহ প্যাথলজিকাল, ফার্মেসি, ওয়ার্ড, মেঝে সর্বত্রই ভর্তিকৃত রোগীদের ভিড়ের দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।
জানা গেছে, উক্ত হাসপাতালে কনসালটেন্টসহ চিকিৎসকের ১৮টি, নার্স এর ৬টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ২টি, ফিল্ড স্টাফ ১৫টি, অন্যান্য ১৯টি, প্রেষণে থাকা পদসহ ৬০টি পদ শূন্য রয়েছে। তবে প্রেষণে থাকায় কর্তৃপক্ষের মতে শূন্য পদের সংখ্যা ৫২ জন মাত্র।
বড্ডাপাড়া থেকে আসা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগী মুন্নী বেগম (২৫) জানায়, হাসপাতালে ডাক্তারের অভাব আছে উপলব্ধি করা যায়। প্রচুর রোগীর মাঝে ডাক্তার ও নার্সের সেবা মোটামুটি সন্তোষজনক।
উচালিয়াপাড়ার মো. নাজির (৫৫) জানান, হাসপাতালে স্যালাইন পর্যাপ্ত পাওয়া যায়। নার্সদের ডেকে আনতে হয়। ডাক্তার এবং নার্সদের আরও আন্তরিক হওয়া উচিত।
চিকিৎসক এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলছে জরুরি বিভাগ। আন্তঃবিভাগে রোগীদের অধিকাংশই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। শিশুদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মত হাসপাতালে নেই কোন শিশু চিকিৎসক। জটিল রোগে আক্রান্ত শিশুরা আসলে সাধারণ চিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়েই ফিরে যেতে হয় অন্যত্র। দালালদের খপ্পরে পড়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতাধীন ২৬টি কমিউনিটি সেন্টারে প্রতিটিতে একজন চিকিৎসক, একজন সহকারী চিকিৎসক, (বর্তমানে পদটি বিলুপ্ত), একজন ফার্মাসিস্ট এবং একজন পিয়ন/ব্রাদার থাকার কথা। সেক্ষেত্রে মাত্র ৪/৫টি সেন্টারে ফার্মাসিস্ট এবং পিয়ন এবং বাকি সেন্টারগুলোতে শুধু পিয়ন দিয়ে চিকিৎসাসেবা চালানো হচ্ছে। কমিউনিটি সেন্টার গুলোতে গেলে এই আজব চিত্র চোখে পড়ে। এই সেন্টারগুলোর চিকিৎসা সেবা নিয়ে সুধীজনরা আতংকিত। হাসপাতালটিতে মানসম্মত আলট্রা সনোগ্রাম মেশিন থাকলেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না এই মেশিনটি। হাসপাতালে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন না থাকায় মান্ধাতা আমলের মেশিনে রোগীরা এক্সরে করতে উৎসাহবোধ করছে না।
এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জানান, জনবলের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো স্থানাভাব। জরুরি ভিত্তিতে ৫ অগাস্টের পর স্থগিত হয়ে যাওয়া ভবনের কাজ শুরু করা প্রয়োজন। হাসপাতালের বিভিন্ন ক্যাটাগরির শূন্যপদগুলো পূরণের লক্ষ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি সিভিল সার্জন মহোদয় অবহিত আছেন। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আশা করি জনবল সমস্যা নিকটবর্তী সময়ের মধ্যে নিরসন হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নোমান মিয়া বলেন, সমস্যার বিষয়টি অবহিত আছি। দ্রুত শূন্যপদগুলো পুরণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদের জনবল বৃদ্ধি পাবে এবং সমস্যা লাঘব ঘটবে। কমিউনিটি সেন্টারগুলোর চিকিৎসাসেবা নিয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসক না থাকায় সেখানে শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : নানা সংকটে জর্জরিত হাসপাতালের চিত্র -সংবাদ
সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
সরাইল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার সরকারি একমাত্র ৫০ শয্যার হাসপাতালটি চিকিৎসকের অভাবে নিজেই যেন এখন রোগী। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, কর্মচারী, চাহিদা মাফিক ওষুধ, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সংকটে সুফল পাচ্ছ না দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। সরজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটির প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভবনের জন্য ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৬ তলা বিশিষ্ট ভবনের ৫ অগাস্টের পর নির্মাণাধীন কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানাভাবে জরুরি বিভাগ, চিকিৎসকের কক্ষের বারান্দাসহ প্যাথলজিকাল, ফার্মেসি, ওয়ার্ড, মেঝে সর্বত্রই ভর্তিকৃত রোগীদের ভিড়ের দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।
জানা গেছে, উক্ত হাসপাতালে কনসালটেন্টসহ চিকিৎসকের ১৮টি, নার্স এর ৬টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ২টি, ফিল্ড স্টাফ ১৫টি, অন্যান্য ১৯টি, প্রেষণে থাকা পদসহ ৬০টি পদ শূন্য রয়েছে। তবে প্রেষণে থাকায় কর্তৃপক্ষের মতে শূন্য পদের সংখ্যা ৫২ জন মাত্র।
বড্ডাপাড়া থেকে আসা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগী মুন্নী বেগম (২৫) জানায়, হাসপাতালে ডাক্তারের অভাব আছে উপলব্ধি করা যায়। প্রচুর রোগীর মাঝে ডাক্তার ও নার্সের সেবা মোটামুটি সন্তোষজনক।
উচালিয়াপাড়ার মো. নাজির (৫৫) জানান, হাসপাতালে স্যালাইন পর্যাপ্ত পাওয়া যায়। নার্সদের ডেকে আনতে হয়। ডাক্তার এবং নার্সদের আরও আন্তরিক হওয়া উচিত।
চিকিৎসক এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলছে জরুরি বিভাগ। আন্তঃবিভাগে রোগীদের অধিকাংশই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। শিশুদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মত হাসপাতালে নেই কোন শিশু চিকিৎসক। জটিল রোগে আক্রান্ত শিশুরা আসলে সাধারণ চিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়েই ফিরে যেতে হয় অন্যত্র। দালালদের খপ্পরে পড়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতাধীন ২৬টি কমিউনিটি সেন্টারে প্রতিটিতে একজন চিকিৎসক, একজন সহকারী চিকিৎসক, (বর্তমানে পদটি বিলুপ্ত), একজন ফার্মাসিস্ট এবং একজন পিয়ন/ব্রাদার থাকার কথা। সেক্ষেত্রে মাত্র ৪/৫টি সেন্টারে ফার্মাসিস্ট এবং পিয়ন এবং বাকি সেন্টারগুলোতে শুধু পিয়ন দিয়ে চিকিৎসাসেবা চালানো হচ্ছে। কমিউনিটি সেন্টার গুলোতে গেলে এই আজব চিত্র চোখে পড়ে। এই সেন্টারগুলোর চিকিৎসা সেবা নিয়ে সুধীজনরা আতংকিত। হাসপাতালটিতে মানসম্মত আলট্রা সনোগ্রাম মেশিন থাকলেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না এই মেশিনটি। হাসপাতালে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন না থাকায় মান্ধাতা আমলের মেশিনে রোগীরা এক্সরে করতে উৎসাহবোধ করছে না।
এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জানান, জনবলের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো স্থানাভাব। জরুরি ভিত্তিতে ৫ অগাস্টের পর স্থগিত হয়ে যাওয়া ভবনের কাজ শুরু করা প্রয়োজন। হাসপাতালের বিভিন্ন ক্যাটাগরির শূন্যপদগুলো পূরণের লক্ষ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি সিভিল সার্জন মহোদয় অবহিত আছেন। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আশা করি জনবল সমস্যা নিকটবর্তী সময়ের মধ্যে নিরসন হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নোমান মিয়া বলেন, সমস্যার বিষয়টি অবহিত আছি। দ্রুত শূন্যপদগুলো পুরণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদের জনবল বৃদ্ধি পাবে এবং সমস্যা লাঘব ঘটবে। কমিউনিটি সেন্টারগুলোর চিকিৎসাসেবা নিয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসক না থাকায় সেখানে শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।