বদরগঞ্জ (রংপুর) : যমুনেশ^রী নদীর ভাঙনে বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে জলুবরের অস্তিত্ব -সংবাদ
রংপুরের বদরগঞ্জে যমুনেশ^রী নদীর অব্যাহত ভাঙনে জলুবরের অস্তিত্ব বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে। নদী ভাঙনের কবলে পড়া মানুষজন এখন পুরোপুরি নিঃস্ব। তারা প্রাণ বাঁচাতে রাস্তার ধারে বসত গড়লেও ভাঙনের কবল থেকে তারা রক্ষা পাচ্ছেন না। এমনকি প্রাণহীন দেহের শেষ ঠিকানা এলাকার একমাত্র কবরস্থানটিও সুরক্ষিত নয়। তাই সর্বস্ব হারানো মানুষের দাবি যমুনেশ^রী নদীর জলুবরে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হোক। সম্প্রতি সরেজমিন ওই এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, এক সময়ে জলুবর ছিল নদীবন্দর এলাকা। ব্রিটিশ আমলে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে দেশ-বিদেশের অনেক নৌযান সেখানে ভিড়ত। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সবকিছু। শুধু তাই নয়, কয়েকশ একর আয়তনের জলুবর এখন কেবলই স্মৃতি। যমুনেশ^রী নদী পুরোপুরি গিলে ফেলেছে এক সময়ের ব্যস্ততম নৌবন্দর এলাকা জলুবরকে। এই কারণে সেখানকার লোকজন নতুন করে বসতি স্থাপন করেছেন বদরগঞ্জ-শেখেরহাট সড়কের পাশে। এক সময়ের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরা সব হারিয়ে প্রাণ বাঁচাতে বেছে নিয়েছেন দিনমজুরের পেশা। মানুষের বাড়িতে শ্রম দিয়ে যা পান তা দিয়ে সন্তান সন্ততি নিয়ে বেঁচে থাকার পাশাপাশি নতুন করে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেছেন এবং কবরস্থান গড়ে তুলেছেন তারা। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে আবারও নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে বদরগঞ্জ-শেখেরহাট সড়কসহ এলাকার মসজিদটিও হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া, অনেক আগেই বিলীন হয়েছে এলাকার ফসলি জমি।
কথা হয় ওই এলাকায় বসবাসকারী রুহুল শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, জলুবর এলাকায় আমার দেড় একর জমি ছিল। এখন আর সেই জমির কোন অস্তিত্বই নেই। এখন একটি ছোট্ট দোকানের আয় দিয়ে পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে জীবন কাটছে আমার। কিন্তু নদী যেভাবে ভাঙছে, তাতে করে মনে হচ্ছে এবার পুরোপুরি ঠিকানাহারা হতে হবে আমাদেরকে। ওই এলাকার লিটন শেখেরও দেড় একর সম্পত্তি যমুনেশ^রীতে বিলীন হয়ে গেছে। আব্দুল মান্নান এবং বাদশাহ মিয়াও ১ একর করে সম্পত্তি হারিয়েছেন। এখন তারা সবাই রাস্তার ধারে বসবাস করছেন। মোস্তফাপুর জলুবর জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. আলম হোসেন বলেন, এক সময় জলুবরে ৫ একর আয়তনের জমিতে মসজিদ ও মাদ্রাসা ছিল। সবই যমুনেশ্বরী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। পরবর্তীতে রাস্তার ধারে নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করার পাশাপাশি কবরস্থান গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে নদী ভাঙনের তীব্রতা এতই বেশি হয়েছে যে, তা কবরস্থান ভেদ করে রাস্তার কাছাকাছি চলে এসেছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ দেওয়া না হলে, নতুন করে আবার সর্বহারা হবেন এই এলাকার মানুষজন।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, দামোদরপুর নদী দিয়ে ঘেরা একটি ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে অনেক বড় বড় সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সমাধান করতে পারছি না বিধায় লজ্জায় অনেক এলাকায় যেতেও পারি না আমি। তারপরেও সমস্যার সমাধানে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন অধিদপ্তরে লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় কেউই কথা শুনতে চান না। তিনি হতাশ কণ্ঠে বলেন, তারপরেও আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেখি কী হয়! বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বদরগঞ্জ (রংপুর) : যমুনেশ^রী নদীর ভাঙনে বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে জলুবরের অস্তিত্ব -সংবাদ
সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
রংপুরের বদরগঞ্জে যমুনেশ^রী নদীর অব্যাহত ভাঙনে জলুবরের অস্তিত্ব বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে। নদী ভাঙনের কবলে পড়া মানুষজন এখন পুরোপুরি নিঃস্ব। তারা প্রাণ বাঁচাতে রাস্তার ধারে বসত গড়লেও ভাঙনের কবল থেকে তারা রক্ষা পাচ্ছেন না। এমনকি প্রাণহীন দেহের শেষ ঠিকানা এলাকার একমাত্র কবরস্থানটিও সুরক্ষিত নয়। তাই সর্বস্ব হারানো মানুষের দাবি যমুনেশ^রী নদীর জলুবরে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হোক। সম্প্রতি সরেজমিন ওই এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, এক সময়ে জলুবর ছিল নদীবন্দর এলাকা। ব্রিটিশ আমলে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে দেশ-বিদেশের অনেক নৌযান সেখানে ভিড়ত। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সবকিছু। শুধু তাই নয়, কয়েকশ একর আয়তনের জলুবর এখন কেবলই স্মৃতি। যমুনেশ^রী নদী পুরোপুরি গিলে ফেলেছে এক সময়ের ব্যস্ততম নৌবন্দর এলাকা জলুবরকে। এই কারণে সেখানকার লোকজন নতুন করে বসতি স্থাপন করেছেন বদরগঞ্জ-শেখেরহাট সড়কের পাশে। এক সময়ের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরা সব হারিয়ে প্রাণ বাঁচাতে বেছে নিয়েছেন দিনমজুরের পেশা। মানুষের বাড়িতে শ্রম দিয়ে যা পান তা দিয়ে সন্তান সন্ততি নিয়ে বেঁচে থাকার পাশাপাশি নতুন করে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেছেন এবং কবরস্থান গড়ে তুলেছেন তারা। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে আবারও নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে বদরগঞ্জ-শেখেরহাট সড়কসহ এলাকার মসজিদটিও হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া, অনেক আগেই বিলীন হয়েছে এলাকার ফসলি জমি।
কথা হয় ওই এলাকায় বসবাসকারী রুহুল শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, জলুবর এলাকায় আমার দেড় একর জমি ছিল। এখন আর সেই জমির কোন অস্তিত্বই নেই। এখন একটি ছোট্ট দোকানের আয় দিয়ে পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে জীবন কাটছে আমার। কিন্তু নদী যেভাবে ভাঙছে, তাতে করে মনে হচ্ছে এবার পুরোপুরি ঠিকানাহারা হতে হবে আমাদেরকে। ওই এলাকার লিটন শেখেরও দেড় একর সম্পত্তি যমুনেশ^রীতে বিলীন হয়ে গেছে। আব্দুল মান্নান এবং বাদশাহ মিয়াও ১ একর করে সম্পত্তি হারিয়েছেন। এখন তারা সবাই রাস্তার ধারে বসবাস করছেন। মোস্তফাপুর জলুবর জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. আলম হোসেন বলেন, এক সময় জলুবরে ৫ একর আয়তনের জমিতে মসজিদ ও মাদ্রাসা ছিল। সবই যমুনেশ্বরী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। পরবর্তীতে রাস্তার ধারে নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করার পাশাপাশি কবরস্থান গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে নদী ভাঙনের তীব্রতা এতই বেশি হয়েছে যে, তা কবরস্থান ভেদ করে রাস্তার কাছাকাছি চলে এসেছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ দেওয়া না হলে, নতুন করে আবার সর্বহারা হবেন এই এলাকার মানুষজন।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, দামোদরপুর নদী দিয়ে ঘেরা একটি ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে অনেক বড় বড় সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সমাধান করতে পারছি না বিধায় লজ্জায় অনেক এলাকায় যেতেও পারি না আমি। তারপরেও সমস্যার সমাধানে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন অধিদপ্তরে লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় কেউই কথা শুনতে চান না। তিনি হতাশ কণ্ঠে বলেন, তারপরেও আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেখি কী হয়! বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।