ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মালাউই, মালয়েশিয়া, উগান্ডা ও তানজানিয়ার মতো চা উৎপাদনকারী দেশসমূহ ২০০৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিবসটি উদযাপন করে আসছে। পূর্বে ১৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক চা দিবস পালন করা হতো।
২০১৯ সালে চা সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি গোষ্ঠী ২১ মে আন্তর্জাতিক চা দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। আন্তর্জাতিক চা দিবসের উদ্দেশ্য হলো চা-কর্মী ও উৎপাদকদের ওপর বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রভাব সরকার ও জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং অর্থনৈতিক সমর্থন ও ন্যায্য বাণিজ্যের সংযোগ স্থাপন করা।
২০০৪ সালে বিশ্ব সামাজিক সম্মেলনের পর ২০০৫ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক চা দিবস উদ্?যাপিত হয় ভারতের নতুন দিল্লিতে। পরবর্তীতে ২০০৬ ও ২০০৮ সালে দিবসটি উদ্?যাপনের আয়োজন করে শ্রীলঙ্কা। আন্তর্জাতিক চা দিবস উদ্যাপন ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিশ্ব চা সম্মেলন যৌথভাবে বিভিন্ন শ্রমকল্যাণ সমিতি আয়োজন করে থাকে।
২০১৫ সালে ভারত সরকার খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মাধ্যমে দিবসটির উদ্?যাপন আরো বিস্তৃত করার প্রস্তাব দেয়।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২০ সাল থেকে ২১ মে দিবসটিকে আন্তর্জাতিক চা দিবস হিসেবে পালন করার কথা ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ চা উৎপাদনকারী দেশ। এর চা শিল্প ব্রিটিশ শাসনামল থেকে চলে আসছে। যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে চা ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬৮টি বাণিজ্যিক চা এস্টেট রয়েছে। সর্বশেষ খাগড়াছড়ি জেলায় । যার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কর্মক্ষম চা বাগান। এখানকার এই শিল্প বিশ্বের ৩% চা উৎপাদন করে থাকে, এবং ৪০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।
এখানকার উত্তর এবং পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সমূহে চা উৎপাদন হয়ে থাকে। উচ্চভূমি, উষ্ণ জলবায়ু, আর্দ্র এবং অতি বৃষ্টি প্রবণ এলাকাসমূহ উন্নতমানের চা উৎপাদনের মোক্ষম পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়।
ঐতিহাসিকভাবে বঙ্গ চা অশ্ব সড়কের শেষপ্রান্ত ছিল। যা এই উপমহাদেশকে চীনের প্রথম দিককার চা-উৎপাদনকারী অঞ্চল ইউন্নানের সাথে সংযুক্ত করেছিল। অতীশ দীপঙ্করকে প্রথম দিককার একজন বাঙ্গালি চা পানকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
রবাট ব্াচ নামের একজন স্কটিশ ভ্রমণকারী ১৮২৩ সালে আকস্মিকভাবে আসামে চা “আবিষ্কার” করেছিলেন বলে মনে করা হয়। আসামের হাবি-বাগানে ঘুরা ফেরার সময় তিনি এই গাছ “বন্য”অবস্থায় বেড়ে উঠতে দেখতে পান।
বঙ্গ প্রদেশে কালো চায়ের চাষ ব্রিটিশ শাসনামলের সময় শুরু হয়েছিল। ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা ১৮৪০ সালে এই উপমহাদেশের সর্বপ্রথম চা বাগান বন্দর নগরী চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করে যখন কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে চীনা চায়ের গাছ এনে চট্টগ্রাম ক্লাবের পাশে রোপণ করা হয়।
১৮৪৩ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে প্রথম চা তৈরি এবং পান করা হয়।বাণিজ্যিকভাবে প্রথম চা চাষ শুরু হয় ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানে। সিলেট অঞ্চলের সুরমা নদী উপত্যকা পূর্ব বাংলার চা উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়। চা চাষ নিম্ন ত্রিপুরা (বর্তমান কুমিল্লা) এবং উত্তর বঙ্গের পঞ্চগড়েও শুরু হয়। পঞ্চগড় হচ্ছে বাংলাদেশের তৃতীয় চা অঞ্চল এবং সবথেকে চাহিদাপূর্ণ চা এখানে উৎপন্ন হয় ও উৎপাদনের দিক থেকে পঞ্চগড় দেশের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
চা ব্রিটিশ বাংলার একটি উল্লেখযোগ্য রপ্তানিপণ্য ছিল। সুরমা এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার চা চাষিদের কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের রপ্তানিকারকদের কাছে চা পৌঁছিয়ে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে এই শিল্পের জীবনরেখা হিসেবে সেবা দিয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম চা নিলাম ১৯৪৯ সালে ব্রিটিশ এবং অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসায়ীরা স্থাপন করে। জেমস ফিনলে এবং ডাঙ্কান ব্রাদার্সের মতো ব্রিটিশ কোম্পানি এক সময় এই শিল্পের আধিপত্য করেছে। ইস্পাহানী পরিবারও এই শিল্পের এক বিখ্যাত অংশীদার ছিল।
পাটের পরেই চা ছিল বাংলাদেশের সবথেকে বেশি রপ্তানি হওয়া অর্থকারী ফসল। এই শিল্প থেকে জাতীয় জিডিপির ১% আসে।
চা উৎপাদনকারী জেলাগুলো হচ্ছে- মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং রাঙ্গামাটি।
মৌলভীবাজারে ৯২টি, হবিগঞ্জে ২৪টি, সিলেটে ১৯টি, চট্টগ্রামে ২২টি, পঞ্চগড়ে ৩৭টি, রাঙ্গামাটিতে ২টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১০টি চা বাগান রয়েছে।
বর্তমানে চা উৎপাদনের দিকথেকে প্রথম স্থানে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পঞ্চগড় জেলা ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা।
এক সময়কার বিশ্বের প্রধান একটি চা রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ এখন মাত্র সাধারণ এক রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশি মধ্যম শ্রেণীর উত্থান এই শিল্পকে লাভজনক দেশীয় বাজারের দিকে আলোকপাত করে ব্যাপকভাবে চালিয়ে নিয়েছে।
বর্তমানে এই সেক্টরটি ম ম ইস্পাহানি লিমিটেড, কাজী এন্ড কাজী, ট্রান্সকম গ্রুপ, জেমস ফিনলে বাংলাদেশ, ওরিয়ন গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ রেবনল টি লিমিটেড এবং ডানকান ব্রাদার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের মতো বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
চা বোর্ডের তথ্য মতে দেশের উত্তরাঞ্চলে পাঁচটি জেলা ও ক্ষুদ্রায়তনে চা-বাগানে মোট ১২০৭৯.০৬ একর জমিতে চায়ের আবাদ করা হয়েছে।
দেশে এবার চা উৎপাদন হয়েছে ১৬৮টি বাগানে। তার মধ্যে রয়েছে মৌলভীবাজারে ৯০টি, হবিগঞ্জে ২৫টি, চট্টগ্রামে ২২টি, সিলেটে ১৯টি, পঞ্চগড়ে আটটি, রাঙামাটিতে দুটি আর একটি করে বাগান রয়েছে খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও এলাকায়।
২০২৩ সালে দেশের ১৬৮টি বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা চাষিদের হাত ধরে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।
বাংলাদেশে চায়ের মূল্য চট্টগ্রামে হওয়া সরকারি নিলামের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। এমন নিলামকেন্দ্র বাংলাদেশে ৩ টি রয়েছে। যেমন চট্টগ্রাম চা নিলাম কেন্দ্র , পঞ্চগড় চা নিলাম কেন্দ্র ও শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্র।
নিলামগুলো পরিচালনা করেন বাংলাদেশের চা ব্রোকারগন। তারা বাংলাদেশ চা বোর্ডের থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত।
বাংলাদেশে বৃটিশ আইন দ্বারা চায়ের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এই নিলাম পরিচালনা করে থাকেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের লাইসেন্সপ্রাপ্ত চা ব্রোকার্সগণ। এরএর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল - ১. ন্যাশনাল ব্রোকার্স ২. ইন্ডিগো ব্রোকার্স লিমিটেড ৩. ইউনিটি ব্রোকার্স ৪. পূর্ববাংলা ব্রোকার্স ৫. শ্রীমঙ্গল ব্রোকার্স সহ ১৬ টি ব্রোকার্স।
বাংলাদেশের চা বাগানে ৩ লাখের অধিক চা শ্রমিক কর্মরত আছে। যার ৭৫% নারী। অনেক শ্রমিকই উপজাতি বাসিন্দা যাদের ব্রিটিশ শাসনামলে মধ্য ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।
বাংলাদেশে চায়ের বাণিজ্যের জন্য উৎপাদন, এর সত্যায়ন, এবং রপ্তানিকরণে বাংলাদেশ চা বোর্ড এবং বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৫৭ সালে চায়ের গুণগত মান উন্নয়নে কাজ শুরু করে, সর্বোচ্চ মানের উচ্চ ফলনশীল পাতা উৎপাদন এবং বিকাশের লক্ষ্যে জিন উদ্ভাবনের মাধ্যমে।
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মালাউই, মালয়েশিয়া, উগান্ডা ও তানজানিয়ার মতো চা উৎপাদনকারী দেশসমূহ ২০০৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিবসটি উদযাপন করে আসছে। পূর্বে ১৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক চা দিবস পালন করা হতো।
২০১৯ সালে চা সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি গোষ্ঠী ২১ মে আন্তর্জাতিক চা দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। আন্তর্জাতিক চা দিবসের উদ্দেশ্য হলো চা-কর্মী ও উৎপাদকদের ওপর বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রভাব সরকার ও জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং অর্থনৈতিক সমর্থন ও ন্যায্য বাণিজ্যের সংযোগ স্থাপন করা।
২০০৪ সালে বিশ্ব সামাজিক সম্মেলনের পর ২০০৫ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক চা দিবস উদ্?যাপিত হয় ভারতের নতুন দিল্লিতে। পরবর্তীতে ২০০৬ ও ২০০৮ সালে দিবসটি উদ্?যাপনের আয়োজন করে শ্রীলঙ্কা। আন্তর্জাতিক চা দিবস উদ্যাপন ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিশ্ব চা সম্মেলন যৌথভাবে বিভিন্ন শ্রমকল্যাণ সমিতি আয়োজন করে থাকে।
২০১৫ সালে ভারত সরকার খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মাধ্যমে দিবসটির উদ্?যাপন আরো বিস্তৃত করার প্রস্তাব দেয়।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২০ সাল থেকে ২১ মে দিবসটিকে আন্তর্জাতিক চা দিবস হিসেবে পালন করার কথা ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ চা উৎপাদনকারী দেশ। এর চা শিল্প ব্রিটিশ শাসনামল থেকে চলে আসছে। যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে চা ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬৮টি বাণিজ্যিক চা এস্টেট রয়েছে। সর্বশেষ খাগড়াছড়ি জেলায় । যার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কর্মক্ষম চা বাগান। এখানকার এই শিল্প বিশ্বের ৩% চা উৎপাদন করে থাকে, এবং ৪০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।
এখানকার উত্তর এবং পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সমূহে চা উৎপাদন হয়ে থাকে। উচ্চভূমি, উষ্ণ জলবায়ু, আর্দ্র এবং অতি বৃষ্টি প্রবণ এলাকাসমূহ উন্নতমানের চা উৎপাদনের মোক্ষম পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়।
ঐতিহাসিকভাবে বঙ্গ চা অশ্ব সড়কের শেষপ্রান্ত ছিল। যা এই উপমহাদেশকে চীনের প্রথম দিককার চা-উৎপাদনকারী অঞ্চল ইউন্নানের সাথে সংযুক্ত করেছিল। অতীশ দীপঙ্করকে প্রথম দিককার একজন বাঙ্গালি চা পানকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
রবাট ব্াচ নামের একজন স্কটিশ ভ্রমণকারী ১৮২৩ সালে আকস্মিকভাবে আসামে চা “আবিষ্কার” করেছিলেন বলে মনে করা হয়। আসামের হাবি-বাগানে ঘুরা ফেরার সময় তিনি এই গাছ “বন্য”অবস্থায় বেড়ে উঠতে দেখতে পান।
বঙ্গ প্রদেশে কালো চায়ের চাষ ব্রিটিশ শাসনামলের সময় শুরু হয়েছিল। ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা ১৮৪০ সালে এই উপমহাদেশের সর্বপ্রথম চা বাগান বন্দর নগরী চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করে যখন কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে চীনা চায়ের গাছ এনে চট্টগ্রাম ক্লাবের পাশে রোপণ করা হয়।
১৮৪৩ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে প্রথম চা তৈরি এবং পান করা হয়।বাণিজ্যিকভাবে প্রথম চা চাষ শুরু হয় ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানে। সিলেট অঞ্চলের সুরমা নদী উপত্যকা পূর্ব বাংলার চা উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়। চা চাষ নিম্ন ত্রিপুরা (বর্তমান কুমিল্লা) এবং উত্তর বঙ্গের পঞ্চগড়েও শুরু হয়। পঞ্চগড় হচ্ছে বাংলাদেশের তৃতীয় চা অঞ্চল এবং সবথেকে চাহিদাপূর্ণ চা এখানে উৎপন্ন হয় ও উৎপাদনের দিক থেকে পঞ্চগড় দেশের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
চা ব্রিটিশ বাংলার একটি উল্লেখযোগ্য রপ্তানিপণ্য ছিল। সুরমা এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার চা চাষিদের কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের রপ্তানিকারকদের কাছে চা পৌঁছিয়ে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে এই শিল্পের জীবনরেখা হিসেবে সেবা দিয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম চা নিলাম ১৯৪৯ সালে ব্রিটিশ এবং অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসায়ীরা স্থাপন করে। জেমস ফিনলে এবং ডাঙ্কান ব্রাদার্সের মতো ব্রিটিশ কোম্পানি এক সময় এই শিল্পের আধিপত্য করেছে। ইস্পাহানী পরিবারও এই শিল্পের এক বিখ্যাত অংশীদার ছিল।
পাটের পরেই চা ছিল বাংলাদেশের সবথেকে বেশি রপ্তানি হওয়া অর্থকারী ফসল। এই শিল্প থেকে জাতীয় জিডিপির ১% আসে।
চা উৎপাদনকারী জেলাগুলো হচ্ছে- মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং রাঙ্গামাটি।
মৌলভীবাজারে ৯২টি, হবিগঞ্জে ২৪টি, সিলেটে ১৯টি, চট্টগ্রামে ২২টি, পঞ্চগড়ে ৩৭টি, রাঙ্গামাটিতে ২টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১০টি চা বাগান রয়েছে।
বর্তমানে চা উৎপাদনের দিকথেকে প্রথম স্থানে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পঞ্চগড় জেলা ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা।
এক সময়কার বিশ্বের প্রধান একটি চা রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ এখন মাত্র সাধারণ এক রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশি মধ্যম শ্রেণীর উত্থান এই শিল্পকে লাভজনক দেশীয় বাজারের দিকে আলোকপাত করে ব্যাপকভাবে চালিয়ে নিয়েছে।
বর্তমানে এই সেক্টরটি ম ম ইস্পাহানি লিমিটেড, কাজী এন্ড কাজী, ট্রান্সকম গ্রুপ, জেমস ফিনলে বাংলাদেশ, ওরিয়ন গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ রেবনল টি লিমিটেড এবং ডানকান ব্রাদার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের মতো বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
চা বোর্ডের তথ্য মতে দেশের উত্তরাঞ্চলে পাঁচটি জেলা ও ক্ষুদ্রায়তনে চা-বাগানে মোট ১২০৭৯.০৬ একর জমিতে চায়ের আবাদ করা হয়েছে।
দেশে এবার চা উৎপাদন হয়েছে ১৬৮টি বাগানে। তার মধ্যে রয়েছে মৌলভীবাজারে ৯০টি, হবিগঞ্জে ২৫টি, চট্টগ্রামে ২২টি, সিলেটে ১৯টি, পঞ্চগড়ে আটটি, রাঙামাটিতে দুটি আর একটি করে বাগান রয়েছে খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও এলাকায়।
২০২৩ সালে দেশের ১৬৮টি বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা চাষিদের হাত ধরে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।
বাংলাদেশে চায়ের মূল্য চট্টগ্রামে হওয়া সরকারি নিলামের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। এমন নিলামকেন্দ্র বাংলাদেশে ৩ টি রয়েছে। যেমন চট্টগ্রাম চা নিলাম কেন্দ্র , পঞ্চগড় চা নিলাম কেন্দ্র ও শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্র।
নিলামগুলো পরিচালনা করেন বাংলাদেশের চা ব্রোকারগন। তারা বাংলাদেশ চা বোর্ডের থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত।
বাংলাদেশে বৃটিশ আইন দ্বারা চায়ের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এই নিলাম পরিচালনা করে থাকেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের লাইসেন্সপ্রাপ্ত চা ব্রোকার্সগণ। এরএর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল - ১. ন্যাশনাল ব্রোকার্স ২. ইন্ডিগো ব্রোকার্স লিমিটেড ৩. ইউনিটি ব্রোকার্স ৪. পূর্ববাংলা ব্রোকার্স ৫. শ্রীমঙ্গল ব্রোকার্স সহ ১৬ টি ব্রোকার্স।
বাংলাদেশের চা বাগানে ৩ লাখের অধিক চা শ্রমিক কর্মরত আছে। যার ৭৫% নারী। অনেক শ্রমিকই উপজাতি বাসিন্দা যাদের ব্রিটিশ শাসনামলে মধ্য ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।
বাংলাদেশে চায়ের বাণিজ্যের জন্য উৎপাদন, এর সত্যায়ন, এবং রপ্তানিকরণে বাংলাদেশ চা বোর্ড এবং বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৫৭ সালে চায়ের গুণগত মান উন্নয়নে কাজ শুরু করে, সর্বোচ্চ মানের উচ্চ ফলনশীল পাতা উৎপাদন এবং বিকাশের লক্ষ্যে জিন উদ্ভাবনের মাধ্যমে।