alt

সারাদেশ

সাত বছর ধরে ফাইলবন্দী সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিককরণ প্রকল্প

প্রতিনিধি, সৈয়দপুর (নীলফামারী) : মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কোন অগ্রগতি নেই। ২০১৯ সালে তড়িঘড়ি করে জমি অধিগ্রহনের ফিল্ডবুক তৈরিও করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে প্রকল্পটি ফাইলবন্দি হয়ে আছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ। অথচ এটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরে পরিণত হলে প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, ভুটান ও চিনের পাশাপাশি অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের দৃশ্যপট বদলে যাবে। ফলে সচল এই বিমানবন্দরটি দেশের অন্যতম এভিয়েশনে হাব হয়ে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, জমি অধিগ্রহণে ভূমি মালিকরা ৪ ধারায় নোটিস পাওয়ার পর থেকে সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা। তারা বলছেন, নোটিস পাওয়ার পর থেকে জমি কেনাবেচা করতে পারছেন না। আবার আর্থিক ক্ষতির আশংকায় নতুন করে ঘরবাড়িও নির্মাণ করতে পারছেন না। বিষয়টি বছরের পর বছর ঝুলে থাকায় বিপদে পড়েছেন তারা। অন্যদিকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও স্থানীয় বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ প্রকল্প কার্যকর রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি বৈদেশিক ঋতদাতা সংস্থার অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরের ব্যস্ততম বিমানবন্দরটি ১৩৬ দশমিক ৫৯ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত। ৬ হাজার ফুট রানওয়ের বিমানবন্দরটি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু করে ১৯৭৯ সালে। এই বিমানবন্দর থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে নেপাল ও ভুটান সীমান্ত। নিজেদের ছোট ছোট বিমানবন্দরে কার্গো ও যাত্রীবাহী অবতরণ-উড্ডয়ন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাহাড়ি দেশ দুটি সৈয়দপুর বিমানবন্দরটি ব্যবহারে আগ্রহ দেখায়। সেই অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল বিমানবন্দরটিকে উন্নীতকরণ প্রকল্প সীমানা চিহ্নিত করে জরিপ কাজ শুরু হয়। জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা (এলএ) একই বছরের ১১ জুলাই ওই জরিপকাজ সম্পন্ন করে। জমি অধিগ্রহণে ভূমি মালিকদের ৪ ধারার নোটিস জারি এবং হাতে লেখা ফিল্ডবুক তৈরির কাজও শেষ হয়। সূত্রটি আরও জানায়, ২০২০ সালের নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গাইওয়ালি বাংলাদেশ সফরে সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব পুণর্ব্যক্ত করেন। আর ভুটানের অর্থনীতিবিষয়ক সেক্রেটারি কারমা শেরিং ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরকালে সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে পুনরায় আলোচনা করেন। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক হলে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাডুজ্যসহ যোগাযোগে ব্যাপক সুবিধা পাওয়া যাবে বলেও জানান দেশ দুটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সৈয়দপুর উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের ১৩৬ একর জমির সঙ্গে আরও ৯১২ দশমিক ৯০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে সৈয়দপুর উপজেলার বাঙালিপুর ইউনিয়ন এবং দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচী ইউনিয়নের ভূমি রয়েছে। সৈয়দপুরের ৫৯৫ দশমিক ১৩ একর জমির মধ্যে সরকারি ৩টি সংস্থার ৬০ একর জমি রয়েছে। এদিকে পার্বতীপুরে রয়েছে ৩১৭ দশমিক ৭৭ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। জমি অধিগ্রহণে ভূমি মালিকদের ৪ ধারার নোটিস জারি করা হয়। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় আটকে আছে জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য কাজ। আর ৪ ধারা নোটিস পাওয়া জমি মালিকেরা পড়েছেন বিপাকে। অন্যদিকে হতাশ এই অঞ্চলের ব্যবসায়ী মহল।

জমির মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিস দিয়েছে প্রায় সাত বছর আগে। কিন্তু এখনো জমির টাকা পাইনি। আমার স্ত্রী জটিল রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসায় অনেক টাকা দরকার। ভেবেছিলাম, জমির টাকা পেলে চিকিৎসা করাবো। কিন্তু সরকার সেই টাকা দিচ্ছে না, অন্য কোথাও জমি বিক্রি করতেও পারছি না। স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তা রাজু পোদ্দার এবং সিদ্দিকুল ইসলামসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক হলে নীলফামারী শিল্প ও বাণিজ্যে এগিয়ে যাবে। ভারতের সেভেন সিস্টারস, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে বিমান চলাচল শুরু হলে এখানকার কৃষিপণ্য, তৈরি পোশাক এবং তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি করা সহজ হবে। কিন্তু বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক করণ প্রকল্প দীর্ঘদিনে বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা হতাশায় ভুগছি। সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ম্যানেজার একেএম বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, দেশের অন্যতম ব্যস্ত এ বিমানবন্দরে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২টি ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণ করে। রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের পাশাপাশি বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও এয়ারএস্ট্রা এখান থেকে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আকাশপথে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার যাত্রী উঠানামা করে। নিরাপদ ল্যান্ডিং এবং টেকঅফ নিশ্চিত করতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের উন্নয়নে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। নীলফামারী জেলা প্রশাসক নায়েরুজ্জামান বলেন, আগে এই অঞ্চলের মানুষ যাতায়াত করতেন ট্রেনে করে। কিন্তু এখন প্রচুর মানুষ বিমানে যাতায়াত করেন। তাছাড়া উত্তরা ইপিজেড হওয়ায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরের গুরুত্ব আরও বেড়েছে। বিমানবন্দটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হলে নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বের ৭টি রাজ্যের সঙ্গে বহুমুখী বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ বাড়বে। দেশের অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের মানুষ পাবেন অর্থনৈতিক এবং কর্মসংস্থানের নানা সুবিধা। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই প্রশাসনিক কাজ করে যাচ্ছি। বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী জাকারিয়া জানান, প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে দেড় থেকে ২ বছর লাগবে জমি অধিগ্রহণসহ টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করতে। এরপর রানওয়ে সম্প্রসারণ, নতুন রানওয়ে নির্মাণ এবং আন্তর্জাতিকমানের সেবা নিশ্চিতে অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে আরও ৩ থেকে ৪ বছর লাগবে। বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানান, জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজন সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।

আর অন্যান্য কাজে লাগবে ৫ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। এই প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় অর্থের সংস্থান করলেই কাজ শুরু করা হবে।

কোস্টগার্ডের সঙ্গে মাদক কারবারিদের গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১ আটক ৩

নকল ও ব্যবহৃত স্ট্যাম্প ব্যবহার, টোব্যাকো কারখানা সিলগালা

শ্রীনগরে মাছসহ পিকআপ ছিনতাই

আড়াই কেজি গাঁজাসহ বাবা-ছেলে আটক

গোয়ালঘর ভেঙে কৃষকের ৬ গরু চুরি

পাঁচ মাস ধরে বন্ধ টিসিবির পণ্য কষ্টে আছে ১৮ হাজার পরিবার

ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি মেলা

৪ জেলায় প্রতিবন্ধী ও স্কুলছাত্রীসহ ৪ নারীর মরদেহ উদ্ধার

আমতলীতে ভুয়া পেশকারকে পুলিশে দিলেন বিচারক

ছবি

প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ দখল করে রাস্তার নির্মাণসামগ্রী রাখার অভিযোগ

ছবি

বাঘায় বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষ বাবা মর্গে, মেয়ে আইসিইউতে, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন স্ত্রী

বৃষ্টিতে ভুট্টাখেতে পানি, বিপাকে চাষিরা

ছবি

কচুয়ার রাগদৈল সড়ক বেহাল, ভোগান্তিতে এলাকাবাসী

ইজিবাইক চালক হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড ২

সিরাজদিখানে যুবকের আত্মহত্যা

নবীগঞ্জ পৌরসভার ড্রেন নির্মাণে অনিয়ম, প্রকৌশলীর হস্তক্ষেপে কাজ বন্ধ

চলাচলের অযোগ্য ঘোড়াশাল-ডাঙ্গা সড়ক

সিরাজগঞ্জে সবজি ব্যবসায়ী হত্যার দায়ে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

ছবি

মোরেলগঞ্জে অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ

ছবি

কালীগঞ্জে আ.লীগ নেতার পরিবারের দখলে ৫০ বিঘা জমি

সিরাজগঞ্জে পুকুরে ফেলে শিশুকে হত্যা, মা গ্রেপ্তার

ছবি

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলে যানজট নিত্যদিন, ভোগান্তি চরমে

রাণীশংকৈলে গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে কৃষকের মৃত্যু

ছবি

কক্সবাজার থেকে হেঁটে এভারেস্ট জয় শাকিলের, গড়লেন বিশ্ব রেকর্ড

সান্তাহারে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্ক টিকার সংকট

কচুয়ায় দুই ডাকাত গ্রেপ্তার

সোনাইমুড়ীতে অটো রিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

ফুলবাড়ীতে তিন দিনের ঝড় বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি, দুশ্চিন্তায় কৃষক

ছবি

বুধবার আন্তর্জাতিক চা দিবস

ছবি

বন্ধ ঘোষণা আলোচিত রামুর গর্জনিয়া পশুর বাজার

ছবি

ডালিয়া তিস্তার তীরে বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

মিষ্টির দামে প্যাকেট বিক্রি

মহেশপুর সীমান্তে কোটি টাকার হেরোইন আটক

রাবিতে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে শিক্ষার্থী আহত

ছবি

সিরাজগঞ্জে সবজি ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও হত্যায় ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

tab

সারাদেশ

সাত বছর ধরে ফাইলবন্দী সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিককরণ প্রকল্প

প্রতিনিধি, সৈয়দপুর (নীলফামারী)

মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কোন অগ্রগতি নেই। ২০১৯ সালে তড়িঘড়ি করে জমি অধিগ্রহনের ফিল্ডবুক তৈরিও করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে প্রকল্পটি ফাইলবন্দি হয়ে আছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ। অথচ এটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরে পরিণত হলে প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, ভুটান ও চিনের পাশাপাশি অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের দৃশ্যপট বদলে যাবে। ফলে সচল এই বিমানবন্দরটি দেশের অন্যতম এভিয়েশনে হাব হয়ে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, জমি অধিগ্রহণে ভূমি মালিকরা ৪ ধারায় নোটিস পাওয়ার পর থেকে সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা। তারা বলছেন, নোটিস পাওয়ার পর থেকে জমি কেনাবেচা করতে পারছেন না। আবার আর্থিক ক্ষতির আশংকায় নতুন করে ঘরবাড়িও নির্মাণ করতে পারছেন না। বিষয়টি বছরের পর বছর ঝুলে থাকায় বিপদে পড়েছেন তারা। অন্যদিকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও স্থানীয় বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ প্রকল্প কার্যকর রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি বৈদেশিক ঋতদাতা সংস্থার অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরের ব্যস্ততম বিমানবন্দরটি ১৩৬ দশমিক ৫৯ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত। ৬ হাজার ফুট রানওয়ের বিমানবন্দরটি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু করে ১৯৭৯ সালে। এই বিমানবন্দর থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে নেপাল ও ভুটান সীমান্ত। নিজেদের ছোট ছোট বিমানবন্দরে কার্গো ও যাত্রীবাহী অবতরণ-উড্ডয়ন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাহাড়ি দেশ দুটি সৈয়দপুর বিমানবন্দরটি ব্যবহারে আগ্রহ দেখায়। সেই অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল বিমানবন্দরটিকে উন্নীতকরণ প্রকল্প সীমানা চিহ্নিত করে জরিপ কাজ শুরু হয়। জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা (এলএ) একই বছরের ১১ জুলাই ওই জরিপকাজ সম্পন্ন করে। জমি অধিগ্রহণে ভূমি মালিকদের ৪ ধারার নোটিস জারি এবং হাতে লেখা ফিল্ডবুক তৈরির কাজও শেষ হয়। সূত্রটি আরও জানায়, ২০২০ সালের নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গাইওয়ালি বাংলাদেশ সফরে সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব পুণর্ব্যক্ত করেন। আর ভুটানের অর্থনীতিবিষয়ক সেক্রেটারি কারমা শেরিং ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরকালে সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে পুনরায় আলোচনা করেন। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক হলে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাডুজ্যসহ যোগাযোগে ব্যাপক সুবিধা পাওয়া যাবে বলেও জানান দেশ দুটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সৈয়দপুর উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের ১৩৬ একর জমির সঙ্গে আরও ৯১২ দশমিক ৯০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে সৈয়দপুর উপজেলার বাঙালিপুর ইউনিয়ন এবং দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচী ইউনিয়নের ভূমি রয়েছে। সৈয়দপুরের ৫৯৫ দশমিক ১৩ একর জমির মধ্যে সরকারি ৩টি সংস্থার ৬০ একর জমি রয়েছে। এদিকে পার্বতীপুরে রয়েছে ৩১৭ দশমিক ৭৭ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। জমি অধিগ্রহণে ভূমি মালিকদের ৪ ধারার নোটিস জারি করা হয়। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় আটকে আছে জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য কাজ। আর ৪ ধারা নোটিস পাওয়া জমি মালিকেরা পড়েছেন বিপাকে। অন্যদিকে হতাশ এই অঞ্চলের ব্যবসায়ী মহল।

জমির মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিস দিয়েছে প্রায় সাত বছর আগে। কিন্তু এখনো জমির টাকা পাইনি। আমার স্ত্রী জটিল রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসায় অনেক টাকা দরকার। ভেবেছিলাম, জমির টাকা পেলে চিকিৎসা করাবো। কিন্তু সরকার সেই টাকা দিচ্ছে না, অন্য কোথাও জমি বিক্রি করতেও পারছি না। স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তা রাজু পোদ্দার এবং সিদ্দিকুল ইসলামসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক হলে নীলফামারী শিল্প ও বাণিজ্যে এগিয়ে যাবে। ভারতের সেভেন সিস্টারস, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে বিমান চলাচল শুরু হলে এখানকার কৃষিপণ্য, তৈরি পোশাক এবং তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি করা সহজ হবে। কিন্তু বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক করণ প্রকল্প দীর্ঘদিনে বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা হতাশায় ভুগছি। সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ম্যানেজার একেএম বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, দেশের অন্যতম ব্যস্ত এ বিমানবন্দরে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২টি ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণ করে। রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের পাশাপাশি বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও এয়ারএস্ট্রা এখান থেকে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আকাশপথে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার যাত্রী উঠানামা করে। নিরাপদ ল্যান্ডিং এবং টেকঅফ নিশ্চিত করতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের উন্নয়নে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। নীলফামারী জেলা প্রশাসক নায়েরুজ্জামান বলেন, আগে এই অঞ্চলের মানুষ যাতায়াত করতেন ট্রেনে করে। কিন্তু এখন প্রচুর মানুষ বিমানে যাতায়াত করেন। তাছাড়া উত্তরা ইপিজেড হওয়ায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরের গুরুত্ব আরও বেড়েছে। বিমানবন্দটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হলে নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বের ৭টি রাজ্যের সঙ্গে বহুমুখী বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ বাড়বে। দেশের অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের মানুষ পাবেন অর্থনৈতিক এবং কর্মসংস্থানের নানা সুবিধা। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই প্রশাসনিক কাজ করে যাচ্ছি। বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী জাকারিয়া জানান, প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে দেড় থেকে ২ বছর লাগবে জমি অধিগ্রহণসহ টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করতে। এরপর রানওয়ে সম্প্রসারণ, নতুন রানওয়ে নির্মাণ এবং আন্তর্জাতিকমানের সেবা নিশ্চিতে অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে আরও ৩ থেকে ৪ বছর লাগবে। বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানান, জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজন সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।

আর অন্যান্য কাজে লাগবে ৫ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। এই প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় অর্থের সংস্থান করলেই কাজ শুরু করা হবে।

back to top