দিনাজপুর : বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ শালবনে মহাবিপন্ন প্রায় ‘বন খেজুর গাছের’ সন্ধান -সংবাদ
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ শালবনে মহাবিপন্ন প্রায় ‘বন খেজুর গাছের’ সন্ধান পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কান্ডবিহীন এই বন খেজুর গাছ তিন জাতের হয়ে থাকে এবং যা বাংলাদেশের তিন ধরনের শালবনে পাওয়া যায়। এর আগে ঢাকা ও ময়মনসিংহ এলাকায় সন্ধান মিললেও দিনাজপুরে এটি প্রথম। যার বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স অ্যাকাউলিস। বর্তমানে এই গাছ ও ফল দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয় ও দূরদুরান্তের লোকজন। এদিকে বিপন্ন প্রায় উদ্ভিদটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শালবনের বিট কর্মকর্তা। সরেজমিনে দেখা যায়, বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের কৈকুড়ি পাটাবন এলাকায় সন্ধান পাওয়া খেজুর গাছগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি গাছের গোড়ায় ফল ধরেছে। বন খেজুরকে খুদি খেজুরও বলা হয়। বন খেজুর গাছগুলোর পাতা সরু ও ধারালো।
স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী, রানাসহ আরো কয়েকজন জানান, আমরা ছোট থেকেই এই গাছ দেখে আসছি। খেজুরও খেয়েছি, ফলটি কাঁচা অবস্থায় লাল রঙের হয় এবং সম্পূর্ণ পাকলে কালো জামের রং ধারণ করে। এই খেজুরের স্বাদ খুবই মিষ্টি হয়। তবে আমরা জানতাম না যে এই খেজুর এতটা মূল্যবান। আর এই গাছ দেশের আর কোথাও হয় না। এটি আমাদের সৌভাগ্য।
শালবনের ধর্মপুর বিটের বন কর্মকর্তা মহসীন আলী জানান, ইতিমধ্যে খেজুরগাছ পরিদর্শন করেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞগণ। বর্তমানে বিপন্ন প্রায় উদ্ভিদটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে গত রোববার খেজুরগাছ পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইবেরিয়ামের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাইদুর রহমান, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গাজী মোশারফ হোসেন, সদর উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মান্নান হোসেন।
দীর্ঘদিন ধরে শালবনে বন খেজুর গাছের সন্ধান নিয়ে কাজ করছেন অধ্যাপক গাজী মোশারফ হোসেন। তিনি জানান, কান্ডবিহীন এই বন খেজুর গাছ তিন জাতের হয়ে থাকে এবং যা বাংলাদেশের তিন ধরনের শালবনে পাওয়া যায়। এর আগে ঢাকা ও ময়মনসিংহ এলাকায় সন্ধান মিললেও দিনাজপুরে এটি প্রথম। যার বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স অ্যাকাউলিস। পাতা সরু ও ধারালো। গাছের গোড়ায় ফল ধরে। আকারে দেশি জাতের খেজুরের মতো চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার আকৃতির হয়। ফলটি কাঁচা অবস্থায় লাল আকার ধারণ করে; সম্পূর্ণ পাকলে কালো জামের রং ধারণ করে। খেতেও অনেক মিষ্টি। সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পাকে।
অধ্যাপক মোশারফ হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গবেষণাকাজে তিনি বিরলের শালবনে আসেন। তখন খুদি খেজুরগাছ দেখা পান। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের অর্থায়নে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় এমন এক হাজার উদ্ভিদ নিয়ে মূল্যায়নের উদ্যোগ নেয়। কাজের দায়িত্ব পায় প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন। গত বছর আইইউসিএন দুটি গ্রন্থও প্রকাশ করে। যার মধ্যে পাঁচটি উদ্ভিদ মহাবিপন্ন হিসেবে মূল্যায়িত হয়। তারই একটি খুদি খেজুর বা বন খেজুর। সম্প্রতি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় উদ্ভিদগুলো সংরক্ষণে কাজ শুরু করেছে।
দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বিরলের ২১টি মৌজায় ২ হাজার ৮৩৬ একর শালবনে শাল, সেগুন, কড়ইসহ শতাধিক প্রজাতির গাছ আছে। এর মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কিছু খুদি খেজুরগাছের সন্ধান মিলেছে। কালিয়াগঞ্জ শালবনে ১৫০ থেকে ২০০টি গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০ থেকে ৩০টিতে ফলও ধরেছে। যেহেতু এটি মহাবিপন্ন উদ্ভিদ, তাই গাছগুলোর অবস্থান নিশ্চিত করে সেগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
দিনাজপুর : বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ শালবনে মহাবিপন্ন প্রায় ‘বন খেজুর গাছের’ সন্ধান -সংবাদ
শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ শালবনে মহাবিপন্ন প্রায় ‘বন খেজুর গাছের’ সন্ধান পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কান্ডবিহীন এই বন খেজুর গাছ তিন জাতের হয়ে থাকে এবং যা বাংলাদেশের তিন ধরনের শালবনে পাওয়া যায়। এর আগে ঢাকা ও ময়মনসিংহ এলাকায় সন্ধান মিললেও দিনাজপুরে এটি প্রথম। যার বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স অ্যাকাউলিস। বর্তমানে এই গাছ ও ফল দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয় ও দূরদুরান্তের লোকজন। এদিকে বিপন্ন প্রায় উদ্ভিদটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শালবনের বিট কর্মকর্তা। সরেজমিনে দেখা যায়, বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের কৈকুড়ি পাটাবন এলাকায় সন্ধান পাওয়া খেজুর গাছগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি গাছের গোড়ায় ফল ধরেছে। বন খেজুরকে খুদি খেজুরও বলা হয়। বন খেজুর গাছগুলোর পাতা সরু ও ধারালো।
স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী, রানাসহ আরো কয়েকজন জানান, আমরা ছোট থেকেই এই গাছ দেখে আসছি। খেজুরও খেয়েছি, ফলটি কাঁচা অবস্থায় লাল রঙের হয় এবং সম্পূর্ণ পাকলে কালো জামের রং ধারণ করে। এই খেজুরের স্বাদ খুবই মিষ্টি হয়। তবে আমরা জানতাম না যে এই খেজুর এতটা মূল্যবান। আর এই গাছ দেশের আর কোথাও হয় না। এটি আমাদের সৌভাগ্য।
শালবনের ধর্মপুর বিটের বন কর্মকর্তা মহসীন আলী জানান, ইতিমধ্যে খেজুরগাছ পরিদর্শন করেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞগণ। বর্তমানে বিপন্ন প্রায় উদ্ভিদটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে গত রোববার খেজুরগাছ পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইবেরিয়ামের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাইদুর রহমান, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গাজী মোশারফ হোসেন, সদর উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মান্নান হোসেন।
দীর্ঘদিন ধরে শালবনে বন খেজুর গাছের সন্ধান নিয়ে কাজ করছেন অধ্যাপক গাজী মোশারফ হোসেন। তিনি জানান, কান্ডবিহীন এই বন খেজুর গাছ তিন জাতের হয়ে থাকে এবং যা বাংলাদেশের তিন ধরনের শালবনে পাওয়া যায়। এর আগে ঢাকা ও ময়মনসিংহ এলাকায় সন্ধান মিললেও দিনাজপুরে এটি প্রথম। যার বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স অ্যাকাউলিস। পাতা সরু ও ধারালো। গাছের গোড়ায় ফল ধরে। আকারে দেশি জাতের খেজুরের মতো চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার আকৃতির হয়। ফলটি কাঁচা অবস্থায় লাল আকার ধারণ করে; সম্পূর্ণ পাকলে কালো জামের রং ধারণ করে। খেতেও অনেক মিষ্টি। সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পাকে।
অধ্যাপক মোশারফ হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গবেষণাকাজে তিনি বিরলের শালবনে আসেন। তখন খুদি খেজুরগাছ দেখা পান। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের অর্থায়নে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় এমন এক হাজার উদ্ভিদ নিয়ে মূল্যায়নের উদ্যোগ নেয়। কাজের দায়িত্ব পায় প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন। গত বছর আইইউসিএন দুটি গ্রন্থও প্রকাশ করে। যার মধ্যে পাঁচটি উদ্ভিদ মহাবিপন্ন হিসেবে মূল্যায়িত হয়। তারই একটি খুদি খেজুর বা বন খেজুর। সম্প্রতি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় উদ্ভিদগুলো সংরক্ষণে কাজ শুরু করেছে।
দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বিরলের ২১টি মৌজায় ২ হাজার ৮৩৬ একর শালবনে শাল, সেগুন, কড়ইসহ শতাধিক প্রজাতির গাছ আছে। এর মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কিছু খুদি খেজুরগাছের সন্ধান মিলেছে। কালিয়াগঞ্জ শালবনে ১৫০ থেকে ২০০টি গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০ থেকে ৩০টিতে ফলও ধরেছে। যেহেতু এটি মহাবিপন্ন উদ্ভিদ, তাই গাছগুলোর অবস্থান নিশ্চিত করে সেগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন।