সৈয়দপুর (নীলফামারী) : খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান -সংবাদ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে কুমারগাড়ী দাখিল মাদ্রাসার চারতলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করার সময় ছিলো দেড় বছর। এরপরও তিন দফা বাড়ানো হয়েছিলো মেয়াদ। কিন্তু ৫ বছর পার হলেও শেষ হয়নি ভবনের কাজ। অথচ ২৫ ভাগ কাজ ফেলে রেখেই ৮০ ভাগ বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। আওয়ামী লীগ দলীয় এই ঠিকাদার এখন লাপাত্তা রয়েছেন। শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগও তার হদিস পাচ্ছে না। ফলে মাদ্রাসা ভবনের অসমাপ্ত কাজ কবে শেষ হবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। আর ঝড়-বৃষ্টি হলে বন্ধ রাখতে হয় পাঠদান। এতে করে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম যেমন বিঘিœত হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণাধীন ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় মাদ্রাসার ছুটির দিনে ও রাতের বেলা সেখানে চলে মাদকের আড্ডা ও অসামাজিক কাজ। ফলে ভবনটি এখন অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে।
নীলফামারী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মাদ্রাসাটির চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিলে দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে নির্বাচিত বেসরকারি মাদ্রাসাসমূহের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩ কোটি ২৬ লাখ ৫ হাজার ৫১৩ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শেখ মোহাম্মদ শাহ আলমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ এন্ড জিন্নাত আলী জিন্নাহ (জেভি)। ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় একই বছরের ১৭ জুন। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কাজ শেষ করার সময় নির্ধারিত ছিলো। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ২০২১ সাল থেকে ৩ বছর বন্ধ রাখে কাজ। পরে ২০২৩ সালে মাত্র ৩ মাস কাজ করার পর ২৫ শতাংশ বাকি রেখে ফের কাজ বন্ধ করে দেয়। এরই মধ্যে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। এরপর সরকার পতনের পর থেকে হদিস মিলছে না ঠিকাদারের। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরও তার কোন খোঁজ পাচ্ছে না।
সরেজমিন মাদ্রাসা ঘুরে দেখা যায়, চারতলা ভবনের কাজ বন্ধ। নির্মাণাধীন ভবনজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। দরজা-জালানাও লাগানো হয়নি। পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ভবন। ভবনের নিচে খোলা মাঠে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। শ্রেণীকক্ষের অভাবে বিভিন্ন শ্রেণীর ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। পাশে টিনশেট যে ভবন রয়েছে তাও জরাজীর্ণ। ঘরের চালার টিনগুলো ফুটো হয়ে গেছে। এর মধ্যে গাদাগাদি করে ক্লাস করছে ছাত্র-ছাত্রীরা।
কথা হয় মাদ্রাসার ছাত্রী লাবনী আক্তার, মনি আক্তার ও ছাত্র আমির হামজার সঙ্গে। তারা জানায়, এই মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে দেখছে চারতলা ভবনের কাজ বন্ধ। শ্রেণিকক্ষ না থাকায় অনেক কষ্টে তাদের পড়াশোনা করতে হয়। বেশিরভাগ সময় খোলা আকাশের নিচে করতে হয় ক্লাস। শীত, ঝড়-বৃষ্টি হলে নিয়মিত ক্লাস করা হয় না। তাঁরা ক্ষোভর সাথে বলে, আমাদের মনে হয় না নতুন ভবনে ক্লাস করার শখ পুরণ হবে।
মাদ্রাসার শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, আমিনুল ইসলাম ও রিনা আক্তার বলেন, আমরা যেভাবে পাঠদান করাচ্ছি , তা একেবারেই অমানবিক। শ্রেণিকক্ষের অভাবে জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে এক রুমে দুটি শ্রেনির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হচ্ছে। কক্ষের সংকটে কিছু ক্লাস নিতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। বৃষ্টি হলে ক্লাস নেওয়াও সম্ভব হয় না। টিনশেড ঘরের চালাও ফুটো বৃষ্টির সময় সেখানেও ক্লাস নেয়া যায় না।
এ বিষয়ে নীলফামারী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হাজেরুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত ভবনটির ৭৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। তিন দফা সময় বৃদ্ধি করেও কাজ শেষ করেনি ঠিকাদার। ফলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা জানায়। কিন্তু কাজ বন্ধ রাখায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি মোবাইল ফোনেও যোগাযোগের চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তবে জুনের মধ্যে কাজ না হলে চুক্তি বাতিল করে নতুন দরপত্রের মাধ্যমে বাকি কাজ শেষ করা হবে।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) : খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান -সংবাদ
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
নীলফামারীর সৈয়দপুরে কুমারগাড়ী দাখিল মাদ্রাসার চারতলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করার সময় ছিলো দেড় বছর। এরপরও তিন দফা বাড়ানো হয়েছিলো মেয়াদ। কিন্তু ৫ বছর পার হলেও শেষ হয়নি ভবনের কাজ। অথচ ২৫ ভাগ কাজ ফেলে রেখেই ৮০ ভাগ বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। আওয়ামী লীগ দলীয় এই ঠিকাদার এখন লাপাত্তা রয়েছেন। শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগও তার হদিস পাচ্ছে না। ফলে মাদ্রাসা ভবনের অসমাপ্ত কাজ কবে শেষ হবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। আর ঝড়-বৃষ্টি হলে বন্ধ রাখতে হয় পাঠদান। এতে করে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম যেমন বিঘিœত হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণাধীন ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় মাদ্রাসার ছুটির দিনে ও রাতের বেলা সেখানে চলে মাদকের আড্ডা ও অসামাজিক কাজ। ফলে ভবনটি এখন অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে।
নীলফামারী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মাদ্রাসাটির চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিলে দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে নির্বাচিত বেসরকারি মাদ্রাসাসমূহের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩ কোটি ২৬ লাখ ৫ হাজার ৫১৩ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শেখ মোহাম্মদ শাহ আলমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ এন্ড জিন্নাত আলী জিন্নাহ (জেভি)। ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় একই বছরের ১৭ জুন। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কাজ শেষ করার সময় নির্ধারিত ছিলো। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ২০২১ সাল থেকে ৩ বছর বন্ধ রাখে কাজ। পরে ২০২৩ সালে মাত্র ৩ মাস কাজ করার পর ২৫ শতাংশ বাকি রেখে ফের কাজ বন্ধ করে দেয়। এরই মধ্যে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। এরপর সরকার পতনের পর থেকে হদিস মিলছে না ঠিকাদারের। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরও তার কোন খোঁজ পাচ্ছে না।
সরেজমিন মাদ্রাসা ঘুরে দেখা যায়, চারতলা ভবনের কাজ বন্ধ। নির্মাণাধীন ভবনজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। দরজা-জালানাও লাগানো হয়নি। পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ভবন। ভবনের নিচে খোলা মাঠে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। শ্রেণীকক্ষের অভাবে বিভিন্ন শ্রেণীর ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। পাশে টিনশেট যে ভবন রয়েছে তাও জরাজীর্ণ। ঘরের চালার টিনগুলো ফুটো হয়ে গেছে। এর মধ্যে গাদাগাদি করে ক্লাস করছে ছাত্র-ছাত্রীরা।
কথা হয় মাদ্রাসার ছাত্রী লাবনী আক্তার, মনি আক্তার ও ছাত্র আমির হামজার সঙ্গে। তারা জানায়, এই মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে দেখছে চারতলা ভবনের কাজ বন্ধ। শ্রেণিকক্ষ না থাকায় অনেক কষ্টে তাদের পড়াশোনা করতে হয়। বেশিরভাগ সময় খোলা আকাশের নিচে করতে হয় ক্লাস। শীত, ঝড়-বৃষ্টি হলে নিয়মিত ক্লাস করা হয় না। তাঁরা ক্ষোভর সাথে বলে, আমাদের মনে হয় না নতুন ভবনে ক্লাস করার শখ পুরণ হবে।
মাদ্রাসার শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, আমিনুল ইসলাম ও রিনা আক্তার বলেন, আমরা যেভাবে পাঠদান করাচ্ছি , তা একেবারেই অমানবিক। শ্রেণিকক্ষের অভাবে জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে এক রুমে দুটি শ্রেনির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হচ্ছে। কক্ষের সংকটে কিছু ক্লাস নিতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। বৃষ্টি হলে ক্লাস নেওয়াও সম্ভব হয় না। টিনশেড ঘরের চালাও ফুটো বৃষ্টির সময় সেখানেও ক্লাস নেয়া যায় না।
এ বিষয়ে নীলফামারী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হাজেরুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত ভবনটির ৭৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। তিন দফা সময় বৃদ্ধি করেও কাজ শেষ করেনি ঠিকাদার। ফলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা জানায়। কিন্তু কাজ বন্ধ রাখায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি মোবাইল ফোনেও যোগাযোগের চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তবে জুনের মধ্যে কাজ না হলে চুক্তি বাতিল করে নতুন দরপত্রের মাধ্যমে বাকি কাজ শেষ করা হবে।