বেতাগী (বরগুনা) : পৌর শহরের কালীবাড়ি এলাকায় রাস্তার দুপাশে কলার ছড়া সাজিয়ে রেখে বিক্রি করছে চাষিরা -সংবাদ
উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে শতবর্ষী বেতাগী কালীবাড়ির কলারহাট। সপ্তাহে দুই দিন বসে এই হাট। যেখানে প্রতি হাটে বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার কলা। এ অঞ্চলের কলার সুনাম থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এখান থেকে কলা কিনে নিয়ে যায়। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে এই কালীবাড়ির কলা এখন ঢাকা যাচ্ছে। আর এই কলা আর বিষমুক্ত এসব কলা বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে এখানকার কৃষকরা।
জানা গেছে, দেড়লাখ জনসংখ্যার অধ্যুষিত বেতাগী উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। বিট্রিশ শাসনামল থেকে বিষখালী নদীর কোলঘেঁষে কালীবাড়ির কলার হাট চলে আসছে। বেতাগী পৌরসভার কালীবাড়ি শনিবার ও বুধবার মধ্যরাতে বসে এই কলার হাট। শত বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী এই হাটে বিভিন্ন জাতের কলা বিক্রি করে আসছেন কৃষকরা। এই বিষয় বেতাগী বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সায়েদ মল্লিক (৫৫) বলেন, বেতাগী কালীবাড়ির কলার হাট অনেক পুরোনো (বিট্রিশ শাসনামলে ১৯২৫ সালের দিকে শুরু হয়) একথা আমার দাদার কাছ থেকে জেনেছি।
সাপ্তাহিক হাটের আগের দিন গভীর রাতে বসে এ হাট। বেতাগী পৌরসভা ছাড়াও বিবিচিনি, বেতাগী সদর ইউনিয়ন, হোসনাবাদ, মোকামিয়া, বুড়ামজুমদার, কাজিরাবাদ,সরিষামুড়ি, সোনারবাংলা, শৌলজালিয়া, আওড়াবুনিয়া, নিয়ামতি থেকে ট্রলার, ভ্যান, মাহিন্দ্রায় করে কৃষকরা তাদের বাগান থেকে বিভিন্ন প্রজাতির কলা নিয়ে আসেন এবং বিক্রি করেন।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন,‘ কলা একটি উদ্যান বিষয়ক সবজি এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির যত্ন নিলে ভালো জন্মে।’
সাপ্তাহিক হাটের দিন কাক ডাকা ভোর থেকে কৃষক এসব সাগর, চিনি চম্পা, সবরিসহ বিভিন্ন জাতের কলা এনে পাইকারি ও খুচরা বিক্রির জন্য সারি সারি করে সাজিয়ে রাখেন। এরপর বেপারিদের সাথে দর-কষাকষি করে কলা বিক্রি করতে হয় কৃষকদের। জাত ও আকার ভেদে এই হাটে কলার প্রতি ছড়া বিক্রি হয় ৩ শ’ থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত। রাত দশটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত বেচাবিক্রি চলে। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি হচ্ছে। এরপর ভ্যান, রিকশা, ছোট মাহিন্দ্রা , পিকআপ, টমটম ও নসিমনে করে তাদের গন্তব্যে স্থানে নিয়ে যায়। যেখানে দুই থেকে তিন ঘণ্টার এই হাটে বিক্রি হয় ১০-১৫ লাখ টাকার কলা।
মধ্যরাতে কলা বিক্রির হাটে বিক্রেতারা জানায়, তাদের পূর্বপুরুষদের আমল থেকে কালীবাড়ির এই হাটে কলা বিক্রি করে আসছে। দূর-দূরান্ত থেকে কলা বিক্রির জন্য বিকেলবেলা ও সন্ধ্যার পরে হাটে পাইকাররা কলা কিনতে আসায় কৃষকরা ভালো দামও পাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী এই কলার হাটটিতে ব্যাপক ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হয়। কালীবাড়ির কালী মন্দিরের পিছনেই রয়েছে উন্নতমানের ঘাট। ক্রেতারা কলা কিনে নৌকা কিংবা ট্রলারযোগে তাদের গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারে অতি সহজে। এছাড়া সড়ক পথে কালীবাড়ি থেকে বিভিন্ন স্থানে ভ্যান, মিনি ট্রাক, পিকআপ এবং অটোতে করে নিয়ে যেতে পারে।
কালীবাড়ি হাটে কলা কলা বিক্রি করতে আসা বেতাগী পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষ্ণ কান্ত ঘরামী বলেন, এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা কলা কিনতে আসে, এজন্য দাম ভালো পাওয়া যায়।’
বেতাগী কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ বলেন, ‘এ বছর বেতাগীতে ৩ শত ৫৫ ’ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় উপজেলার বিখ্যাত সবরি ও অমৃত সাগর কলা।এ অঞ্চলের কলা বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের সকল মানুষের কাছে চাহিদা রয়েছে অনেক।
বেতাগী (বরগুনা) : পৌর শহরের কালীবাড়ি এলাকায় রাস্তার দুপাশে কলার ছড়া সাজিয়ে রেখে বিক্রি করছে চাষিরা -সংবাদ
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে শতবর্ষী বেতাগী কালীবাড়ির কলারহাট। সপ্তাহে দুই দিন বসে এই হাট। যেখানে প্রতি হাটে বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার কলা। এ অঞ্চলের কলার সুনাম থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এখান থেকে কলা কিনে নিয়ে যায়। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে এই কালীবাড়ির কলা এখন ঢাকা যাচ্ছে। আর এই কলা আর বিষমুক্ত এসব কলা বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে এখানকার কৃষকরা।
জানা গেছে, দেড়লাখ জনসংখ্যার অধ্যুষিত বেতাগী উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। বিট্রিশ শাসনামল থেকে বিষখালী নদীর কোলঘেঁষে কালীবাড়ির কলার হাট চলে আসছে। বেতাগী পৌরসভার কালীবাড়ি শনিবার ও বুধবার মধ্যরাতে বসে এই কলার হাট। শত বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী এই হাটে বিভিন্ন জাতের কলা বিক্রি করে আসছেন কৃষকরা। এই বিষয় বেতাগী বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সায়েদ মল্লিক (৫৫) বলেন, বেতাগী কালীবাড়ির কলার হাট অনেক পুরোনো (বিট্রিশ শাসনামলে ১৯২৫ সালের দিকে শুরু হয়) একথা আমার দাদার কাছ থেকে জেনেছি।
সাপ্তাহিক হাটের আগের দিন গভীর রাতে বসে এ হাট। বেতাগী পৌরসভা ছাড়াও বিবিচিনি, বেতাগী সদর ইউনিয়ন, হোসনাবাদ, মোকামিয়া, বুড়ামজুমদার, কাজিরাবাদ,সরিষামুড়ি, সোনারবাংলা, শৌলজালিয়া, আওড়াবুনিয়া, নিয়ামতি থেকে ট্রলার, ভ্যান, মাহিন্দ্রায় করে কৃষকরা তাদের বাগান থেকে বিভিন্ন প্রজাতির কলা নিয়ে আসেন এবং বিক্রি করেন।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন,‘ কলা একটি উদ্যান বিষয়ক সবজি এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির যত্ন নিলে ভালো জন্মে।’
সাপ্তাহিক হাটের দিন কাক ডাকা ভোর থেকে কৃষক এসব সাগর, চিনি চম্পা, সবরিসহ বিভিন্ন জাতের কলা এনে পাইকারি ও খুচরা বিক্রির জন্য সারি সারি করে সাজিয়ে রাখেন। এরপর বেপারিদের সাথে দর-কষাকষি করে কলা বিক্রি করতে হয় কৃষকদের। জাত ও আকার ভেদে এই হাটে কলার প্রতি ছড়া বিক্রি হয় ৩ শ’ থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত। রাত দশটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত বেচাবিক্রি চলে। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি হচ্ছে। এরপর ভ্যান, রিকশা, ছোট মাহিন্দ্রা , পিকআপ, টমটম ও নসিমনে করে তাদের গন্তব্যে স্থানে নিয়ে যায়। যেখানে দুই থেকে তিন ঘণ্টার এই হাটে বিক্রি হয় ১০-১৫ লাখ টাকার কলা।
মধ্যরাতে কলা বিক্রির হাটে বিক্রেতারা জানায়, তাদের পূর্বপুরুষদের আমল থেকে কালীবাড়ির এই হাটে কলা বিক্রি করে আসছে। দূর-দূরান্ত থেকে কলা বিক্রির জন্য বিকেলবেলা ও সন্ধ্যার পরে হাটে পাইকাররা কলা কিনতে আসায় কৃষকরা ভালো দামও পাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী এই কলার হাটটিতে ব্যাপক ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হয়। কালীবাড়ির কালী মন্দিরের পিছনেই রয়েছে উন্নতমানের ঘাট। ক্রেতারা কলা কিনে নৌকা কিংবা ট্রলারযোগে তাদের গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারে অতি সহজে। এছাড়া সড়ক পথে কালীবাড়ি থেকে বিভিন্ন স্থানে ভ্যান, মিনি ট্রাক, পিকআপ এবং অটোতে করে নিয়ে যেতে পারে।
কালীবাড়ি হাটে কলা কলা বিক্রি করতে আসা বেতাগী পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষ্ণ কান্ত ঘরামী বলেন, এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা কলা কিনতে আসে, এজন্য দাম ভালো পাওয়া যায়।’
বেতাগী কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ বলেন, ‘এ বছর বেতাগীতে ৩ শত ৫৫ ’ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় উপজেলার বিখ্যাত সবরি ও অমৃত সাগর কলা।এ অঞ্চলের কলা বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের সকল মানুষের কাছে চাহিদা রয়েছে অনেক।