উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় আমের হাট রাজশাহীর বানেশ্বর বাজার। যেখানে ঢলন প্রথার নামে ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে বিকিকিনি হয় এক মণ আম।
জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা এক মণের দামে ৪০ কেজির ওপরে যেটুকু বেশি নেন, তার নাম দিয়েছেন ‘ঢলন। এভাবে রাজশাহী অঞ্চলে বিভিন্ন আমের হাট, বাজারে দীর্ঘদিন ধরে এই ‘ঢলন’ পপ্রা চালু আছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা আর লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
কৃষকরা বলছেন, সাধারণত ৪০ কেজিতে এক মণ বোঝায়, কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে এখানে এই প্রথায় ৪০ কেজিতে এক মণ হলেও বর্তমানে সেটি বেড়ে হয়ে গেছে ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে। এইযে মণ প্রতি কৃষকের ১০ থেকে ১২ কেজি আম বেশি নিচ্ছে আড়ৎদাররা
অপরদিকে ভোক্তা কিনলে ৪০ কেজিতে আমের মণ। বানাগী বা ব্যসায়ীরা আড়তে বিক্রি করলে ৪৫ থেকে ৫২ কেজিতে মণ। এমন ওজন প্রথায় মণের হিসেবে ৪০ কেজি নিতে নারাজ ক্রেতা; আর ৫ থেকে ১২ কেজি বেশি আম দিয়ে অসন্তোষ বাগানি, আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
শনিবার দুপুরে বানেশ্বর হাটে কথা হয় রঘুরামগ্রামের মিজানুর রহমানের সাথে তিনি বলেন, আমি লক্ষ করেছি হাটে ভ্যান গাড়ি ভর্তি অনেক আম নিয়ে এসে বিক্রি করা হচ্ছে। কথা বলে জেনেছি- তারা কেউ ৪০ কেজিতে মণ ধরছে না। ৪৫ থেকে ৪৮ কেজিতে মণ ধরছে। কিন্তু আমরা এক মণ আম কিনব। তখন তারা দিতে চাচ্ছে না। তারা বলছে বেশি আম নিলে তখন ৪৫ থেকে ৪৮ কেজিতে মণ ধরা হবে। এমনভাবে দিলে তাদের লাভ থাকবে না। পরে তিনি একমণ আম কিনে বাড়ি ফিরেছেন।
আমের ওজন নিয়ে হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন- ওজন এনিয়ে কোন অভিযোগ নেই কারও। এটা দীর্ঘদিন থেকে হয়ে আসছে। আম ক্রেতা-বিক্রেতাদের অভিযোগ থাকলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতো। কিন্তু এ নিয়ে কেউ কখনও অভিযোগ করেনি। তবে বানেশ্বর হাটের ব্যবসায়ী মানিক লাল বলেন, এটা দীর্ঘদিন থেকে চল আসছে। আম পাকার পর মণে তিন কেজি ওজন কমে যায়। আর পচা ফাটা-এগুলো বাদ যাবে আরও চার কেজি আর এক কেজি আম আড়তদার নেবে। তাতে ঘাটতি হয়, সে জন্যই তারা ৪৮ কেজি মণ হিসাবেই আম কিনছেন।
হাট সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজশাহী ছাড়া এই অঞ্চলে সবচয়ে বেশি আম কেনা বেচা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানর্সাট, ভোলাহাট ও নওগাঁর সাপাহারে। মূলত বিভাগের এই তিন জেলায় আমের বড় বড় হাট বসে; একই সঙ্গে আড়ৎ রয়েছে। যেখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আম পরিবহন করা হয়। এরমধ্যে রাজশাহীতে সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়ার বানেশ্বরে। এই হাটে আম কেনাবেচা হয় ৪৫ থেকে ৪৮ কেজিতে মণ হিসেবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের আমের হাটে ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে মণ। ভোলাহাটে ৫০ থেকে ৫২ কেজি ও নওগাঁর সাপাহারে আম বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৫২ কেজিতে মণ হিসেবে।
আমিরুল ইসলাম নামের আমবাগানী বলেন, হাটে আম বিক্রির ক্ষেত্রে বিভিন্ন চার্জ দিতে হয়। যেমন শ্রমিকরা মাপার সময় একটা দুইটা আম তুলে নেয়। আবার ওজনের সময় হিসেবের জন্য একটা করে আম তুলে নেয়। যদিও এটাকে ‘কাটা’ বলে। কিন্তু পরবর্তিতে সেই আম আর বাগানীকে ফেরত বা আলাদা করে মাপা হয় না। এছাড়া খাজনা হিসেবে দিতে হয় আম। এমন প্রথা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
এ বিষয়ে বানেশ্বন হাটের ইজারাদার জাকির হোসেন সরকার রাসেল বলেন, বানেশ্বরে আম বিক্রেতাদের কোন খরচ নেই। তারা শুধু হাটে আম বিক্রি করবেন। বছরে প্রায় আড়াই মাস আম কেনা বেচা হয় এই হাটে। গুটি থেকে শুলু হয়ে শেষ হয় আশ্বিনা আমে। এতে বছরে ৭০ থেকে ৭৫ কোটি টাকা আম কেনাবেচা হয়। এই হাটের আমে দেশের বিভিন্ন হাটে বাজারে চলে যায়।
আমের ওজনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা প্রবাদ ‘বাক্যের’ মত। একেক এলাকার হাটে একেক ওজনে বিক্রি হয় আম। যেমন-ভোলাহাটে ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে মণ, কানর্সাটে ৪৫ থেকে ৫২ কেজিতে মণ, নওগাঁর সাপাহারে ৪৫ থেকে ৫২ কেজিতে মণ হিসেবে আম কেনাবেচা হয়। বানেশ্বরে আম বিক্রি শুরু হয়েছে কয়েকদিন থেকে। আমের ওজন নিয়ে কোন ক্রেতা-বিক্রেতা অভিযোগ করেনি।
শনিবার উপজেলার বিভিন্ন বাজার/আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার মণ আম বেচাকেনা করতে। সেখানে ৪০ কেজির মণের কাছে নিচ্ছেন ৪৫ কেজি। কোথাও কোথাও কৌশল অবলম্বন করে প্লাষ্টিকের ২টি ক্যারেট (ঝুড়ি) ভর্তি আমের ওজন ৪৮ কেজি নিচ্ছেন। পরে ২টি ক্যারেটের ওজন বাদ দিচ্ছেন ৪ কেজি। কিন্তু একেকটি ক্যারেটের ওজন ২ কেজির কম। এতে করে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছেন।
কৃষকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের কৃষিপণ্য, এক মণে অতিরিক্ত ‘ঢলন” দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। দিতে
উপজেলার বাজুবাঘা গ্রামের রবিউল ইসলাম জানান, ৪০ কেজিতে মণ হলেও তিনি ৪৫ কেজির মণ ধরে আম বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। ব্যবসায়ী, ডিজিটাল ওয়েট মেশিনে ওজন দিয়ে ৪০ কেজির জায়গায় ৪৫ কেজিতে মণ হিসেবে আম কিনেছেন।
‘বাঘা ফল ভান্ডার’ এর স্বত্তাধিকারি সিরাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলার মিলিক বাঘার বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় তাঁর কাঁচামালের আড়ত আছে। সেই আড়তে আমসহ কৃষিপণ্য কিনে দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্রির জন্য পাঠান। প্রতিবছরের মতো এবারেও আম কিনে রাজশাহীর বাইরের শহরে পাঠাচ্ছেন। ৪৫ কেজিতে মণ হিসেবে আম কিনছেন।
তিনি বলেন, কাঁচামাল ঢাকায় নেওয়ার পথে পচে যায়। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়। এ জন্যই ‘ঢলন’ নেওয়া হয়। দুই বছর আগেও ৪৫ কেজিতে মণ ছিল। এদিকে উপজেলার পণ্য ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে যে পরিমান ‘ঢলন’ নেন, রাজশাহীর বাইরে গিয়ে তাঁদের আর সেই পরিমান ঢলন দিয়ে বিক্রি করতে হয় না বলে জানা গেছে।
রাজশাহীর চারঘাটে উপজেলার রায়পুর গগ্রমের আম ব্যবসায়ী ছদর উদ্দিন বলেন, মুকুল আসার আগেই প্রায় ১১ বিঘা জমির আমবাগান কিনেছিলাম। বাগানের ৬০ শতাংশ গাছে মুকুল ছিল না। এ অবস্থায় ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু এ বছর দুর্যোগ কম হওয়ায় গাছে আম টিকেছে। এখন বাজারে আমের ভালো দামও আছে। কিন্তু আমের ঢলন দিতেই আমরা সর্বসান্ত হচ্ছি , যদি ঢলন না দেওয়া হয়, তা হলে আম কিনতে চায় না আমরা বাধ্য হয়েই এই ঢলন দিতে হয় এবা ৪৮ কেজিতে একমন ধরা হচ্ছে । আম বাজার মোহনপুরের কামার পাড়া আম বাজার। মৌসুমে এ বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ টণ হতে ২০০টণ কেনাবেচা হয়ে থাকে। ১৫ মে হতেই এ বাজারে আনুষ্ঠানিক ভাবে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। মোজাহার নামের একজন আড়ৎ মালিক জানিয়েছেন উদ্বোধনী দিনে আমার আড়তে প্রায় ২০০মণ আম কেনাবেচা হয়েছে। পুর্ণ মৌসুমে প্রতিদিন আমার আড়তেই প্রায় দেড়শো মণ আমি কেনাবেচাা হবে আশাবাদী তিনি। তিনি জানান , আমাদের এই অঞ্চলে ৫২ কেজিতে এক মন ধরা হয় এই ঢলন প্রথা দির্ঘদিন থেকে বিদ্যমান ।
এ দিকে কানসাট আম বাজারের ইজারাদার আলমগীর জুয়েল জানান, আমের ওজন নিয়ে এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সারাদেশে একই ওজনে আম বিক্রির বিষয়টি ডিসি ও ইউএনও স্যারদের বিভিন্ন মিটিং এ জানিয়েছি। শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ বা কানসাট আম বাজারে একই ওজনে আম বিক্রি করলে বাইরে থেকে যারা আম কিনতে আসে তারা অন্য জেলার আম বাজারে চলে যাবে। তাই নওগাঁ, রাজশাহীসহ সকল বাজারে একই ওজনে আম বিক্রির উদ্যোগ নিলে সকলে লাভবান হবেন। তবে গতবছর ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে আম কেনা বেচা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.কে.এম. নূর হোসেন নিঝর সাংবাদিকদের বলেন, তারা জানিয়েছে এটা অনেক আগে থেকে হয়ে আসছে। তারা এও বলেছে- প্রতি মণে ২ থেকে ৩ কেজি আম নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে।
রোববার, ২৫ মে ২০২৫
উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় আমের হাট রাজশাহীর বানেশ্বর বাজার। যেখানে ঢলন প্রথার নামে ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে বিকিকিনি হয় এক মণ আম।
জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা এক মণের দামে ৪০ কেজির ওপরে যেটুকু বেশি নেন, তার নাম দিয়েছেন ‘ঢলন। এভাবে রাজশাহী অঞ্চলে বিভিন্ন আমের হাট, বাজারে দীর্ঘদিন ধরে এই ‘ঢলন’ পপ্রা চালু আছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা আর লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
কৃষকরা বলছেন, সাধারণত ৪০ কেজিতে এক মণ বোঝায়, কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে এখানে এই প্রথায় ৪০ কেজিতে এক মণ হলেও বর্তমানে সেটি বেড়ে হয়ে গেছে ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে। এইযে মণ প্রতি কৃষকের ১০ থেকে ১২ কেজি আম বেশি নিচ্ছে আড়ৎদাররা
অপরদিকে ভোক্তা কিনলে ৪০ কেজিতে আমের মণ। বানাগী বা ব্যসায়ীরা আড়তে বিক্রি করলে ৪৫ থেকে ৫২ কেজিতে মণ। এমন ওজন প্রথায় মণের হিসেবে ৪০ কেজি নিতে নারাজ ক্রেতা; আর ৫ থেকে ১২ কেজি বেশি আম দিয়ে অসন্তোষ বাগানি, আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
শনিবার দুপুরে বানেশ্বর হাটে কথা হয় রঘুরামগ্রামের মিজানুর রহমানের সাথে তিনি বলেন, আমি লক্ষ করেছি হাটে ভ্যান গাড়ি ভর্তি অনেক আম নিয়ে এসে বিক্রি করা হচ্ছে। কথা বলে জেনেছি- তারা কেউ ৪০ কেজিতে মণ ধরছে না। ৪৫ থেকে ৪৮ কেজিতে মণ ধরছে। কিন্তু আমরা এক মণ আম কিনব। তখন তারা দিতে চাচ্ছে না। তারা বলছে বেশি আম নিলে তখন ৪৫ থেকে ৪৮ কেজিতে মণ ধরা হবে। এমনভাবে দিলে তাদের লাভ থাকবে না। পরে তিনি একমণ আম কিনে বাড়ি ফিরেছেন।
আমের ওজন নিয়ে হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন- ওজন এনিয়ে কোন অভিযোগ নেই কারও। এটা দীর্ঘদিন থেকে হয়ে আসছে। আম ক্রেতা-বিক্রেতাদের অভিযোগ থাকলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতো। কিন্তু এ নিয়ে কেউ কখনও অভিযোগ করেনি। তবে বানেশ্বর হাটের ব্যবসায়ী মানিক লাল বলেন, এটা দীর্ঘদিন থেকে চল আসছে। আম পাকার পর মণে তিন কেজি ওজন কমে যায়। আর পচা ফাটা-এগুলো বাদ যাবে আরও চার কেজি আর এক কেজি আম আড়তদার নেবে। তাতে ঘাটতি হয়, সে জন্যই তারা ৪৮ কেজি মণ হিসাবেই আম কিনছেন।
হাট সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজশাহী ছাড়া এই অঞ্চলে সবচয়ে বেশি আম কেনা বেচা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানর্সাট, ভোলাহাট ও নওগাঁর সাপাহারে। মূলত বিভাগের এই তিন জেলায় আমের বড় বড় হাট বসে; একই সঙ্গে আড়ৎ রয়েছে। যেখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আম পরিবহন করা হয়। এরমধ্যে রাজশাহীতে সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়ার বানেশ্বরে। এই হাটে আম কেনাবেচা হয় ৪৫ থেকে ৪৮ কেজিতে মণ হিসেবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের আমের হাটে ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে মণ। ভোলাহাটে ৫০ থেকে ৫২ কেজি ও নওগাঁর সাপাহারে আম বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৫২ কেজিতে মণ হিসেবে।
আমিরুল ইসলাম নামের আমবাগানী বলেন, হাটে আম বিক্রির ক্ষেত্রে বিভিন্ন চার্জ দিতে হয়। যেমন শ্রমিকরা মাপার সময় একটা দুইটা আম তুলে নেয়। আবার ওজনের সময় হিসেবের জন্য একটা করে আম তুলে নেয়। যদিও এটাকে ‘কাটা’ বলে। কিন্তু পরবর্তিতে সেই আম আর বাগানীকে ফেরত বা আলাদা করে মাপা হয় না। এছাড়া খাজনা হিসেবে দিতে হয় আম। এমন প্রথা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
এ বিষয়ে বানেশ্বন হাটের ইজারাদার জাকির হোসেন সরকার রাসেল বলেন, বানেশ্বরে আম বিক্রেতাদের কোন খরচ নেই। তারা শুধু হাটে আম বিক্রি করবেন। বছরে প্রায় আড়াই মাস আম কেনা বেচা হয় এই হাটে। গুটি থেকে শুলু হয়ে শেষ হয় আশ্বিনা আমে। এতে বছরে ৭০ থেকে ৭৫ কোটি টাকা আম কেনাবেচা হয়। এই হাটের আমে দেশের বিভিন্ন হাটে বাজারে চলে যায়।
আমের ওজনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা প্রবাদ ‘বাক্যের’ মত। একেক এলাকার হাটে একেক ওজনে বিক্রি হয় আম। যেমন-ভোলাহাটে ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে মণ, কানর্সাটে ৪৫ থেকে ৫২ কেজিতে মণ, নওগাঁর সাপাহারে ৪৫ থেকে ৫২ কেজিতে মণ হিসেবে আম কেনাবেচা হয়। বানেশ্বরে আম বিক্রি শুরু হয়েছে কয়েকদিন থেকে। আমের ওজন নিয়ে কোন ক্রেতা-বিক্রেতা অভিযোগ করেনি।
শনিবার উপজেলার বিভিন্ন বাজার/আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার মণ আম বেচাকেনা করতে। সেখানে ৪০ কেজির মণের কাছে নিচ্ছেন ৪৫ কেজি। কোথাও কোথাও কৌশল অবলম্বন করে প্লাষ্টিকের ২টি ক্যারেট (ঝুড়ি) ভর্তি আমের ওজন ৪৮ কেজি নিচ্ছেন। পরে ২টি ক্যারেটের ওজন বাদ দিচ্ছেন ৪ কেজি। কিন্তু একেকটি ক্যারেটের ওজন ২ কেজির কম। এতে করে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছেন।
কৃষকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের কৃষিপণ্য, এক মণে অতিরিক্ত ‘ঢলন” দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। দিতে
উপজেলার বাজুবাঘা গ্রামের রবিউল ইসলাম জানান, ৪০ কেজিতে মণ হলেও তিনি ৪৫ কেজির মণ ধরে আম বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। ব্যবসায়ী, ডিজিটাল ওয়েট মেশিনে ওজন দিয়ে ৪০ কেজির জায়গায় ৪৫ কেজিতে মণ হিসেবে আম কিনেছেন।
‘বাঘা ফল ভান্ডার’ এর স্বত্তাধিকারি সিরাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলার মিলিক বাঘার বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় তাঁর কাঁচামালের আড়ত আছে। সেই আড়তে আমসহ কৃষিপণ্য কিনে দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্রির জন্য পাঠান। প্রতিবছরের মতো এবারেও আম কিনে রাজশাহীর বাইরের শহরে পাঠাচ্ছেন। ৪৫ কেজিতে মণ হিসেবে আম কিনছেন।
তিনি বলেন, কাঁচামাল ঢাকায় নেওয়ার পথে পচে যায়। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়। এ জন্যই ‘ঢলন’ নেওয়া হয়। দুই বছর আগেও ৪৫ কেজিতে মণ ছিল। এদিকে উপজেলার পণ্য ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে যে পরিমান ‘ঢলন’ নেন, রাজশাহীর বাইরে গিয়ে তাঁদের আর সেই পরিমান ঢলন দিয়ে বিক্রি করতে হয় না বলে জানা গেছে।
রাজশাহীর চারঘাটে উপজেলার রায়পুর গগ্রমের আম ব্যবসায়ী ছদর উদ্দিন বলেন, মুকুল আসার আগেই প্রায় ১১ বিঘা জমির আমবাগান কিনেছিলাম। বাগানের ৬০ শতাংশ গাছে মুকুল ছিল না। এ অবস্থায় ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু এ বছর দুর্যোগ কম হওয়ায় গাছে আম টিকেছে। এখন বাজারে আমের ভালো দামও আছে। কিন্তু আমের ঢলন দিতেই আমরা সর্বসান্ত হচ্ছি , যদি ঢলন না দেওয়া হয়, তা হলে আম কিনতে চায় না আমরা বাধ্য হয়েই এই ঢলন দিতে হয় এবা ৪৮ কেজিতে একমন ধরা হচ্ছে । আম বাজার মোহনপুরের কামার পাড়া আম বাজার। মৌসুমে এ বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ টণ হতে ২০০টণ কেনাবেচা হয়ে থাকে। ১৫ মে হতেই এ বাজারে আনুষ্ঠানিক ভাবে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। মোজাহার নামের একজন আড়ৎ মালিক জানিয়েছেন উদ্বোধনী দিনে আমার আড়তে প্রায় ২০০মণ আম কেনাবেচা হয়েছে। পুর্ণ মৌসুমে প্রতিদিন আমার আড়তেই প্রায় দেড়শো মণ আমি কেনাবেচাা হবে আশাবাদী তিনি। তিনি জানান , আমাদের এই অঞ্চলে ৫২ কেজিতে এক মন ধরা হয় এই ঢলন প্রথা দির্ঘদিন থেকে বিদ্যমান ।
এ দিকে কানসাট আম বাজারের ইজারাদার আলমগীর জুয়েল জানান, আমের ওজন নিয়ে এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সারাদেশে একই ওজনে আম বিক্রির বিষয়টি ডিসি ও ইউএনও স্যারদের বিভিন্ন মিটিং এ জানিয়েছি। শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ বা কানসাট আম বাজারে একই ওজনে আম বিক্রি করলে বাইরে থেকে যারা আম কিনতে আসে তারা অন্য জেলার আম বাজারে চলে যাবে। তাই নওগাঁ, রাজশাহীসহ সকল বাজারে একই ওজনে আম বিক্রির উদ্যোগ নিলে সকলে লাভবান হবেন। তবে গতবছর ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে আম কেনা বেচা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.কে.এম. নূর হোসেন নিঝর সাংবাদিকদের বলেন, তারা জানিয়েছে এটা অনেক আগে থেকে হয়ে আসছে। তারা এও বলেছে- প্রতি মণে ২ থেকে ৩ কেজি আম নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে।