রাজশাহী : ভ্যাপসা গরমে মাথার উপরে মেঘ-বৃষ্টি নিয়ে বোরো ধান চাষ করছেন চাষি ও শ্রমিকরা -সংবাদ
কৃষকের বোরো ধানের গাছ ও শীষে কলাপাকা রঙ ধরেছে। জ্যৈষ্ঠে ভাপসা গরমে মাথার ওপরে মেঘ-বৃষ্টি নিয়ে বোরো ধান চাষ করছেন চাষি ও শ্রমিকরা। এমন পরিস্থিতিতে গেল সাত দিনের ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় জমিতে হেলে পড়ে আছে বোরো ধান। আর নিচু জমিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবন্ধতা। এমন অবস্থায় ধান কাটতে অতিরিক্ত শ্রমিক লাগায় বেকায়দায় পড়েছেন বোরো চাষিরা।
এ বছর রাজশাহী জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। কৃষি অফিস বলছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে ধানের। চাষিরা জমি থেকে ধান মাড়ায়ের পরে দুই দিন রোদে শুকিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা মণ দরে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, গতকাল সোমবার রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত রোববার রাজশাহীতে ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার রাজশাহীতে ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার আগের দিন শুক্রবার ৩১ দশমিক ৮ মিলিমিটার ও সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাজশাহী বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮৪ মিলিমিটার। গত ২৫ মে ২৫ মিলিমিটার ও ২৬ মে ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এই বৃষ্টিপাতের সময় রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝড়ো হাওয়া। এতে করে অনেক কৃষকের বোরো ধান জমিতে হেলে পড়েছে। কারো কারো জমিতে পড়ে যাওয়া ধানের শীষ পানিতে তলিয়ে গেছে।
পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর হাট এলাকার বোরো চাষি সাজ্জাদ হোসেন। তার এ বছর ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান রয়েছে। এর মধ্যে ২৮ জাতের ধান রয়েছে ১ বিঘা ও ২৯ জাতের ধান রয়েছে ২ বিঘা জমিতে।
তিনি বলেন, ২৮ জাতের ধান ও ধানের গাছে ‘কলাপড়া’ রঙ ধরেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কেটে ঘরে তুলতে হবে। কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের কারণে ধান কাটা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে জমিতে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। তবে বৃষ্টিপাত না হলে পানি শুকাতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় প্রয়োজন। নতুবা ধানের খড় পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে লোকসান হবে। তিনি বলেন, এই বোরো ধানে সেচ ও সার খরচ বেশি। তাই ধানের খড় বিক্রি করে পুষিয়ে নেন চাষিরা।
নগরীর বুধপাড়ায় তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন মোয়াজ্জোম হোসেন। এর মধ্যে চার কাঠা জমিতে আঠাশ জাতের ধান চাষ করেন তিনি। আঠাশ জাতের ধানগুলো এক সপ্তাহ আগে কাটা হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টিপাতের ফলে জমি থেকে ধান তোলা সম্ভব হয়নি তার। এমন অবস্থায় বৃষ্টিপাতে জমিতে পানি জমে গেছে। আর অন্য ধানগুলো বাতাসে জমিতে পড়ে গেছে।
মোয়াজ্জোম হোসেন বলেন, যে ধানগুলো জমিতে পড়েছে সেগুলো জমা পানিতে ডুবে আছে। ধানগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটা না গেলে পুরোদমে নষ্ট হয়ে যাবে। এ ছাড়া যে ধানগুলো আগে কাটা ছিল সেগুলোর চারা গজাতে শুরু করেছে। এই ধানের চাল হবে না। আর হলেও ভাতে গন্ধ বের হবে। একই সঙ্গে পানি জমে পচন ধরেছে ধানের খড়ে।
ধান কাটার বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ধান কাটতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই জেলার দুর্গাপুর উপজেলা থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে চার বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকে ৫৫০ টাকা করে দিতে হচ্ছে কাজের মজুরি। জমিতে পড়ে যাওয়া ধান কাটতে বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হচ্ছে। আরও এক বিঘা জমির ধান কাটতে বাকি আছে। বৃষ্টিপাতের কারণে শ্রমিকরা গত দুদিন আসেনি। আকাশ পরিষ্কার হলে শ্রমিকরা এসে ধান কাটাবেন বলে জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ‘এইবছর আমাদের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে জমিতে যে ধান আছে সেগুলো পাকা অবস্থায় রয়েছে। আমরা কৃষকদের সবসময় পরামর্শ দেই পাকা ধান দ্রুত কেটে ফেলার জন্য। আর এখন আবহাওয়ার খবর আগেই পাওয়া যায়, সে অনুযায়ী রোদ দেখে ধান কর্তন করতে হবে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে যেহেতু ধান ভিজে গেছে সেগুলো মেশিনে মাড়াই করতে হবে।’
রাজশাহী আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর রাজশাহীতে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি। এপ্রিল মাসেও বৃষ্টি হয়েছে আবার মে মাসজুড়েও বৃষ্টি হচ্ছে। ভালো আবহাওয়া পেতে এখনও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।’
রাজশাহী : ভ্যাপসা গরমে মাথার উপরে মেঘ-বৃষ্টি নিয়ে বোরো ধান চাষ করছেন চাষি ও শ্রমিকরা -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
কৃষকের বোরো ধানের গাছ ও শীষে কলাপাকা রঙ ধরেছে। জ্যৈষ্ঠে ভাপসা গরমে মাথার ওপরে মেঘ-বৃষ্টি নিয়ে বোরো ধান চাষ করছেন চাষি ও শ্রমিকরা। এমন পরিস্থিতিতে গেল সাত দিনের ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় জমিতে হেলে পড়ে আছে বোরো ধান। আর নিচু জমিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবন্ধতা। এমন অবস্থায় ধান কাটতে অতিরিক্ত শ্রমিক লাগায় বেকায়দায় পড়েছেন বোরো চাষিরা।
এ বছর রাজশাহী জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। কৃষি অফিস বলছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে ধানের। চাষিরা জমি থেকে ধান মাড়ায়ের পরে দুই দিন রোদে শুকিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা মণ দরে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, গতকাল সোমবার রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত রোববার রাজশাহীতে ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার রাজশাহীতে ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার আগের দিন শুক্রবার ৩১ দশমিক ৮ মিলিমিটার ও সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাজশাহী বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮৪ মিলিমিটার। গত ২৫ মে ২৫ মিলিমিটার ও ২৬ মে ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এই বৃষ্টিপাতের সময় রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝড়ো হাওয়া। এতে করে অনেক কৃষকের বোরো ধান জমিতে হেলে পড়েছে। কারো কারো জমিতে পড়ে যাওয়া ধানের শীষ পানিতে তলিয়ে গেছে।
পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর হাট এলাকার বোরো চাষি সাজ্জাদ হোসেন। তার এ বছর ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান রয়েছে। এর মধ্যে ২৮ জাতের ধান রয়েছে ১ বিঘা ও ২৯ জাতের ধান রয়েছে ২ বিঘা জমিতে।
তিনি বলেন, ২৮ জাতের ধান ও ধানের গাছে ‘কলাপড়া’ রঙ ধরেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কেটে ঘরে তুলতে হবে। কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের কারণে ধান কাটা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে জমিতে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। তবে বৃষ্টিপাত না হলে পানি শুকাতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় প্রয়োজন। নতুবা ধানের খড় পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে লোকসান হবে। তিনি বলেন, এই বোরো ধানে সেচ ও সার খরচ বেশি। তাই ধানের খড় বিক্রি করে পুষিয়ে নেন চাষিরা।
নগরীর বুধপাড়ায় তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন মোয়াজ্জোম হোসেন। এর মধ্যে চার কাঠা জমিতে আঠাশ জাতের ধান চাষ করেন তিনি। আঠাশ জাতের ধানগুলো এক সপ্তাহ আগে কাটা হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টিপাতের ফলে জমি থেকে ধান তোলা সম্ভব হয়নি তার। এমন অবস্থায় বৃষ্টিপাতে জমিতে পানি জমে গেছে। আর অন্য ধানগুলো বাতাসে জমিতে পড়ে গেছে।
মোয়াজ্জোম হোসেন বলেন, যে ধানগুলো জমিতে পড়েছে সেগুলো জমা পানিতে ডুবে আছে। ধানগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটা না গেলে পুরোদমে নষ্ট হয়ে যাবে। এ ছাড়া যে ধানগুলো আগে কাটা ছিল সেগুলোর চারা গজাতে শুরু করেছে। এই ধানের চাল হবে না। আর হলেও ভাতে গন্ধ বের হবে। একই সঙ্গে পানি জমে পচন ধরেছে ধানের খড়ে।
ধান কাটার বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ধান কাটতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই জেলার দুর্গাপুর উপজেলা থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে চার বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকে ৫৫০ টাকা করে দিতে হচ্ছে কাজের মজুরি। জমিতে পড়ে যাওয়া ধান কাটতে বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হচ্ছে। আরও এক বিঘা জমির ধান কাটতে বাকি আছে। বৃষ্টিপাতের কারণে শ্রমিকরা গত দুদিন আসেনি। আকাশ পরিষ্কার হলে শ্রমিকরা এসে ধান কাটাবেন বলে জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ‘এইবছর আমাদের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে জমিতে যে ধান আছে সেগুলো পাকা অবস্থায় রয়েছে। আমরা কৃষকদের সবসময় পরামর্শ দেই পাকা ধান দ্রুত কেটে ফেলার জন্য। আর এখন আবহাওয়ার খবর আগেই পাওয়া যায়, সে অনুযায়ী রোদ দেখে ধান কর্তন করতে হবে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে যেহেতু ধান ভিজে গেছে সেগুলো মেশিনে মাড়াই করতে হবে।’
রাজশাহী আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর রাজশাহীতে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি। এপ্রিল মাসেও বৃষ্টি হয়েছে আবার মে মাসজুড়েও বৃষ্টি হচ্ছে। ভালো আবহাওয়া পেতে এখনও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।’