কুষ্টিয়া (দৌলতপুর) : ফিলিপনগর ইউনিয়নের কামারশিল্পী জনি কামারশালায় -সংবাদ
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে উপজেলায় আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে বেড়েছে কামার শিল্পীদের ব্যস্ততা। কোরবানির পশুর মাংস কাটার বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরিতে দিন রাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। টুং টাং হাতুড়ি পেটা শব্দে মুখরিত উপজেলার বিভিন্ন কামারশালা গুলো। কোরবানির ঈদ যতই এগিয়ে আসছে, ততই যেন ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন কামার ও ক্রেতারা। উপজেলার কামার শিল্পীদের বেশির ভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের। কামারপাড়াতে গেলেই চোখে পড়ে কামার শিল্পীদের ব্যস্ততম জীবন চিত্র।
সারাবছর টুকটাক কাজ থাকলেও কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বরাবরই ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কিনতেও লোকজন ভিড় করছেন। কামারের দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে পশু জবাই এর বিভিন্ন উপকরণে। লোহার গুণাগুণের ও পণ্যের উপর ভিত্তি করে যন্ত্রপাতির দাম ধরা হয়েছে সর্ব নিম্ন ৩শ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। দৈনন্দিন জীবনযাপনের কাজ সহ ঈদুল আযহার কোরবানীর পশুর মাংস কাটার যন্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরিতে কামারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে।
অনেকের আবার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এ পেশা। কামারদের তৈরি যন্ত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে দা, বটি, ছুঁড়ি, চাপাটি, কোদাল, কুড়াল, হাসুয়া ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, যা ঈদুল আযহার কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। লোহার দাম বৃদ্ধি, লাগাম হীন বাজার ব্যবস্থা ও স্টেইনলেসস্টিলের যন্ত্রপাতি থাকায় পরিশ্রমের তুলনায় কমমূল্য পাওয়া এসব সঙ্গত কারণেই বছরের বেশির ভাগ সময়ই কামার শিল্পীদের কর্মহীন জীবন চালাতে হয়। বর্তমান বাজারে কামার শিল্পিদের তৈরি যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমেগেছে ফলে হারাতে বসেছে তাদের পৈত্রিক পেশা। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে কাজ কর্ম বেশি থাকায় বর্তমানে ব্যস্ত তারা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কামার শিল্পী শ্রী প্রসান্ত কর্মকার জানান আমার বাবা স্বর্গীয় জিতেন কর্মকার বুদ্ধি বয়স থেকে এই কাজ করতেন, জীবনের নব্বই বছর পার করেছেন এই পেশায় এখন আর তিনি বেচে নেই, আমার বড় ভাই শ্রী সুশান্ত কর্মকার এই কাজ করেন, আমরা দুই ভাই জীবনের প্রায় শুরু থেকে বংশানুক্রমিক ভাবে এ কাজ করে আসছি, আমার দাদাও এই কাজ কর্তেন। কিন্তু বর্তমানে একটা ঈদের জন্য আমাদের অপেক্ষা করে থাকতে হয় সারা বছর। আগে এমন অবস্থার শিকার হইনি কখনো।
ফিলিপনগর ইউনিয়নের কামারশিল্পী জনি কর্মকার জানান, একসময় কামারদের যে কদর ছিল, বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে, ফলে তাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকর্ষণ হারাচ্ছে। তবে কোরবানির ঈদের সময় তারা একটু আশাবাদী হন, কারণ এই সময় তাদের রোজগার ভালো হয়।
ওই ইউনিয়নের আরেক কামার শিল্পী আব্দুস সালাম জানান, বর্তমানে কয়লার দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এর ফলে অস্ত্র তৈরির খরচও বেড়ে গেছে, যা সরাসরি তাদের লাভের ওপর প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন: “আগে কয়লা কিনতাম কম দামে, এখন সেই একই পরিমাণ কয়লা কিনতে প্রায় দ্বিগুণ টাকা গুণতে হচ্ছে। ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। দাম বাড়িয়ে বিক্রি করলেও আগের এত লাভ থাকছে না। তিনি আরও বলেন, কোরবানির ঈদে যেভাবে মানুষ ধারালো অস্ত্র তৈরি ও শান দিতে আসেন, তা কিছুটা আশার আলো দেখালেও, খরচ বৃদ্ধির কারণে এখন আর আগের এত আয় হয় না। তবুও তারা পৈতৃক এই পেশাকে ভালোবেসে ধরে রেখেছেন।
কুষ্টিয়া (দৌলতপুর) : ফিলিপনগর ইউনিয়নের কামারশিল্পী জনি কামারশালায় -সংবাদ
বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে উপজেলায় আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে বেড়েছে কামার শিল্পীদের ব্যস্ততা। কোরবানির পশুর মাংস কাটার বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরিতে দিন রাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। টুং টাং হাতুড়ি পেটা শব্দে মুখরিত উপজেলার বিভিন্ন কামারশালা গুলো। কোরবানির ঈদ যতই এগিয়ে আসছে, ততই যেন ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন কামার ও ক্রেতারা। উপজেলার কামার শিল্পীদের বেশির ভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের। কামারপাড়াতে গেলেই চোখে পড়ে কামার শিল্পীদের ব্যস্ততম জীবন চিত্র।
সারাবছর টুকটাক কাজ থাকলেও কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বরাবরই ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কিনতেও লোকজন ভিড় করছেন। কামারের দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে পশু জবাই এর বিভিন্ন উপকরণে। লোহার গুণাগুণের ও পণ্যের উপর ভিত্তি করে যন্ত্রপাতির দাম ধরা হয়েছে সর্ব নিম্ন ৩শ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। দৈনন্দিন জীবনযাপনের কাজ সহ ঈদুল আযহার কোরবানীর পশুর মাংস কাটার যন্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরিতে কামারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে।
অনেকের আবার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এ পেশা। কামারদের তৈরি যন্ত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে দা, বটি, ছুঁড়ি, চাপাটি, কোদাল, কুড়াল, হাসুয়া ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, যা ঈদুল আযহার কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। লোহার দাম বৃদ্ধি, লাগাম হীন বাজার ব্যবস্থা ও স্টেইনলেসস্টিলের যন্ত্রপাতি থাকায় পরিশ্রমের তুলনায় কমমূল্য পাওয়া এসব সঙ্গত কারণেই বছরের বেশির ভাগ সময়ই কামার শিল্পীদের কর্মহীন জীবন চালাতে হয়। বর্তমান বাজারে কামার শিল্পিদের তৈরি যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমেগেছে ফলে হারাতে বসেছে তাদের পৈত্রিক পেশা। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে কাজ কর্ম বেশি থাকায় বর্তমানে ব্যস্ত তারা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কামার শিল্পী শ্রী প্রসান্ত কর্মকার জানান আমার বাবা স্বর্গীয় জিতেন কর্মকার বুদ্ধি বয়স থেকে এই কাজ করতেন, জীবনের নব্বই বছর পার করেছেন এই পেশায় এখন আর তিনি বেচে নেই, আমার বড় ভাই শ্রী সুশান্ত কর্মকার এই কাজ করেন, আমরা দুই ভাই জীবনের প্রায় শুরু থেকে বংশানুক্রমিক ভাবে এ কাজ করে আসছি, আমার দাদাও এই কাজ কর্তেন। কিন্তু বর্তমানে একটা ঈদের জন্য আমাদের অপেক্ষা করে থাকতে হয় সারা বছর। আগে এমন অবস্থার শিকার হইনি কখনো।
ফিলিপনগর ইউনিয়নের কামারশিল্পী জনি কর্মকার জানান, একসময় কামারদের যে কদর ছিল, বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে, ফলে তাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকর্ষণ হারাচ্ছে। তবে কোরবানির ঈদের সময় তারা একটু আশাবাদী হন, কারণ এই সময় তাদের রোজগার ভালো হয়।
ওই ইউনিয়নের আরেক কামার শিল্পী আব্দুস সালাম জানান, বর্তমানে কয়লার দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এর ফলে অস্ত্র তৈরির খরচও বেড়ে গেছে, যা সরাসরি তাদের লাভের ওপর প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন: “আগে কয়লা কিনতাম কম দামে, এখন সেই একই পরিমাণ কয়লা কিনতে প্রায় দ্বিগুণ টাকা গুণতে হচ্ছে। ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। দাম বাড়িয়ে বিক্রি করলেও আগের এত লাভ থাকছে না। তিনি আরও বলেন, কোরবানির ঈদে যেভাবে মানুষ ধারালো অস্ত্র তৈরি ও শান দিতে আসেন, তা কিছুটা আশার আলো দেখালেও, খরচ বৃদ্ধির কারণে এখন আর আগের এত আয় হয় না। তবুও তারা পৈতৃক এই পেশাকে ভালোবেসে ধরে রেখেছেন।