কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের। কোনোভাবেই তা রোধ করা যাচ্ছে না। জেলার মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, গ্রাম্য সড়কগুলোতে প্রতিদিনই ঘটে চলেছে ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনা। এতে একদিকে যেমন প্রাণহানীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে পঙ্গুত্ববরণ অর্ধশতাধিক মানুষ। হতাহতের তালিকা হচ্ছে দীর্ঘ। জেলার প্রায় প্রতিটি সড়কই প্রসারিত হয়েছে। বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যাও। আর এর মধ্যে অবৈধ যানবাহনের সংখ্যাই বেশি। বিশেষ শহরতলী ও উপজেলাগুলোর বিভিন্ন সড়কে অবৈধ নছিমন, করিমণ, ভটভটির সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আর একই সঙ্গে রয়েছে ড্রামট্রাকগুলোর বেপরোয়া চলাচল।
আইন প্রয়োগে দূর্বলতা বা চালকের খামখেয়ালীপনায় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থদের পরিবারে নেমে আসছে কালো মেঘের ছায়া। কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা যেন এক মহামারিতে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম হলেও কুষ্টিয়া জেলার সড়কগুলো দিনের পর দিন সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে। গত দেড় মাসে কুষ্টিয়া জেলায় ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন। এতে আহত হয়েছে অন্তত ৫০ হতে ৬০ জনেরও বেশি। এ ছাড়া ছোট ছোট দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। বিশিষ্টজনদের মতে, প্রশাসনিকভাবে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় নাহিদুল ইসলাম রুপল (৩২) নামে এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন। ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে তিনি নিহত হন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কুষ্টিয়া সদরের লাহিনী বটতলা এলাকায় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এই ছাত্রদল নেতার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ায় গত দেড় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহতের ঘটনা ঘটলো। গত তিন মাসে জেলার বিভিন্ন সড়কে একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বেপরোয়া গতি, অবৈধ যানবাহন, অদক্ষ চালক ও ট্রাফিক আইন অমান্য সব মিলিয়ে জেলার সড়কগুলো এখন আতঙ্কের নাম।
কুষ্টিয়া বিআরটিএ সূত্র জানায়, কুষ্টিয়ায় নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৪০৮টি। বিভিন্ন প্রকার এসব যানবাহন কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচল করছে যার মধ্যে মাঝারি মোটরসাইকেল ৭১ হাজার ১৯৮টি, বড় মোটরসাইকেল ২৯ হাজার ২০৩টি এবং ছোট মোটরসাইকেল ২ হাজার ৬৭৫টিসহ মোট ১০ লাখ ৩ হাজার ৭৬টি মোটরসাইকেল। অন্যান্য যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেলই বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে প্রধান কারণ হলো বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচল, অবৈধ যানবাহন, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, ট্রাফিক আইন না মানা, সড়কের খারাপ অবস্থা ও যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব। প্রতিরোধে ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, অবৈধ যানবাহন বন্ধ, চালকদের প্রশিক্ষণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। কুষ্টিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি আসমা আনসারী মিরু বলেন, কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। এসব দূর্ঘটনার মধে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। সচেতনতার অভাব এবং ট্রাফিক আইন মেনে না চলাই এর প্রধান কারণ বলে তিনি মনে করি। কুষ্টিয়া ট্রাক মালিক গ্রুপের এক সদস্য বলেন, কুষ্টিয়ায় সড়কগুলোতে অনেক অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এসব যানবাহন চালকদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। মাঠে থেকে উঠে এসে অটো, নছিমন, করিমন চালাচ্ছে। তাদের হাইওয়ে সড়কে উঠার নিষেধ থাকলেও তারা মানছে না। এতে করে দুর্ঘটনা বাড়ছে। তাছাড়া এসব অবৈধ যানবাহন নিষিদ্ধে প্রশাসনের সঙ্গে বারবার আলোচনায় বসলে তারা আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করছে না। কুষ্টিয়া বিআরটিএ সার্কেল অফিসের সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো সচেতনতার অভাব। পাশাপাশি ট্রাফিক আইন সম্বন্ধে না জানা। এ ছাড়া সড়কগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করছি। সাধারন মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কুষ্টিয়ার চৌড়হাস হাইওয়ে থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলার ছয়টি থানার মধ্যে ৯৫ কিলোমিটার তাদের অধিনে কিন্তু জনবল সংকটের কারণে পুরোপুরিভাবে সড়কে চলাচলরত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের। কোনোভাবেই তা রোধ করা যাচ্ছে না। জেলার মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, গ্রাম্য সড়কগুলোতে প্রতিদিনই ঘটে চলেছে ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনা। এতে একদিকে যেমন প্রাণহানীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে পঙ্গুত্ববরণ অর্ধশতাধিক মানুষ। হতাহতের তালিকা হচ্ছে দীর্ঘ। জেলার প্রায় প্রতিটি সড়কই প্রসারিত হয়েছে। বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যাও। আর এর মধ্যে অবৈধ যানবাহনের সংখ্যাই বেশি। বিশেষ শহরতলী ও উপজেলাগুলোর বিভিন্ন সড়কে অবৈধ নছিমন, করিমণ, ভটভটির সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আর একই সঙ্গে রয়েছে ড্রামট্রাকগুলোর বেপরোয়া চলাচল।
আইন প্রয়োগে দূর্বলতা বা চালকের খামখেয়ালীপনায় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থদের পরিবারে নেমে আসছে কালো মেঘের ছায়া। কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা যেন এক মহামারিতে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম হলেও কুষ্টিয়া জেলার সড়কগুলো দিনের পর দিন সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে। গত দেড় মাসে কুষ্টিয়া জেলায় ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন। এতে আহত হয়েছে অন্তত ৫০ হতে ৬০ জনেরও বেশি। এ ছাড়া ছোট ছোট দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। বিশিষ্টজনদের মতে, প্রশাসনিকভাবে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় নাহিদুল ইসলাম রুপল (৩২) নামে এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন। ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে তিনি নিহত হন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কুষ্টিয়া সদরের লাহিনী বটতলা এলাকায় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এই ছাত্রদল নেতার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ায় গত দেড় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহতের ঘটনা ঘটলো। গত তিন মাসে জেলার বিভিন্ন সড়কে একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বেপরোয়া গতি, অবৈধ যানবাহন, অদক্ষ চালক ও ট্রাফিক আইন অমান্য সব মিলিয়ে জেলার সড়কগুলো এখন আতঙ্কের নাম।
কুষ্টিয়া বিআরটিএ সূত্র জানায়, কুষ্টিয়ায় নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৪০৮টি। বিভিন্ন প্রকার এসব যানবাহন কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচল করছে যার মধ্যে মাঝারি মোটরসাইকেল ৭১ হাজার ১৯৮টি, বড় মোটরসাইকেল ২৯ হাজার ২০৩টি এবং ছোট মোটরসাইকেল ২ হাজার ৬৭৫টিসহ মোট ১০ লাখ ৩ হাজার ৭৬টি মোটরসাইকেল। অন্যান্য যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেলই বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে প্রধান কারণ হলো বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচল, অবৈধ যানবাহন, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, ট্রাফিক আইন না মানা, সড়কের খারাপ অবস্থা ও যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব। প্রতিরোধে ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, অবৈধ যানবাহন বন্ধ, চালকদের প্রশিক্ষণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। কুষ্টিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি আসমা আনসারী মিরু বলেন, কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। এসব দূর্ঘটনার মধে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। সচেতনতার অভাব এবং ট্রাফিক আইন মেনে না চলাই এর প্রধান কারণ বলে তিনি মনে করি। কুষ্টিয়া ট্রাক মালিক গ্রুপের এক সদস্য বলেন, কুষ্টিয়ায় সড়কগুলোতে অনেক অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এসব যানবাহন চালকদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। মাঠে থেকে উঠে এসে অটো, নছিমন, করিমন চালাচ্ছে। তাদের হাইওয়ে সড়কে উঠার নিষেধ থাকলেও তারা মানছে না। এতে করে দুর্ঘটনা বাড়ছে। তাছাড়া এসব অবৈধ যানবাহন নিষিদ্ধে প্রশাসনের সঙ্গে বারবার আলোচনায় বসলে তারা আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করছে না। কুষ্টিয়া বিআরটিএ সার্কেল অফিসের সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো সচেতনতার অভাব। পাশাপাশি ট্রাফিক আইন সম্বন্ধে না জানা। এ ছাড়া সড়কগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করছি। সাধারন মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কুষ্টিয়ার চৌড়হাস হাইওয়ে থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলার ছয়টি থানার মধ্যে ৯৫ কিলোমিটার তাদের অধিনে কিন্তু জনবল সংকটের কারণে পুরোপুরিভাবে সড়কে চলাচলরত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।