গরুর দুধ সংকটে চাঁদপুরে মিষ্টিজাত বিভিন্ন দুদ্ধজাত খাবার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। এতে করে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম থাকায় খাবার পণ্যের দাম বাড়ছে। যদিও দুধ সংকটের বিষয়ে দ্বীমত প্রকাশ করেছেন জেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা।
তবে জেলায় মোট কতটি মিষ্টির দোকান রয়েছে এর কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য কোথাও মিলেনি।
চাঁদপুরের সুপ্রাচীন মিষ্টির দোকান কৃষ্ট ক্যাফের পরিচালক সুমন রায় বলেন, আমাদের দোকানে দিনে কমপক্ষে ৪ মণ গরুর দুধ লাগে। যা দিয়ে ৭ জন কর্মচারীসহ আমরা দধি, মিষ্টি, রসমলাই, মালাইকারী, চমচম তৈরি করি। খাবার গুণগত মান ভালো রাখলেও এখন দুধ সংকটে অনেক অর্ডার পেলেও সরবরাহ দিতে পারছি না। তাই কেজি প্রতি মালাইকারী ৫৫০ টাকা, চমচম ৩২০ টাকা, রসগোল্লা ২৮০, রসমালাই ৪০০,ঘি ১৮০০ টাকা দামে বিক্রি করছি। দুধের সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা কমতে পারে।
এ জেলা শহরের আরেক সুপরিচিত মিষ্টির দোকান ওয়ান মিনিটের সত্ত্বাধিকারী সম্পদ সাহা জানান, আমাদের দোকানে দিনে গরুর দুধের প্রয়োজন অন্তত ২৫ মণ। চর থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে ৩২০০ টাকা মণ হিসেবে দুধ সংগ্রহ করি। কিন্তু মৌসুমি সমস্যায় এখন দুধ আসে কম। আবার শহরাঞ্চলের গরুর দুধ কিনে পোষাতেও সমস্যা। তাই গরুর দুধ সংকটে ক্ষীর ও রসমালাই উৎপাদন এখন বন্ধ রেখেছি। তবে মিষ্টি ও দই সীমিত পরিসরে উৎপাদন করছি। সব মিলিয়ে চাহিদানুযায়ী উৎপাদন সীমিত হলেও পণ্যের দাম সামঞ্জস্যতা রাখতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, ৩টি গাভী গরু হিসেবে ১টি খামার ধরা হলে জেলায় মোট দুদ্ধ খামার ৩৭২৩টি। যেখানে ১ লাখ ৫ হাজার গাভী গরু রয়েছে। এগুলোর পেছনে শ্রম দিচ্ছেন প্রায় ৪২ হাজার দুদ্ধ খামারি। এর ভিত্তিতে জেলায় গরুর দুধের চাহিদা ২.৩ মেট্রিক টন অর্থাৎ ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক হলেও উৎপাদন হচ্ছে ১.৮ মেট্রিক টন। এতে দুধের সংকটের তথ্যের প্রমাণ মিলছে।
চাঁদপুর শহরের গবাদীপশু খামারি মহসীন গাজী বলেন, মিষ্টি ব্যবসায়ীরা আমাদের থেকে দুধ না নিয়ে চর এলাকার খামারিদের থেকে দুধ সংগ্রহ করেন। কারন আমাদের গরু লালন পালনে ঘাস সংকটে বেশি দাম দিয়ে হলেও খইল, ভূষি কিনে খাওয়াতে হচ্ছে। কাজেই গো-খাদ্যের খরছ পোষাতে আমাদেরকে গরুর দুধের দাম কিছুটা বেশি রাখতে হয়। কিন্তু চরে প্রচুর চারণভূমি থাকায় ঘাস সংকট না থাকায় গরু লালন পালন সহজ ও খরছও অনেকটা কম। তাই চরাঞ্চলের মানুষ গরুর দুধের দাম আমাদের থেকে কিছুটা কম রাখায় মিষ্টির দোকানিরা ওখান থেকেই দুধ সংগ্রহ করেন। এখন বর্ষার মৌসুম হওয়ায় দুধ উৎপাদন কিছুটা কম তবে সামনে দুধের সংকট কেটে যাবে আশা করছি।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, একজন সুস্থ্য মানুষের জন্য দিনে যতটুকু দুধের প্রয়োজন তা এ জেলায় উৎপাদন হচ্ছে। এক্ষেত্রে দুধের সংকট নেই। হয়তো মানুষের গড় হিসেবে দুধ কিছুটা সংকট দেখা দিলেও মিষ্টি উৎপাদনে দুধ সংকট এই তথ্য ঠিক নয়। কেননা প্রতিটি মিষ্টির দোকানীই নির্দিষ্ট খামারিদের সাথে সংযুক্ত থাকেন। আর তারাই সারাবছর দোকানের চাহিদানুযায়ী গরুর দুধ সরবরাহ করে থাকে। বরং মিষ্টিজাত পণ্যের দাম বাড়াতে না সময় তারাই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়। অতছ মিষ্টির মানের কোন বালাই নেই। এগুলোর দিকে সচেতনতা জরুরী।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা ভোক্তা অধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, আমরা নিয়মিত মিষ্টির দোকানসহ বাজার তদারকি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। কোথায় কোন অসঙ্গতি নজরে এলেই আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
গরুর দুধ সংকটে চাঁদপুরে মিষ্টিজাত বিভিন্ন দুদ্ধজাত খাবার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। এতে করে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম থাকায় খাবার পণ্যের দাম বাড়ছে। যদিও দুধ সংকটের বিষয়ে দ্বীমত প্রকাশ করেছেন জেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা।
তবে জেলায় মোট কতটি মিষ্টির দোকান রয়েছে এর কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য কোথাও মিলেনি।
চাঁদপুরের সুপ্রাচীন মিষ্টির দোকান কৃষ্ট ক্যাফের পরিচালক সুমন রায় বলেন, আমাদের দোকানে দিনে কমপক্ষে ৪ মণ গরুর দুধ লাগে। যা দিয়ে ৭ জন কর্মচারীসহ আমরা দধি, মিষ্টি, রসমলাই, মালাইকারী, চমচম তৈরি করি। খাবার গুণগত মান ভালো রাখলেও এখন দুধ সংকটে অনেক অর্ডার পেলেও সরবরাহ দিতে পারছি না। তাই কেজি প্রতি মালাইকারী ৫৫০ টাকা, চমচম ৩২০ টাকা, রসগোল্লা ২৮০, রসমালাই ৪০০,ঘি ১৮০০ টাকা দামে বিক্রি করছি। দুধের সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা কমতে পারে।
এ জেলা শহরের আরেক সুপরিচিত মিষ্টির দোকান ওয়ান মিনিটের সত্ত্বাধিকারী সম্পদ সাহা জানান, আমাদের দোকানে দিনে গরুর দুধের প্রয়োজন অন্তত ২৫ মণ। চর থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে ৩২০০ টাকা মণ হিসেবে দুধ সংগ্রহ করি। কিন্তু মৌসুমি সমস্যায় এখন দুধ আসে কম। আবার শহরাঞ্চলের গরুর দুধ কিনে পোষাতেও সমস্যা। তাই গরুর দুধ সংকটে ক্ষীর ও রসমালাই উৎপাদন এখন বন্ধ রেখেছি। তবে মিষ্টি ও দই সীমিত পরিসরে উৎপাদন করছি। সব মিলিয়ে চাহিদানুযায়ী উৎপাদন সীমিত হলেও পণ্যের দাম সামঞ্জস্যতা রাখতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, ৩টি গাভী গরু হিসেবে ১টি খামার ধরা হলে জেলায় মোট দুদ্ধ খামার ৩৭২৩টি। যেখানে ১ লাখ ৫ হাজার গাভী গরু রয়েছে। এগুলোর পেছনে শ্রম দিচ্ছেন প্রায় ৪২ হাজার দুদ্ধ খামারি। এর ভিত্তিতে জেলায় গরুর দুধের চাহিদা ২.৩ মেট্রিক টন অর্থাৎ ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক হলেও উৎপাদন হচ্ছে ১.৮ মেট্রিক টন। এতে দুধের সংকটের তথ্যের প্রমাণ মিলছে।
চাঁদপুর শহরের গবাদীপশু খামারি মহসীন গাজী বলেন, মিষ্টি ব্যবসায়ীরা আমাদের থেকে দুধ না নিয়ে চর এলাকার খামারিদের থেকে দুধ সংগ্রহ করেন। কারন আমাদের গরু লালন পালনে ঘাস সংকটে বেশি দাম দিয়ে হলেও খইল, ভূষি কিনে খাওয়াতে হচ্ছে। কাজেই গো-খাদ্যের খরছ পোষাতে আমাদেরকে গরুর দুধের দাম কিছুটা বেশি রাখতে হয়। কিন্তু চরে প্রচুর চারণভূমি থাকায় ঘাস সংকট না থাকায় গরু লালন পালন সহজ ও খরছও অনেকটা কম। তাই চরাঞ্চলের মানুষ গরুর দুধের দাম আমাদের থেকে কিছুটা কম রাখায় মিষ্টির দোকানিরা ওখান থেকেই দুধ সংগ্রহ করেন। এখন বর্ষার মৌসুম হওয়ায় দুধ উৎপাদন কিছুটা কম তবে সামনে দুধের সংকট কেটে যাবে আশা করছি।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, একজন সুস্থ্য মানুষের জন্য দিনে যতটুকু দুধের প্রয়োজন তা এ জেলায় উৎপাদন হচ্ছে। এক্ষেত্রে দুধের সংকট নেই। হয়তো মানুষের গড় হিসেবে দুধ কিছুটা সংকট দেখা দিলেও মিষ্টি উৎপাদনে দুধ সংকট এই তথ্য ঠিক নয়। কেননা প্রতিটি মিষ্টির দোকানীই নির্দিষ্ট খামারিদের সাথে সংযুক্ত থাকেন। আর তারাই সারাবছর দোকানের চাহিদানুযায়ী গরুর দুধ সরবরাহ করে থাকে। বরং মিষ্টিজাত পণ্যের দাম বাড়াতে না সময় তারাই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়। অতছ মিষ্টির মানের কোন বালাই নেই। এগুলোর দিকে সচেতনতা জরুরী।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা ভোক্তা অধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, আমরা নিয়মিত মিষ্টির দোকানসহ বাজার তদারকি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। কোথায় কোন অসঙ্গতি নজরে এলেই আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।