বানিয়াচং বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা- যা আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক থেকে বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে স্বীকৃত। পূর্বে এটি এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহর গ্রাম থেকে নগরে পরিণত হওয়ার পরে বানিয়াচং বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
দাতা পরিবার হিসেবেও মহারত্ন বাড়ির সুনাম বৃহত্তর সিলেটসহ হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে ছড়িয়ে আছে। এজন্যে প্রাচীন এই জমিদার বাড়িটি বানিয়াচংগের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে
জড়িয়ে আছে।
বানিয়াচং গ্রামের আয়তন প্রায় ৪৮২.৪৬ বর্গ কিলোমিটার এবং এখানে ১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। এটি কেবল দেশের মধ্যেই নয়, এশিয়া এবং বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবেও পরিচিত। বানিয়াচংয়ের লোক সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখের উপরে।
বানিয়াচং বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম- যা আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে অন্যান্য গ্রাম থেকে আলাদা।
স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার ধারক ও বাহক। বানিয়াচং-এ গ্রামীণ খেলার প্রচলন অনেক বেশি। যেমন- সাতছাড়া, লাটিম, হা-ডু-ডু, ফুটবল ইত্যাদি।
বানিয়াচং-এর এই বৈশিষ্ট্যগুলো একে একটি অনন্য স্থান করে তুলেছে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও বিকশিত হতে পারে।
বানিয়াচং এর নামকরণ সম্পর্কে বহু মতভেদ রয়েছে। তবে অনেকের মতে বানিয়াচং এর পুটিয়াবিল নামে একটি প্রকাণ্ড বিল ছিল। এই বিলে নানা জাতীয় পাখি বসবাস করত। বানিয়া নামে এক শিকারী এই বিলে একটি চাঙ নির্মাণ করে পাখি শিকার করত। কালক্রমে এই বিলটি প্রাকৃতিক কারণে ভরাট হয়ে গেলে বহু উচ্চ বৃক্ষলতাদিপূর্ণ ভূমিতে পরিবর্তিত হয়। এ ‘বানিয়া’ ও ‘চাঙ’ শব্দ থেকে বানিয়াচং নামের উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন।
সিলেটের প্রাচীন ইতিহাসে লাউর, গৌড় ও জৈন্তা নামের তিনটি পৃথক রাজ্যের উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল বানিয়াচং। ওই সময় রাজ্যের রাজারা বানিয়াচং এ কমলা রাণীর দীঘিসহ মোট ৫টি দীঘি খনন করেন। ৬৬ একর আয়তন বিশিষ্ট কমলা রাণীর দীঘিটি বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দীঘি হিসেবে স্বীকৃত। দীঘির পশ্চিম পাড়ে রয়েছে প্রায় ৬শ’ বছরের প্রাচীন রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। মোগল আমলে নির্মিত অনেক মসজিদ ও মন্দির আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে এই গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে।
ব্রিটিশ আমলে বানিয়াচং গ্রাম সিলেট জেলার অন্তর্গত ছিল। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে হবিগঞ্জ মহকুমা গঠিত হলে শাসনকার্যের সুবিধার জন্য এ গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ নিয়ে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ আগস্ট ২৮৬৭ জি.জে. বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক বানিয়াচং থানা গঠন করা হয়। ব্রিটিশ আমলে বানিয়াচঙ্গে থানা গঠিত হলে থানার সদর দপ্তর বানিয়াচঙ্গ গ্রামের পূর্বদিকে অবস্থিত নন্দীপাড়ার পূর্ব প্রান্তে স্থাপন করা হয়।
বানিয়াচং এ দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে ২ নং উত্তর পশ্চিম ইউনিয়নে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী মহারত্ন জমিদার বাড়ি। এই বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা প্রাণকৃষ্ণ চক্রবর্তী। তার দুই পুত্র যথাক্রমে বিজয় কৃষ্ণ মহারত্ন ও অন্নদা মহারত্ন দুটি ভবন নির্মাণ করেন ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে। প্রাণকৃষ্ণ চক্রবর্তী উনার জীবিত অবস্থায় উত্তরের ভবনটির মন্দির ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে নির্মাণ করেন।
বিজয় কৃষ্ণ মহারত্ন বানিয়াচং এর বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায় পাকা মন্দির নির্মাণ করেন। হবিগঞ্জের কালীবাড়ির পুরাতন ভবনটি বিজয় কৃষ্ণ মহারত্ন নির্মাণ করেন। বিজয় কৃষ্ণ মহারত্নের মাতা জয়তারা দেবীর নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। মহারত্নপাড়া বিদ্যালয়ের ভূমি দান করা হয়। বিজয় কৃষ্ণ মহারত্ন তার নামে বিজয়নগর পাড়া প্রতিষ্ঠা করেন। শ্মশানের জন্য?ও ভূমি দান করেছেন।
বিজয় কৃষ্ণ মহারত্নের নাতি গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন ১৯৭০ এর নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া শ্রী গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং এর সম্ভ্রান্ত শিক্ষানুরাগী ছিলেন। সমাজসেবামূলক নানান কর্মকাণ্ডের জন্য দাতা পরিবার হিসেবেও মহারত্ন বাড়ির সুনাম বৃহত্তর সিলেটসহ হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে ছড়িয়ে আছে। এজন্যে প্রাচীন এই জমিদার বাড়িটি বানিয়াচংগের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
কালের সাক্ষী হিসেবে আজও রয়েছে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি সাব রেজিস্টার অফিস (ভূমি অফিস), সুবিকেল খেলার মাঠ (জুয়েল ফিল্ড), ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষীয় ফুটবল ক্লাব (জুয়েল ক্লাব), বাবুর বাজার, অসংখ্য রাস্তা-ঘাট, পুকুর-দীঘিসহ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত অসংখ্য জনহিতকর সেবামূলক স্থাপনা।
বানিয়াচং বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে পরিচিত এবং এই গ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হল মহারত্ন জমিদার বাড়ি। এটি বানিয়াচংয়ের জমিদারদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়িটি বর্তমানে সংস্কারের অভাবে অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে। পর্যটকদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান হতে পারত। উপযুক্তভাবে সংরক্ষণ করা ফলে এই বাড়ির ঐতিহ্য আরও বৃদ্ধি পাবে।
বাইসাইকেলে প্রথম বিশ্ব ভ্রমণকারী ভূপর্যটক ও ৪২টি গ্রন্থের লেখক রামনাথ বিশ্বাস, মেজর জেনারেল (অব.) এম আবদুর রব বীর উত্তম, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠক জাকারিয়া খান চৌধুরী, ভারত মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক যথাক্রমে সুশীল কুমার সেন ও হেমসেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাবেক এমপি গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন, সাবেক মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খান, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সহযোদ্ধা মৌলভি আব্দুল্লাহ, উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ফুটবল খেলোয়াড় ভূপেন্দ্র চৌধুরী (বি রায় চৌধুরী), এসকে চৌধুরী, সুরকার ও বাংলাদেশের বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সুবীর নন্দী, শিক্ষানুরাগী ও বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব তাপস কৃষ্ণ মহারত্ন, ইসলামি রাজনীতিবিদ আলহাজ ফরিদ উল্লা সাহেব, উপমহাদেশের স্বনামধন্য ফুটবল খেলোয়াড় দিব্যেন্দু মহারত্ন রবি, গায়ক ও সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরী, নবীন কবি, গীতিকার ও সাহিত্যিক মো. নাঈম মিয়া এত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন।
পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং এর প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে বিথঙ্গলের আখড়া, রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ, কমলারানীর সাগর দীঘি, শ্যাম বাউল গোস্বামীর আখড়া, নাগুরা ফার্ম, মাকালকান্দি স্মৃতিসৌধ, লক্ষ্মী বাওড় জলাবন এবং মহারত্ন জমিদার বাড়ি।
বিথাঙ্গল বড় আখড়া বিতঙ্গল আখড়া নামেও পরিচিত। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং এ অবস্থিত। এটি বৈষ্ণব ধর্ম-অবলম্বীদের জন্য একটি অন্যতম তীর্থস্থান। এটি ষোড়শ শতাব্দীর দিকে নির্মিত একটি আখড়া। রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ এ এলাকার একটি প্রাচীন রাজবাড়ি ছিল- যার ধ্বংসাবশেষ আজও বিদ্যমান।
শ্যাম বাউল গোস্বামীর আখড়া একটি সনাতন ধর্মীয় স্থান। নাগুরা ফার্ম এ অঞ্চলের একটি প্রসিদ্ধ স্থান। মাকালকান্দি স্মৃতিসৌধ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিসৌধ। লক্ষ্মী বাওড় জলাবন এ অঞ্চলের একটি জলাবন- যা ‘খড়তির জঙ্গল’ নামেও পরিচিত।
পর্যটন ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় আর ইতিহাস-ঐতিহ্যের লালন ভূমি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি যেন এই বানিয়াচং। বানিয়াচং গ্রামটি কর্তৃপক্ষের যথাযথ হস্তক্ষেপে হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের এক অপরূপ পর্যটন স্থানে এবং কোলাহলে মুখরিত হতে পারে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমনে।
রোববার, ২২ জুন ২০২৫
বানিয়াচং বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা- যা আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক থেকে বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে স্বীকৃত। পূর্বে এটি এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহর গ্রাম থেকে নগরে পরিণত হওয়ার পরে বানিয়াচং বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
দাতা পরিবার হিসেবেও মহারত্ন বাড়ির সুনাম বৃহত্তর সিলেটসহ হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে ছড়িয়ে আছে। এজন্যে প্রাচীন এই জমিদার বাড়িটি বানিয়াচংগের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে
জড়িয়ে আছে।
বানিয়াচং গ্রামের আয়তন প্রায় ৪৮২.৪৬ বর্গ কিলোমিটার এবং এখানে ১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। এটি কেবল দেশের মধ্যেই নয়, এশিয়া এবং বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবেও পরিচিত। বানিয়াচংয়ের লোক সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখের উপরে।
বানিয়াচং বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম- যা আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে অন্যান্য গ্রাম থেকে আলাদা।
স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার ধারক ও বাহক। বানিয়াচং-এ গ্রামীণ খেলার প্রচলন অনেক বেশি। যেমন- সাতছাড়া, লাটিম, হা-ডু-ডু, ফুটবল ইত্যাদি।
বানিয়াচং-এর এই বৈশিষ্ট্যগুলো একে একটি অনন্য স্থান করে তুলেছে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও বিকশিত হতে পারে।
বানিয়াচং এর নামকরণ সম্পর্কে বহু মতভেদ রয়েছে। তবে অনেকের মতে বানিয়াচং এর পুটিয়াবিল নামে একটি প্রকাণ্ড বিল ছিল। এই বিলে নানা জাতীয় পাখি বসবাস করত। বানিয়া নামে এক শিকারী এই বিলে একটি চাঙ নির্মাণ করে পাখি শিকার করত। কালক্রমে এই বিলটি প্রাকৃতিক কারণে ভরাট হয়ে গেলে বহু উচ্চ বৃক্ষলতাদিপূর্ণ ভূমিতে পরিবর্তিত হয়। এ ‘বানিয়া’ ও ‘চাঙ’ শব্দ থেকে বানিয়াচং নামের উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন।
সিলেটের প্রাচীন ইতিহাসে লাউর, গৌড় ও জৈন্তা নামের তিনটি পৃথক রাজ্যের উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল বানিয়াচং। ওই সময় রাজ্যের রাজারা বানিয়াচং এ কমলা রাণীর দীঘিসহ মোট ৫টি দীঘি খনন করেন। ৬৬ একর আয়তন বিশিষ্ট কমলা রাণীর দীঘিটি বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দীঘি হিসেবে স্বীকৃত। দীঘির পশ্চিম পাড়ে রয়েছে প্রায় ৬শ’ বছরের প্রাচীন রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। মোগল আমলে নির্মিত অনেক মসজিদ ও মন্দির আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে এই গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে।
ব্রিটিশ আমলে বানিয়াচং গ্রাম সিলেট জেলার অন্তর্গত ছিল। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে হবিগঞ্জ মহকুমা গঠিত হলে শাসনকার্যের সুবিধার জন্য এ গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ নিয়ে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ আগস্ট ২৮৬৭ জি.জে. বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক বানিয়াচং থানা গঠন করা হয়। ব্রিটিশ আমলে বানিয়াচঙ্গে থানা গঠিত হলে থানার সদর দপ্তর বানিয়াচঙ্গ গ্রামের পূর্বদিকে অবস্থিত নন্দীপাড়ার পূর্ব প্রান্তে স্থাপন করা হয়।
বানিয়াচং এ দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে ২ নং উত্তর পশ্চিম ইউনিয়নে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী মহারত্ন জমিদার বাড়ি। এই বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা প্রাণকৃষ্ণ চক্রবর্তী। তার দুই পুত্র যথাক্রমে বিজয় কৃষ্ণ মহারত্ন ও অন্নদা মহারত্ন দুটি ভবন নির্মাণ করেন ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে। প্রাণকৃষ্ণ চক্রবর্তী উনার জীবিত অবস্থায় উত্তরের ভবনটির মন্দির ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে নির্মাণ করেন।
বিজয় কৃষ্ণ মহারত্ন বানিয়াচং এর বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায় পাকা মন্দির নির্মাণ করেন। হবিগঞ্জের কালীবাড়ির পুরাতন ভবনটি বিজয় কৃষ্ণ মহারত্ন নির্মাণ করেন। বিজয় কৃষ্ণ মহারত্নের মাতা জয়তারা দেবীর নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। মহারত্নপাড়া বিদ্যালয়ের ভূমি দান করা হয়। বিজয় কৃষ্ণ মহারত্ন তার নামে বিজয়নগর পাড়া প্রতিষ্ঠা করেন। শ্মশানের জন্য?ও ভূমি দান করেছেন।
বিজয় কৃষ্ণ মহারত্নের নাতি গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন ১৯৭০ এর নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া শ্রী গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং এর সম্ভ্রান্ত শিক্ষানুরাগী ছিলেন। সমাজসেবামূলক নানান কর্মকাণ্ডের জন্য দাতা পরিবার হিসেবেও মহারত্ন বাড়ির সুনাম বৃহত্তর সিলেটসহ হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে ছড়িয়ে আছে। এজন্যে প্রাচীন এই জমিদার বাড়িটি বানিয়াচংগের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
কালের সাক্ষী হিসেবে আজও রয়েছে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি সাব রেজিস্টার অফিস (ভূমি অফিস), সুবিকেল খেলার মাঠ (জুয়েল ফিল্ড), ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষীয় ফুটবল ক্লাব (জুয়েল ক্লাব), বাবুর বাজার, অসংখ্য রাস্তা-ঘাট, পুকুর-দীঘিসহ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত অসংখ্য জনহিতকর সেবামূলক স্থাপনা।
বানিয়াচং বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে পরিচিত এবং এই গ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হল মহারত্ন জমিদার বাড়ি। এটি বানিয়াচংয়ের জমিদারদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়িটি বর্তমানে সংস্কারের অভাবে অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে। পর্যটকদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান হতে পারত। উপযুক্তভাবে সংরক্ষণ করা ফলে এই বাড়ির ঐতিহ্য আরও বৃদ্ধি পাবে।
বাইসাইকেলে প্রথম বিশ্ব ভ্রমণকারী ভূপর্যটক ও ৪২টি গ্রন্থের লেখক রামনাথ বিশ্বাস, মেজর জেনারেল (অব.) এম আবদুর রব বীর উত্তম, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠক জাকারিয়া খান চৌধুরী, ভারত মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক যথাক্রমে সুশীল কুমার সেন ও হেমসেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাবেক এমপি গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন, সাবেক মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খান, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সহযোদ্ধা মৌলভি আব্দুল্লাহ, উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ফুটবল খেলোয়াড় ভূপেন্দ্র চৌধুরী (বি রায় চৌধুরী), এসকে চৌধুরী, সুরকার ও বাংলাদেশের বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সুবীর নন্দী, শিক্ষানুরাগী ও বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব তাপস কৃষ্ণ মহারত্ন, ইসলামি রাজনীতিবিদ আলহাজ ফরিদ উল্লা সাহেব, উপমহাদেশের স্বনামধন্য ফুটবল খেলোয়াড় দিব্যেন্দু মহারত্ন রবি, গায়ক ও সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরী, নবীন কবি, গীতিকার ও সাহিত্যিক মো. নাঈম মিয়া এত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন।
পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং এর প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে বিথঙ্গলের আখড়া, রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ, কমলারানীর সাগর দীঘি, শ্যাম বাউল গোস্বামীর আখড়া, নাগুরা ফার্ম, মাকালকান্দি স্মৃতিসৌধ, লক্ষ্মী বাওড় জলাবন এবং মহারত্ন জমিদার বাড়ি।
বিথাঙ্গল বড় আখড়া বিতঙ্গল আখড়া নামেও পরিচিত। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং এ অবস্থিত। এটি বৈষ্ণব ধর্ম-অবলম্বীদের জন্য একটি অন্যতম তীর্থস্থান। এটি ষোড়শ শতাব্দীর দিকে নির্মিত একটি আখড়া। রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ এ এলাকার একটি প্রাচীন রাজবাড়ি ছিল- যার ধ্বংসাবশেষ আজও বিদ্যমান।
শ্যাম বাউল গোস্বামীর আখড়া একটি সনাতন ধর্মীয় স্থান। নাগুরা ফার্ম এ অঞ্চলের একটি প্রসিদ্ধ স্থান। মাকালকান্দি স্মৃতিসৌধ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিসৌধ। লক্ষ্মী বাওড় জলাবন এ অঞ্চলের একটি জলাবন- যা ‘খড়তির জঙ্গল’ নামেও পরিচিত।
পর্যটন ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় আর ইতিহাস-ঐতিহ্যের লালন ভূমি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি যেন এই বানিয়াচং। বানিয়াচং গ্রামটি কর্তৃপক্ষের যথাযথ হস্তক্ষেপে হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের এক অপরূপ পর্যটন স্থানে এবং কোলাহলে মুখরিত হতে পারে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমনে।