‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের’ অভিযোগে নরসুন্দর বাবা ও ছেলেকে গ্রেপ্তারের পর লালমনিরহাট সদর থানার ওসির একটি বক্তব্য ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ইতোমধ্যে ওই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রোববার লালমনিরহাট শহরের হানিফ পাগলার মোড়ে একটি সেলুনে কর্মরত অবস্থায় পরেশ চন্দ্র শীল (৬৯) এবং তাঁর ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে (৩৫) মহানবীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে কিছু লোক মারধর করে। তাঁরা সেলুনে হট্টগোল সৃষ্টি করেন।
পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এর পর উত্তেজিত জনতা থানায় গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সেই পরিস্থিতিতে ওসি নূরনবী জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন, যা মঙ্গলবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের এই বাবা-ছেলেকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দের ঘটনাকে ‘মব সন্ত্রাস’ আখ্যা দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। তারা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ‘মব সন্ত্রাসের’ বিচার দাবি করেছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের ভাষ্য, চুল কাটার টাকা কম দেওয়াকে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। পরিবারটি নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথাও বলেছে।
এ ঘটনায় শহরের নামাটারী আল হেরা জামে মসজিদের ইমাম মো. আবদুল আজিজ বাদী হয়ে পরেশ চন্দ্র শীল ও বিষ্ণু চন্দ্র শীলের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক কার্যক্রম ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার দুপুর ২টার দিকে পরেশ ও বিষ্ণু সেলুনে কাজ করছিলেন। তখন কিছু লোক এসে তাঁদের বিরুদ্ধে মহানবীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তোলে এবং দোকান ঘিরে ধরে হট্টগোল করে। তারা কিছু ভাঙচুর করে ও পরেশ চন্দ্র শীলকে মারধর করে। বাধা দিলে ছেলেকেও মারধর করা হয়।
ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে, যাতে দেখা যায় একদল লোক সেলুনের ভেতর বাবা-ছেলেকে মারধর করছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
তবে উত্তেজিত জনতা থানাতেও হাজির হয়ে বিক্ষোভ করে এবং বিচার দাবি করে স্লোগান দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে থানায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা মোতায়েন করা হয়।
ওসি নূরনবী উত্তেজিত জনতার সামনে বক্তব্য দেন। একটি ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা যারা এখানে দাঁড়িয়ে আছেন আপনারাও মুসলমান, আমি থানার ওসি, আমিও মুসলমান। যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আমারও কলিজায় আগুন লেগেছে। আপনার মত আমারও চোখে পানি এসেছে। বাংলাদেশে এমন মামলা দেব, যাতে তাদের যাবজ্জীবন বা ফাঁসি হয়।”
এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশ্ন উঠেছে—আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে ওসি এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন কি না। ওসি নূরনবী সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন বক্তব্য দিতে হয়েছে, অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
স্থানীয় সিপিবি নেতা অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম অপু বলেন, “একজন আইনের লোক হয়ে এ ধরনের কথা বলা একেবারেই দুঃখজনক। বিষয়টির তদন্ত না করেই এমন মন্তব্য করা অনভিপ্রেত।”
রোববার বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মারধরের ঘটনা ঘটলেও, পরিবারের ভাষ্য মতে মূল ঘটনা শুরু হয়েছিল দুদিন আগে শুক্রবার। সেদিন এক তরুণ চুল কাটাতে গিয়ে টাকা কম দেওয়াকে কেন্দ্র করে পরেশ ও বিষ্ণুর সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান। তিনি ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়ে যান এবং দুদিন পর লোকজন নিয়ে এসে হামলা করেন।
কারাগারে থাকা বিষ্ণুর স্ত্রী দিপ্তী রানী শীল বলেন, তিনি কারাগারে গিয়ে স্বামী ও শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করেছেন। শ্বশুর তাঁকে বলেছেন, শুক্রবারের ঘটনার জেরেই রোববার হামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমার স্বামী ও শ্বশুর নির্দোষ। ধর্মীয় ইস্যু বানিয়ে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। এখন পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছে।”
অন্যদিকে মামলার বাদী আবদুল আজিজ বলেন, “ওই দুই ব্যক্তি নবী করিম (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের নিয়ে কটূক্তি করেছেন এবং মুসল্লিদের সামনে ভুল স্বীকার করেছেন। এখন পরিবার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম বলেন, “উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। অহেতুক কেউ যেন শাস্তি না পায়, সেটা নিশ্চিত করা দরকার।”
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের’ অভিযোগে নরসুন্দর বাবা ও ছেলেকে গ্রেপ্তারের পর লালমনিরহাট সদর থানার ওসির একটি বক্তব্য ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ইতোমধ্যে ওই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রোববার লালমনিরহাট শহরের হানিফ পাগলার মোড়ে একটি সেলুনে কর্মরত অবস্থায় পরেশ চন্দ্র শীল (৬৯) এবং তাঁর ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে (৩৫) মহানবীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে কিছু লোক মারধর করে। তাঁরা সেলুনে হট্টগোল সৃষ্টি করেন।
পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এর পর উত্তেজিত জনতা থানায় গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সেই পরিস্থিতিতে ওসি নূরনবী জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন, যা মঙ্গলবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের এই বাবা-ছেলেকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দের ঘটনাকে ‘মব সন্ত্রাস’ আখ্যা দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। তারা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ‘মব সন্ত্রাসের’ বিচার দাবি করেছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের ভাষ্য, চুল কাটার টাকা কম দেওয়াকে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। পরিবারটি নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথাও বলেছে।
এ ঘটনায় শহরের নামাটারী আল হেরা জামে মসজিদের ইমাম মো. আবদুল আজিজ বাদী হয়ে পরেশ চন্দ্র শীল ও বিষ্ণু চন্দ্র শীলের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক কার্যক্রম ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার দুপুর ২টার দিকে পরেশ ও বিষ্ণু সেলুনে কাজ করছিলেন। তখন কিছু লোক এসে তাঁদের বিরুদ্ধে মহানবীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তোলে এবং দোকান ঘিরে ধরে হট্টগোল করে। তারা কিছু ভাঙচুর করে ও পরেশ চন্দ্র শীলকে মারধর করে। বাধা দিলে ছেলেকেও মারধর করা হয়।
ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে, যাতে দেখা যায় একদল লোক সেলুনের ভেতর বাবা-ছেলেকে মারধর করছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
তবে উত্তেজিত জনতা থানাতেও হাজির হয়ে বিক্ষোভ করে এবং বিচার দাবি করে স্লোগান দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে থানায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা মোতায়েন করা হয়।
ওসি নূরনবী উত্তেজিত জনতার সামনে বক্তব্য দেন। একটি ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা যারা এখানে দাঁড়িয়ে আছেন আপনারাও মুসলমান, আমি থানার ওসি, আমিও মুসলমান। যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আমারও কলিজায় আগুন লেগেছে। আপনার মত আমারও চোখে পানি এসেছে। বাংলাদেশে এমন মামলা দেব, যাতে তাদের যাবজ্জীবন বা ফাঁসি হয়।”
এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশ্ন উঠেছে—আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে ওসি এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন কি না। ওসি নূরনবী সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন বক্তব্য দিতে হয়েছে, অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
স্থানীয় সিপিবি নেতা অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম অপু বলেন, “একজন আইনের লোক হয়ে এ ধরনের কথা বলা একেবারেই দুঃখজনক। বিষয়টির তদন্ত না করেই এমন মন্তব্য করা অনভিপ্রেত।”
রোববার বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মারধরের ঘটনা ঘটলেও, পরিবারের ভাষ্য মতে মূল ঘটনা শুরু হয়েছিল দুদিন আগে শুক্রবার। সেদিন এক তরুণ চুল কাটাতে গিয়ে টাকা কম দেওয়াকে কেন্দ্র করে পরেশ ও বিষ্ণুর সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান। তিনি ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়ে যান এবং দুদিন পর লোকজন নিয়ে এসে হামলা করেন।
কারাগারে থাকা বিষ্ণুর স্ত্রী দিপ্তী রানী শীল বলেন, তিনি কারাগারে গিয়ে স্বামী ও শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করেছেন। শ্বশুর তাঁকে বলেছেন, শুক্রবারের ঘটনার জেরেই রোববার হামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমার স্বামী ও শ্বশুর নির্দোষ। ধর্মীয় ইস্যু বানিয়ে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। এখন পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছে।”
অন্যদিকে মামলার বাদী আবদুল আজিজ বলেন, “ওই দুই ব্যক্তি নবী করিম (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের নিয়ে কটূক্তি করেছেন এবং মুসল্লিদের সামনে ভুল স্বীকার করেছেন। এখন পরিবার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম বলেন, “উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। অহেতুক কেউ যেন শাস্তি না পায়, সেটা নিশ্চিত করা দরকার।”