alt

সারাদেশ

আর্সেনিকের ক্ষত নিয়ে শত শত মানুষ দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন

প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা : বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

পানির অপর নাম জীবন। আবার এই পানি খাওয়ার কারণে জীবন বিষাক্ত ও বিপন্ন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের করণে প্রকৃতি যেমন একদিক থেকে দুষিত হচ্ছে অপর দিকে প্রতিনিয়ত বিপন্ন হচ্ছে প্রাণীকুল। আধুনিক সভ্যতার কারণে নানা ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহারে পানি দূষনের অগ্রসরমান এক অভিশাপে পরিনত হচ্ছে। মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে ভুপৃষ্টের উপরি ভাগের পানি দিনের পর দূষণ হচ্ছে। এছাড়া কৃষি ফসলি জমিতে এবং পুকুর ও বিলের পানিতে বিষ প্রয়োগ করার ফলে পানি দূষিত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। ফলে মানব জীবনর ও প্রাণী কুলের জন্য মারাতক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে সর্বক্ষেত্রে। আর সেই পানিতে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া হয়ে মানব স্বাথ্যের জন্য মারাত্বক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এ আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বড় দুধপাতিলা গ্রামে ২শত ৫৮টি পরিবারের ৪ শত জন ও ডিহিকৃষ্ণপুর গ্রামের গাবতলাপাড়ার প্রায় ৬০/৬৫ পরিবারের লোকজন আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। এ গ্রাম ও মহল্লা গুলির টিওবয়েলে দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিক বিষের কবলে রয়েছে। এখানার ভুূগর্ভস্থ পানিতে ব্যাপক আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত। এ সব এলাকার মানুষের জন্য পানির ব্যবহার মারাত্বক হুমকি হয়ে পড়েছে। এ যাবত দুধপাতিলা গ্রামে ১৪ জন ও ডিহিকৃষ্ণপুর গ্রামের গাবতলাপাড়ার ও ১২ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে বলে জানান গ্রামবাসী। আবার অনেকেই আক্রান্ত হয়ে দূর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন। এর নেই কোন স্থায়ী সমাধান। সুপেয় পানির যে ব্যবস্থা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। ফলে আর্সেনিক মুক্ত পানির পাম্প অতিব জরুরী বলে গ্রামবাসির দাবি। মাত্র ত্রিশ বছর আগেই অগভীর নলকপ ছিল গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য এক আর্শীবাদ। আজ সেই নলকুপের পানিতেই ভয়াবহ বিষ আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে। ফলে না জেনে অনেকে সেই বিষাক্ত পানি পান করে ধীরে ধীরে বিষাক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আর্সেনিক বিষাক্রান্ত রোগীর জন্য কোনো স্থায়ী সমাধানের কোন ঔষধ নেই।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দর্শনা থানাধীন নেহালপুর ইউনিয়নের ডিহিকৃষ্ণপুর গ্রামের গাবতলা পাড়ায় প্রায় ৬০/৬৫ পরিবারের প্রায় ১৮৫ জন নারী পুরুষ আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে বসবাস করছে। এছাড়া বড়দুধ পাতিলা গ্রামে প্রায় ৪ শত জন নারী-পুরুষ আক্রান্ত হয়ে দুর্বিসহ জীবন পার করছে।

এ গ্রামে ২৫৮টি টিওবয়েলে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। দামুড়হুদা উপজেলায় ৪৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী জন-স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ও ইউনিয়ন কর্তৃক আর্সেনিক পরীক্ষা করে দেখা যায় ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১১ হাজার ২২টি শ্যালোমেশিন এর মধ্যে ৮ হাজার ৬শতটি ২৩টির পানি পরীক্ষা করে দেখা যায় ১ হাজার ৮শত ৬৪টি শ্যালো মেশিনে আর্সেনিক রয়েছে। ঐ একই সময় দর্শনা পৌরসভা এলাকায় ৪ হাজার ৭শত ৭৩টি টিওবয়েল পরীক্ষা করে ১ হাজার ৬৭টি টিওবয়েলে আর্সেনিক পাওয়া যায়। বর্তমানে শ্যালো মেশিন, ডিপটিবয়েল ও টিওবয়েল পরীক্ষা করা হলে প্রায় সবগুলোতেই আর্সেনিক পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী। ২০০২ সালে বিশুদ্ধ পানির জন্য জাপানের জায়কা সহায়তায় বড় দুধপাতিলা গ্রামের মসজিদ পাড়ায় রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মান্নানের বাড়িতে আর্সেনিক মুক্ত ১টি ওয়াটার ট্যাংক স্থাপন করে দেন। সে ট্যাংকটি মেডিসিনের আভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে এখনো আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করছে।

পাম্প পরিচালনাকারী বকুল হোসেন ও এলাকবাসী জানান। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বড় দুধপাতিলা গ্রামে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতায় ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৭শত টাকা ব্যয়ে পাইপ লাইন ওয়াটার সাপ্লাই সিমেন্টের একটি ওয়াটর ট্যাংক স্থাপন করা হয়। এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেল্থ যশোর ও চুয়াডাঙ্গা রিসো সংস্থার বাস্তবায়ন পাইপ লাইন ওয়াটার সাপ্লাই সিমেন্টের একটি ওয়াটর ট্যাংক করা হয়। এছাড়া ৮৪টি পরিবারের জন্য পাইপ লাইন ওয়াটার সাপ্লাই সিমেন্টের একটি ওয়াটর ট্যাংক স্থাপনের ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৭শত টাকার মধ্যে দুধপাতিলা গ্রামের হাজী আব্দুর রশিদ ৪০ হাজার টাকা, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও হাইলী ইউনিয়ন পরিষদ ২০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। পাইপ লাইন ওয়াটার সাপ্লাই সিমেন্টের একটি ওয়াটর ট্যাংক স্থাপনের জন্য দুধপাতিলা বিলের মধ্যে গ্রামের মৃত ফজের আলী মন্ডলের ছেলে আজিবর রহমান ১ দশমিক ৮ শতাংশ জমি দান করেন। ২০১৪-১৫ স্থাপিত পাইপ লাইন ওয়াটার সাপ্লাই সিমেন্টের একটি ওয়াটর ট্যাংকের উদ্বোধন করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও তৎকালিন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। ফলে পাইপ লাইনের মাধ্যমে দামুড়হুদা উপজেলার দুইুটি গ্রামের ১৬৮টি পরিবারের বাড়ি বাড়ি আর্সেনিক মুক্ত বিশুদ্ধ পানির স্বল্পমুল্যে ব্যবহার করছে। আর এই পাইপ লাইন ওয়াটার সাপ্লাই সিমেন্টের একটি ওয়াটর ট্যাংকটি পরিচালনা করে আসছেন বড় দুধপাতিলা গ্রামের বকুল হোসেন। এ নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলার হরিরামপুর ও বড় দুধপাতিলা গ্রামে ২টি পাইপ লাইন ওয়াটার সাপ্লাই সিমেন্টের ওয়াটর ট্যাংক করা হয় বলে চুয়াডাঙ্গা রিসো সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ জানান।

এ দিকে ডিহিকৃষ্ণপুর গ্রামের গাবতলা পাড়ার অর্ধশত মানুষ নলকুপের আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের সাথে কথা বলে জানাযায়, তাদের শরিরের বিভিন্ন জায়গায় আর্সেনিকের ক্ষতচিহ্ন বিদ্যমান। অসহনিয় যন্ত্রনায় দিন কাটছে তাদের। আক্রান্তদের দাবি অন্তঃত্ব আর একটি আর্সেনিক মুক্ত পাম্প যেন এ এলাকায় স্থাপন করা হয়। প্রতিদিন তিন থেকে চার বার অন্যের বাড়িতে পানি আনতে যেতে হয়।

গ্রামের শিক্ষিত যুবক সবুজ জানালেন তাদের গ্রামে ১৯৯৯ সালে প্রথম দিকে পানিতে আর্সেনিক সনাক্ত হয়। বর্তমানে অনেক সময় পাম্প চালিয়ে পানি ট্যাংকিতে তুলে রাখতে মনে থাকে না। তখন আর্সেনিক যুক্ত টিওবয়েলের পানি ব্যবহার করতে হয় বাধ্য হয়ে। ৩ হাজার লিটারের একটি আর্সেনিক মুক্ত ট্যাংক বসানো হয়েছে। আপাতত আর একটি পাম্প গ্রামের উত্তর পাড়ায় বসানো হলে ঐ পাড়ার কিছু মানুষ উপকৃত হতো।

গ্রামবাসির দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন তদন্ত পূর্ভক আপাতত আর একটি ডিপটিউবয়েলের ব্যবস্থা করে দেয়। এব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা.হাদী জিয়াউদ্দিন বলেন, সর্বপ্রথম আক্রান্ত এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে। আক্রান্তদের সুচিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আমি খোঁজ খোবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

অপর দিকে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

রাণীনগরে বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে চেয়ারম্যানের ভুয়া সনদ দাখিল

ফরিদপুরে পদ্মায় গোসলে নেমে ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

সিলেটে ট্রাকের ধাক্কায় এসিআই কর্মকর্তা নিহত

ছবি

কৃষকদের মুখে হাসি, কৃষির রূপান্তরের পথে কালীগঞ্জ

নানা আয়োজনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্যাপন

৬ দফা দাবিতে হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্টদের অবস্থান কর্মসূচি

ছবি

কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার-বীজ বিতরণ

কমলনগরে খালা শাশুড়িকে ধর্ষণের পর হত্যা, মূল হোতা গ্রেপ্তার

বদরগঞ্জের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একের পর এক তদন্ত কমিটি হয়, কাজ হয় না

ছবি

আত্রাইয়ে স্কুলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

চাটখিলে অস্ত্রসহ যুবদল নেতা আটক

ছবি

গোপালপুরে অবৈধ চায়না জাল ধ্বংস

কসবায় ১১৬ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার ১

যশোরে স্বর্ণের বারসহ পাচারকারী আটক

ছবি

বেহাল হিলির রাস্তাঘাট, ভোগান্তিতে পথচারীরা

দুমকিতে চার দিনব্যাপী কাব ক্যাম্পুরি অনুষ্ঠিত

ছবি

কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারে বাড়ছে উৎপাদন, কমছে খরচ

ছবি

টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় ঝুঁকিতে লক্ষাধিক মানুষ

ছবি

মহম্মদপুরে অসময়ে মধুমতির ভাঙন আতঙ্কে নদী পাড়ের মানুষ

খোকসায় প্রতিপক্ষের হামলা থেকে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা নিহত

দৌলতদিয়ায় যৌনকর্মীর মরদেহ উদ্ধার

গোবিন্দগঞ্জে টাকা, সিম কার্ড, মাদক ও হ্যাকিং ডিভাইসসহ গ্রেপ্তার ২

পুকুরে ভেসে উঠল যুবকের মরদেহ

চাটমোহরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১

ছবি

স্থলবন্দরের গুদামে গুদামে চাল মজুত, হিলিতে ভরা মৌসুমেও দামে ঊর্ধ্বগতি

ছবি

জোরপূর্বক ফসলি জমিতে মাছের ঘের, প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে গ্রামবাসী

শ্রীমঙ্গলে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

ভূরুঙ্গামারীতে জনবল সংকটে ভূমিসেবা পেতে ভোগান্তি

হাসপাতালে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন, ভোগান্তিতে রোগীরা

ছবি

চিলমারীতে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে র‌্যালি

সৈয়দপুরে রেললাইন চুরি, প্রকৌশলী কারাগারে

মেহেরপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত দুই

ছবি

দুম্বা পালনে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন জাহিদের

ডোমারে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্সবিহীন

নোয়াখালীতে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে দণ্ডিত ১৩

ছবি

লালপুরে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্যাপন

tab

সারাদেশ

আর্সেনিকের ক্ষত নিয়ে শত শত মানুষ দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন

প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা

বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

পানির অপর নাম জীবন। আবার এই পানি খাওয়ার কারণে জীবন বিষাক্ত ও বিপন্ন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের করণে প্রকৃতি যেমন একদিক থেকে দুষিত হচ্ছে অপর দিকে প্রতিনিয়ত বিপন্ন হচ্ছে প্রাণীকুল। আধুনিক সভ্যতার কারণে নানা ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহারে পানি দূষনের অগ্রসরমান এক অভিশাপে পরিনত হচ্ছে। মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে ভুপৃষ্টের উপরি ভাগের পানি দিনের পর দূষণ হচ্ছে। এছাড়া কৃষি ফসলি জমিতে এবং পুকুর ও বিলের পানিতে বিষ প্রয়োগ করার ফলে পানি দূষিত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। ফলে মানব জীবনর ও প্রাণী কুলের জন্য মারাতক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে সর্বক্ষেত্রে। আর সেই পানিতে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া হয়ে মানব স্বাথ্যের জন্য মারাত্বক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এ আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বড় দুধপাতিলা গ্রামে ২শত ৫৮টি পরিবারের ৪ শত জন ও ডিহিকৃষ্ণপুর গ্রামের গাবতলাপাড়ার প্রায় ৬০/৬৫ পরিবারের লোকজন আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। এ গ্রাম ও মহল্লা গুলির টিওবয়েলে দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিক বিষের কবলে রয়েছে। এখানার ভুূগর্ভস্থ পানিতে ব্যাপক আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত। এ সব এলাকার মানুষের জন্য পানির ব্যবহার মারাত্বক হুমকি হয়ে পড়েছে। এ যাবত দুধপাতিলা গ্রামে ১৪ জন ও ডিহিকৃষ্ণপুর গ্রামের গাবতলাপাড়ার ও ১২ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে বলে জানান গ্রামবাসী। আবার অনেকেই আক্রান্ত হয়ে দূর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন। এর নেই কোন স্থায়ী সমাধান। সুপেয় পানির যে ব্যবস্থা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। ফলে আর্সেনিক মুক্ত পানির পাম্প অতিব জরুরী বলে গ্রামবাসির দাবি। মাত্র ত্রিশ বছর আগেই অগভীর নলকপ ছিল গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য এক আর্শীবাদ। আজ সেই নলকুপের পানিতেই ভয়াবহ বিষ আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে। ফলে না জেনে অনেকে সেই বিষাক্ত পানি পান করে ধীরে ধীরে বিষাক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আর্সেনিক বিষাক্রান্ত রোগীর জন্য কোনো স্থায়ী সমাধানের কোন ঔষধ নেই।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দর্শনা থানাধীন নেহালপুর ইউনিয়নের ডিহিকৃষ্ণপুর গ্রামের গাবতলা পাড়ায় প্রায় ৬০/৬৫ পরিবারের প্রায় ১৮৫ জন নারী পুরুষ আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে বসবাস করছে। এছাড়া বড়দুধ পাতিলা গ্রামে প্রায় ৪ শত জন নারী-পুরুষ আক্রান্ত হয়ে দুর্বিসহ জীবন পার করছে।

এ গ্রামে ২৫৮টি টিওবয়েলে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। দামুড়হুদা উপজেলায় ৪৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী জন-স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ও ইউনিয়ন কর্তৃক আর্সেনিক পরীক্ষা করে দেখা যায় ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১১ হাজার ২২টি শ্যালোমেশিন এর মধ্যে ৮ হাজার ৬শতটি ২৩টির পানি পরীক্ষা করে দেখা যায় ১ হাজার ৮শত ৬৪টি শ্যালো মেশিনে আর্সেনিক রয়েছে। ঐ একই সময় দর্শনা পৌরসভা এলাকায় ৪ হাজার ৭শত ৭৩টি টিওবয়েল পরীক্ষা করে ১ হাজার ৬৭টি টিওবয়েলে আর্সেনিক পাওয়া যায়। বর্তমানে শ্যালো মেশিন, ডিপটিবয়েল ও টিওবয়েল পরীক্ষা করা হলে প্রায় সবগুলোতেই আর্সেনিক পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী। ২০০২ সালে বিশুদ্ধ পানির জন্য জাপানের জায়কা সহায়তায় বড় দুধপাতিলা গ্রামের মসজিদ পাড়ায় রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মান্নানের বাড়িতে আর্সেনিক মুক্ত ১টি ওয়াটার ট্যাংক স্থাপন করে দেন। সে ট্যাংকটি মেডিসিনের আভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে এখনো আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করছে।

পাম্প পরিচালনাকারী বকুল হোসেন ও এলাকবাসী জানান। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বড় দুধপাতিলা গ্রামে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতায় ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৭শত টাকা ব্যয়ে পাইপ লাইন ওয়াটার সাপ্লাই সিমেন্টের একটি ওয়াটর ট্যাংক স্থাপন করা হয়। এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেল্থ যশোর ও চুয়াডাঙ্গা রিসো সংস্থার বাস্তবায়ন পাইপ লাইন ওয়াটার সাপ্লাই সিমেন্টের একটি ওয়াটর ট্যাংক করা হয়। এছাড়া ৮৪টি পরিবারের জন্য পাইপ লাইন ওয়াটার সাপ্লাই সিমেন্টের একটি ওয়াটর ট্যাংক স্থাপনের ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৭শত টাকার মধ্যে দুধপাতিলা গ্রামের হাজী আব্দুর রশিদ ৪০ হাজার টাকা, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও হাইলী ইউনিয়ন পরিষদ ২০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। পাইপ লাইন ওয়াটার সাপ্লাই সিমেন্টের একটি ওয়াটর ট্যাংক স্থাপনের জন্য দুধপাতিলা বিলের মধ্যে গ্রামের মৃত ফজের আলী মন্ডলের ছেলে আজিবর রহমান ১ দশমিক ৮ শতাংশ জমি দান করেন। ২০১৪-১৫ স্থাপিত পাইপ লাইন ওয়াটার সাপ্লাই সিমেন্টের একটি ওয়াটর ট্যাংকের উদ্বোধন করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও তৎকালিন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। ফলে পাইপ লাইনের মাধ্যমে দামুড়হুদা উপজেলার দুইুটি গ্রামের ১৬৮টি পরিবারের বাড়ি বাড়ি আর্সেনিক মুক্ত বিশুদ্ধ পানির স্বল্পমুল্যে ব্যবহার করছে। আর এই পাইপ লাইন ওয়াটার সাপ্লাই সিমেন্টের একটি ওয়াটর ট্যাংকটি পরিচালনা করে আসছেন বড় দুধপাতিলা গ্রামের বকুল হোসেন। এ নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলার হরিরামপুর ও বড় দুধপাতিলা গ্রামে ২টি পাইপ লাইন ওয়াটার সাপ্লাই সিমেন্টের ওয়াটর ট্যাংক করা হয় বলে চুয়াডাঙ্গা রিসো সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ জানান।

এ দিকে ডিহিকৃষ্ণপুর গ্রামের গাবতলা পাড়ার অর্ধশত মানুষ নলকুপের আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের সাথে কথা বলে জানাযায়, তাদের শরিরের বিভিন্ন জায়গায় আর্সেনিকের ক্ষতচিহ্ন বিদ্যমান। অসহনিয় যন্ত্রনায় দিন কাটছে তাদের। আক্রান্তদের দাবি অন্তঃত্ব আর একটি আর্সেনিক মুক্ত পাম্প যেন এ এলাকায় স্থাপন করা হয়। প্রতিদিন তিন থেকে চার বার অন্যের বাড়িতে পানি আনতে যেতে হয়।

গ্রামের শিক্ষিত যুবক সবুজ জানালেন তাদের গ্রামে ১৯৯৯ সালে প্রথম দিকে পানিতে আর্সেনিক সনাক্ত হয়। বর্তমানে অনেক সময় পাম্প চালিয়ে পানি ট্যাংকিতে তুলে রাখতে মনে থাকে না। তখন আর্সেনিক যুক্ত টিওবয়েলের পানি ব্যবহার করতে হয় বাধ্য হয়ে। ৩ হাজার লিটারের একটি আর্সেনিক মুক্ত ট্যাংক বসানো হয়েছে। আপাতত আর একটি পাম্প গ্রামের উত্তর পাড়ায় বসানো হলে ঐ পাড়ার কিছু মানুষ উপকৃত হতো।

গ্রামবাসির দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন তদন্ত পূর্ভক আপাতত আর একটি ডিপটিউবয়েলের ব্যবস্থা করে দেয়। এব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা.হাদী জিয়াউদ্দিন বলেন, সর্বপ্রথম আক্রান্ত এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে। আক্রান্তদের সুচিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আমি খোঁজ খোবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

অপর দিকে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

back to top