সৈয়দপুর (নীলফামারী) : আন্তঃনগর ট্রেনের অপেক্ষায় সৈয়দপুর প্লাটফরমে যাত্রীরা -সংবাদ
নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ট্রেনে টিকিট ছাড়া যাত্রীদের ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়ে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। ট্রাভেলিং টিকিট পরীক্ষক (টিটিই), অ্যাটেন্ডেন্ট, রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) ও ক্যাটারিং সার্ভিসে যুক্ত অসাধু রানিং স্টাফরা এই কাজে জড়িত বলে জানা গেছে। এসব দেখার কেউ না থাকায় ট্রেনের ওই রানিং স্টাফরা অর্থ হাতিয়ে নিতে বেপরোয়া উঠেছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তঃনগর ট্রেনে বিনা টিকিটের একজন যাত্রীর কাছে রুটভেদে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা করে নেয়া হয়। সৈয়দপুর স্টেশন হয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে বিনা টিকেটের হাজারের অধিক যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। সেই হিসেবে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা পকেটস্থ করছেন অসাধু রানিং স্টাফরা।
সৈয়দপুর রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ভৌগলিক কারণে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছর ধরেই এখানে যাত্রীচাপ থাকে। এই উপজেলা ছাড়াও পাশের রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের যাত্রীরা এই রুটে যাতায়াত করেন। এখান থেকে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী রুটে পাঁচটি আন্তনগর ও একটি মেইল ট্রেন চলাচল করে। প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে প্রায় দুই হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। ঈদে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়।
সরেজমিন সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ১২ বগির ট্রেনে প্রতি বগিতে ৯২ জনের ধারণক্ষমতা। অথচ দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে সৈয়দপুর স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় নীলসাগর আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ও চিলাহাটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন। ট্রেন দুটিতে দেখা যায় দায়িত্বরত অ্যাটেন্ডেন্ট সদস্যরা প্লাটফর্ম থেকে যাত্রীদের ডেকে নিয়ে টাকার বিনিময়ে ট্রেনে ভ্রমণের সুযোগ করে দিচ্ছেন। অসাধু রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা টিকিটবিহীন যাত্রীদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে খাবার বগি ও দুই বগির মাঝখানে যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করেন। ক্যাটারিং সার্ভিসের সদস্যরা একই কায়দায় অবৈধভাবে খাবার বগিতে যাত্রী পরিবহন করছে। এ ছাড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগির অ্যাটেন্ডেন্ট ও এসি অপারেটররা টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে এসি বগিতে এবং দুই বগির মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় যাত্রী তুলছেন। কর্মরত টিটিইদের ট্রেনে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা টিকিট চেক করেন না। টাকা আদায়ে ব্যস্ত থাকন। ট্রেনে দায়িত্ব পালনরত অনেকেরই দেখা যায় নেমপ্লেট নেই।
বিনা টিকেটে ট্রেনে ওঠেন মিজানুর রহমান। গন্তব্য ঢাকা। তিনি বলেন, তার এক এক আত্মীয় অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাকে দেখতে ট্রেনযোগে যাত্রা। অনেক চেষ্টা করেও টিকেট না পাওয়ায় বিনা টিকিটে ট্রেনে ওঠেছি। ট্রেনে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই একজন জিআরপি পুলিশ সদস্য টিকিট দেখতে চান। টিকিট নেই জানালে ১০০০ টাকা দাবি করেন। প্রথমে দিতে না চাইলে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা ও জেলের ভয় দেখায়। পরে আত্মসম্মানের ভয়ে ১০০০ টাকা দিতে বাধ্য হই। যদিও ভাড়া ৬০০ টাকা।
চিলাহাটি অন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ঢাকার কমলাপুরে যাচ্ছিলেন ৫ জন শ্রমিক। টিকেট না থাকায় তাদের ঢাকা যাওয়ার ভাড়ার চুক্তি হয় এক অ্যাটেনডেন্টের সঙ্গে। জনপ্রতি ৭০০ টাকায় ওই অ্যাটেনডেন্টের তাদের ট্রেনে তোলেন। উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের আব্দুল হান্নান বলেন, তারা মজুরির কাজ করতে ঢাকায় যাচ্ছেন। দুই কোচের মাঝখানে এবং দরজার সামনে বসে ৫ জনকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে অ্যাটেনডেন্টকে। তিনি আরও বলেন, ওই অ্যাটেনডেন্টের নাম জানি না। ট্রেনের পোশাক পরা ছিল। আমরা মূর্খ মানুষ, পুলিশের ভয় আছে। তাই ট্রেনের লোক যা বলেছে তাই করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, এ স্টেশন চলাচলকারী বিভিন্ন ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে বিনা টিকেটের হাজারেরও বেশি যাত্রী পরিবহন করা হয়। সেই হিসেবে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা পকেটেস্থ করছেন অসাধু রানিং স্টাফরা।
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ওবায়দুল ইসলাম রতন বলেন, ট্রেনের ভেতরে কি হয়, না হয় সেটা আমার দেখার বিষয় না। কেউ যদি তার দায়িত্ব ঠিকএত পালন না করে, তাহলে কি করার আছে বলেন?
সৈয়দপুর (নীলফামারী) : আন্তঃনগর ট্রেনের অপেক্ষায় সৈয়দপুর প্লাটফরমে যাত্রীরা -সংবাদ
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ট্রেনে টিকিট ছাড়া যাত্রীদের ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়ে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। ট্রাভেলিং টিকিট পরীক্ষক (টিটিই), অ্যাটেন্ডেন্ট, রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) ও ক্যাটারিং সার্ভিসে যুক্ত অসাধু রানিং স্টাফরা এই কাজে জড়িত বলে জানা গেছে। এসব দেখার কেউ না থাকায় ট্রেনের ওই রানিং স্টাফরা অর্থ হাতিয়ে নিতে বেপরোয়া উঠেছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তঃনগর ট্রেনে বিনা টিকিটের একজন যাত্রীর কাছে রুটভেদে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা করে নেয়া হয়। সৈয়দপুর স্টেশন হয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে বিনা টিকেটের হাজারের অধিক যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। সেই হিসেবে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা পকেটস্থ করছেন অসাধু রানিং স্টাফরা।
সৈয়দপুর রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ভৌগলিক কারণে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছর ধরেই এখানে যাত্রীচাপ থাকে। এই উপজেলা ছাড়াও পাশের রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের যাত্রীরা এই রুটে যাতায়াত করেন। এখান থেকে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী রুটে পাঁচটি আন্তনগর ও একটি মেইল ট্রেন চলাচল করে। প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে প্রায় দুই হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। ঈদে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়।
সরেজমিন সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ১২ বগির ট্রেনে প্রতি বগিতে ৯২ জনের ধারণক্ষমতা। অথচ দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে সৈয়দপুর স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় নীলসাগর আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ও চিলাহাটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন। ট্রেন দুটিতে দেখা যায় দায়িত্বরত অ্যাটেন্ডেন্ট সদস্যরা প্লাটফর্ম থেকে যাত্রীদের ডেকে নিয়ে টাকার বিনিময়ে ট্রেনে ভ্রমণের সুযোগ করে দিচ্ছেন। অসাধু রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা টিকিটবিহীন যাত্রীদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে খাবার বগি ও দুই বগির মাঝখানে যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করেন। ক্যাটারিং সার্ভিসের সদস্যরা একই কায়দায় অবৈধভাবে খাবার বগিতে যাত্রী পরিবহন করছে। এ ছাড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগির অ্যাটেন্ডেন্ট ও এসি অপারেটররা টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে এসি বগিতে এবং দুই বগির মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় যাত্রী তুলছেন। কর্মরত টিটিইদের ট্রেনে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা টিকিট চেক করেন না। টাকা আদায়ে ব্যস্ত থাকন। ট্রেনে দায়িত্ব পালনরত অনেকেরই দেখা যায় নেমপ্লেট নেই।
বিনা টিকেটে ট্রেনে ওঠেন মিজানুর রহমান। গন্তব্য ঢাকা। তিনি বলেন, তার এক এক আত্মীয় অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাকে দেখতে ট্রেনযোগে যাত্রা। অনেক চেষ্টা করেও টিকেট না পাওয়ায় বিনা টিকিটে ট্রেনে ওঠেছি। ট্রেনে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই একজন জিআরপি পুলিশ সদস্য টিকিট দেখতে চান। টিকিট নেই জানালে ১০০০ টাকা দাবি করেন। প্রথমে দিতে না চাইলে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা ও জেলের ভয় দেখায়। পরে আত্মসম্মানের ভয়ে ১০০০ টাকা দিতে বাধ্য হই। যদিও ভাড়া ৬০০ টাকা।
চিলাহাটি অন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ঢাকার কমলাপুরে যাচ্ছিলেন ৫ জন শ্রমিক। টিকেট না থাকায় তাদের ঢাকা যাওয়ার ভাড়ার চুক্তি হয় এক অ্যাটেনডেন্টের সঙ্গে। জনপ্রতি ৭০০ টাকায় ওই অ্যাটেনডেন্টের তাদের ট্রেনে তোলেন। উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের আব্দুল হান্নান বলেন, তারা মজুরির কাজ করতে ঢাকায় যাচ্ছেন। দুই কোচের মাঝখানে এবং দরজার সামনে বসে ৫ জনকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে অ্যাটেনডেন্টকে। তিনি আরও বলেন, ওই অ্যাটেনডেন্টের নাম জানি না। ট্রেনের পোশাক পরা ছিল। আমরা মূর্খ মানুষ, পুলিশের ভয় আছে। তাই ট্রেনের লোক যা বলেছে তাই করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, এ স্টেশন চলাচলকারী বিভিন্ন ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে বিনা টিকেটের হাজারেরও বেশি যাত্রী পরিবহন করা হয়। সেই হিসেবে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা পকেটেস্থ করছেন অসাধু রানিং স্টাফরা।
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ওবায়দুল ইসলাম রতন বলেন, ট্রেনের ভেতরে কি হয়, না হয় সেটা আমার দেখার বিষয় না। কেউ যদি তার দায়িত্ব ঠিকএত পালন না করে, তাহলে কি করার আছে বলেন?