গতকাল শুক্রবার সারা দেশে রতযাত্রা উদযাপিত হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে বিস্তারিত-
চাঁদপুর : জমিদার গঙ্গা গোবিন্দের স্বপ্নে আদেশ পেয়ে তৎকালীন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাচারে শুরু করা রথযাত্রা। চাঁদপুরের কচুয়ার সাচারের রথযাত্রায় এবারও লাখো সনাতনীদের ঢল হয়েছে। প্রায় ১৫৮ বছর যাবৎ ধারাবাহিকভাবে প্রচলিত এই সাচার রথযাত্রা এই অঞ্চলের একটি সনাতনী মিলনমেলার ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় সাচার বাজারে লাখো ভক্ত দড়ি টেনে রথ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়- যার উল্টো রথ আগামী ৪ঠা জুলাই শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে।
সাংবাদিক রাজিব সরকার জানান, ১২৭৭ বঙ্গাব্দে সাচারে এই রথের প্রতিষ্ঠা হয়। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে সাচারের রথটিতে দাপর, ক্রেতা ও কলিযুগের বহু নিদর্শন কাঠের খোদাই করা নকশা শোভা বর্ধন করেছিল। কিন্তু যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সৈন্যরা সৌন্দর্য ম-িত সাচারের রথটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এরপর এক সময় তৎকালীন এমপি ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়ে যাওয়া রথটি ভারত থেকে শিল্পী এনে নতুনভাবে নির্মাণ করে দেন। সাচার জগন্নাথ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের অর্থ সম্পাদক গনেশ চন্দ্র ধর জানান, সবার একটাই আকাক্সক্ষা জগন্নাথ যাতে সব ভক্তের মনের আশা পূরণ করেন।
চাঁদপুরের কচুয়ার সাচার জগন্নাথ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব সাহা ও সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু বলেন, রথাযাত্রায় কচুয়া ও চাঁদপুর ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বহু বিদেশি সনাতনীরা এখানে চলে আসেন।
বরুড়া : কুমিল্লার বরুড়ায় বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গলের কামনার্থে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও ধর্মীয় ভাব-গার্ম্ভীয আর নানা আচার-অনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথ যাত্রা উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী নৃসিংহদেব ও জগন্নাথদেব মন্দিরের পরিচালনা কমিটির আয়োজনে মন্দিরে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, পূজা অর্চনা, গীতাপাঠসহ ধর্মীয় আচার শেষে বিকেলে রথটানা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষেরা পুণ্যের আশায় রথ টানা উৎসবে অংশ গ্রহণ করেন। এ সময় ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া উপজেলার রামমোহন জগন্নাথদেব বাড়ি, চড্ডা জগন্নাথদেব বাড়ি এবং রনাইতলা ঠাকুর বাড়িতেও অনুরূপ ভাবে শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে রথযাত্রার আনন্দ উদযাপনে শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা। পাহাড়জুড়ে উৎসবের রঙ, ঢাকের তালে মুখরিত খাগড়াছড়ি শহর, ৯টি উপজেলা উপ-শহর সনাতন মন্দির। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার এক ভিন্নতর আবহে রঙিন হয়ে ওঠে খাগড়াছড়ি।
সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় রথযাত্রার ধর্মীয় আনন্দ উদযাপন। শহরের প্রতিটি সড়কে, মন্দির প্রাঙ্গণে, এমনকি অলিগলিতেও ছিল উৎসবের ছোঁয়া। রাধা বঙ্কুবিহারী মন্দির, খাগড়াপুর জগন্নাথ মন্দির, জিরোমাইল মহালছড়া, গাছবান মন্দির, ভাইবোনছড়া মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান আর শোভাযাত্রায় ভরে ওঠে সনাতনভক্তদের পদচারণা।
জেলার কেন্দ্রস্থল রাধা বঙ্কুবিহারী মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে বের হয় বিকেল রথ শোভাযাত্রা। হাজারো মানুষের অংশ গ্রহণে, ঢাক-ঢোল, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো শহর। শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা।
শ্রীমঙ্গল : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সনাতনী রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। আট দিনের এই আনন্দ আয়োজন নানা অনুষ্ঠিকতার মধ্য দিয়ে শেষ হবে উল্টোরথের মধ্য দিয়ে। কথিত আছে, এই তিথিতে জগন্নাথ ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রার সঙ্গে মাসির বাড়ি যান। সেখান থেকে আবার সাত দিন পর মন্দিরে ফিরে আসেন। এটাকেই জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি যাওয়া বলে। এই যাওয়াকে সোজা রথ, আর ফিরে আসাকে উল্টো রথ বলে। এদিকে সারাদেশে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে রথযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
শিবগঞ্জ : বগুড়ার শিবগঞ্জে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার ছোট নারাছুপুর গ্রামের ঝর্না রানীর উদ্যোগে ও গ্রামবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় এবং উথলী সাহাপাড়া গ্রামের জিৎ সাহার উদ্দ্যোগে ও গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ২টি রথ যাত্রা একত্রে অনুষ্ঠিত হয়। রথ যাত্রা আশেপাশের গ্রামের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে শিবগঞ্জ উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের শত শত ভক্তবৃন্দ অংশগ্রহণ করে। রথযাত্রা উপলক্ষে বিশ্ব শান্তি কামনায় যজ্ঞসহ বিভিন্ন মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রথ যাত্রার উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, শিবগঞ্জ ধর্মীয় সম্প্রীতির একটি উপজেলা। এ উপজেলায় সব ধর্মের মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করে। আমাদের মধ্যে কোনো জাতিগত বিভেদ নেই।
ঝালকাঠি : ঝালকাঠিতে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রথযাত্রা পালিত হয়েছে তবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রথযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা ঢাকার নীলক্ষেত শ্রী শ্রী শিতলা ও কালী মার মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে কালো ব্যাচ ধারণ করে অংশগ্রহণ করেছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ঝালকাঠি শহরের বিভিন্ন রাধা গোবিন্দের মন্দির থেকে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের বিগ্রহ নিয়ে রথ বের হয় এবং শহর ঘুরে অন্য মন্দির গুলিতে বিগ্রহ রাখা হয়েছে। ৮দিন পরে উল্টো রথের মাধ্যমে এদের বিগ্রহ স্ব স্ব মন্দিরে এনে রাখা হবে। রথযাত্রায় বিভিন্ন মন্দির কমিটিসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাসহ শত শত অংশগ্রহণকালীদের মধ্যে সিংহভাগই নারী ভক্তরা ছিলেন।
ঝালকাঠির শহরে পশ্চিম চাঁদকাঠি এলাকার ইস্কন মন্দির থেকে সর্ববৃহৎ রথযাত্রা বের হয় এবং নারী পুরুষ প্রায় দেড় হাজার ভক্তরা এর রথযাত্রায় অংশ নেয়। মদনমোহন আখরবাড়ি থেকে বিকেল সাড়ে ৩টায় দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা বের হয়। রথযাত্রার সঙ্গে শান্তিকৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল।
আদমদীঘি : বগুড়ার আদমদীঘিতে ও সান্তাহার পৌর শহরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়েছে। উপজেলা সদরের তালসন রাধাগোবিন্দ মন্দির, সান্তাহার পৌর শহরের রথবাড়ী রাধামাধব মন্দির, রেলওয়ে মন্দির বৃহৎ আকারে এবং ছোট পরিসরে বশিপুর মন্দির, চাঁপাপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর রাধাগোবিন্দ মন্দির, মিতইল মন্দিরে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসবের আয়োজন করা হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে ধর্মীয় বিভিন্ন মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে শুরু হয় রথযাত্রার অনুষ্ঠান মালা। ঢাক-ঢোলক, বাদ্য, শঙ্ক, উলু ধ্বনি দিয়ে শ্রী শ্রী জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে রথারোহন করানো হয়। এরপর মন্দির প্রাঙ্গন থেকে রথের প্রথম টানের মধ্যদিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অসিত দেবনাথ বাপ্পা ও সাধারণ সম্পাদক মিহির কুমার সরকার জানান, হিন্দু শাস্ত্র মতে রথের দড়ির স্পর্শে (দড়ি টানলে) পূর্ন্য লাভ হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পূর্ণ্যতা লাভের আশায় আদমদীঘি উপজেলার হিন্দু ধর্মালম্বীরা এই রথযাত্রার আয়োজন করেন।
খোকসা : কুষ্টিয়ার খোকসার গ্রামে রথযাত্রা উৎসব উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বসেছিল গ্রামীন মেলা। গতকাল শুক্রবার বিকালে উপজেলার জানিপুর ইউনিয়নের নিচলাট বটতলা ভুতের ভিটায় রথযাত্রা উপলক্ষে দিন ব্যাপী কীর্ত্তন ও পূজা অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল থেকে শুরু হয় উদ্দম কীর্ত্তন। পরে স্থানীয় নারী ও পুরুষদের দল পালাক্রমে কীর্ত্তন পরিবেশন করে। সন্ধার পর একমাইল দূরে একটি মন্দিরে রথ টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। সাত দিনের মাথায় আগামী শনিবার সন্ধ্যায় রথটি টেনে আবার ভুতের ভিটায় আনা হবে। রথ যাত্রা উপলক্ষে ঈশ্বরদী-ভবানীগঞ্জ সড়কের প্রায় আধাকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছিল গ্রামীন মেলা। জিলাপি, মাটি খেলনা ও বাঁশ বেতের পাত্রসহ নানা পন্যের পসরা মেলে বসেছিল দোকানিরা। আশে পাশের গ্রামগুলো থেকে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ মেলায় জমায়েত হয়েছিলেন।
জগন্নাথপুর : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৭ জুন শুক্রবার দিনব্যাপী জগন্নাথপুর পৌর শহরের রথবাড়িতে রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে বসে মেলা। মেলায় হাজারো জনতার উপস্থিতিতে রীতিএত মলন মেলায় পরিণত হয়। শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউড় মন্দির ও বাসুদেববাড়ি মন্দির কমিটির উদ্যোগে ২টি রথে দেবতাদের আসনে বসিয়ে রথবাড়িজুড়ে একে একে সাতবার ঘুরানো হয়। রথের রশিতে ধরে নানা স্লোগানে রথগাড়ি টানেন ভক্তরা। এ সময় পুরো রথবাড়িতে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় শ্রী শ্রী জগন্নাথ জিউড় মন্দির কমিটির সভাপতি শুধাংশু শেখর রায় বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব, শ্রী শ্রী বাসুদেববাড়ি মন্দির কমিটির সভাপতি মুকুল ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর কাউন্সিলর কৃষ্ণ চন্দ্র চন্দ, জগন্নাথপুর উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রণয় কান্তি সূত্রধর খোকন, পরমানন্দ্র দাস কালা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জগন্নাথপুর উপজেলা সভাপতি পৌর প্রকৌশলী সতীশ গোস্বামী, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সূত্রধর, শশী কান্ত গোপ, প্রজেশ গোপ, আশিষ চন্দ্র দেব, আশুতোষ দাস, জীবন গোপ, কাজল বডুক, বিভাষ দে, হেমেন্দ্র সেনসহ রথযাত্রা আয়োজনের সব নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোউৎসব পালিত হয়েছে। শুক্রবার বিকালে শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির (ইসকনের) আয়োজনে এ মহোৎসব পালন করেন। এই রথযাত্রা ইসকন মন্দির হতে তুরাগ নদীর চাপাইর ব্রীজ হয়ে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও বাস স্ট্যান্ড, বাজার এলাকা প্রদক্ষিন করে কালিয়াকৈর কালী মন্দিরে এসে বিরতি দেয়। যা আগামী ৫ জুলাই উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হবে। প্রতি বছরের ন্যায় চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। এ রথযাত্রা নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আনন্দ মুখর পরিবেশে দিনব্যাপী শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা আয়োজন করেন।
বাগাতিপাড়া : নাটোরের বাগাতিপাড়ায় দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাডুক্য মাধবের রথযাত্রা ও রথমেলা শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের শাঁখারিপাড়া হরি মন্দিরে রথখোলায় রথটান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সূচনা হয়। রথযাত্রা উপলক্ষে হরি মন্দির চত্বরে বসেছে ঐতিহ্যবাহী রথমেলা। পরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং রথ টেনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রার উদ্বোধন করেন বাসুদেব সেন।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি (তদন্ত) রিয়াজুল ইসলাম জানান, রথযাত্রা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশ সার্বক্ষডুক টহলে রয়েছে।
বেতাগী বরগুনা : বরগুনার বেতাগী পৌর শহরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে পৌর শহর এলাকার ৭ নম্বরের কালীবাড়ী থেকে এই শোভাযাত্রা শুরু হয়। রথযাত্রায় সম্প্রতি বন্ধনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, রথযাত্রায় নানা বয়সের নারী-পুরুষ ধর্মপ্রাণ ভক্তরা অংশ নেন। রঙিন পোশাকে সজ্জিত ভক্তরা ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনির মাধ্যমে শোভাযাত্রাকে উৎসবমুখর করে তোলেন। রথ টানার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী পূণ্য লাভের আশায় অংশ নেন কয়েক শত মানুষ। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কালীবাড়ি এসে শেষ হয়।
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
গতকাল শুক্রবার সারা দেশে রতযাত্রা উদযাপিত হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে বিস্তারিত-
চাঁদপুর : জমিদার গঙ্গা গোবিন্দের স্বপ্নে আদেশ পেয়ে তৎকালীন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাচারে শুরু করা রথযাত্রা। চাঁদপুরের কচুয়ার সাচারের রথযাত্রায় এবারও লাখো সনাতনীদের ঢল হয়েছে। প্রায় ১৫৮ বছর যাবৎ ধারাবাহিকভাবে প্রচলিত এই সাচার রথযাত্রা এই অঞ্চলের একটি সনাতনী মিলনমেলার ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় সাচার বাজারে লাখো ভক্ত দড়ি টেনে রথ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়- যার উল্টো রথ আগামী ৪ঠা জুলাই শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে।
সাংবাদিক রাজিব সরকার জানান, ১২৭৭ বঙ্গাব্দে সাচারে এই রথের প্রতিষ্ঠা হয়। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে সাচারের রথটিতে দাপর, ক্রেতা ও কলিযুগের বহু নিদর্শন কাঠের খোদাই করা নকশা শোভা বর্ধন করেছিল। কিন্তু যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সৈন্যরা সৌন্দর্য ম-িত সাচারের রথটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এরপর এক সময় তৎকালীন এমপি ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়ে যাওয়া রথটি ভারত থেকে শিল্পী এনে নতুনভাবে নির্মাণ করে দেন। সাচার জগন্নাথ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের অর্থ সম্পাদক গনেশ চন্দ্র ধর জানান, সবার একটাই আকাক্সক্ষা জগন্নাথ যাতে সব ভক্তের মনের আশা পূরণ করেন।
চাঁদপুরের কচুয়ার সাচার জগন্নাথ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব সাহা ও সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু বলেন, রথাযাত্রায় কচুয়া ও চাঁদপুর ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বহু বিদেশি সনাতনীরা এখানে চলে আসেন।
বরুড়া : কুমিল্লার বরুড়ায় বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গলের কামনার্থে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও ধর্মীয় ভাব-গার্ম্ভীয আর নানা আচার-অনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথ যাত্রা উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী নৃসিংহদেব ও জগন্নাথদেব মন্দিরের পরিচালনা কমিটির আয়োজনে মন্দিরে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, পূজা অর্চনা, গীতাপাঠসহ ধর্মীয় আচার শেষে বিকেলে রথটানা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষেরা পুণ্যের আশায় রথ টানা উৎসবে অংশ গ্রহণ করেন। এ সময় ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া উপজেলার রামমোহন জগন্নাথদেব বাড়ি, চড্ডা জগন্নাথদেব বাড়ি এবং রনাইতলা ঠাকুর বাড়িতেও অনুরূপ ভাবে শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে রথযাত্রার আনন্দ উদযাপনে শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা। পাহাড়জুড়ে উৎসবের রঙ, ঢাকের তালে মুখরিত খাগড়াছড়ি শহর, ৯টি উপজেলা উপ-শহর সনাতন মন্দির। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার এক ভিন্নতর আবহে রঙিন হয়ে ওঠে খাগড়াছড়ি।
সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় রথযাত্রার ধর্মীয় আনন্দ উদযাপন। শহরের প্রতিটি সড়কে, মন্দির প্রাঙ্গণে, এমনকি অলিগলিতেও ছিল উৎসবের ছোঁয়া। রাধা বঙ্কুবিহারী মন্দির, খাগড়াপুর জগন্নাথ মন্দির, জিরোমাইল মহালছড়া, গাছবান মন্দির, ভাইবোনছড়া মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান আর শোভাযাত্রায় ভরে ওঠে সনাতনভক্তদের পদচারণা।
জেলার কেন্দ্রস্থল রাধা বঙ্কুবিহারী মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে বের হয় বিকেল রথ শোভাযাত্রা। হাজারো মানুষের অংশ গ্রহণে, ঢাক-ঢোল, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো শহর। শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা।
শ্রীমঙ্গল : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সনাতনী রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। আট দিনের এই আনন্দ আয়োজন নানা অনুষ্ঠিকতার মধ্য দিয়ে শেষ হবে উল্টোরথের মধ্য দিয়ে। কথিত আছে, এই তিথিতে জগন্নাথ ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রার সঙ্গে মাসির বাড়ি যান। সেখান থেকে আবার সাত দিন পর মন্দিরে ফিরে আসেন। এটাকেই জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি যাওয়া বলে। এই যাওয়াকে সোজা রথ, আর ফিরে আসাকে উল্টো রথ বলে। এদিকে সারাদেশে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে রথযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
শিবগঞ্জ : বগুড়ার শিবগঞ্জে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার ছোট নারাছুপুর গ্রামের ঝর্না রানীর উদ্যোগে ও গ্রামবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় এবং উথলী সাহাপাড়া গ্রামের জিৎ সাহার উদ্দ্যোগে ও গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ২টি রথ যাত্রা একত্রে অনুষ্ঠিত হয়। রথ যাত্রা আশেপাশের গ্রামের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে শিবগঞ্জ উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের শত শত ভক্তবৃন্দ অংশগ্রহণ করে। রথযাত্রা উপলক্ষে বিশ্ব শান্তি কামনায় যজ্ঞসহ বিভিন্ন মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রথ যাত্রার উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, শিবগঞ্জ ধর্মীয় সম্প্রীতির একটি উপজেলা। এ উপজেলায় সব ধর্মের মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করে। আমাদের মধ্যে কোনো জাতিগত বিভেদ নেই।
ঝালকাঠি : ঝালকাঠিতে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রথযাত্রা পালিত হয়েছে তবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রথযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা ঢাকার নীলক্ষেত শ্রী শ্রী শিতলা ও কালী মার মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে কালো ব্যাচ ধারণ করে অংশগ্রহণ করেছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ঝালকাঠি শহরের বিভিন্ন রাধা গোবিন্দের মন্দির থেকে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের বিগ্রহ নিয়ে রথ বের হয় এবং শহর ঘুরে অন্য মন্দির গুলিতে বিগ্রহ রাখা হয়েছে। ৮দিন পরে উল্টো রথের মাধ্যমে এদের বিগ্রহ স্ব স্ব মন্দিরে এনে রাখা হবে। রথযাত্রায় বিভিন্ন মন্দির কমিটিসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাসহ শত শত অংশগ্রহণকালীদের মধ্যে সিংহভাগই নারী ভক্তরা ছিলেন।
ঝালকাঠির শহরে পশ্চিম চাঁদকাঠি এলাকার ইস্কন মন্দির থেকে সর্ববৃহৎ রথযাত্রা বের হয় এবং নারী পুরুষ প্রায় দেড় হাজার ভক্তরা এর রথযাত্রায় অংশ নেয়। মদনমোহন আখরবাড়ি থেকে বিকেল সাড়ে ৩টায় দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা বের হয়। রথযাত্রার সঙ্গে শান্তিকৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল।
আদমদীঘি : বগুড়ার আদমদীঘিতে ও সান্তাহার পৌর শহরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়েছে। উপজেলা সদরের তালসন রাধাগোবিন্দ মন্দির, সান্তাহার পৌর শহরের রথবাড়ী রাধামাধব মন্দির, রেলওয়ে মন্দির বৃহৎ আকারে এবং ছোট পরিসরে বশিপুর মন্দির, চাঁপাপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর রাধাগোবিন্দ মন্দির, মিতইল মন্দিরে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসবের আয়োজন করা হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে ধর্মীয় বিভিন্ন মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে শুরু হয় রথযাত্রার অনুষ্ঠান মালা। ঢাক-ঢোলক, বাদ্য, শঙ্ক, উলু ধ্বনি দিয়ে শ্রী শ্রী জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে রথারোহন করানো হয়। এরপর মন্দির প্রাঙ্গন থেকে রথের প্রথম টানের মধ্যদিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অসিত দেবনাথ বাপ্পা ও সাধারণ সম্পাদক মিহির কুমার সরকার জানান, হিন্দু শাস্ত্র মতে রথের দড়ির স্পর্শে (দড়ি টানলে) পূর্ন্য লাভ হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পূর্ণ্যতা লাভের আশায় আদমদীঘি উপজেলার হিন্দু ধর্মালম্বীরা এই রথযাত্রার আয়োজন করেন।
খোকসা : কুষ্টিয়ার খোকসার গ্রামে রথযাত্রা উৎসব উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বসেছিল গ্রামীন মেলা। গতকাল শুক্রবার বিকালে উপজেলার জানিপুর ইউনিয়নের নিচলাট বটতলা ভুতের ভিটায় রথযাত্রা উপলক্ষে দিন ব্যাপী কীর্ত্তন ও পূজা অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল থেকে শুরু হয় উদ্দম কীর্ত্তন। পরে স্থানীয় নারী ও পুরুষদের দল পালাক্রমে কীর্ত্তন পরিবেশন করে। সন্ধার পর একমাইল দূরে একটি মন্দিরে রথ টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। সাত দিনের মাথায় আগামী শনিবার সন্ধ্যায় রথটি টেনে আবার ভুতের ভিটায় আনা হবে। রথ যাত্রা উপলক্ষে ঈশ্বরদী-ভবানীগঞ্জ সড়কের প্রায় আধাকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছিল গ্রামীন মেলা। জিলাপি, মাটি খেলনা ও বাঁশ বেতের পাত্রসহ নানা পন্যের পসরা মেলে বসেছিল দোকানিরা। আশে পাশের গ্রামগুলো থেকে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ মেলায় জমায়েত হয়েছিলেন।
জগন্নাথপুর : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৭ জুন শুক্রবার দিনব্যাপী জগন্নাথপুর পৌর শহরের রথবাড়িতে রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে বসে মেলা। মেলায় হাজারো জনতার উপস্থিতিতে রীতিএত মলন মেলায় পরিণত হয়। শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউড় মন্দির ও বাসুদেববাড়ি মন্দির কমিটির উদ্যোগে ২টি রথে দেবতাদের আসনে বসিয়ে রথবাড়িজুড়ে একে একে সাতবার ঘুরানো হয়। রথের রশিতে ধরে নানা স্লোগানে রথগাড়ি টানেন ভক্তরা। এ সময় পুরো রথবাড়িতে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় শ্রী শ্রী জগন্নাথ জিউড় মন্দির কমিটির সভাপতি শুধাংশু শেখর রায় বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব, শ্রী শ্রী বাসুদেববাড়ি মন্দির কমিটির সভাপতি মুকুল ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর কাউন্সিলর কৃষ্ণ চন্দ্র চন্দ, জগন্নাথপুর উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রণয় কান্তি সূত্রধর খোকন, পরমানন্দ্র দাস কালা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জগন্নাথপুর উপজেলা সভাপতি পৌর প্রকৌশলী সতীশ গোস্বামী, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সূত্রধর, শশী কান্ত গোপ, প্রজেশ গোপ, আশিষ চন্দ্র দেব, আশুতোষ দাস, জীবন গোপ, কাজল বডুক, বিভাষ দে, হেমেন্দ্র সেনসহ রথযাত্রা আয়োজনের সব নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোউৎসব পালিত হয়েছে। শুক্রবার বিকালে শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির (ইসকনের) আয়োজনে এ মহোৎসব পালন করেন। এই রথযাত্রা ইসকন মন্দির হতে তুরাগ নদীর চাপাইর ব্রীজ হয়ে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও বাস স্ট্যান্ড, বাজার এলাকা প্রদক্ষিন করে কালিয়াকৈর কালী মন্দিরে এসে বিরতি দেয়। যা আগামী ৫ জুলাই উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হবে। প্রতি বছরের ন্যায় চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। এ রথযাত্রা নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আনন্দ মুখর পরিবেশে দিনব্যাপী শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা আয়োজন করেন।
বাগাতিপাড়া : নাটোরের বাগাতিপাড়ায় দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাডুক্য মাধবের রথযাত্রা ও রথমেলা শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের শাঁখারিপাড়া হরি মন্দিরে রথখোলায় রথটান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সূচনা হয়। রথযাত্রা উপলক্ষে হরি মন্দির চত্বরে বসেছে ঐতিহ্যবাহী রথমেলা। পরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং রথ টেনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রার উদ্বোধন করেন বাসুদেব সেন।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি (তদন্ত) রিয়াজুল ইসলাম জানান, রথযাত্রা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশ সার্বক্ষডুক টহলে রয়েছে।
বেতাগী বরগুনা : বরগুনার বেতাগী পৌর শহরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে পৌর শহর এলাকার ৭ নম্বরের কালীবাড়ী থেকে এই শোভাযাত্রা শুরু হয়। রথযাত্রায় সম্প্রতি বন্ধনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, রথযাত্রায় নানা বয়সের নারী-পুরুষ ধর্মপ্রাণ ভক্তরা অংশ নেন। রঙিন পোশাকে সজ্জিত ভক্তরা ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনির মাধ্যমে শোভাযাত্রাকে উৎসবমুখর করে তোলেন। রথ টানার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী পূণ্য লাভের আশায় অংশ নেন কয়েক শত মানুষ। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কালীবাড়ি এসে শেষ হয়।