লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) : আষাঢ়ে বিল পানিশূন্য -সংবাদ
চারদিকে বর্ষা শুরু হলেও মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বিলগুলোতে পানির দেখা নেই। বর্ষায় পানিশূন্য একেকটা ফসলি জমির মাঠ যেন খাঁ খাঁ করছে। এই সময় বর্ষার পানিতে খাল বিল নদী-নালা ও নিচু জমি পানিতে ভরে ওঠে। তবে এ বছর সেই দৃশ্য নেই! পদ্মা নদীতে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি থাকলেও বিলগুলো একেবারেই পানিহীন। এতে জমির উর্বরতা ও মৎস্য ভান্ডার বিলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে? চলতি মৌসুমে আউশ ও রোপা আমন, সোনালী আঁশ পাট পঁচানো নিয়ে নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা এর প্রভাব পড়ছে এই বিলের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর বর্ষায় নদী থেকে পানি প্রবাহ খাল এবং নালা দখল করে অবৈধ ভরাট স্থাপনা নির্মাণসহ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার কারণে এই উপজেলার প্রায় ৬ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে বর্ষা শুরুতে পানি প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে এবং আবার বর্ষা শেষেও পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় বছরে ৬ থেকে ৭ মাস হাজার হাজার জমি থাকে পানির নিচে। যার ফলে তিন ফসলি জমি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে কৃষকরা বছরে একবার শুধু রবি মৌসুমে আলু, ইরি ধান ও ভুট্টা উৎপাদন করে। বাকি সময় এসব ফসলি জমি চাষাবাদে বিড়ম্বনা পড়ছে কৃষক? এই সমস্যা সমাধানে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
কৃষকরা জানান, আষাঢ় মাস অর্ধেক পেরোলেও তেমন বৃষ্টির দেখা নেই। বর্ষা মৌসুমে বিলে পানিশূন্য, রোপা আমন চাষাবাদ ও পাট কাটার সময় জাগ দেয়ার পর্যাপ্ত পানি না পাওয়া গেলে লোকসানে পড়বেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫২৮ হেক্টর জমিতে পাট চাষের আবাদ করা হয়েছে গত বছরের চেয়ে ৫ হেক্টর কম।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগেও আষাঢ় মাসের শুরুতে বর্ষায় বিলে শাপলা-শালুক ফুটতো চারদিকে রিমঝিম বৃষ্টির শিহরণ হৃদয়কে করতো স্নিগ্ধ ও সুশোভিত। বৃষ্টির পরশে নতুন শস্যাদি জন্মায়। বর্ষার পানিতে জমি উর্বর হয়। নদী, খাল-বিল ফিরে পায় তার যৌবন। এক সময় বর্ষায় বিলে কই, বোয়াল, শিং, শোল, টেংরা, খলসে, বইচাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরার উৎসবে পরিনত হতো? বর্ষার নতুন পানিতে এসব মাছ ধরে পরিবার ও পরিজন নিয়ে আনন্দের সঙ্গে মজা করে খেত। কোথায় গেল সেসব দিন আক্ষেপ করে বলেন বয়োবৃদ্ধরা।
কৃষক মাহতাব উদ্দিন বলেন, বিলে বর্ষার পানি প্রবাহ পথে ঘোলতলী ও জোড়পোল ব্রিজের পাশে খাল ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করায় বিলের পানি প্রবাহ পথ বন্ধ হয়ে গেছে তাই বর্ষা মৌসুমে বিলে পানি নেই।
কৃষক জসীম শেখ, লতিফ শেখ, স্বপন ও কুদ্দুস বলেন, গাঁওদিয়া বিল, কালুরগাঁও বিল, আপর বিল, ফলপাকর বিল, হাড়িদিয়া বিল ও হাড়িদিয়া দক্ষিণ বিল, পাখিদিয়া বিলের পানি প্রবেশ করে ডহরি-তালতলা খাল থেকে উৎপত্তিস্থল নুরপুরের খাল দিয়ে এই খালটি নুরপুর ও কালুরগাও মসজিদের পাশদিয়ে হাসান উদ্দিন মোল্লার বাড়ির পাশে গিয়ে শেষ হয়েছে। আরেকটা হলো গোয়ারার অপোজিট সাইটে ডহরি-তালতলা খাল থেকে বনসেমন্ত হয়ে পশ্চিম বুরদিয়া অন্যান্য খালের সাথে মিলিত হয়েছে। এই খালগুলো মাটিতে ভরাট হয়ে সরু হয়ে গেছে? এবং কিছু অংশে ভরাট ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করায় বিলের পানির নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। খাল পুনঃখনন করলে বর্ষার পানি প্রবাহ সমস্য থাকবেনা।
মেরাজ শেখ, কৃষক ফরিদ ও চঞ্চল শিকদার বলেন, হাড়িদিয়া দক্ষিণ বিল ও পাখিদিয়া বিলের পানি নিষ্কাশনের শামুরবাড়ি খাল ও হাড়িদিয়া ব্রিজের নিচ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ ভরাট ও রাস্তা নির্মাণে বিকল্প ব্যবস্থা না রাখায় প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নেছার উদ্দিন বলেন, খালগুলো পুনঃখনন করলে এ সমস্যা আর থাকবে না? আমরা ইতিমধ্যে শুরপারা থেকে বৌলতলী পর্যন্ত প্রায় ৪.৫ কিমি খাল খনন সম্পন্ন করেছি। এতে এ এলাকার প্রায় ১৫০০ একর জমি কৃষি চাষের আওতায় আসছে। যা দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতার কারণে ফসল উপযোগী ছিল না। নুরপুর খালে পানি নিষ্কাশন বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে?
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) : আষাঢ়ে বিল পানিশূন্য -সংবাদ
রোববার, ২৯ জুন ২০২৫
চারদিকে বর্ষা শুরু হলেও মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বিলগুলোতে পানির দেখা নেই। বর্ষায় পানিশূন্য একেকটা ফসলি জমির মাঠ যেন খাঁ খাঁ করছে। এই সময় বর্ষার পানিতে খাল বিল নদী-নালা ও নিচু জমি পানিতে ভরে ওঠে। তবে এ বছর সেই দৃশ্য নেই! পদ্মা নদীতে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি থাকলেও বিলগুলো একেবারেই পানিহীন। এতে জমির উর্বরতা ও মৎস্য ভান্ডার বিলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে? চলতি মৌসুমে আউশ ও রোপা আমন, সোনালী আঁশ পাট পঁচানো নিয়ে নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা এর প্রভাব পড়ছে এই বিলের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর বর্ষায় নদী থেকে পানি প্রবাহ খাল এবং নালা দখল করে অবৈধ ভরাট স্থাপনা নির্মাণসহ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার কারণে এই উপজেলার প্রায় ৬ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে বর্ষা শুরুতে পানি প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে এবং আবার বর্ষা শেষেও পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় বছরে ৬ থেকে ৭ মাস হাজার হাজার জমি থাকে পানির নিচে। যার ফলে তিন ফসলি জমি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে কৃষকরা বছরে একবার শুধু রবি মৌসুমে আলু, ইরি ধান ও ভুট্টা উৎপাদন করে। বাকি সময় এসব ফসলি জমি চাষাবাদে বিড়ম্বনা পড়ছে কৃষক? এই সমস্যা সমাধানে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
কৃষকরা জানান, আষাঢ় মাস অর্ধেক পেরোলেও তেমন বৃষ্টির দেখা নেই। বর্ষা মৌসুমে বিলে পানিশূন্য, রোপা আমন চাষাবাদ ও পাট কাটার সময় জাগ দেয়ার পর্যাপ্ত পানি না পাওয়া গেলে লোকসানে পড়বেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫২৮ হেক্টর জমিতে পাট চাষের আবাদ করা হয়েছে গত বছরের চেয়ে ৫ হেক্টর কম।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগেও আষাঢ় মাসের শুরুতে বর্ষায় বিলে শাপলা-শালুক ফুটতো চারদিকে রিমঝিম বৃষ্টির শিহরণ হৃদয়কে করতো স্নিগ্ধ ও সুশোভিত। বৃষ্টির পরশে নতুন শস্যাদি জন্মায়। বর্ষার পানিতে জমি উর্বর হয়। নদী, খাল-বিল ফিরে পায় তার যৌবন। এক সময় বর্ষায় বিলে কই, বোয়াল, শিং, শোল, টেংরা, খলসে, বইচাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরার উৎসবে পরিনত হতো? বর্ষার নতুন পানিতে এসব মাছ ধরে পরিবার ও পরিজন নিয়ে আনন্দের সঙ্গে মজা করে খেত। কোথায় গেল সেসব দিন আক্ষেপ করে বলেন বয়োবৃদ্ধরা।
কৃষক মাহতাব উদ্দিন বলেন, বিলে বর্ষার পানি প্রবাহ পথে ঘোলতলী ও জোড়পোল ব্রিজের পাশে খাল ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করায় বিলের পানি প্রবাহ পথ বন্ধ হয়ে গেছে তাই বর্ষা মৌসুমে বিলে পানি নেই।
কৃষক জসীম শেখ, লতিফ শেখ, স্বপন ও কুদ্দুস বলেন, গাঁওদিয়া বিল, কালুরগাঁও বিল, আপর বিল, ফলপাকর বিল, হাড়িদিয়া বিল ও হাড়িদিয়া দক্ষিণ বিল, পাখিদিয়া বিলের পানি প্রবেশ করে ডহরি-তালতলা খাল থেকে উৎপত্তিস্থল নুরপুরের খাল দিয়ে এই খালটি নুরপুর ও কালুরগাও মসজিদের পাশদিয়ে হাসান উদ্দিন মোল্লার বাড়ির পাশে গিয়ে শেষ হয়েছে। আরেকটা হলো গোয়ারার অপোজিট সাইটে ডহরি-তালতলা খাল থেকে বনসেমন্ত হয়ে পশ্চিম বুরদিয়া অন্যান্য খালের সাথে মিলিত হয়েছে। এই খালগুলো মাটিতে ভরাট হয়ে সরু হয়ে গেছে? এবং কিছু অংশে ভরাট ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করায় বিলের পানির নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। খাল পুনঃখনন করলে বর্ষার পানি প্রবাহ সমস্য থাকবেনা।
মেরাজ শেখ, কৃষক ফরিদ ও চঞ্চল শিকদার বলেন, হাড়িদিয়া দক্ষিণ বিল ও পাখিদিয়া বিলের পানি নিষ্কাশনের শামুরবাড়ি খাল ও হাড়িদিয়া ব্রিজের নিচ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ ভরাট ও রাস্তা নির্মাণে বিকল্প ব্যবস্থা না রাখায় প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নেছার উদ্দিন বলেন, খালগুলো পুনঃখনন করলে এ সমস্যা আর থাকবে না? আমরা ইতিমধ্যে শুরপারা থেকে বৌলতলী পর্যন্ত প্রায় ৪.৫ কিমি খাল খনন সম্পন্ন করেছি। এতে এ এলাকার প্রায় ১৫০০ একর জমি কৃষি চাষের আওতায় আসছে। যা দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতার কারণে ফসল উপযোগী ছিল না। নুরপুর খালে পানি নিষ্কাশন বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে?