alt

সারাদেশ

কুলিয়ারচরে জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

প্রতিনিধি, ভৈরব কিশোরগঞ্জ : রোববার, ২৯ জুন ২০২৫

বিগত ২০১৮ সালের ৬ জুন ৩১ শয্যা থেকে উন্নীত হয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের প্রশাসনিক অনুমোদনসহ প্রতিদিন ৫০ জন ভর্তি রোগীর খাবারের অনুমোদন হলেও প্রয়োজনীয় জনবল অনুমোদন না হওয়ায় এখনো ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জনবল দিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এতেও চিকিৎসক সংকটের সঙ্গে রয়েছে নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট।

৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়াও মোট ১৪ জন কনসালটেন্ট চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ২ জন। এদের মধ্যে ১ জন গাইনী কনসালটেন্ট ও ১ জন এ্যানেস্থেসিয়া। অন্যান্য ১২টি বিভাগের কোন কনসালটেন্ট চিকিৎসক এখানে নেই। ডেন্টাল সার্জন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ছাড়াও মোট ১৯ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৩ জন। বাকি ১৬ জনই নেই। ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ৪ জন থাকার কথা থাকলেও নেই ১ জনও।

তাছাড়াও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) ৪ জন থাকার কথা থাকলেও এদের মধ্যে ১ জনও নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) দুইটি প্রশাসনিক পোস্ট। ডেন্টাল সার্জন শুধু দাঁতের চিকিৎসা করেন। অন্যান্য রোগের চিকিৎসা তিনি করেন না। এ তিনজনসহ মোট চিকিৎসক পদ ৪০টি। ওই তিনজন বাদে হাসপাতালে চিকিৎসক আছেন মাত্র ৫ জন।

তাই জরুরী বিভাগে রোগী আসলে হয় আবাসিক মেডিকেল অফিসার না হয় আউটডোর থেকে মেডিকেল অফিসারকে দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হয়।

চিকিৎসক সংকটের সঙ্গে রয়েছে নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট। মোট নার্স ৩০ জনের মধ্যে ২৯ জন আছে। এদের মধ্যে ৩ জন ডেপুটেশনে কিশোরগঞ্জ ও ঢাকায় কাজ করছেন। এছাড়াও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অনেক কর্মচারীর পদে জনবল সংকট রয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকসহ রোগীরা। পরিছন্ন কর্মীর অভাবে হাসপাতালের ভিতরে ও বাহিরে প্রায় সময় নোংরা হয়ে থাকে।

যে সকল পদে জনবল আছে তা হলো প্রধান সহকারী-১ জনের মধ্যে ১ জন, এম্বুলেন্স ড্রাইভার- ১ জনের মধ্যে ১ জন এবং পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ১ জনের মধ্যে ১ জন, পরিছন্ন কর্মী ১০ জনের মধ্যে আছে মাত্র ১ জন, নাইট গার্ড ২ জনের মধ্যে আছে মাত্র ১ জন, ওয়ার্ডবয় ৫ জনের মধ্যে আছে মাত্র ১ জন, আয়া ৫ জনের মধ্যে আছে মাত্র ২ জন।

এছাড়া টিকেট ক্লার্ক, কার্ডিওগ্রাফার, অফিস সহায়ক, জুনিয়র মেকানিক, সহকারী বাবুর্চি, ওটি এটেনডেন্ট, স্ট্রেচার বেয়ারা ও মালিসহ চিকিৎসা সহযোগী অন্যান্য পদে আরো বেশ কিছু কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও এসব পদে একজনও নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হেলথ্ তথ্য অনুযায়ী উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় জনসংখ্যা ২ লাখ ২৪ হাজার ১৬০ জন মানুষের একটি বড় অংশ চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশা করেন ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে দীর্ঘদিন যাবত এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে চলছে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল ও চিকিৎসক সংকট। গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসকের পদ, নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকসহ রোগীরা।

এতে উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সরকারি খরচে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বেসরকারি ক্লিনিকমুখী হচ্ছেন অনেকেই। উপযুক্ত চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেকেই চলে যাচ্ছেন আশপাশের প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।

অপর দিকে উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৬ জন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ২ জন। এসব উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র সহ ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিকে তীব্র ঔষধ সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেসার ও ডায়াবেটিসের ঔষধ না থাকায় রোগীরা ঔষধ না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বাড়ছে জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। পর্যাপ্ত জালানি না থাকায় এম্বুলেন্স ব্যবহারেও সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে কথা হলে মনোয়ারা (৫০) বলেন, ‘আমার প্রেসার ও ডায়াবেটিস রোগ। ডাক্তার দেখাতে আসছি। ডাক্তার পাচ্ছি না। এমনিতেই অসুস্থ। দাঁড়িয়ে থেকে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ডাক্তার পেলে দেখায়ে বাড়ি চলে যেতে পারতাম’। শুনেছি বর্তমানে এখানে প্রেসার ও ডায়াবেটিসের ঔষধও নাই।

মরিয়ম আক্তার (৪৫) বলেন, ‘আমি কোমর ব্যাথার রোগী। ডাক্তারের অভাবে ভালো কোনো চিকিৎসা পাচ্ছি না। আজকে দেড় ঘণ্টা হলো অপেক্ষা করছি। শুধু আমি না আরও অনেকে অপেক্ষা করছে। ডাক্তার নাই, সেবা পাচ্ছি না। যদি ডাক্তার থাকে সেবা পাই তাহলে সকলের জন্য ভালো হয়।

কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল মিল্লাত বলেন, কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে, যার কারণে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এখানকার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকার কারণে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে এবং গুরুতর রোগীদের কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, কুলিয়ারচর উপজেলার স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির জন্য দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ এবং বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. জিন্নাত সুলতানা বলেন, জনবল সংকটের কারণে আমরা খুবই বিপাকে আছি। এতগুলো পদে লোকবল না থাকায় রোগীর সঠিক সেবা দেওয়া ও ব্যাহত হয়। তারপরও আমরা চিকিৎসা সেবা দিতে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু পদে লোক না থাকায় চাইলেও সঠিক সেবা দেওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, নিয়মিত অর্ধ-শতাধিকের বেশি ভর্তি রোগীসহ বহির্বিভাগে ৪৫০ থেকে ৫০০ জনের উপরে রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না।

তারপরও চেষ্টা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষ যেন চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে না যায়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তমাল কান্তি মল্লিক বলেন, ৫০ বেডের হাসপাতাল হলেও তার বেশি রোগী থাকে, আউট ডোরে প্রতিদিন ৫ শতাধিক রোগী আসে সেবা নিতে। ডাক্তার সংকটের জন্য আমাদের ডিউটি আওয়ারে বেশি সময় দিয়ে চাপের মধ্য দিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আদনান আখতার বলেন, আমাদের হাসপাতাল একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, প্যাথলজিসহ সকল বিভাগের কার্যক্রম চলমান। জনবলের সংকট না থাকলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার পত্র পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত শূন্য পদের অনুকূলে কোনো জনবল পাওয়া যায়নি। ডাক্তার ও জনবল সংকট নিয়োগের জন্য বারবার চিঠি দিয়ে যাচ্ছি। নিরসন হলে সাধারণ রোগীদের সেবার মান বাড়বে।

সার্বিক বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. অভিজিত শর্শ্মা বলেন, কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের বিষয়টি আমি অবগত আছি। এ ব্যাপারে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলমান।

জনগণের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এভাবে কুলিয়ারচর উপজেলার জনগণের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সংকট আরও প্রকট হবে এমনটাই আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

ছবি

পলাশে লটকন চাষে আগ্রহ বাড়লেও, খরায় এবার ফলন কম

ছবি

অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কচুচাষিরা

ঝালকাঠিতে এ বছর বোরো থেকে ৩৫৬ টাকার চাল উৎপাদন

ছবি

তালগাছ কাটায় শত শত বাবুই পাখি আশ্রয়হীন

ছবি

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও থেমে নেই সুন্দরবনে হরিণ শিকার

ছবি

সাগরে লঘুচাপ, চার বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত

ছবি

ঠাকুরগাঁওয়ে ঐতিহাসিক জামালপুর মসজিদ

মোংলায় মাদকসহ বিক্রেতা আটক

ঘোড়াঘাটে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি

নবীগঞ্জে গাড়িচাপায় বাস হেলপারের মৃত্যু

নবীগঞ্জে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

ছবি

সীতাকুণ্ডে এক বছরে ১০ পর্যটকের প্রাণহানি

চিরিরবন্দরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের মামলা

ধোবাউড়ায় অনলাইন জুয়ার ফাঁদে নিঃস্ব অসংখ্য যুবক

ছবি

ব্যাটারিচালিত যানবাহনের দৌরাত্ম্য, বাড়ছে যানজট

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ইকো পার্কে বৃক্ষরোপণ

দুই কর্মকর্তার দ্বন্দ্বে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫৪ বিদ্যালয়ের টাকা ফেরত

ছবি

সিংড়ায় বিয়াম স্কুলের দিনব্যাপী ফল মেলা

সাদুল্লাপুরে নানা বাড়িতে গিয়ে পানিতে ডুবে ২ বোনের মৃত্যু

বস্তায় পুরে রোদে ফেলে রাখলেন মাদ্রাসা প্রধান

ছবি

টাঙ্গাইলে একজনের করোনা শনাক্ত

উপকূলে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

কালিহাতী মহাসড়কে অজ্ঞাত যুবকের লাশ

ছবি

কেশবপুরে নির্মাণাধীন সড়কের দুই পাশে ঘের মালিকের উঁচু বাঁধ জলাবদ্ধতায় সড়ক নষ্টের আশঙ্কা

খাগড়াছড়িতে ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণ

নাচোলের অটোচালক হত্যায় গ্রেপ্তার ৩

ছবি

তালার শালিখা সেতুর নির্মাণকাজ পাঁচ বছরেও শেষ না হওয়ায় পুরানো বাঁশের সাঁকো ভরসা

ছবি

এনবিআরের কমপ্লিট শাটডাউনে আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

বন্যা পূর্ব প্রস্তুতি বিষয়ক মহড়া অনুষ্ঠিত

মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে যুবক নিখোঁজ

অনুমোদন ছাড়াই চলছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার

ছবি

লৌহজংয়ের আষাঢ়ে বিল পানিশূন্য, শঙ্কায় কৃষকরা

পাথরঘাটায় অসহায় পরিবারের জমি দখল করে বিল্ডিং নির্মাণের অভিযোগ

বড়লেখায় মন্দিরে চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬, মালামাল উদ্ধার

ভৈরবে ৩টি ফুড কারখানাকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কাঁচা রাস্তায় চলাচলে দুর্ভোগ

tab

সারাদেশ

কুলিয়ারচরে জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

প্রতিনিধি, ভৈরব কিশোরগঞ্জ

রোববার, ২৯ জুন ২০২৫

বিগত ২০১৮ সালের ৬ জুন ৩১ শয্যা থেকে উন্নীত হয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের প্রশাসনিক অনুমোদনসহ প্রতিদিন ৫০ জন ভর্তি রোগীর খাবারের অনুমোদন হলেও প্রয়োজনীয় জনবল অনুমোদন না হওয়ায় এখনো ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জনবল দিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এতেও চিকিৎসক সংকটের সঙ্গে রয়েছে নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট।

৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়াও মোট ১৪ জন কনসালটেন্ট চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ২ জন। এদের মধ্যে ১ জন গাইনী কনসালটেন্ট ও ১ জন এ্যানেস্থেসিয়া। অন্যান্য ১২টি বিভাগের কোন কনসালটেন্ট চিকিৎসক এখানে নেই। ডেন্টাল সার্জন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ছাড়াও মোট ১৯ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৩ জন। বাকি ১৬ জনই নেই। ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ৪ জন থাকার কথা থাকলেও নেই ১ জনও।

তাছাড়াও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) ৪ জন থাকার কথা থাকলেও এদের মধ্যে ১ জনও নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) দুইটি প্রশাসনিক পোস্ট। ডেন্টাল সার্জন শুধু দাঁতের চিকিৎসা করেন। অন্যান্য রোগের চিকিৎসা তিনি করেন না। এ তিনজনসহ মোট চিকিৎসক পদ ৪০টি। ওই তিনজন বাদে হাসপাতালে চিকিৎসক আছেন মাত্র ৫ জন।

তাই জরুরী বিভাগে রোগী আসলে হয় আবাসিক মেডিকেল অফিসার না হয় আউটডোর থেকে মেডিকেল অফিসারকে দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হয়।

চিকিৎসক সংকটের সঙ্গে রয়েছে নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট। মোট নার্স ৩০ জনের মধ্যে ২৯ জন আছে। এদের মধ্যে ৩ জন ডেপুটেশনে কিশোরগঞ্জ ও ঢাকায় কাজ করছেন। এছাড়াও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অনেক কর্মচারীর পদে জনবল সংকট রয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকসহ রোগীরা। পরিছন্ন কর্মীর অভাবে হাসপাতালের ভিতরে ও বাহিরে প্রায় সময় নোংরা হয়ে থাকে।

যে সকল পদে জনবল আছে তা হলো প্রধান সহকারী-১ জনের মধ্যে ১ জন, এম্বুলেন্স ড্রাইভার- ১ জনের মধ্যে ১ জন এবং পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ১ জনের মধ্যে ১ জন, পরিছন্ন কর্মী ১০ জনের মধ্যে আছে মাত্র ১ জন, নাইট গার্ড ২ জনের মধ্যে আছে মাত্র ১ জন, ওয়ার্ডবয় ৫ জনের মধ্যে আছে মাত্র ১ জন, আয়া ৫ জনের মধ্যে আছে মাত্র ২ জন।

এছাড়া টিকেট ক্লার্ক, কার্ডিওগ্রাফার, অফিস সহায়ক, জুনিয়র মেকানিক, সহকারী বাবুর্চি, ওটি এটেনডেন্ট, স্ট্রেচার বেয়ারা ও মালিসহ চিকিৎসা সহযোগী অন্যান্য পদে আরো বেশ কিছু কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও এসব পদে একজনও নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হেলথ্ তথ্য অনুযায়ী উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় জনসংখ্যা ২ লাখ ২৪ হাজার ১৬০ জন মানুষের একটি বড় অংশ চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশা করেন ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে দীর্ঘদিন যাবত এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে চলছে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল ও চিকিৎসক সংকট। গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসকের পদ, নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকসহ রোগীরা।

এতে উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সরকারি খরচে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বেসরকারি ক্লিনিকমুখী হচ্ছেন অনেকেই। উপযুক্ত চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেকেই চলে যাচ্ছেন আশপাশের প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।

অপর দিকে উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৬ জন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ২ জন। এসব উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র সহ ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিকে তীব্র ঔষধ সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেসার ও ডায়াবেটিসের ঔষধ না থাকায় রোগীরা ঔষধ না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বাড়ছে জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। পর্যাপ্ত জালানি না থাকায় এম্বুলেন্স ব্যবহারেও সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে কথা হলে মনোয়ারা (৫০) বলেন, ‘আমার প্রেসার ও ডায়াবেটিস রোগ। ডাক্তার দেখাতে আসছি। ডাক্তার পাচ্ছি না। এমনিতেই অসুস্থ। দাঁড়িয়ে থেকে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ডাক্তার পেলে দেখায়ে বাড়ি চলে যেতে পারতাম’। শুনেছি বর্তমানে এখানে প্রেসার ও ডায়াবেটিসের ঔষধও নাই।

মরিয়ম আক্তার (৪৫) বলেন, ‘আমি কোমর ব্যাথার রোগী। ডাক্তারের অভাবে ভালো কোনো চিকিৎসা পাচ্ছি না। আজকে দেড় ঘণ্টা হলো অপেক্ষা করছি। শুধু আমি না আরও অনেকে অপেক্ষা করছে। ডাক্তার নাই, সেবা পাচ্ছি না। যদি ডাক্তার থাকে সেবা পাই তাহলে সকলের জন্য ভালো হয়।

কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল মিল্লাত বলেন, কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে, যার কারণে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এখানকার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকার কারণে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে এবং গুরুতর রোগীদের কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, কুলিয়ারচর উপজেলার স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির জন্য দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ এবং বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. জিন্নাত সুলতানা বলেন, জনবল সংকটের কারণে আমরা খুবই বিপাকে আছি। এতগুলো পদে লোকবল না থাকায় রোগীর সঠিক সেবা দেওয়া ও ব্যাহত হয়। তারপরও আমরা চিকিৎসা সেবা দিতে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু পদে লোক না থাকায় চাইলেও সঠিক সেবা দেওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, নিয়মিত অর্ধ-শতাধিকের বেশি ভর্তি রোগীসহ বহির্বিভাগে ৪৫০ থেকে ৫০০ জনের উপরে রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না।

তারপরও চেষ্টা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষ যেন চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে না যায়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তমাল কান্তি মল্লিক বলেন, ৫০ বেডের হাসপাতাল হলেও তার বেশি রোগী থাকে, আউট ডোরে প্রতিদিন ৫ শতাধিক রোগী আসে সেবা নিতে। ডাক্তার সংকটের জন্য আমাদের ডিউটি আওয়ারে বেশি সময় দিয়ে চাপের মধ্য দিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আদনান আখতার বলেন, আমাদের হাসপাতাল একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, প্যাথলজিসহ সকল বিভাগের কার্যক্রম চলমান। জনবলের সংকট না থাকলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার পত্র পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত শূন্য পদের অনুকূলে কোনো জনবল পাওয়া যায়নি। ডাক্তার ও জনবল সংকট নিয়োগের জন্য বারবার চিঠি দিয়ে যাচ্ছি। নিরসন হলে সাধারণ রোগীদের সেবার মান বাড়বে।

সার্বিক বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. অভিজিত শর্শ্মা বলেন, কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের বিষয়টি আমি অবগত আছি। এ ব্যাপারে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলমান।

জনগণের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এভাবে কুলিয়ারচর উপজেলার জনগণের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সংকট আরও প্রকট হবে এমনটাই আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

back to top