alt

সারাদেশ

তালার শালিখা সেতুর নির্মাণকাজ পাঁচ বছরেও শেষ না হওয়ায় পুরানো বাঁশের সাঁকো ভরসা

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : রোববার, ২৯ জুন ২০২৫

সাতক্ষীরা : খুলনার পাইকগাছা সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে -সংবাদ

পাঁচ বছর কেটে গেলেও শেষ হয়নি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার শালিখা সেতুর নির্মাণকাজ। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কাজ শুরু করেও গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জিয়াউল ট্রেডার্স’। ফলে কপোতাক্ষ নদের ওপর এখনো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই ভরসা দুই পাড়ের লাখো মানুষের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর কপোতাক্ষ নদের ওপর শালিখা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল ৮০ মিটার দীর্ঘ একটি মূল সেতু ও ৪৪ মিটার ভায়াডাক্ট।

কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন ও যন্ত্রপাতি হঠাৎ করেই সাইট থেকে উধাও হয়ে যায়। ফলে তালা ও পাইকগাছার মানুষ এখন বাঁশের দুর্বল সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদ পার হচ্ছেন। এতে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের চলাফেরায় ভয়াবহ দুর্ভোগ নেমে এসেছে।

তালা উপজেলার কানাইদিয়া গ্রামের কলেজছাত্র আফজাল হোসেন বলেন, পাঁচ বছরেও যদি একটি সেতু শেষ না হয় তাহলে দায় কার? প্রতিদিন আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছি। এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

তালার মুড়াগাছা গ্রামের কলেজশিক্ষক আওয়াল হোসেন বলেন, প্রতিদিন এই বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে কলেজে যেতে হয়। একটু অসাবধান হলেই নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয়।

সময়ের অপচয় তো আছেই, তার চেয়েও বড় বিষয় এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা আমাদের মানসিকভাবে প্রতিনিয়ত ভীত করে তোলে। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো আসতে পারে না। অনেক সময় ক্লাস বাতিল করতে হয়। একটি সেতুর অভাবে পুরো একটি অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থাই স্থবির হয়ে পড়েছে।

লাড়ুলি গ্রামের গৃহবধূ ফারজানা বেগম বলেন, সাঁকোটা এতটাই সরু আর দুর্বল যে, একটু পা পিছলে গেলেই নদীতে পড়ে যেতে পারে যে কেউ। বাচ্চার হাত শক্ত করে ধরে রাখি, কিন্তু ভয় তো কাটে না।

পাইকগাছার বাকা গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, কষ্ট করে ফসল ফলাই।

কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে পড়ি সবচেয়ে বড় বিপদে। নদী পার হতে হয় বাঁশের সাঁকো দিয়ে। সেখানে ট্রলি তো দূরের কথা, হেঁটে চলাই মুশকিল।

রোগীদের দুর্ভোগ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। কাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ মোজাফফর আলী বলেন, একবার অসুস্থ হয়ে তালায় ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। সাঁকো পার হতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। এখন আর সাহস করি না।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিয়াউল ট্রেডার্সের প্রতিনিধি আবুল হোসেন বলেন, বিল ছাড় না পাওয়ায় শ্রমিকদের বেতন দিতে পারিনি। ফলে তারা কাজ ছেড়ে দেন। এলজিইডি থেকে অর্থ পেলে আবার কাজ শুরু হতে পারে।

তালা উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাফিন শোয়েব জানান, শালিখা সেতুর কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে একাধিকবার নোটিস দেয়া হয়েছে। কিন্তু বারবার তাগাদা দিয়েও তার পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কাজ বাতিলের সুপারিশ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।

তিনি বলেন, ঠিকাদার যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজে ফিরে না আসেন, তাহলে নতুনভাবে টেন্ডার আহ্বান করে বাকি কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনীন বলেন, সেতুটি দুই জেলার সংযোগ স্থাপনকারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। এলজিইডির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি শিগগির কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল বলেন, ঠিকাদার যদি কাজ শেষ না করেন, তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। জনগণের কষ্ট দীর্ঘায়িত হবে, সেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাবে না।

ছবি

পলাশে লটকন চাষে আগ্রহ বাড়লেও, খরায় এবার ফলন কম

ছবি

অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কচুচাষিরা

ঝালকাঠিতে এ বছর বোরো থেকে ৩৫৬ টাকার চাল উৎপাদন

ছবি

তালগাছ কাটায় শত শত বাবুই পাখি আশ্রয়হীন

ছবি

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও থেমে নেই সুন্দরবনে হরিণ শিকার

ছবি

সাগরে লঘুচাপ, চার বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত

ছবি

ঠাকুরগাঁওয়ে ঐতিহাসিক জামালপুর মসজিদ

মোংলায় মাদকসহ বিক্রেতা আটক

ঘোড়াঘাটে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি

নবীগঞ্জে গাড়িচাপায় বাস হেলপারের মৃত্যু

নবীগঞ্জে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

ছবি

সীতাকুণ্ডে এক বছরে ১০ পর্যটকের প্রাণহানি

চিরিরবন্দরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের মামলা

ধোবাউড়ায় অনলাইন জুয়ার ফাঁদে নিঃস্ব অসংখ্য যুবক

ছবি

ব্যাটারিচালিত যানবাহনের দৌরাত্ম্য, বাড়ছে যানজট

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ইকো পার্কে বৃক্ষরোপণ

দুই কর্মকর্তার দ্বন্দ্বে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫৪ বিদ্যালয়ের টাকা ফেরত

ছবি

সিংড়ায় বিয়াম স্কুলের দিনব্যাপী ফল মেলা

সাদুল্লাপুরে নানা বাড়িতে গিয়ে পানিতে ডুবে ২ বোনের মৃত্যু

বস্তায় পুরে রোদে ফেলে রাখলেন মাদ্রাসা প্রধান

ছবি

টাঙ্গাইলে একজনের করোনা শনাক্ত

উপকূলে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

কালিহাতী মহাসড়কে অজ্ঞাত যুবকের লাশ

ছবি

কেশবপুরে নির্মাণাধীন সড়কের দুই পাশে ঘের মালিকের উঁচু বাঁধ জলাবদ্ধতায় সড়ক নষ্টের আশঙ্কা

খাগড়াছড়িতে ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণ

নাচোলের অটোচালক হত্যায় গ্রেপ্তার ৩

কুলিয়ারচরে জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

ছবি

এনবিআরের কমপ্লিট শাটডাউনে আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

বন্যা পূর্ব প্রস্তুতি বিষয়ক মহড়া অনুষ্ঠিত

মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে যুবক নিখোঁজ

অনুমোদন ছাড়াই চলছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার

ছবি

লৌহজংয়ের আষাঢ়ে বিল পানিশূন্য, শঙ্কায় কৃষকরা

পাথরঘাটায় অসহায় পরিবারের জমি দখল করে বিল্ডিং নির্মাণের অভিযোগ

বড়লেখায় মন্দিরে চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬, মালামাল উদ্ধার

ভৈরবে ৩টি ফুড কারখানাকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কাঁচা রাস্তায় চলাচলে দুর্ভোগ

tab

সারাদেশ

তালার শালিখা সেতুর নির্মাণকাজ পাঁচ বছরেও শেষ না হওয়ায় পুরানো বাঁশের সাঁকো ভরসা

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা : খুলনার পাইকগাছা সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে -সংবাদ

রোববার, ২৯ জুন ২০২৫

পাঁচ বছর কেটে গেলেও শেষ হয়নি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার শালিখা সেতুর নির্মাণকাজ। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কাজ শুরু করেও গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জিয়াউল ট্রেডার্স’। ফলে কপোতাক্ষ নদের ওপর এখনো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই ভরসা দুই পাড়ের লাখো মানুষের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর কপোতাক্ষ নদের ওপর শালিখা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল ৮০ মিটার দীর্ঘ একটি মূল সেতু ও ৪৪ মিটার ভায়াডাক্ট।

কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন ও যন্ত্রপাতি হঠাৎ করেই সাইট থেকে উধাও হয়ে যায়। ফলে তালা ও পাইকগাছার মানুষ এখন বাঁশের দুর্বল সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদ পার হচ্ছেন। এতে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের চলাফেরায় ভয়াবহ দুর্ভোগ নেমে এসেছে।

তালা উপজেলার কানাইদিয়া গ্রামের কলেজছাত্র আফজাল হোসেন বলেন, পাঁচ বছরেও যদি একটি সেতু শেষ না হয় তাহলে দায় কার? প্রতিদিন আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছি। এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

তালার মুড়াগাছা গ্রামের কলেজশিক্ষক আওয়াল হোসেন বলেন, প্রতিদিন এই বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে কলেজে যেতে হয়। একটু অসাবধান হলেই নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয়।

সময়ের অপচয় তো আছেই, তার চেয়েও বড় বিষয় এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা আমাদের মানসিকভাবে প্রতিনিয়ত ভীত করে তোলে। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো আসতে পারে না। অনেক সময় ক্লাস বাতিল করতে হয়। একটি সেতুর অভাবে পুরো একটি অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থাই স্থবির হয়ে পড়েছে।

লাড়ুলি গ্রামের গৃহবধূ ফারজানা বেগম বলেন, সাঁকোটা এতটাই সরু আর দুর্বল যে, একটু পা পিছলে গেলেই নদীতে পড়ে যেতে পারে যে কেউ। বাচ্চার হাত শক্ত করে ধরে রাখি, কিন্তু ভয় তো কাটে না।

পাইকগাছার বাকা গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, কষ্ট করে ফসল ফলাই।

কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে পড়ি সবচেয়ে বড় বিপদে। নদী পার হতে হয় বাঁশের সাঁকো দিয়ে। সেখানে ট্রলি তো দূরের কথা, হেঁটে চলাই মুশকিল।

রোগীদের দুর্ভোগ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। কাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ মোজাফফর আলী বলেন, একবার অসুস্থ হয়ে তালায় ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। সাঁকো পার হতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। এখন আর সাহস করি না।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিয়াউল ট্রেডার্সের প্রতিনিধি আবুল হোসেন বলেন, বিল ছাড় না পাওয়ায় শ্রমিকদের বেতন দিতে পারিনি। ফলে তারা কাজ ছেড়ে দেন। এলজিইডি থেকে অর্থ পেলে আবার কাজ শুরু হতে পারে।

তালা উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাফিন শোয়েব জানান, শালিখা সেতুর কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে একাধিকবার নোটিস দেয়া হয়েছে। কিন্তু বারবার তাগাদা দিয়েও তার পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কাজ বাতিলের সুপারিশ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।

তিনি বলেন, ঠিকাদার যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজে ফিরে না আসেন, তাহলে নতুনভাবে টেন্ডার আহ্বান করে বাকি কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনীন বলেন, সেতুটি দুই জেলার সংযোগ স্থাপনকারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। এলজিইডির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি শিগগির কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল বলেন, ঠিকাদার যদি কাজ শেষ না করেন, তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। জনগণের কষ্ট দীর্ঘায়িত হবে, সেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাবে না।

back to top