কেশবপুর (যশোর) : গড়ভাঙ্গা-বাটবিলা সড়কের দুপাশে উঁচু বাধ -সংবাদ
কেশবপুরে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত ‘গড়ভাঙ্গা ভায়া বাঁবিলা’ সড়কের কাজ শেষ না হতেই ঘের মালিকরা সড়কের দুপাশে ২/৩ ফুট উঁচু করে ঘেররক্ষা বাধ নির্মাণ করেছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় সড়কটি নষ্টের আশঙ্কায় দুই উপজেলাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোপূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মৎস্য অফিসার সড়কটি পরিদর্শনকালে ঘের মালিকদের ভবদহ মৎস্য নীতিমালা অনুসরণ করে ঘের করার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু ঘের মালিকরা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সড়কের ঢাল উঁচু করে বাধ নির্মাণ করেছে।
জানা গেছে, উপজেলার গড়ভাঙ্গা বাজার থেকে বিলের মধ্যদিয়ে বাঁবিলা বাজার পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার একটি ইটের সোলিং সড়ক রয়েছে। এ সড়ক দিয়ে গড়ভাঙ্গা, মাদারডাঙ্গা, বেলকাটি, রাজনগর-বাকাবর্শী, পাজিয়া, কেশবপুর এলাকার ২০/২৫ গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী মনিরামপুর উপজেলার বাঁবিলা, দূর্বাডাঙ্গা, হরিণা, শ্যামনগর, নেহালপুর, বালিধা, অভয়নগরের নওয়াপাড়াসহ ১৫/২০ গ্রামের জনগণ চলাচল করেন। ১০/১৫ বছর আগে গড়ভাঙ্গা বিলের ঘের মালিক সেলিমুজ্জামান আসাদ ও কামরুজ্জামান বিশ্বাস বন্যার হাত থেকে ঘের রক্ষায় সড়কের ঢাল ৩/৪ ফুট উঁচু করে দুপাশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন। এরপর থেকে সড়কটিতে সবসময় হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে থাকতো। ফলে দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষের চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এ সমস্যা নিরসনে গ্রামবাসী স্থানীয় এমপিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করে অবশেষে সড়টি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ।
গড়ভাঙ্গা গ্রামের জিনেতুল্লাহ জানান, সড়কের দুপাশে মাছের ঘেরের ৩/৪ ফুট উঁচু বেঁিড়বাধ থাকায় অতিতে ওই সড়কে সবসময় হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে থাকতো। ফলে জনগণের যাতায়াত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে স্থানীয় চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও হাটুরেদের প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে কেশবপুর ও মনিরামপুরে গিয়ে কাজ সারতে হতো। জলাবদ্ধতার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধান মাড়াই, বাজার-সওদা, জরুরি চিকিৎসা সেবা নিতে দুর্ভোগে পড়তে হতো। যে কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি পাকাকরণ জরুরী হয়ে পড়ে।
এলজিইডি জানায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ‘গড়ভাঙ্গা ভায়া বাঁবিলা’ সড়কটি সংস্কারে ২ কোটি ৫২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পান যশোরের বনান্তর ট্রেডিং লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী ঠিকাদার আবু সাঈদ। তিনি ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করেন। ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার সড়কটির ইটের সোলিং তুলে, গর্ত খুড়ে, খোয়া ভেঙে রেখে উধাও হয়। দীর্ঘ ১০ মাস সড়ক সংস্কার কাজ বন্ধ থাকায় ২০২৪ সালের ১২ জুলাই ‘আড়াই কোটির সড়ক সংস্কার কাজ ফেলে ঠিকাদার উধাও’ শিরোনামে দৈনিক সংবাদে খবর প্রকাশ হলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। ফলে ঠিকাদার সড়কের নির্মাণকাজ শুরু করে সদ্য কাজ সমাপ্ত করেছেন।
ভবদহ মৎস্য নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো অবস্থাতেই সড়ক থেকে উঁচু করে ঘেরের বেঁড়িবাধ নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু এ নীতিমালা উপেক্ষা করে ঘের মালিক সেলিমুজ্জামান আসাদ ও কামরুজ্জামান বিশ্বাস সড়কের ঢালে ২ থেকে আড়াই ফুট উঁচু করে ঘেররক্ষা বাধ নির্মাণ করেছেন। শুধু তাই নয়, সড়ককে ঘেরের বেঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আসন্ন বর্ষায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে আবারও জলাবদ্ধ হয়ে পড়বে সড়কটি। ফলে সড়কটি অচিরেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী নাজিমুল হক বলেন, রাস্তার দুপাশের ঘের মালিকেরা উঁচু করে মাছের ঘেরের বাধ নির্মাণ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়। তিনি উপজেলা মৎস্য অফিসারকে নিয়ে দুদফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘের মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু এখনও ঘের মালিকেরা উঁচু বাধ অপসারণ করেনি। বর্ষার পানি জমলে অচিরেই সড়কটি নষ্ট হয়ে যাবে।
কেশবপুর (যশোর) : গড়ভাঙ্গা-বাটবিলা সড়কের দুপাশে উঁচু বাধ -সংবাদ
রোববার, ২৯ জুন ২০২৫
কেশবপুরে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত ‘গড়ভাঙ্গা ভায়া বাঁবিলা’ সড়কের কাজ শেষ না হতেই ঘের মালিকরা সড়কের দুপাশে ২/৩ ফুট উঁচু করে ঘেররক্ষা বাধ নির্মাণ করেছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় সড়কটি নষ্টের আশঙ্কায় দুই উপজেলাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোপূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মৎস্য অফিসার সড়কটি পরিদর্শনকালে ঘের মালিকদের ভবদহ মৎস্য নীতিমালা অনুসরণ করে ঘের করার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু ঘের মালিকরা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সড়কের ঢাল উঁচু করে বাধ নির্মাণ করেছে।
জানা গেছে, উপজেলার গড়ভাঙ্গা বাজার থেকে বিলের মধ্যদিয়ে বাঁবিলা বাজার পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার একটি ইটের সোলিং সড়ক রয়েছে। এ সড়ক দিয়ে গড়ভাঙ্গা, মাদারডাঙ্গা, বেলকাটি, রাজনগর-বাকাবর্শী, পাজিয়া, কেশবপুর এলাকার ২০/২৫ গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী মনিরামপুর উপজেলার বাঁবিলা, দূর্বাডাঙ্গা, হরিণা, শ্যামনগর, নেহালপুর, বালিধা, অভয়নগরের নওয়াপাড়াসহ ১৫/২০ গ্রামের জনগণ চলাচল করেন। ১০/১৫ বছর আগে গড়ভাঙ্গা বিলের ঘের মালিক সেলিমুজ্জামান আসাদ ও কামরুজ্জামান বিশ্বাস বন্যার হাত থেকে ঘের রক্ষায় সড়কের ঢাল ৩/৪ ফুট উঁচু করে দুপাশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন। এরপর থেকে সড়কটিতে সবসময় হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে থাকতো। ফলে দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষের চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এ সমস্যা নিরসনে গ্রামবাসী স্থানীয় এমপিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করে অবশেষে সড়টি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ।
গড়ভাঙ্গা গ্রামের জিনেতুল্লাহ জানান, সড়কের দুপাশে মাছের ঘেরের ৩/৪ ফুট উঁচু বেঁিড়বাধ থাকায় অতিতে ওই সড়কে সবসময় হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে থাকতো। ফলে জনগণের যাতায়াত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে স্থানীয় চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও হাটুরেদের প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে কেশবপুর ও মনিরামপুরে গিয়ে কাজ সারতে হতো। জলাবদ্ধতার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধান মাড়াই, বাজার-সওদা, জরুরি চিকিৎসা সেবা নিতে দুর্ভোগে পড়তে হতো। যে কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি পাকাকরণ জরুরী হয়ে পড়ে।
এলজিইডি জানায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ‘গড়ভাঙ্গা ভায়া বাঁবিলা’ সড়কটি সংস্কারে ২ কোটি ৫২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পান যশোরের বনান্তর ট্রেডিং লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী ঠিকাদার আবু সাঈদ। তিনি ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করেন। ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার সড়কটির ইটের সোলিং তুলে, গর্ত খুড়ে, খোয়া ভেঙে রেখে উধাও হয়। দীর্ঘ ১০ মাস সড়ক সংস্কার কাজ বন্ধ থাকায় ২০২৪ সালের ১২ জুলাই ‘আড়াই কোটির সড়ক সংস্কার কাজ ফেলে ঠিকাদার উধাও’ শিরোনামে দৈনিক সংবাদে খবর প্রকাশ হলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। ফলে ঠিকাদার সড়কের নির্মাণকাজ শুরু করে সদ্য কাজ সমাপ্ত করেছেন।
ভবদহ মৎস্য নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো অবস্থাতেই সড়ক থেকে উঁচু করে ঘেরের বেঁড়িবাধ নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু এ নীতিমালা উপেক্ষা করে ঘের মালিক সেলিমুজ্জামান আসাদ ও কামরুজ্জামান বিশ্বাস সড়কের ঢালে ২ থেকে আড়াই ফুট উঁচু করে ঘেররক্ষা বাধ নির্মাণ করেছেন। শুধু তাই নয়, সড়ককে ঘেরের বেঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আসন্ন বর্ষায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে আবারও জলাবদ্ধ হয়ে পড়বে সড়কটি। ফলে সড়কটি অচিরেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী নাজিমুল হক বলেন, রাস্তার দুপাশের ঘের মালিকেরা উঁচু করে মাছের ঘেরের বাধ নির্মাণ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়। তিনি উপজেলা মৎস্য অফিসারকে নিয়ে দুদফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘের মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু এখনও ঘের মালিকেরা উঁচু বাধ অপসারণ করেনি। বর্ষার পানি জমলে অচিরেই সড়কটি নষ্ট হয়ে যাবে।