নারায়ণগঞ্জে জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। দেশ স্বাধীনের পর উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের ৬/৭টি গ্রামে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষকে খুন করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ায় সন্ত্রাসীরা ছোটখাটো বিরোধেই প্রতিপক্ষের লোকজনদের গুলি করে হত্যা করছে। কখনো কখনো ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। আবার কখনোবা ভারাটে সন্ত্রাসীর গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এদের অধিকাংশকেই অবৈধ অস্ত্রের গুলিতে হত্যা করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হলেও আশানুরুপ অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের আয়তন ২ হাজার ১৮৪ একর। ২৭ গ্রামের লোকসংখ্যা ৫৮ হাজার ২০০ জন। এখানে উপজেলা পরিষদ, সরকারি মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ, শতবর্ষীয় সরকারি মুড়াপাড়া পাইলট স্কুল, নারী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র সহিতুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও উপজেলা কমপ্রেক্স অবস্থিত। এছাড়া এখানে বেশ কিছু শিল্প কারখানা রয়েছে। মুড়াপাড়া শিল্প নগরী হিসেবেও পরিচিত। সেই মুড়াপাড়াতেই অস্ত্রের ঝনঝনানি সবচেয়ে বেশী। মুড়াপাড়া এখন স্বজন হারানো পরিবারগুলোর কান্নার নগরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছরই বাড়ছে স্বজন হারানো মানুষের সংখ্যা। মাদক ব্যবসা, জমি দখল, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এমনকি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আগ্মেয়াস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে থাকে।
স্বাধীনতার পর থেকে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে সন্ত্রাসীরাও পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই রাজনৈতিক আশ্রয়ে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। সর্বশেষ গত ২৭ জুন রাতে মুড়াপাড়ার মাহমুদাবাদ টঙ্গীরঘাট এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে ইয়াছিন মিয়া ও টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে শিপন গুলিবিদ্ধ হয়। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির দু’টি খোসা উদ্ধার করেছে। এছাড়া ভুলতা, গোলাকান্দাইল, চণপাড়া ও তারাবো এলাকায় ঘটছে অস্ত্র প্রদর্শন ও গুলিবর্ষণের ঘটনা। তাতে হতাহতের সংখ্যাও কম নয়।
পুলিশ জানায়, ১৯৭২ সালে গুলি করে ব্রাহ্মণগাঁওয়ের লাল মিয়াকে হত্যা করা হয়। মুড়াপাড়া ইউনিয়ন তারা মিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০০৮ সালে মীরকুটিরছেঁও এলাকায় যুবলীগ নেতা নয়নকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০০৫ সালে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিককে। ১৯৯৭ সালে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবলীগকর্মী তারেক-বিন-জামালকে। ১৯৯০ সালে মুড়াপাড়া কলেজের ভিপি খালেদ-বিন-জামালকে বানিয়াদি এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়াও বেশ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সূত্র জানায়, প্রতিটি হত্যাকান্ডের পিছনে একাধিক পক্ষ জড়িত থাকে। এক বা দু’টি পক্ষ অর্থ জোগান দেয়। অপর পক্ষ রাজনৈতিক আশ্রয় নিশ্চিত করে। আরেক পক্ষ আসামীদের বাঁচাতে কলাকৌশল অবলম্বন করে। হত্যাকান্ডের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তি খুনিদের ভাড়া করার জন্য বেশ কয়েকটি হাত কাজে লাগায়। ফলে পরিকল্পনাকারীকে বেশির ভাগ সময় শনাক্ত করতে পারে না পুলিশ। আবার অনেক রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি আধিপত্য ধরে রাখতে এক পক্ষকে আরেক পক্ষের ওপর লেলিয়ে দিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায়। পরে ওই নেতা বা জনপ্রতিনিধি জরিমানা বা সামাজিকভাবে বিভিন্ন চাপের মুখে ফেলে মামলা নিষ্পত্তি করে। ফলে বেশির ভাগ মামলার আসামীরা শাস্তির বাইরে থাকে। সুযোগ পেয়ে সন্ত্রাসীরা আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
হত্যাকান্ডের সঙ্গে এক বা একাধিক প্রভাবশালী পরিবার বা ব্যক্তি জড়িত থাকায় মামলাগুলো আর এগোয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আসামীরা ধরা পড়লেও সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শাস্তি না হওয়ায় খুনিরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
মুড়াপাড়ার বিএনপি নেতা ইমান আলী বলেন, রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াজ, যুবলীগ নেতা হীরা মিয়াসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হলেও কোন অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি।
রূপগঞ্জ থানার ওসি মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, হত্যাকান্ডের বিচার আদালতের এখতিয়ার। আমি রূপগঞ্জ থানায় যোগদান করেছি এক মাসও হয়নি। তবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক ব্যবসা বন্ধসহ সকল সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। রূপগঞ্জ থানা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই অস্ত্র উদ্ধারে চেকপোষ্ট বসানো হচ্ছে। সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীসহ যারা অপরাধের সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দিবো না।
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
নারায়ণগঞ্জে জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। দেশ স্বাধীনের পর উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের ৬/৭টি গ্রামে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষকে খুন করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ায় সন্ত্রাসীরা ছোটখাটো বিরোধেই প্রতিপক্ষের লোকজনদের গুলি করে হত্যা করছে। কখনো কখনো ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। আবার কখনোবা ভারাটে সন্ত্রাসীর গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এদের অধিকাংশকেই অবৈধ অস্ত্রের গুলিতে হত্যা করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হলেও আশানুরুপ অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের আয়তন ২ হাজার ১৮৪ একর। ২৭ গ্রামের লোকসংখ্যা ৫৮ হাজার ২০০ জন। এখানে উপজেলা পরিষদ, সরকারি মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ, শতবর্ষীয় সরকারি মুড়াপাড়া পাইলট স্কুল, নারী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র সহিতুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও উপজেলা কমপ্রেক্স অবস্থিত। এছাড়া এখানে বেশ কিছু শিল্প কারখানা রয়েছে। মুড়াপাড়া শিল্প নগরী হিসেবেও পরিচিত। সেই মুড়াপাড়াতেই অস্ত্রের ঝনঝনানি সবচেয়ে বেশী। মুড়াপাড়া এখন স্বজন হারানো পরিবারগুলোর কান্নার নগরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছরই বাড়ছে স্বজন হারানো মানুষের সংখ্যা। মাদক ব্যবসা, জমি দখল, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এমনকি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আগ্মেয়াস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে থাকে।
স্বাধীনতার পর থেকে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে সন্ত্রাসীরাও পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই রাজনৈতিক আশ্রয়ে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। সর্বশেষ গত ২৭ জুন রাতে মুড়াপাড়ার মাহমুদাবাদ টঙ্গীরঘাট এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে ইয়াছিন মিয়া ও টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে শিপন গুলিবিদ্ধ হয়। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির দু’টি খোসা উদ্ধার করেছে। এছাড়া ভুলতা, গোলাকান্দাইল, চণপাড়া ও তারাবো এলাকায় ঘটছে অস্ত্র প্রদর্শন ও গুলিবর্ষণের ঘটনা। তাতে হতাহতের সংখ্যাও কম নয়।
পুলিশ জানায়, ১৯৭২ সালে গুলি করে ব্রাহ্মণগাঁওয়ের লাল মিয়াকে হত্যা করা হয়। মুড়াপাড়া ইউনিয়ন তারা মিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০০৮ সালে মীরকুটিরছেঁও এলাকায় যুবলীগ নেতা নয়নকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০০৫ সালে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিককে। ১৯৯৭ সালে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবলীগকর্মী তারেক-বিন-জামালকে। ১৯৯০ সালে মুড়াপাড়া কলেজের ভিপি খালেদ-বিন-জামালকে বানিয়াদি এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়াও বেশ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সূত্র জানায়, প্রতিটি হত্যাকান্ডের পিছনে একাধিক পক্ষ জড়িত থাকে। এক বা দু’টি পক্ষ অর্থ জোগান দেয়। অপর পক্ষ রাজনৈতিক আশ্রয় নিশ্চিত করে। আরেক পক্ষ আসামীদের বাঁচাতে কলাকৌশল অবলম্বন করে। হত্যাকান্ডের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তি খুনিদের ভাড়া করার জন্য বেশ কয়েকটি হাত কাজে লাগায়। ফলে পরিকল্পনাকারীকে বেশির ভাগ সময় শনাক্ত করতে পারে না পুলিশ। আবার অনেক রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি আধিপত্য ধরে রাখতে এক পক্ষকে আরেক পক্ষের ওপর লেলিয়ে দিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায়। পরে ওই নেতা বা জনপ্রতিনিধি জরিমানা বা সামাজিকভাবে বিভিন্ন চাপের মুখে ফেলে মামলা নিষ্পত্তি করে। ফলে বেশির ভাগ মামলার আসামীরা শাস্তির বাইরে থাকে। সুযোগ পেয়ে সন্ত্রাসীরা আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
হত্যাকান্ডের সঙ্গে এক বা একাধিক প্রভাবশালী পরিবার বা ব্যক্তি জড়িত থাকায় মামলাগুলো আর এগোয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আসামীরা ধরা পড়লেও সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শাস্তি না হওয়ায় খুনিরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
মুড়াপাড়ার বিএনপি নেতা ইমান আলী বলেন, রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াজ, যুবলীগ নেতা হীরা মিয়াসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হলেও কোন অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি।
রূপগঞ্জ থানার ওসি মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, হত্যাকান্ডের বিচার আদালতের এখতিয়ার। আমি রূপগঞ্জ থানায় যোগদান করেছি এক মাসও হয়নি। তবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক ব্যবসা বন্ধসহ সকল সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। রূপগঞ্জ থানা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই অস্ত্র উদ্ধারে চেকপোষ্ট বসানো হচ্ছে। সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীসহ যারা অপরাধের সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দিবো না।