পলাশ (নরসিংদী) : ডাঙ্গা এলাকার তালতলা গ্রামের রাস্তায় সারিবদ্ধ তালগাছ -সংবাদ
নরসিংদীর পলাশে হারিয়ে যেতে বসছে বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী তালগাছ। অথচ এই উপজেলায় বিগত পঞ্চাশ বছর আগেও হাজার হাজার তালগাছের সাড়ি এলেকাবাসির দৃষ্টি কাড়তো। জানা যায়, বহু-বছর আগে পলাশে তালবৃক্ষের নাম অনুসারে গজারিয়া ইউনিয়নের তলতলি ও ডাংগা ইউনিয়ানের তালতলা নামে দুটি গ্রামের নামকরণ করা হয়েছিল। প্রবীণরা জানান, পূর্বে মানুষ সীমানা রেখায় জমির সুরক্ষায় তালের বীজ পুঁতে রাখতো, যা পরে বড় বড় তাল বৃক্ষে পরিণত হতো। তালগাছের কাঠ বাড়ির চাল তৈরিতে খাপ রোয়া বানাতে কাজ লাগে। তাছাড়া তালের গুড়, তালের ক্ষির খেতে বড় মজা, সবার এককথায় পছন্দের।
তালগাছ ছিল পাখপাখালির আশ্রিত বৃক্ষ। বিশেষ করে বাবুই পাখির আশ্রয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে নাম ছিল তালগাছ। শত শত বাবুই পাখি একটি গাছে বাসা বানিয়ে তারা বাস করতো। এছিল বাংগালির কাছে নয়নাভিরাম এক নন্দিত দৃশ্য। তাছাড়া বাঁদুড়ের নিরাপদ আশ্রয়ের গাছটিও তালগাছ ছলো। দিনের বেলা শতশত বাঁদুর উঁচু তালের পাতায় ঝুলে থাকতো। সেও ছিল সবার কাছে অন্যরকম এক চমৎকার উপভোগ্য সিনারি।
তা ছাড়া তালগাছ বজ্র প্রতিরোধক হিসেবেও এর কার্যকারিতা ছিল অনস্বীকার্য। এক সময় গ্রাম গঞ্জে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার তালগাছ আমাদেরকে বজ্রপাতের আঘাত থেকে রক্ষা করতো। তালগাছের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। বাংলা ও বাঙালির জনপ্রিয় ফল তাল। ‘ভাদ্র মাসের তাল না খেলে কালে ছাড়ে না’ বলে প্রবাদও রয়েছে। আর এই তাল গাছই এখন অন্য রকম উপকারে আসছে মানুষের। করছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা।
উলেখ্য, এই উপজেলায় ব্যাপক শিল্পায়নের ফলে কারখানা গড়তে জায়গায় জায়গায় সাবার করা হয়েছে শত শত তালগাছ। অন্যদিকে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীরা তাদের নতুন নতুন ঘরবাড়ি গড়তেও এই গাছে কর্তন করে চালের খাপ রোয়া হিসেবে ব্যবহার করে তালগাছ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। একসময় বর্ষাকালে নিচু এলেকায় খালে বিলে কৃষকরা তালগাছের কোন্দা ব্যবহার করতো- যা আজকাল দেখা মিলছে না।
সাধারণত একটি তালগাছ ৯০ থেকে ১০০ ফুট উঁচু হয়। উঁচু গাছ হওয়ায় বজ্রপাত সরাসরি এ গাছের মাধ্যমে মাটিতে চলে যায়। এ ছাড়া ভূমিক্ষয়, ভূমিধস, ভূগর্ভস্থ পানির মজুত বৃদ্ধি ও মাটির উর্বরতা রক্ষা করে। তালগাছের আকর্ষণে বাড়ে মেঘের ঘনঘটা; ঘটে বৃষ্টিপাতও। তালগাছের শিকড় মাটির অনেক নিচ পর্যন্ত প্রবেশ করায় ঝড়ে হেলে পড়ে না কিংবা ভেঙে পড়ে না। যেখানে কোনো কিছু চাষ হয় না সেখানেও তালগাছ তার শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়। নতুন রাস্তার ঢাল, বাঁধ ও নদীভাঙন ঠেকাতে এর রয়েছে সফল প্রয়োগ।
দেশ থেকে তাল বৃক্ষ নিশ্চিহ্ন বা বিলুপ্ত হয়ে গেলে আমরা হারাবো বৃক্ষ প্রেমি বাংগালি ঐতিহ্যের নান্দনিক বাবুই পাখির বাসা সৌন্দর্যের একটি মনোরম ছোঁয়া। হারাবো বজ্রাঘাত থেকে রক্ষার প্রকৃতির মানবডাল তালগাছের ছায়া। জীবন বাঁচাতে তালগাছ যাতে বিলুপ্ত না হয়ে যায়, তার জন্য আমাদের প্রত্যেকের রাস্তার ঢালে, জমির আলে তালের বীজ রোপণ করতে হবে। দেশে সবুজায়ন বৃদ্ধি করতে গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বর্ষা ও সারা বছরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে আসছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
পলাশ (নরসিংদী) : ডাঙ্গা এলাকার তালতলা গ্রামের রাস্তায় সারিবদ্ধ তালগাছ -সংবাদ
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
নরসিংদীর পলাশে হারিয়ে যেতে বসছে বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী তালগাছ। অথচ এই উপজেলায় বিগত পঞ্চাশ বছর আগেও হাজার হাজার তালগাছের সাড়ি এলেকাবাসির দৃষ্টি কাড়তো। জানা যায়, বহু-বছর আগে পলাশে তালবৃক্ষের নাম অনুসারে গজারিয়া ইউনিয়নের তলতলি ও ডাংগা ইউনিয়ানের তালতলা নামে দুটি গ্রামের নামকরণ করা হয়েছিল। প্রবীণরা জানান, পূর্বে মানুষ সীমানা রেখায় জমির সুরক্ষায় তালের বীজ পুঁতে রাখতো, যা পরে বড় বড় তাল বৃক্ষে পরিণত হতো। তালগাছের কাঠ বাড়ির চাল তৈরিতে খাপ রোয়া বানাতে কাজ লাগে। তাছাড়া তালের গুড়, তালের ক্ষির খেতে বড় মজা, সবার এককথায় পছন্দের।
তালগাছ ছিল পাখপাখালির আশ্রিত বৃক্ষ। বিশেষ করে বাবুই পাখির আশ্রয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে নাম ছিল তালগাছ। শত শত বাবুই পাখি একটি গাছে বাসা বানিয়ে তারা বাস করতো। এছিল বাংগালির কাছে নয়নাভিরাম এক নন্দিত দৃশ্য। তাছাড়া বাঁদুড়ের নিরাপদ আশ্রয়ের গাছটিও তালগাছ ছলো। দিনের বেলা শতশত বাঁদুর উঁচু তালের পাতায় ঝুলে থাকতো। সেও ছিল সবার কাছে অন্যরকম এক চমৎকার উপভোগ্য সিনারি।
তা ছাড়া তালগাছ বজ্র প্রতিরোধক হিসেবেও এর কার্যকারিতা ছিল অনস্বীকার্য। এক সময় গ্রাম গঞ্জে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার তালগাছ আমাদেরকে বজ্রপাতের আঘাত থেকে রক্ষা করতো। তালগাছের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। বাংলা ও বাঙালির জনপ্রিয় ফল তাল। ‘ভাদ্র মাসের তাল না খেলে কালে ছাড়ে না’ বলে প্রবাদও রয়েছে। আর এই তাল গাছই এখন অন্য রকম উপকারে আসছে মানুষের। করছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা।
উলেখ্য, এই উপজেলায় ব্যাপক শিল্পায়নের ফলে কারখানা গড়তে জায়গায় জায়গায় সাবার করা হয়েছে শত শত তালগাছ। অন্যদিকে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীরা তাদের নতুন নতুন ঘরবাড়ি গড়তেও এই গাছে কর্তন করে চালের খাপ রোয়া হিসেবে ব্যবহার করে তালগাছ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। একসময় বর্ষাকালে নিচু এলেকায় খালে বিলে কৃষকরা তালগাছের কোন্দা ব্যবহার করতো- যা আজকাল দেখা মিলছে না।
সাধারণত একটি তালগাছ ৯০ থেকে ১০০ ফুট উঁচু হয়। উঁচু গাছ হওয়ায় বজ্রপাত সরাসরি এ গাছের মাধ্যমে মাটিতে চলে যায়। এ ছাড়া ভূমিক্ষয়, ভূমিধস, ভূগর্ভস্থ পানির মজুত বৃদ্ধি ও মাটির উর্বরতা রক্ষা করে। তালগাছের আকর্ষণে বাড়ে মেঘের ঘনঘটা; ঘটে বৃষ্টিপাতও। তালগাছের শিকড় মাটির অনেক নিচ পর্যন্ত প্রবেশ করায় ঝড়ে হেলে পড়ে না কিংবা ভেঙে পড়ে না। যেখানে কোনো কিছু চাষ হয় না সেখানেও তালগাছ তার শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়। নতুন রাস্তার ঢাল, বাঁধ ও নদীভাঙন ঠেকাতে এর রয়েছে সফল প্রয়োগ।
দেশ থেকে তাল বৃক্ষ নিশ্চিহ্ন বা বিলুপ্ত হয়ে গেলে আমরা হারাবো বৃক্ষ প্রেমি বাংগালি ঐতিহ্যের নান্দনিক বাবুই পাখির বাসা সৌন্দর্যের একটি মনোরম ছোঁয়া। হারাবো বজ্রাঘাত থেকে রক্ষার প্রকৃতির মানবডাল তালগাছের ছায়া। জীবন বাঁচাতে তালগাছ যাতে বিলুপ্ত না হয়ে যায়, তার জন্য আমাদের প্রত্যেকের রাস্তার ঢালে, জমির আলে তালের বীজ রোপণ করতে হবে। দেশে সবুজায়ন বৃদ্ধি করতে গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বর্ষা ও সারা বছরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে আসছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।