alt

সারাদেশ

রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী রথ মেলায় চাঁদাবাজি বন্ধ করায় সস্তিতে ব্যবসায়ীরা

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী : মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

রাজশাহী : রথমেলায় মাটির তৈজষপত্রের পসরা -সংবাদ

রাজশাহীতে রথযাত্রার ইতিহাস শত বছরের। এ রথযাত্রাকে ঘিরে যুগ যুগ ধরেই রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় মেলা বসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এবার এ মেলাকে ঘিরে স্থানীয় সাগরপাড়া এলাকার কিছু যুবক মেলায় ব্যাপক চাঁদাবাজির চেষ্টা করে। তবে রাজশাহী মহানগর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কানে বিষয়টি যাওয়ার পরে কঠোর অবস্থানে যান স্থানীয় বিএনপির নেতারা। তারা গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া মেলা এলাকায় মাইকিং করে কাউকে এক টাকাও চাঁদা না দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। এরপর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। ব্যবসায়ীরাও গত শনিবার থেকে পুরোদমে ব্যবসা শুরু করেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীর আলুপট্টির মোড় থেকে সাগরপাড়া পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে ফুটপাত ও রাস্তার ওপরে প্রায় তিন শতাধিক দোকানপাট নিয়ে ঐতিহ্যবাহী রথ মেলা বসেছে। মেলায় আসা ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রায় সবারই বাড়ি রাজশাহী জেলার বাইরের জেলায়। কেউ এসেছেন নওগাঁ থেকে, কেউ খুলনা, কেউ ঢাকা, কেউ সিলেট বা কেউ বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। তারা কেউ মিষ্টির দোকান, কেউ ফার্নিচারের দোকান, কেউ কাঠের তৈরি অক্ষরের দোকান, কেউ ব্যাঙ গাড়ির দোকান, কেউ বা শিশুদের খেলনাসহ নানা জিনিসপত্রের দোকান খুলে বসেছেন।

মেলায় আসা একাধিক দোকান মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্থানীয় বিএনপি, যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মী পরিচয়ে ২৫-৩০ জন যুবকের একটি দল মেলা শুরুর দিন গত শুক্রবারেই দোকানে দোকানে গিয়ে ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে আসে। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ মেলায় অনেক ব্যবসায়ী শুরুতেই দোকানও বসানোর সাহস করছিলেন না।

কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে নগর বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। এতে কিছুটা কাজ হয়। মহানগর বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা স্থানীয় নেতাদের বিষয়টি অবগত করলে তারা তাৎক্ষণিক মেলা এলাকায় কাউকে চাঁদা দিতে নিষেধ করে শুক্রবার বিকেলেই মাইকিং শুরু করেন। এরপর ভয়ে আর কেউ ব্যবসায়ীদের কাছে গতকাল সোমবার পর্যন্ত চাঁদা নিতে যাননি।

খুলনা থেকে আসা মাসুদ রানা নামের একজন কাঠের অক্ষর ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি প্রায় ৫ বছর ধরে এ মেলায় আসছি। কখনও এর আগে ৫০-১০০ টাকার বেশি চাঁদা দেয়া লাগেনি। কিন্তু এবার শুরুতেই কয়েকজন এসেছিলেন বড় দাবি নিয়ে। পরে চাঁদা না দিতে বিএনপির নেতাদের পক্ষ থেকে মাইকিং হওয়ার পরে দেখছি আর কেউ আসছে না।’

আরেক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত শুক্রবার শুরুর দিনেই আমার নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। আমি দিতে আপত্তি জানিয়েছি। তবে তারপরে আর কেউ আসেনি।’

কালাম নামের শিশুদের খেলনা ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার কাছেও মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়েছিল। তবে শুক্রবার বিকেল থেকে আর কেউ আসেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ মেলায় আমরা অনেক ব্যবসায়ী বছরের পর বছর ধরে দুই টাকা লাভের মুখ দেখতে স্ত্রী-সন্তান ফেলে দূরদূরান্ত থেকে আসি এখানে রথ মেলায় ব্যবসা করতে। কিন্তু ৫-১০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হলে; লাভ তো দূরের কথা লোকসান নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। তবে আশার কথা এখন কোনো বাধা ছাড়ায় ব্যবসা করছি।’

সিলেট থেকে আসা আরেক ব্যবসায়ী আরমান আলী বলছিলেন, যখন এত টাকা চাঁদা চাইছিল, তখন ভেবেছিলাম দোকানই মেলাব না। পরে দেখি আর কেউ আসে না। এখন আরামে ব্যবসা করছি। দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়।

তবে জুয়েল হোসেনসহ আরও কয়েকজ ব্যবসায়ী দাবি করেন, তাদের কাছে কেউ মঙ্গলবাল(১-৭-২০২৫) পর্যন্ত চাঁদা চাইতে কখনোই যায়নি।

এদিকে, রাজশাহীর রথবাড়ি পরিবারের সদস্য বিমল সরকার বলেন, ‘এ মেলায় আগে দুই-পঁঞ্চাশ টাকা স্থানীয় ছেলে-পেলে নিত। কিন্তু কখনোই সেটি ১০০ টাকার ওপরে যায়নি। এবার নাকি ১০-২৯ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। বিষয়টি হবে খুবই দুঃখজনক। এখানে আমাদের কিছু করার নাই। পুলিশ প্রশাসন আছে। তারা দেখুক বিষয়টি।’

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা বলেন, ‘রথমেলাকে ঘিরে যেন কেউ কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছি আমরা। স্থানীয় নেতাদের মাইকিং করে সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বলা হয়েছে। তাই সেটি করেছেও। ফলে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। এলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিব।’

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সূত্র মতে, রথযাত্রাকে ঘিরে বহুর বছর ধরেই রাজশাহী শহরে মেলা বসে। একসময় রাজশাহী নগরীর সপুার ছয়ঘাটি এলাকায় এ রথমেলা বসত। ওই সময় মেলাকে ঘিরে একসময় মাটির তৈজসপত্র, পুতুল, বেহেলা, শোলার তৈরি কুমির, হাতি, ঘোড়া, তীর-ধনুকসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী নানা জিনিসপত্র বিক্রি হতো। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে রথমেলা চলে যায় নগরীর সাগরপাড়া এলাকায়। এরপর থেকে যুগ যুগ ধরে এখানেই রথমেলা বসে। কালের আবর্তে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় মেলায় একমাত্র ব্যাঙগাড়ি ছাড়া গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাকি সব জিনিসপত্রই এ মেলা থেকে হারিয়ে গেছে। কিন্তু মেলার পরিধি বেড়েছে এখন আরও ব্যাপক হারে।

ছবি

কমিশনার অপসারণের দাবিতে খুলনায় টানা কর্মসূচি, রোববার থেকে সর্বাত্মক অবরোধের হুঁশিয়ারি

ছবি

চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যা: চিন্ময়ের ‘উসকানিমূলক বক্তব্য’ দায়ী, বলছে পুলিশ

২৩ বছর পর পটুয়াখালীতে বিএনপির সম্মেলন আজ

ছাতকে ইউএনওর সাথে সাংবাদিকদের মত বিনিময়

করিমগঞ্জে প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার বিতরণ

ছবি

মাতামুহুরীর চরের জমিতে পেঁপে চাষে সৌখিন চাষি বাদশা লাভবান

১৩ বছর ধরে অবৈধভাবে শিক্ষকতা বেরোবির তাবিউর রহমান প্রধানের বিরুদ্ধে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি

পূর্বাচলে ঘোড়ার মাংসসহ গ্রেপ্তার ১

ছবি

পলাশে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার সৌন্দর্যের প্রতীক তালগাছ

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের সিলেট মুরারি চাঁদ কলেজ

মাদক কারবারিদের হামলায় ডিবি পুলিশ আহত

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়া প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে

ডিমলায় জমি নিয়ে বিরোধ, নিহত ১

ভৈরবে পাইকারি চাল বাজারে অভিযান জরিমানা

ছবি

প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

১০১ পরিবারকে ঘর দিচ্ছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন

দুর্গাপুরে জনবসতি এলাকায় ময়লার ভাগাড় হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

নরসিংদীতে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে-গুলি করে হত্যা

ছবি

সিরাজগঞ্জে বর্ষার আগমনে জেলে পরিবারগুলোতে ফিরেছে স্বস্তি

ঝালকাঠি পৌরসভায় ট্রাক স্ট্যান্ড না থাকায় আবাসিক এলাকায় পার্কিং

বেতাগীতে ডেঙ্গুতে শিক্ষকের মৃত্যু

গাইবান্ধায় বাড়ছে অপরাধ, জনমনে উদ্বেগ

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসের সমাবেশ

রামুতে পরিত্যক্ত অস্ত্র উদ্ধার আটক ২

বোয়ালখালী পৌরসভার ২৮ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

রামুতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ড্রেজার মেশিন জব্দ

ঝালকাঠিতে রোপা আমনের প্রণোদনা সাড়ে ১৬ লাখ টাকা

বেগমগঞ্জে অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

দশমিনার তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে নেই রূপালী ইলিশ

বেগমগঞ্জে শিশু নির্যাতনকারীকে গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন

লালমাইয়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে তালা দিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতারা!

পুর্ব-সুন্দরবনে ফাঁদসহ হরিণ শিকারি আটক

ছবি

বিনা অনুমতিতে সেবা, চার প্রতিষ্ঠানে জরিমানা ১ লাখ ১৫ হাজার

ছবি

কুমিল্লা চান্দিনা বাজারের রাস্তা বেহাল

সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ৮০ হাজার যানবাহন চলাচলের অযোগ্য

ঠাকুরগাঁওয়ে পুকুরে ভাসছিল অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ

tab

সারাদেশ

রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী রথ মেলায় চাঁদাবাজি বন্ধ করায় সস্তিতে ব্যবসায়ীরা

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

রাজশাহী : রথমেলায় মাটির তৈজষপত্রের পসরা -সংবাদ

মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

রাজশাহীতে রথযাত্রার ইতিহাস শত বছরের। এ রথযাত্রাকে ঘিরে যুগ যুগ ধরেই রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় মেলা বসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এবার এ মেলাকে ঘিরে স্থানীয় সাগরপাড়া এলাকার কিছু যুবক মেলায় ব্যাপক চাঁদাবাজির চেষ্টা করে। তবে রাজশাহী মহানগর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কানে বিষয়টি যাওয়ার পরে কঠোর অবস্থানে যান স্থানীয় বিএনপির নেতারা। তারা গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া মেলা এলাকায় মাইকিং করে কাউকে এক টাকাও চাঁদা না দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। এরপর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। ব্যবসায়ীরাও গত শনিবার থেকে পুরোদমে ব্যবসা শুরু করেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীর আলুপট্টির মোড় থেকে সাগরপাড়া পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে ফুটপাত ও রাস্তার ওপরে প্রায় তিন শতাধিক দোকানপাট নিয়ে ঐতিহ্যবাহী রথ মেলা বসেছে। মেলায় আসা ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রায় সবারই বাড়ি রাজশাহী জেলার বাইরের জেলায়। কেউ এসেছেন নওগাঁ থেকে, কেউ খুলনা, কেউ ঢাকা, কেউ সিলেট বা কেউ বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। তারা কেউ মিষ্টির দোকান, কেউ ফার্নিচারের দোকান, কেউ কাঠের তৈরি অক্ষরের দোকান, কেউ ব্যাঙ গাড়ির দোকান, কেউ বা শিশুদের খেলনাসহ নানা জিনিসপত্রের দোকান খুলে বসেছেন।

মেলায় আসা একাধিক দোকান মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্থানীয় বিএনপি, যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মী পরিচয়ে ২৫-৩০ জন যুবকের একটি দল মেলা শুরুর দিন গত শুক্রবারেই দোকানে দোকানে গিয়ে ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে আসে। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ মেলায় অনেক ব্যবসায়ী শুরুতেই দোকানও বসানোর সাহস করছিলেন না।

কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে নগর বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। এতে কিছুটা কাজ হয়। মহানগর বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা স্থানীয় নেতাদের বিষয়টি অবগত করলে তারা তাৎক্ষণিক মেলা এলাকায় কাউকে চাঁদা দিতে নিষেধ করে শুক্রবার বিকেলেই মাইকিং শুরু করেন। এরপর ভয়ে আর কেউ ব্যবসায়ীদের কাছে গতকাল সোমবার পর্যন্ত চাঁদা নিতে যাননি।

খুলনা থেকে আসা মাসুদ রানা নামের একজন কাঠের অক্ষর ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি প্রায় ৫ বছর ধরে এ মেলায় আসছি। কখনও এর আগে ৫০-১০০ টাকার বেশি চাঁদা দেয়া লাগেনি। কিন্তু এবার শুরুতেই কয়েকজন এসেছিলেন বড় দাবি নিয়ে। পরে চাঁদা না দিতে বিএনপির নেতাদের পক্ষ থেকে মাইকিং হওয়ার পরে দেখছি আর কেউ আসছে না।’

আরেক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত শুক্রবার শুরুর দিনেই আমার নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। আমি দিতে আপত্তি জানিয়েছি। তবে তারপরে আর কেউ আসেনি।’

কালাম নামের শিশুদের খেলনা ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার কাছেও মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়েছিল। তবে শুক্রবার বিকেল থেকে আর কেউ আসেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ মেলায় আমরা অনেক ব্যবসায়ী বছরের পর বছর ধরে দুই টাকা লাভের মুখ দেখতে স্ত্রী-সন্তান ফেলে দূরদূরান্ত থেকে আসি এখানে রথ মেলায় ব্যবসা করতে। কিন্তু ৫-১০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হলে; লাভ তো দূরের কথা লোকসান নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। তবে আশার কথা এখন কোনো বাধা ছাড়ায় ব্যবসা করছি।’

সিলেট থেকে আসা আরেক ব্যবসায়ী আরমান আলী বলছিলেন, যখন এত টাকা চাঁদা চাইছিল, তখন ভেবেছিলাম দোকানই মেলাব না। পরে দেখি আর কেউ আসে না। এখন আরামে ব্যবসা করছি। দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়।

তবে জুয়েল হোসেনসহ আরও কয়েকজ ব্যবসায়ী দাবি করেন, তাদের কাছে কেউ মঙ্গলবাল(১-৭-২০২৫) পর্যন্ত চাঁদা চাইতে কখনোই যায়নি।

এদিকে, রাজশাহীর রথবাড়ি পরিবারের সদস্য বিমল সরকার বলেন, ‘এ মেলায় আগে দুই-পঁঞ্চাশ টাকা স্থানীয় ছেলে-পেলে নিত। কিন্তু কখনোই সেটি ১০০ টাকার ওপরে যায়নি। এবার নাকি ১০-২৯ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। বিষয়টি হবে খুবই দুঃখজনক। এখানে আমাদের কিছু করার নাই। পুলিশ প্রশাসন আছে। তারা দেখুক বিষয়টি।’

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা বলেন, ‘রথমেলাকে ঘিরে যেন কেউ কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছি আমরা। স্থানীয় নেতাদের মাইকিং করে সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বলা হয়েছে। তাই সেটি করেছেও। ফলে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। এলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিব।’

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সূত্র মতে, রথযাত্রাকে ঘিরে বহুর বছর ধরেই রাজশাহী শহরে মেলা বসে। একসময় রাজশাহী নগরীর সপুার ছয়ঘাটি এলাকায় এ রথমেলা বসত। ওই সময় মেলাকে ঘিরে একসময় মাটির তৈজসপত্র, পুতুল, বেহেলা, শোলার তৈরি কুমির, হাতি, ঘোড়া, তীর-ধনুকসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী নানা জিনিসপত্র বিক্রি হতো। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে রথমেলা চলে যায় নগরীর সাগরপাড়া এলাকায়। এরপর থেকে যুগ যুগ ধরে এখানেই রথমেলা বসে। কালের আবর্তে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় মেলায় একমাত্র ব্যাঙগাড়ি ছাড়া গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাকি সব জিনিসপত্রই এ মেলা থেকে হারিয়ে গেছে। কিন্তু মেলার পরিধি বেড়েছে এখন আরও ব্যাপক হারে।

back to top