চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুরে হালদা নদীর উপরে তৈরি রাবার ড্যামকে কৃষকদের লাভের জন্য নয় চা বাগানের জন্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, কৃষকদের লাভের কথা বলে আমাদের ভুল বুঝানো হয়েছে। ড্যামটি মূলত করা হয়েছে চা বাগানের লাভের জন্য। এই সব বড় বড় কোম্পানির জন্য আমাদের এত বড় গুরুত্বপূর্ণ হালদা নদী নষ্ট হবে, ধ্বংস হবে, এটা আমরা হতে দিব না।

হালদা নদীকে দূর্ষণের মাধ্যমে ক্ষতি করা হচ্ছে। এটা এক প্রকার নির্যাতন। তামাক এমনিতেই ভাল জিনিস নয়। তাও একেবারে যদি বন্ধ নাও করি, চাইলে তা অন্যান্য জায়গায় চাষ করা যায়। কিন্তু হালদার পাড়ে কেন করতে হবে? হালদার পাড়ে তামাক চাষ মাছের জন্য ক্ষতি করছে। এখানে অবিলম্বে তামাক চাষ বন্ধ করতেই হবে। হালদা পাড়ে তামাক চাষ কোন মতেই গ্রহণযোগ্য না। যারা তামাক চাষ করছেন তারা আমাদের কাছে আসেন। আমরা আপনাদেরকে সহায়তা করবো। কিন্তু আপনারা জেনে বুঝে এই ক্ষতিটা করবেননা। যারা তামাক চাষ করে তাদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১টায় চট্টগ্রামের রাউজানের হালদা নদী সংলগ্ন মোবারকখীল হ্যাচারীর পাশর্^স্থ মাঠে মৎস্য অধিদপ্তর চট্টগ্রামের হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর আয়োজনে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিকমৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী পরিদর্শন ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, তামাকের কোম্পানি গুলো যে রাজস্ব সরকারকে দেয়, তামাক কর্তৃক মানুষের স্বাস্থ্যে ক্ষতির কারণে তারও অনেক বেশি অর্থ সরকারের খরচ হয়।’ নদী দূষণের বিষয়ে উপদেষ্টা আরো বলেন, আমি আজকে হালদায় কালো পানি দেখেছি। গন্ধ পেয়েছি। যেটা বুড়িগঙ্গায় আছে। সেটা এখানে কেন হবে? হালদা দূষণকারীদের নির্যাতনকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

হালদার সুরক্ষায় নজরদারী বৃদ্ধি করতে উদ্বোধন করা ড্রোনের বিষয়ে বলেন, এই বিশেষ ড্রোনের সাহায্যে হালদায় মা মাছ শিকারীদের শনাক্ত করতে সহজ হবে। এছাড়াও হালদার যে কোন সমস্যা সহজে চিহ্নিত করা যাবে। ‘মা মাছের ডিম থেকে রেণু ফুটানোর জন্য আরো সরকারি হ্যাচারী তৈরি করা হবে। এক কথায় হালদাকে বাঁচাতে যা যা করা দরকার সব করা হবে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড.মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.মোহাম্মদ আবদুর রউফ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন হালদা প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান। বক্তব্য রাখেন সাবেক মূখ্য সচিব আবদুল করিম, হালদা গবেষক ড.মঞ্জুরুল কিবিরিয়া, রাঙ্গামাটি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাছিম হায়দার, নৌ-পুলিশ সুপার আ.ফ.ম নিজাম উদ্দিন, হালদা রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, হ্যাচারী পরিচালক মো. সালাউদ্দিন।

এসময় হালদা নদীকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখতে ৪টি বিশেষ ড্রোন উদ্বোধন করা হয়। এর আগে সকালে মৎস্য উপদেষ্টা হালদা নদী পরিদর্শন করেন এবং হালদায় মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।