alt

সারাদেশ

কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করছে লাইট হাউস

এস, এম নুআস, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) : বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করছে লাইট হাইজের স্বেচ্ছাসেবীরা।

চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যখানে জেগে ওঠা বালুচরে চিলমারী, নয়ারহাট ও অষ্টমীর চর ইউনিয়নের বিশাল জনগোষ্ঠির মধ্যে কিশোরীরা তাদের স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বন্যাকালীন সময়ে স্যানিটারী ন্যাপকিন ব্যবহার করা তো দুরের কথা সাধারণ কাপড়ও ব্যবহার করতে পারে না তারা। ফলে প্রায়শই জরায়ুর নানা সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হয়। একেতো চিলমারী উপজেলা চিলমারী ইউনিয়নে হওয়ার কথা থাকলেও চিলমারী উপজেলা প্রশাসনিক ভবন গড়ে উঠেছে থানাহাট ইউনিয়নে। আর চিলমারী ইউনিয়ন গড়ে উঠেছে ব্রহ্মপত্র নদের মধ্যখানে জেগে ওঠা বালুচরে। ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়নই নদগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকী ৩টি ইাউনিয়নেরও বেশ কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। চরাঞ্চলগুলোতে ২/১টি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও নানা সমস্যার কারণে কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না চরের মানুষ। নয়ারহাট, রমনা ও রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও সেখানে নেই কোন ডাক্তার। পাঠ্য বইয়ে কিশোরীদের স্বাস্থ্য সচেতন করার জন্য ২/১টি চ্যাপ্টার থাকলেও সেগুলো বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকে। পড়ানো হয়না কোনদিন। সরেজমিনে রমনা ইউনিয়নের খরখরিয়া ভরট্টপাড়া গ্রাম ঘুরে জানা যায়, অধিকাংশ নারী ও কিশোরী স্বাস্থ্য সচেতন নয়। তারা স্যানিটারী ন্যাপকিন ব্যবহার করে না। মাসিকের সময় পুরাতন কাপড় দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়। ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাতি খাতুন মানসিক স্বাস্থ্য কি সে জানে না। এব্যাপারে কারো কাছে সে শুনেওনি। শামসুল হক বিএসসি কারিগরী স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষার্থী জবা খাতুন (১৩), শারমিন (১৪), আতিকা (১৩), সুবর্ণা (১৩) স্যানিটারী ন্যাপকিনের কথা কখনো শোনেনি। নামও জানেনা। মাসিকের সময় তারা পুরাতন কাপড় ব্যবহার করে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লাইট হাউজের স্বেচ্ছাসেবী নাফিসা তাসনিম সরকার নোভা জানায়, দুর্যোগকালীন সময়ে কিশোরীদের অনেক কষ্ট হয়। তারা পরিবারের সাথে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করে। এসময় মাসিক শুরু হলে তাদের অনেক কষ্ট হয়। স্যানিটারী ন্যাপকিন পায় না। পায় না পরিস্কার কাপড়। এজন্য আমরা তাদেরকে স্কুলে স্কুলে গিয়ে, পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে উঠান বৈঠক করে সচেতন করছি। নুসরাত জাহান রুনা জানান, আমরা লাইট হাউজ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার কিশোরীদের সচেতন করছি। পিরিয়ডের সময় তারা যাতে স্যানিটারী ন্যাপকিন ব্যবহার করে সেব্যাপারে সচেতন করছি। বন্যার সময় পিরিয়ড শুরু হলে পানিতে না নামার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ) মোছা. সুলতানা বেগম জানান, গ্রামের মানুষ অধিকাংশ গরিব। টাকার অভাবে স্যানিটারী ন্যাপকিন কিনতে পারে না। ফলে তারা পুরাতন কাপড় ব্যবহার করে। ব্যবহার করার পর লজ্জায় সেই কাপড় রোদে শুকাতে দেয় না। অন্য পুরুষ দেখবে বলে। জীবানু মুক্ত না হলে জরায়ুর ক্যান্সার, চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তিনি বলেন, প্রখর রোদে কড়কড়ে করে শুকাতে হয়। না হলে জীবানু যায় না। তিনি দাবি করেন, আমাদের সেবাক্যাম্পে নারী, কিশোরী, গর্ভবতী মায়েদের এব্যাপারে সচেতন করে থাকি। আগের চেয়ে মানুষ এখন অনেক সচেতন।

চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আবু রায়হান বলেন, কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না হলে অনেক গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সময়টাতে তারা শারীরিক, মানসিক ও আবেগগতভাবে দ্রুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। সেকারণে কিশোরীরা যদি নিজেদের অনুভূতি, দুশ্চিন্তা বা সংকোচ প্রকাশ করতে না পারে, তবে আত্মবিশ্বাস নষ্ট হতে পারে। নিজেকে ছোট বা অপ্রয়োজনীয় মনে করার প্রবণতা বাড়তে পারে। পরীক্ষার চাপ, সম্পর্কের জটিলতা বা পারিবারিক সমস্যার কারণে অনেক কিশোরী অবসাদে ভুগতে পারে। মানসিক চাপ থাকলেও তা বুঝতে বা প্রকাশ করতে না পারলে উদ্বেগ বাড়তে থাকে। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক যন্ত্রণার ফলে কিছু কিশোরী আত্মহত্যার চিন্তা করতে পারে। আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক সময় নীরবভাবে তৈরি হয়। কিশোরীদের নিরাপদ স্যানিটেশনের অভাবে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে, তা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক এবং সামাজিক দিক থেকেও ক্ষতিকর। প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি: অপরিষ্কার টয়লেট বা স্যানিটারি ব্যবস্থার কারণে সংক্রমণ (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, যোনি সংক্রমণ) হতে পারে। প্যাড বা কাপড় ঠিকমতো পরিবর্তন বা পরিষ্কার না করলে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে। খোলা জায়গায় মলত্যাগ বা অপরিষ্কার শৌচাগারের কারণে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-এ ইত্যাদি রোগ হতে পারে।

তিনি বলেন, অপরিষ্কার ও ভেজা কাপড় ব্যবহারে ফুসকুড়ি, চুলকানি, চর্মরোগ হতে পারে। নিরাপদ স্যানিটারি ব্যবস্থার অভাবে কিশোরীরা মাসিকের সময় স্কুলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, ফলে পড়াশোনার ক্ষতি হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্ব বা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। মানসিক চাপ ও আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি হয়। অপর্যাপ্ত গোপনীয়তা, স্কুলে উপহাস বা অস্বস্থির কারণে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। নিজেদের শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। অনেক কিশোরী মাসিকের সময় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সমাজে “মাসিক” নিয়ে ট্যাবু থাকায় অনেকেই নিজের সমস্যা প্রকাশ করতে পারে না। এ জন্য স্কুলে ও বাড়িতে নিরাপদ ও আলাদা টয়লেট নিশ্চিত করা, নিয়মিত স্বাস্থ্যশিক্ষা ও স্যানিটেশন বিষয়ক সচেতনতা তৈরি করা, স্যানিটারি ন্যাপকিন সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করা, কিশোরীদের স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ ও কাউন্সেলিং সেবা চালু করা। সর্বোপরী নিরাপদ স্যানিটেশন কিশোরীদের জন্য শুধু স্বাস্থ্য নয়, মর্যাদা ও ভবিষ্যতের বিষয়। সচেতনতা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

লাইট হাউজের প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী হামিদা আক্তার হেনা বলেন, কিশোরী, প্রসূতি ও গর্ভবতী মায়েদের সচেতন করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবী নেয়া হয়েছে। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা গ্রামে গ্রামে মা ও কিশোরীদের নিয়ে উঠান বৈঠক করে তাদেরকে সচেতন করছে। প্রকল্প সমন্বয়কারী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা কুড়িগ্রাম জেলার ৫টি উপজেলায় কাজ করছি। আমাদের ৭০জন স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে। তারা গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারী ও কিশোরীদের সচেতন করছেন। আশা করি মানুষ আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন।

ছবি

সিলেটে পাথর কোয়ারী দখলে সবার স্বপ্ন এক

ছবি

মুরাদনগরে নারী ধর্ষণ-ভিডিও কাণ্ডে গ্রেপ্তার আরও একজন 

সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে ছিনতাইকারী সাজিয়ে ন্যাড়া করল কর্মীরা

সৌদি আরবে দালালের হাতে জিম্মি সিলেটি যুবকের মৃত্যু

ছবি

ডেটা ক্লাসিফিকেশন থাকছে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনে : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

ছবি

সাইবার সিকিউরিটি সল্যুশনস নিয়ে মাস্টারকার্ডের কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ছবি

ব্যক্তি স্বার্থের দ্বন্দ্বের সময় বোয়ালমারীর একান্নবর্তী পাল পরিবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

ছবি

বোয়ালখালীতে বস্তায় আদা চাষ বাড়ছে

সংস্কৃতি ক্ষরায় শৈলজারঞ্জন সংস্কৃতি কেন্দ্র

ছবি

শালিকের কিচিরমিচিরে মুখরিত বেতাগী বাসস্ট্যান্ড

খোলা ট্রাক, পিকআপ ও ডাম্পারে ধুলাবালু বহন, জনদুর্ভোগ

তানোরে রাসেল ভাইপারের কামড়ে কৃষকের মৃত্যু

ছবি

সরিষাবাড়ীতে যমুনা নদীর ভাঙন রোধে মানববন্ধন

নরসিংদীতে সেলাই মেশিন বিতরণ

‘দেশবাসী এখনও খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব আশা করে’

কেশবপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র গ্রেপ্তার

শরণখোলায় ৭ ফুট লম্বা দাড়াস সাপ উদ্ধার

ছবি

মধ্যপাড়া খনি শ্রমিকদের ধর্মঘট, উৎপাদন বন্ধ

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে জুস রপ্তানি

চাঁদপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত বাবা-ছেলে

ছবি

হবিগঞ্জ-সুজাতপুর সড়ক ভেঙে বেহাল, জনদুর্ভোগ

রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাকে ধরতে ভবনে তল্লাশি, ফোনে বললেন ‘খুঁজে লাভ নেই’

ধনবাড়ীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরি

ছবি

মাতামুহুরীর ভাঙন ঠেকাতে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে জিওব্যাগ ডাম্পিং

ছবি

মোরেলগঞ্জে পারিবারিক পুষ্টি বাগানের কৃষকরা পেলেন কৃষি উপকরণ

বরিশালে বোরো মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে

দুমকিতে কৃষি উপকরণ বিতরণ

বাগেরহাটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কিশোরের মৃত্যু

সিংড়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা প্রদান

পাকুন্দিয়ায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অ্যাসিসটিভ ডিভাইস বিতরণ

পোরশা সীমান্তে বাংলাদেশি রাখালকে হত্যা করেছে বিএসএফ

চালককে অচেতন করে ইজিবাইক ছিনতাই

ছবি

মৌলভীবাজারের দুই উপজেলা দিয়ে ৭১ জনকে পুশইন

ধনবাড়ীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন

এক শিক্ষকে চলছে গোবিপ্রবির ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগ

মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ার দখল নিতে রশি টানাটানি

tab

সারাদেশ

কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করছে লাইট হাউস

এস, এম নুআস, চিলমারী (কুড়িগ্রাম)

বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করছে লাইট হাইজের স্বেচ্ছাসেবীরা।

চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যখানে জেগে ওঠা বালুচরে চিলমারী, নয়ারহাট ও অষ্টমীর চর ইউনিয়নের বিশাল জনগোষ্ঠির মধ্যে কিশোরীরা তাদের স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বন্যাকালীন সময়ে স্যানিটারী ন্যাপকিন ব্যবহার করা তো দুরের কথা সাধারণ কাপড়ও ব্যবহার করতে পারে না তারা। ফলে প্রায়শই জরায়ুর নানা সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হয়। একেতো চিলমারী উপজেলা চিলমারী ইউনিয়নে হওয়ার কথা থাকলেও চিলমারী উপজেলা প্রশাসনিক ভবন গড়ে উঠেছে থানাহাট ইউনিয়নে। আর চিলমারী ইউনিয়ন গড়ে উঠেছে ব্রহ্মপত্র নদের মধ্যখানে জেগে ওঠা বালুচরে। ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়নই নদগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকী ৩টি ইাউনিয়নেরও বেশ কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। চরাঞ্চলগুলোতে ২/১টি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও নানা সমস্যার কারণে কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না চরের মানুষ। নয়ারহাট, রমনা ও রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও সেখানে নেই কোন ডাক্তার। পাঠ্য বইয়ে কিশোরীদের স্বাস্থ্য সচেতন করার জন্য ২/১টি চ্যাপ্টার থাকলেও সেগুলো বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকে। পড়ানো হয়না কোনদিন। সরেজমিনে রমনা ইউনিয়নের খরখরিয়া ভরট্টপাড়া গ্রাম ঘুরে জানা যায়, অধিকাংশ নারী ও কিশোরী স্বাস্থ্য সচেতন নয়। তারা স্যানিটারী ন্যাপকিন ব্যবহার করে না। মাসিকের সময় পুরাতন কাপড় দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়। ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাতি খাতুন মানসিক স্বাস্থ্য কি সে জানে না। এব্যাপারে কারো কাছে সে শুনেওনি। শামসুল হক বিএসসি কারিগরী স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষার্থী জবা খাতুন (১৩), শারমিন (১৪), আতিকা (১৩), সুবর্ণা (১৩) স্যানিটারী ন্যাপকিনের কথা কখনো শোনেনি। নামও জানেনা। মাসিকের সময় তারা পুরাতন কাপড় ব্যবহার করে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লাইট হাউজের স্বেচ্ছাসেবী নাফিসা তাসনিম সরকার নোভা জানায়, দুর্যোগকালীন সময়ে কিশোরীদের অনেক কষ্ট হয়। তারা পরিবারের সাথে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করে। এসময় মাসিক শুরু হলে তাদের অনেক কষ্ট হয়। স্যানিটারী ন্যাপকিন পায় না। পায় না পরিস্কার কাপড়। এজন্য আমরা তাদেরকে স্কুলে স্কুলে গিয়ে, পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে উঠান বৈঠক করে সচেতন করছি। নুসরাত জাহান রুনা জানান, আমরা লাইট হাউজ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার কিশোরীদের সচেতন করছি। পিরিয়ডের সময় তারা যাতে স্যানিটারী ন্যাপকিন ব্যবহার করে সেব্যাপারে সচেতন করছি। বন্যার সময় পিরিয়ড শুরু হলে পানিতে না নামার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ) মোছা. সুলতানা বেগম জানান, গ্রামের মানুষ অধিকাংশ গরিব। টাকার অভাবে স্যানিটারী ন্যাপকিন কিনতে পারে না। ফলে তারা পুরাতন কাপড় ব্যবহার করে। ব্যবহার করার পর লজ্জায় সেই কাপড় রোদে শুকাতে দেয় না। অন্য পুরুষ দেখবে বলে। জীবানু মুক্ত না হলে জরায়ুর ক্যান্সার, চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তিনি বলেন, প্রখর রোদে কড়কড়ে করে শুকাতে হয়। না হলে জীবানু যায় না। তিনি দাবি করেন, আমাদের সেবাক্যাম্পে নারী, কিশোরী, গর্ভবতী মায়েদের এব্যাপারে সচেতন করে থাকি। আগের চেয়ে মানুষ এখন অনেক সচেতন।

চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আবু রায়হান বলেন, কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না হলে অনেক গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সময়টাতে তারা শারীরিক, মানসিক ও আবেগগতভাবে দ্রুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। সেকারণে কিশোরীরা যদি নিজেদের অনুভূতি, দুশ্চিন্তা বা সংকোচ প্রকাশ করতে না পারে, তবে আত্মবিশ্বাস নষ্ট হতে পারে। নিজেকে ছোট বা অপ্রয়োজনীয় মনে করার প্রবণতা বাড়তে পারে। পরীক্ষার চাপ, সম্পর্কের জটিলতা বা পারিবারিক সমস্যার কারণে অনেক কিশোরী অবসাদে ভুগতে পারে। মানসিক চাপ থাকলেও তা বুঝতে বা প্রকাশ করতে না পারলে উদ্বেগ বাড়তে থাকে। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক যন্ত্রণার ফলে কিছু কিশোরী আত্মহত্যার চিন্তা করতে পারে। আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক সময় নীরবভাবে তৈরি হয়। কিশোরীদের নিরাপদ স্যানিটেশনের অভাবে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে, তা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক এবং সামাজিক দিক থেকেও ক্ষতিকর। প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি: অপরিষ্কার টয়লেট বা স্যানিটারি ব্যবস্থার কারণে সংক্রমণ (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, যোনি সংক্রমণ) হতে পারে। প্যাড বা কাপড় ঠিকমতো পরিবর্তন বা পরিষ্কার না করলে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে। খোলা জায়গায় মলত্যাগ বা অপরিষ্কার শৌচাগারের কারণে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-এ ইত্যাদি রোগ হতে পারে।

তিনি বলেন, অপরিষ্কার ও ভেজা কাপড় ব্যবহারে ফুসকুড়ি, চুলকানি, চর্মরোগ হতে পারে। নিরাপদ স্যানিটারি ব্যবস্থার অভাবে কিশোরীরা মাসিকের সময় স্কুলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, ফলে পড়াশোনার ক্ষতি হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্ব বা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। মানসিক চাপ ও আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি হয়। অপর্যাপ্ত গোপনীয়তা, স্কুলে উপহাস বা অস্বস্থির কারণে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। নিজেদের শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। অনেক কিশোরী মাসিকের সময় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সমাজে “মাসিক” নিয়ে ট্যাবু থাকায় অনেকেই নিজের সমস্যা প্রকাশ করতে পারে না। এ জন্য স্কুলে ও বাড়িতে নিরাপদ ও আলাদা টয়লেট নিশ্চিত করা, নিয়মিত স্বাস্থ্যশিক্ষা ও স্যানিটেশন বিষয়ক সচেতনতা তৈরি করা, স্যানিটারি ন্যাপকিন সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করা, কিশোরীদের স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ ও কাউন্সেলিং সেবা চালু করা। সর্বোপরী নিরাপদ স্যানিটেশন কিশোরীদের জন্য শুধু স্বাস্থ্য নয়, মর্যাদা ও ভবিষ্যতের বিষয়। সচেতনতা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

লাইট হাউজের প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী হামিদা আক্তার হেনা বলেন, কিশোরী, প্রসূতি ও গর্ভবতী মায়েদের সচেতন করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবী নেয়া হয়েছে। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা গ্রামে গ্রামে মা ও কিশোরীদের নিয়ে উঠান বৈঠক করে তাদেরকে সচেতন করছে। প্রকল্প সমন্বয়কারী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা কুড়িগ্রাম জেলার ৫টি উপজেলায় কাজ করছি। আমাদের ৭০জন স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে। তারা গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারী ও কিশোরীদের সচেতন করছেন। আশা করি মানুষ আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন।

back to top