জাহাজ ভাঙা শিল্প দিয়ে যাত্রা
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) : সমুদ্রকূলে স্থাপিত ইউএনআই এলপি গ্যাস কারখানা -সংবাদ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার দেশে-বিদেশে পরিচিতি ছিল জাহাজ ভাঙা শিল্প এলাকা হিসেবে। বর্তমানে এই অঞ্চলটি হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম প্রধান শিল্পাঞ্চল। বিশেষ করে গত দুই দশকে এখানে স্থাপিত হয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপগুলোর একাধিক প্রতিষ্ঠান। যেখানে কাজ করে হাজার হাজার শ্রমিক- যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাধ্যমে বন্দরনগরীতে প্রবেশদ্বার সীতাকুণ্ড উপজেলা। এই মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যেতে সড়কের উভয় পাশে রয়েছে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান- যার মধ্যে রয়েছে বস্ত্রকল, ঢেউটিন, পাট, রড, সিমেন্ট, ইস্পাত, কনটেইনার ডিপো, গাড়ি সংযোজন, কাঁচসহ ভারী শিল্পের বহু কারখানা। এখানে আছে এলপি গ্যাসের একাধিক কারখানা। মহাসড়কের পশ্চিমে সাগর উপকূলে তাকালে চোখে পড়ে পুরোনো জাহাজের ফানেল বা চিমনি। এখানেই গড়ে উঠেছে দেশের একমাত্র জাহাজভাঙা শিল্প। দেশের গাড়ি সংযোজনকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাষ্ট্রিজ এই অঞ্চলে অবস্থিত।
সীতাকুণ্ডের একাধিক শিল্পকারখানার উদ্যোক্তারা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বন্দরের নিকটবর্তী, শ্রমিকের সহজলভ্যতা, উৎপাদিত পণ্যের দ্রুত পরিবহন, জমির পর্যাপ্ততা, পাহাড়, মনোরম প্রকৃতিসহ শিল্প স্থাপনের উপর্যুক্ত পরিবেশের কারণে এ উপজেলা বহু আগেই শিল্প উদ্যোক্ততাদের নজরে পড়ে। ফলে এখানে প্রতিবছরই নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। ২৭৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সীতাকুণ্ডে দুই শতাধিক শিল্পকারখানা রয়েছে। তার মধ্যে ভারী শিল্প ১৫০টি।
এলাকাবাসী জানায়, এখানে ১৯৬৫ সালে সর্বপ্রথম গড়ে উঠেছিল দেশের একমাত্র জাহাজ ভাঙা শিল্প। উপজেলার ফৌজদারহাটে ঝড়ে ভেসে আসা কুইন আল-পাইন নামের একটি জাহাজ ভাঙার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সময়ের সঙ্গে এ শিল্পের বিস্তার ঘটেছে। এখানে ১৫০টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এর মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে ৫০টির মত। এ শিল্প থেকে প্রতি বছর প্রায় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে সরকার। এ ছাড়া দেশের নির্মাণ শিল্পের অন্যতম সরঞ্জাম রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ লোহাসহ গুরুত্বপূর্ণ বহু সরঞ্জাম পাওয়া যায় এ শিল্প থেকে।
সীতাকুণ্ডের স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্যোক্তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দশকে সীতাকুণ্ডে নতুন করে যোগ হয়েছে আরও বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান- যার মধ্যে অন্যতম জিপিএইচ গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, বিএসআরএম গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, কেডিএস গ্রুপ, পিএইচপি গ্রুপ, বিএম গ্রুপ, কেএসআরএমসহ দেড় শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্প গ্রুপের ৫০টির এত প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে বারৈয়াঢালা, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে। এ ছাড়া মুরাদপুর সাগর উপকূলে নতুন সমুদ্রবন্দর স্থাপনের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা এখন দেশের অন্যতম প্রধান শিল্পাঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, ইস্পাত খাতের চারটি বৃহৎ কোম্পানির কারখানা রয়েছে সীতাকুণ্ডে। কোম্পানি চারটি হলো জিপিএইচ গ্রুপ, বিএসআরএম গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ ও কেএসআরএম গ্রুপ। এর বাইরে রয়েছে রড উৎপাদনের ৩৩টি সনাতন ও আধা স্বয়ংক্রিয় কারখানা। সব মিলিয়ে সীতাকুণ্ডের কারখানাগুলোর মোট রড উৎপাদনের সক্ষমতা প্রায় ৬০ লাখ টন। তবে কাঁচামাল আমদানি ও কোম্পানিগুলোর প্রাথমিক হিসাবে, গত বছর অন্তত ৩৩ লাখ টন রড উৎপাদন হয়েছে এসব কারখানায়- যা দেশের মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশের বেশি।
উপজেলার বাড়বকুণ্ড সাগর উপকূল ঘুরে দেখা গেছে, এখানে অন্তত ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে জেএমআই, ইউএনআই, বিএন গ্যাস কারখানাসহ পাঁচটি কারখানার পুরোদমে উৎপাদন শুরু করেছে। আরও কয়েকটি কারখানার নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। দেশের বাহির থেকে গ্যাস এনে প্রতিষ্ঠানগুলোর রিজার্ভারে সঞ্চিত রেখে তা থেকে গ্যাস বোতলজাত করে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়।
সোনাইছড়ি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও শিল্প উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় সীতাকুণ্ড অঞ্চলে শিল্পকারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তাদের পছন্দের এলাকা। এখানে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান যেমন রয়েছে তেমনই গড়ে উঠেছে ছোট ও মাঝারি অনেক প্রতিষ্ঠানও। আমরা এসব উদ্যোক্তাকে শিল্প স্থাপনে সহযোগিতা করছি। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বহু বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক যুগ্ন মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী এফসিএ সাংবাদিকদের বলেন, আমি নিজেও শিল্প উদ্যোক্তা। তাই শিল্পকে সব সময় উৎসাহিত করি। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে শিল্প প্রতিষ্ঠান সবগুলোকেই আমরা সহযোগিতা করে দেশের অর্থনীতিকে আরও মজবুত করতে চাই।
জাহাজ ভাঙা শিল্প দিয়ে যাত্রা
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) : সমুদ্রকূলে স্থাপিত ইউএনআই এলপি গ্যাস কারখানা -সংবাদ
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার দেশে-বিদেশে পরিচিতি ছিল জাহাজ ভাঙা শিল্প এলাকা হিসেবে। বর্তমানে এই অঞ্চলটি হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম প্রধান শিল্পাঞ্চল। বিশেষ করে গত দুই দশকে এখানে স্থাপিত হয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপগুলোর একাধিক প্রতিষ্ঠান। যেখানে কাজ করে হাজার হাজার শ্রমিক- যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাধ্যমে বন্দরনগরীতে প্রবেশদ্বার সীতাকুণ্ড উপজেলা। এই মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যেতে সড়কের উভয় পাশে রয়েছে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান- যার মধ্যে রয়েছে বস্ত্রকল, ঢেউটিন, পাট, রড, সিমেন্ট, ইস্পাত, কনটেইনার ডিপো, গাড়ি সংযোজন, কাঁচসহ ভারী শিল্পের বহু কারখানা। এখানে আছে এলপি গ্যাসের একাধিক কারখানা। মহাসড়কের পশ্চিমে সাগর উপকূলে তাকালে চোখে পড়ে পুরোনো জাহাজের ফানেল বা চিমনি। এখানেই গড়ে উঠেছে দেশের একমাত্র জাহাজভাঙা শিল্প। দেশের গাড়ি সংযোজনকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাষ্ট্রিজ এই অঞ্চলে অবস্থিত।
সীতাকুণ্ডের একাধিক শিল্পকারখানার উদ্যোক্তারা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বন্দরের নিকটবর্তী, শ্রমিকের সহজলভ্যতা, উৎপাদিত পণ্যের দ্রুত পরিবহন, জমির পর্যাপ্ততা, পাহাড়, মনোরম প্রকৃতিসহ শিল্প স্থাপনের উপর্যুক্ত পরিবেশের কারণে এ উপজেলা বহু আগেই শিল্প উদ্যোক্ততাদের নজরে পড়ে। ফলে এখানে প্রতিবছরই নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। ২৭৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সীতাকুণ্ডে দুই শতাধিক শিল্পকারখানা রয়েছে। তার মধ্যে ভারী শিল্প ১৫০টি।
এলাকাবাসী জানায়, এখানে ১৯৬৫ সালে সর্বপ্রথম গড়ে উঠেছিল দেশের একমাত্র জাহাজ ভাঙা শিল্প। উপজেলার ফৌজদারহাটে ঝড়ে ভেসে আসা কুইন আল-পাইন নামের একটি জাহাজ ভাঙার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সময়ের সঙ্গে এ শিল্পের বিস্তার ঘটেছে। এখানে ১৫০টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এর মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে ৫০টির মত। এ শিল্প থেকে প্রতি বছর প্রায় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে সরকার। এ ছাড়া দেশের নির্মাণ শিল্পের অন্যতম সরঞ্জাম রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ লোহাসহ গুরুত্বপূর্ণ বহু সরঞ্জাম পাওয়া যায় এ শিল্প থেকে।
সীতাকুণ্ডের স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্যোক্তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দশকে সীতাকুণ্ডে নতুন করে যোগ হয়েছে আরও বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান- যার মধ্যে অন্যতম জিপিএইচ গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, বিএসআরএম গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, কেডিএস গ্রুপ, পিএইচপি গ্রুপ, বিএম গ্রুপ, কেএসআরএমসহ দেড় শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্প গ্রুপের ৫০টির এত প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে বারৈয়াঢালা, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে। এ ছাড়া মুরাদপুর সাগর উপকূলে নতুন সমুদ্রবন্দর স্থাপনের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা এখন দেশের অন্যতম প্রধান শিল্পাঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, ইস্পাত খাতের চারটি বৃহৎ কোম্পানির কারখানা রয়েছে সীতাকুণ্ডে। কোম্পানি চারটি হলো জিপিএইচ গ্রুপ, বিএসআরএম গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ ও কেএসআরএম গ্রুপ। এর বাইরে রয়েছে রড উৎপাদনের ৩৩টি সনাতন ও আধা স্বয়ংক্রিয় কারখানা। সব মিলিয়ে সীতাকুণ্ডের কারখানাগুলোর মোট রড উৎপাদনের সক্ষমতা প্রায় ৬০ লাখ টন। তবে কাঁচামাল আমদানি ও কোম্পানিগুলোর প্রাথমিক হিসাবে, গত বছর অন্তত ৩৩ লাখ টন রড উৎপাদন হয়েছে এসব কারখানায়- যা দেশের মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশের বেশি।
উপজেলার বাড়বকুণ্ড সাগর উপকূল ঘুরে দেখা গেছে, এখানে অন্তত ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে জেএমআই, ইউএনআই, বিএন গ্যাস কারখানাসহ পাঁচটি কারখানার পুরোদমে উৎপাদন শুরু করেছে। আরও কয়েকটি কারখানার নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। দেশের বাহির থেকে গ্যাস এনে প্রতিষ্ঠানগুলোর রিজার্ভারে সঞ্চিত রেখে তা থেকে গ্যাস বোতলজাত করে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়।
সোনাইছড়ি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও শিল্প উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় সীতাকুণ্ড অঞ্চলে শিল্পকারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তাদের পছন্দের এলাকা। এখানে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান যেমন রয়েছে তেমনই গড়ে উঠেছে ছোট ও মাঝারি অনেক প্রতিষ্ঠানও। আমরা এসব উদ্যোক্তাকে শিল্প স্থাপনে সহযোগিতা করছি। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বহু বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক যুগ্ন মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী এফসিএ সাংবাদিকদের বলেন, আমি নিজেও শিল্প উদ্যোক্তা। তাই শিল্পকে সব সময় উৎসাহিত করি। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে শিল্প প্রতিষ্ঠান সবগুলোকেই আমরা সহযোগিতা করে দেশের অর্থনীতিকে আরও মজবুত করতে চাই।