সাতক্ষীরা : শহরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি জমে চরম ভোগান্তিতে শতাধিক পরিবার -সংবাদ
আষাঢ় মাসে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আবারও থমকে গেছে সাতক্ষীরা শহরের স্বাভাবিক জনজীবন। বিশেষ করে শহরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে হাঁটুপানি জমে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক পরিবার। কোথাও কোথাও ড্রেনের ময়লা মিশে পানি আরও দুর্গন্ধময় হয়ে উঠেছে, এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, গত এক সপ্তাহ যাবত থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এই কয়েকদিনে সাতক্ষীরায় সর্বোচ্চ ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন এভাবে থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
নিচু এলাকায় এ সময়টায় জলাবদ্ধ হওয়া স্বাভাবিক, তবে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাসনের পথ না থাকায় সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। কাটিয়া, মুন্সিপাড়া, ইটাগাছা, গড়েরকান্দা, বাকাল বারুইপাড়া ও কুখরালী এলাকায় পানি জমে প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ওইসব এলাকার পানি জএত কুখরালীর একটি বিলে। সেই বিল থেকে পানি বের হওয়ার স্বাভাবিক পথ কয়েক বছর আগে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বর্ষাকালে ৪-৫ মাস ধরে হাঁটুপানি জমে থাকে।
ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দা হোসনে আরা বেগম বলেন, বৃষ্টির পানি হলেই উঠোন ডুবে যায়। ড্রেনের গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। বাচ্চাদের পায়ে চর্মরোগ হচ্ছে। মেয়র কাউন্সিলর আশ্বাস দেন কিছুই হয় না।
একই এলাকার রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ড্রেন নেই, আর যেটুকু আছে সেটাও পরিষ্কার হয় না। রাস্তায় এখন ড্রেনের নোংরা পানি বইছে।
ভুক্তভোগী তাহমিদ হোসেন বলেন, সরকার আসে যায়, কুখরালীর এই দুর্ভোগ কাটে না। মাত্র একটা ড্রেন বদলালেই সমস্যার অনেকটা সমাধান হতো। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই।
আরেকভুক্তভোগী কাজী রুবেল বলেন, পচা পানির গন্ধ ও সাপের ভয়ে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। গোসল, টয়লেট, খাবার পানি সবকিছুতেই ভোগান্তি। এটাকে আর সহ্য করা যাচ্ছে না।
এদিকে জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তাঘাটও নষ্ট হয়ে গেছে। চলাফেরায় ভোগান্তির পাশাপাশি বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। সুলতানপুর এলাকার চিকিৎসক মইনুল ইসলাম বলেন, বর্ষা এলেই চর্মরোগ ও ডায়রিয়ার রোগী বেড়ে যায়। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, ফলে তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অবিলম্বে ড্রেন সংস্কার ও পরিষ্কার জরুরি।
শুধু বসতঘরেই নয়, জলাবদ্ধতার প্রভাব পড়েছে দিনমজুর, রিকশাচালক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবিকায়ও। ভ্যানচালক জলিল বলেন, পানিতে রাস্তা ডুবে থাকায় যাত্রী ওঠে না, ইনকাম নেই। কীভাবে খাবো ভাবতে পারছি না।
ফুটপাত ব্যবসায়ী রাশেদা বলেন, বিক্রি নেই, দোকানে যেতেও কষ্ট হয়। দিনে আয় না হলে খাব কী? স্থানীয়দের দাবি, টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার শহরজুড়ে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা যেন এখন আর কোনো আকস্মিক দুর্যোগ নয়, বরং নিত্যদিনের বাস্তবতা। অল্প কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই শহর ডুবে যাচ্ছে, অথচ বছরের পর বছর ধরে পৌর কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো সমাধান দিতে পারেনি।
সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসক মাশরুবা ফেরদৌস বলেন, পৌরসভার শহর পুরনো। অনেক জায়গায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। বিশেষ করে নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা প্রতিনিয়ত সমস্যা তৈরি করছে, এটা আমরা জানি। এরই মধ্যে কিছু ওয়ার্ডে জরুরি পরিষ্কার অভিযান শুরু হয়েছে। স্থায়ী ড্রেনেজ প্রকল্পও প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শহরের সব সমস্যার সমাধান একসঙ্গে সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে আমরা এগোচ্ছি।
সাতক্ষীরা : শহরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি জমে চরম ভোগান্তিতে শতাধিক পরিবার -সংবাদ
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
আষাঢ় মাসে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আবারও থমকে গেছে সাতক্ষীরা শহরের স্বাভাবিক জনজীবন। বিশেষ করে শহরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে হাঁটুপানি জমে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক পরিবার। কোথাও কোথাও ড্রেনের ময়লা মিশে পানি আরও দুর্গন্ধময় হয়ে উঠেছে, এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, গত এক সপ্তাহ যাবত থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এই কয়েকদিনে সাতক্ষীরায় সর্বোচ্চ ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন এভাবে থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
নিচু এলাকায় এ সময়টায় জলাবদ্ধ হওয়া স্বাভাবিক, তবে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাসনের পথ না থাকায় সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। কাটিয়া, মুন্সিপাড়া, ইটাগাছা, গড়েরকান্দা, বাকাল বারুইপাড়া ও কুখরালী এলাকায় পানি জমে প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ওইসব এলাকার পানি জএত কুখরালীর একটি বিলে। সেই বিল থেকে পানি বের হওয়ার স্বাভাবিক পথ কয়েক বছর আগে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বর্ষাকালে ৪-৫ মাস ধরে হাঁটুপানি জমে থাকে।
ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দা হোসনে আরা বেগম বলেন, বৃষ্টির পানি হলেই উঠোন ডুবে যায়। ড্রেনের গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। বাচ্চাদের পায়ে চর্মরোগ হচ্ছে। মেয়র কাউন্সিলর আশ্বাস দেন কিছুই হয় না।
একই এলাকার রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ড্রেন নেই, আর যেটুকু আছে সেটাও পরিষ্কার হয় না। রাস্তায় এখন ড্রেনের নোংরা পানি বইছে।
ভুক্তভোগী তাহমিদ হোসেন বলেন, সরকার আসে যায়, কুখরালীর এই দুর্ভোগ কাটে না। মাত্র একটা ড্রেন বদলালেই সমস্যার অনেকটা সমাধান হতো। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই।
আরেকভুক্তভোগী কাজী রুবেল বলেন, পচা পানির গন্ধ ও সাপের ভয়ে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। গোসল, টয়লেট, খাবার পানি সবকিছুতেই ভোগান্তি। এটাকে আর সহ্য করা যাচ্ছে না।
এদিকে জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তাঘাটও নষ্ট হয়ে গেছে। চলাফেরায় ভোগান্তির পাশাপাশি বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। সুলতানপুর এলাকার চিকিৎসক মইনুল ইসলাম বলেন, বর্ষা এলেই চর্মরোগ ও ডায়রিয়ার রোগী বেড়ে যায়। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, ফলে তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অবিলম্বে ড্রেন সংস্কার ও পরিষ্কার জরুরি।
শুধু বসতঘরেই নয়, জলাবদ্ধতার প্রভাব পড়েছে দিনমজুর, রিকশাচালক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবিকায়ও। ভ্যানচালক জলিল বলেন, পানিতে রাস্তা ডুবে থাকায় যাত্রী ওঠে না, ইনকাম নেই। কীভাবে খাবো ভাবতে পারছি না।
ফুটপাত ব্যবসায়ী রাশেদা বলেন, বিক্রি নেই, দোকানে যেতেও কষ্ট হয়। দিনে আয় না হলে খাব কী? স্থানীয়দের দাবি, টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার শহরজুড়ে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা যেন এখন আর কোনো আকস্মিক দুর্যোগ নয়, বরং নিত্যদিনের বাস্তবতা। অল্প কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই শহর ডুবে যাচ্ছে, অথচ বছরের পর বছর ধরে পৌর কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো সমাধান দিতে পারেনি।
সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসক মাশরুবা ফেরদৌস বলেন, পৌরসভার শহর পুরনো। অনেক জায়গায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। বিশেষ করে নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা প্রতিনিয়ত সমস্যা তৈরি করছে, এটা আমরা জানি। এরই মধ্যে কিছু ওয়ার্ডে জরুরি পরিষ্কার অভিযান শুরু হয়েছে। স্থায়ী ড্রেনেজ প্রকল্পও প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শহরের সব সমস্যার সমাধান একসঙ্গে সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে আমরা এগোচ্ছি।