তিতাস-মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্ববৃহৎ উপজেলা নবীনগর। ধানসহ রবি শস্যের জন্য বিখ্যাত এই জনপদ। বর্ষাকালে অপেক্ষাকৃত অনেক নিনু জমি আবাদে আগ্রহ থাকে না অনেক কৃষকের। স্যাঁতসেঁতে এবং পরিত্যক্ত জমিতে আবাদের উপযোগী ফসল হচ্ছে কচু।
স্থানীয় কৃষকদের অনেকেই বিক্ষিপ্তভাবে ছোট পরিসরে নিজেদের পারিবারিক সবজির প্রয়োজনে লতি কচু আবাদ করতেন। ২০২১ সাল থেকে কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প এবং ফ্ল্যাড রিকনস্ট্রাকশন ইমারজেন্সি এসিসট্যান্স প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে উন্নত জাতের কচু আবাদ করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রদর্শনীভুক্ত কৃষকদের দেয়া হয় উন্নত জাতের বারি পানি কচু-১ (লতিরাজ), বারি পানি কচু-২ সহ স্থানীয় উন্নত জাতের চারা, সার, জৈবসারসহ অন্যান্য সহযোগিতা। নিয়মিত মাঠ দিবস এবং প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এই পর্যন্ত নবীনগর উপজেলায় শতাধিক কৃষক কচু আবাদের জন্য উপকরণ সহযোগিতা এবং পাচ শতাধিক কৃষক প্রশিক্ষণ পেয়েছে। নবীনগর উপজেলায় চলতি মৌসুমে কচু আবাদ হচ্ছে ৪০ হেক্টর জমিতেÑ যা শতভাগ বাণিজ্যিক আকারে আবাদ হচ্ছে। উপজেলার বর্তমানে ৪০ হেক্টরের বেশি জমিতে কচু ও লতির চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে ১৫ থেকে ২৫ টন পর্যন্ত লতি উৎপাদিত হয়, যা সময়ভেদে টন প্রতি ৩০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। কাইতলা দক্ষিন ইউনিয়নের গোয়ালি গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে লতিরাজ কচু আবাদ করছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার, প্রশিক্ষণ পেয়েছি। প্রতি সপ্তাহে বাজারে লতি বিক্রি করছি দশ হাজার টাকার।
লতি কচু লাভজনক ফসল। অনেকেই চারা নিচ্ছে। ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের জাফরপুর গ্রামের কৃষক সেলিনা বেগম জানান, আমি আর আমার স্বামী মিলে এই বছর লতিরাজ কচু আবাদ করছি। আবাদের দুই মাস পর থেকে প্রতি সপ্তাহে লতি কর্তন করা যায়। এখন পর্যন্ত ৩ মাসে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা লতি বিক্রি করেছি। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে আরও পঞ্চাশ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের কৃষক সোহাগ খান, খোরশেদ মিয়া এবং বিউটি আক্তার ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় নারিকেলি কচু আবাদ করেছেন। তারা জানান, নারিকেলি কচু এটি এলাকার স্থানীয় জাত। এটি কাঠ হিসেবে বিক্রি হয়। এক বিঘা থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কচু কাঠ হিসেবে বিক্রি হয় যা গড়ে পাইকারি মূল্য হিসেবে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্তবিক্রি হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ইব্রাহিমপুর, বিটঘর, লাউরফতেহপুর, কাইতলা, পৌরসভাসহ সব গ্রামের মাঠে কচুর চাষ হয়েছে। ফসলটি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়াতে আগ্রহ বাড়ছে সাধারণ কৃষকদের মাঝে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবিঘা জমিতে এ বছর শ্রেডুভেদে ৮০ থেকে ৮৫ মণ পর্যন্ত কচুর ফলন হয়েছে। এক বিঘা জমিতে আবাদে গড়ে খরচ হয় ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা, খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, নবীনগর উপজেলার বর্ষার মৌসুমে স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কচু আবাদ এখন বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে। সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সহযোগিতা ও করা হচ্ছে।
কচু একটি অর্থকরী সবজি। যেহেতু এটি উত্তোলন ক্রমান্বয়ে করা হয় ফলে বাজার দর নিয়ে কৃষক নিশ্চিন্ত থাকে। তাছাড়া সঠিক পরিচর্যা করলে চার থেকে পাচ মাস পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে। এই বছর প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে আবাদ হচ্ছে, প্রতি বছরই আবাদ বাড়ছে।
আমরা কৃষকদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি। কচু চাষ বর্তমানে নবীনগরের কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক ও টেকসই কৃষি কার্যক্রম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উন্নত জাতের কচু চাষ, সঠিক পরিচর্যা ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কৃষকরা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধন করতে পারছেন
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
তিতাস-মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্ববৃহৎ উপজেলা নবীনগর। ধানসহ রবি শস্যের জন্য বিখ্যাত এই জনপদ। বর্ষাকালে অপেক্ষাকৃত অনেক নিনু জমি আবাদে আগ্রহ থাকে না অনেক কৃষকের। স্যাঁতসেঁতে এবং পরিত্যক্ত জমিতে আবাদের উপযোগী ফসল হচ্ছে কচু।
স্থানীয় কৃষকদের অনেকেই বিক্ষিপ্তভাবে ছোট পরিসরে নিজেদের পারিবারিক সবজির প্রয়োজনে লতি কচু আবাদ করতেন। ২০২১ সাল থেকে কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প এবং ফ্ল্যাড রিকনস্ট্রাকশন ইমারজেন্সি এসিসট্যান্স প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে উন্নত জাতের কচু আবাদ করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রদর্শনীভুক্ত কৃষকদের দেয়া হয় উন্নত জাতের বারি পানি কচু-১ (লতিরাজ), বারি পানি কচু-২ সহ স্থানীয় উন্নত জাতের চারা, সার, জৈবসারসহ অন্যান্য সহযোগিতা। নিয়মিত মাঠ দিবস এবং প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এই পর্যন্ত নবীনগর উপজেলায় শতাধিক কৃষক কচু আবাদের জন্য উপকরণ সহযোগিতা এবং পাচ শতাধিক কৃষক প্রশিক্ষণ পেয়েছে। নবীনগর উপজেলায় চলতি মৌসুমে কচু আবাদ হচ্ছে ৪০ হেক্টর জমিতেÑ যা শতভাগ বাণিজ্যিক আকারে আবাদ হচ্ছে। উপজেলার বর্তমানে ৪০ হেক্টরের বেশি জমিতে কচু ও লতির চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে ১৫ থেকে ২৫ টন পর্যন্ত লতি উৎপাদিত হয়, যা সময়ভেদে টন প্রতি ৩০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। কাইতলা দক্ষিন ইউনিয়নের গোয়ালি গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে লতিরাজ কচু আবাদ করছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার, প্রশিক্ষণ পেয়েছি। প্রতি সপ্তাহে বাজারে লতি বিক্রি করছি দশ হাজার টাকার।
লতি কচু লাভজনক ফসল। অনেকেই চারা নিচ্ছে। ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের জাফরপুর গ্রামের কৃষক সেলিনা বেগম জানান, আমি আর আমার স্বামী মিলে এই বছর লতিরাজ কচু আবাদ করছি। আবাদের দুই মাস পর থেকে প্রতি সপ্তাহে লতি কর্তন করা যায়। এখন পর্যন্ত ৩ মাসে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা লতি বিক্রি করেছি। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে আরও পঞ্চাশ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের কৃষক সোহাগ খান, খোরশেদ মিয়া এবং বিউটি আক্তার ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় নারিকেলি কচু আবাদ করেছেন। তারা জানান, নারিকেলি কচু এটি এলাকার স্থানীয় জাত। এটি কাঠ হিসেবে বিক্রি হয়। এক বিঘা থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কচু কাঠ হিসেবে বিক্রি হয় যা গড়ে পাইকারি মূল্য হিসেবে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্তবিক্রি হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ইব্রাহিমপুর, বিটঘর, লাউরফতেহপুর, কাইতলা, পৌরসভাসহ সব গ্রামের মাঠে কচুর চাষ হয়েছে। ফসলটি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়াতে আগ্রহ বাড়ছে সাধারণ কৃষকদের মাঝে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবিঘা জমিতে এ বছর শ্রেডুভেদে ৮০ থেকে ৮৫ মণ পর্যন্ত কচুর ফলন হয়েছে। এক বিঘা জমিতে আবাদে গড়ে খরচ হয় ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা, খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, নবীনগর উপজেলার বর্ষার মৌসুমে স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কচু আবাদ এখন বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে। সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সহযোগিতা ও করা হচ্ছে।
কচু একটি অর্থকরী সবজি। যেহেতু এটি উত্তোলন ক্রমান্বয়ে করা হয় ফলে বাজার দর নিয়ে কৃষক নিশ্চিন্ত থাকে। তাছাড়া সঠিক পরিচর্যা করলে চার থেকে পাচ মাস পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে। এই বছর প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে আবাদ হচ্ছে, প্রতি বছরই আবাদ বাড়ছে।
আমরা কৃষকদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি। কচু চাষ বর্তমানে নবীনগরের কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক ও টেকসই কৃষি কার্যক্রম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উন্নত জাতের কচু চাষ, সঠিক পরিচর্যা ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কৃষকরা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধন করতে পারছেন