‘নীলকুঠি’ শব্দটি ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে নীলচাষ এবং নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের সাথে সম্পর্কিত। এটি ব্রিটিশ আমলে বাংলার কৃষকদের উপর নীলচাষের চাপিয়ে দেওয়া এবং তাদের উপর অত্যাচারের একটি নিদর্শন ।
সময়টা উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি। বাংলা জুড়ে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ চাষিরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায় মেদিনীপুরের উত্তরাঞ্চল, বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পাবনা ও খুলনায় একের পর এক নীলকুঠি ও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছারি আগুনে পুড়েছে।
তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের নিকটবর্তী চৌগাছা গ্রামে সর্বপ্রথম বিদ্রোহ দেখা দেয়। বিদ্রোহ দ্রুত বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম মুর্শিদাবাদ পাবনা ও খুলনায় ছড়িয়ে পড়ে। কিছু নীলকরের বিচার করা হয় এবং ফাঁসি দেয়া হয়। কৃষকরা বহু নীলকুঠি ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। নীলকরদের মাল বহনের যোগাযোগের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। সশস্ত্র কৃষকরা সরকারি অফিস, থানা, স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছারি প্রভৃতির ওপর আক্রমণ চালায়। এই বিদ্রোহে কৃষকরা ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে যোগ দিয়েছিল। নীল বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়। ব্রিটিশ সরকারের ও কিছু জমিদারের সমর্থন নিয়ে পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর দিয়ে কৃষকের উপর অত্যাচার করা হয়। যদিও এই বিদ্রোহ ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং সমগ্র বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে।
নীলচাষ এবং কৃষকদের অত্যাচারের ইতিহাস রয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব জুড়ে। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার পানানগর গ্রামে চাপা পড়ে রয়েছে এমনই এক ইতিহাস।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার পানানগর গ্রামে ১৮৯৪ সালে নির্মাণ করা হয় ঐতিহাসিক নীলকুঠি। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একটি বাড়ি ও নীলকুঠি তৈরি করলেও এখন শুধু এক টাওয়ার বিশিষ্ট ঐতিহাসিক স্থাপত্যের একটি নিদর্শন আছে। যা আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটি মজবুত ইটের গাঁথুনি ও দৃষ্টিনন্দন করেই নির্মিত হয়েছিল।
জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে দুর্গাপুর উপজেলার পানানগর গ্রামে একজন ইংরেজ এসেছিলেন। তিনি সোনাকান্দোর বিলে পাখি শিকার করতেন। পাখি শিকারের সময় সেই সমতলভূমির জমিগুলো তার পছন্দ হয়েছিল। তখন পানানগর গ্রামে দুজন জমিদার ছিলেন। একজন জগিন্দ্রনাথ মৈত্র, অন্যজন গ্যানেদা গোবিন্দ্র। সেই ইংরেজ দুই জমিদারের কাছ থেকে পছন্দের ২৭ বিঘা জমি নিজের নামে পত্তন নিয়েছিলেন। আর সেখানে দক্ষিণ দুয়ারি বড় একটি বাড়ি ও নীলকুঠি তৈরি করেছিলেন।
সরেজমিনে পানানগর গ্রামের ঐতিহাসিক নীলকুঠির স্থানে গিয়ে দেখা যায়, অবশিষ্ট দাঁড়িয়ে রয়েছে শুধু একটি ইটের চিমনি । ইটের চিমনির আশপাশের সবকিছু দখল হয়ে গেছে। টাওয়ারের পাশে টিনের খুপড়ি ঘর তুলে বসাবস করেন আজগর ম-ল নামের একটি পরিবার। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, এখন শুধু চিমনিটাই অবশিষ্ট আছে। আগে রাজার আমলের অনেক ইট পাথর ছিল। এখন আর কিছু নাই। মানুষে সব নিয়ে গেছে।
পানানগর গ্রামের বাসিন্দা আলামিন বলেন, আমরা শুনেছি নীলকুঠির সাথে আরো অনেক স্থাপনা ছিল। সেগুলো বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে সুধু দাড়িয়ে আছে একটি ইটের চিমনী। তাও আবার সংস্কারের অভাবে ইটগুলো খসে পড়ে যাচ্ছে। এটি সংস্কারের প্রয়োজন।
একই এলাকার সোহরাফ মোল্লা জানান, তারা যখন ছোট তখনো এ নীলকুঠি বড় বাড়ির কিছু চিহ্ন ছিল। বর্তমানে সব হারিয়ে শুধু টাওয়ারটা অবশিষ্ট আছে। এ ছাড়া আশপাশের সব জায়গা দখল হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা আরো জানান, নীলকুঠির নাম সুনে অনেক এলাকা থেকে লোকজন আসে এটি দেখতে। এসে দেখেন কিছুই নেই শুধু দাঁড়িয়ে আছে একটি ইটের টাওয়ার। পরে তা দেখে ঘুরে যান। সেটিও ভেঙেচুরে যাচ্ছে। তারা বলছেন এটি সংস্কার করা দরকার। এটি সংস্কার করা হলে অনেক পর্যটক এটি দেখার জন্য আসবে। এটি একটি প্রাচীন স্থাপনা এটিকে ধরে রাখা দরকার।
এবিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন বলেন, এই উপজেলার ঐতিহাসিক নীলকুঠি সম্পর্কে আমার তেমন জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
‘নীলকুঠি’ শব্দটি ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে নীলচাষ এবং নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের সাথে সম্পর্কিত। এটি ব্রিটিশ আমলে বাংলার কৃষকদের উপর নীলচাষের চাপিয়ে দেওয়া এবং তাদের উপর অত্যাচারের একটি নিদর্শন ।
সময়টা উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি। বাংলা জুড়ে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ চাষিরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায় মেদিনীপুরের উত্তরাঞ্চল, বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পাবনা ও খুলনায় একের পর এক নীলকুঠি ও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছারি আগুনে পুড়েছে।
তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের নিকটবর্তী চৌগাছা গ্রামে সর্বপ্রথম বিদ্রোহ দেখা দেয়। বিদ্রোহ দ্রুত বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম মুর্শিদাবাদ পাবনা ও খুলনায় ছড়িয়ে পড়ে। কিছু নীলকরের বিচার করা হয় এবং ফাঁসি দেয়া হয়। কৃষকরা বহু নীলকুঠি ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। নীলকরদের মাল বহনের যোগাযোগের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। সশস্ত্র কৃষকরা সরকারি অফিস, থানা, স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছারি প্রভৃতির ওপর আক্রমণ চালায়। এই বিদ্রোহে কৃষকরা ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে যোগ দিয়েছিল। নীল বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়। ব্রিটিশ সরকারের ও কিছু জমিদারের সমর্থন নিয়ে পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর দিয়ে কৃষকের উপর অত্যাচার করা হয়। যদিও এই বিদ্রোহ ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং সমগ্র বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে।
নীলচাষ এবং কৃষকদের অত্যাচারের ইতিহাস রয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব জুড়ে। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার পানানগর গ্রামে চাপা পড়ে রয়েছে এমনই এক ইতিহাস।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার পানানগর গ্রামে ১৮৯৪ সালে নির্মাণ করা হয় ঐতিহাসিক নীলকুঠি। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একটি বাড়ি ও নীলকুঠি তৈরি করলেও এখন শুধু এক টাওয়ার বিশিষ্ট ঐতিহাসিক স্থাপত্যের একটি নিদর্শন আছে। যা আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটি মজবুত ইটের গাঁথুনি ও দৃষ্টিনন্দন করেই নির্মিত হয়েছিল।
জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে দুর্গাপুর উপজেলার পানানগর গ্রামে একজন ইংরেজ এসেছিলেন। তিনি সোনাকান্দোর বিলে পাখি শিকার করতেন। পাখি শিকারের সময় সেই সমতলভূমির জমিগুলো তার পছন্দ হয়েছিল। তখন পানানগর গ্রামে দুজন জমিদার ছিলেন। একজন জগিন্দ্রনাথ মৈত্র, অন্যজন গ্যানেদা গোবিন্দ্র। সেই ইংরেজ দুই জমিদারের কাছ থেকে পছন্দের ২৭ বিঘা জমি নিজের নামে পত্তন নিয়েছিলেন। আর সেখানে দক্ষিণ দুয়ারি বড় একটি বাড়ি ও নীলকুঠি তৈরি করেছিলেন।
সরেজমিনে পানানগর গ্রামের ঐতিহাসিক নীলকুঠির স্থানে গিয়ে দেখা যায়, অবশিষ্ট দাঁড়িয়ে রয়েছে শুধু একটি ইটের চিমনি । ইটের চিমনির আশপাশের সবকিছু দখল হয়ে গেছে। টাওয়ারের পাশে টিনের খুপড়ি ঘর তুলে বসাবস করেন আজগর ম-ল নামের একটি পরিবার। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, এখন শুধু চিমনিটাই অবশিষ্ট আছে। আগে রাজার আমলের অনেক ইট পাথর ছিল। এখন আর কিছু নাই। মানুষে সব নিয়ে গেছে।
পানানগর গ্রামের বাসিন্দা আলামিন বলেন, আমরা শুনেছি নীলকুঠির সাথে আরো অনেক স্থাপনা ছিল। সেগুলো বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে সুধু দাড়িয়ে আছে একটি ইটের চিমনী। তাও আবার সংস্কারের অভাবে ইটগুলো খসে পড়ে যাচ্ছে। এটি সংস্কারের প্রয়োজন।
একই এলাকার সোহরাফ মোল্লা জানান, তারা যখন ছোট তখনো এ নীলকুঠি বড় বাড়ির কিছু চিহ্ন ছিল। বর্তমানে সব হারিয়ে শুধু টাওয়ারটা অবশিষ্ট আছে। এ ছাড়া আশপাশের সব জায়গা দখল হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা আরো জানান, নীলকুঠির নাম সুনে অনেক এলাকা থেকে লোকজন আসে এটি দেখতে। এসে দেখেন কিছুই নেই শুধু দাঁড়িয়ে আছে একটি ইটের টাওয়ার। পরে তা দেখে ঘুরে যান। সেটিও ভেঙেচুরে যাচ্ছে। তারা বলছেন এটি সংস্কার করা দরকার। এটি সংস্কার করা হলে অনেক পর্যটক এটি দেখার জন্য আসবে। এটি একটি প্রাচীন স্থাপনা এটিকে ধরে রাখা দরকার।
এবিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন বলেন, এই উপজেলার ঐতিহাসিক নীলকুঠি সম্পর্কে আমার তেমন জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।