নীলফামারী : বিদেশি জাতের আম বাগানে রুমা -সংবাদ
নীলফামারী সদরের কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়া গ্রামের মাটিতে বিদেশী জাতের আম চাষ করে এখন রঙিন স্বপ্ন বুনছেন এক নারী। চারপাশে তাকালেই চোখে পড়ে ঝলমলে হলুদ, টকটকে লালচে কিংবা হালকা সবুজ রঙের বাহারি আম। এক এক করে গোনা যায় কিওতো, মিয়াজাকি, ব্যানানা, ব্যাঙ্গানপল্লি, থাই আমসহ ১২ জাতের বিদেশি আম। এই ব্যতিক্রমী ও আকর্ষণীয় দৃশ্য তৈরি করেছেন গ্রামের সাহসী নারী রুমা অধিকারী।
তিন বছর আগেও রুমার জীবনে কৃষি ছিল না কোনো মূলধারার ভাবনায়। গৃহস্থালি আর সংসারের কাজ সামলে দিন কেটে যেত। তবে নতুন কিছু করার আগ্রহে তিনি নেমে পড়েন চাষাবাদে। শখের বসে নিজের এক একর জমিতে গড়ে তোলেন মিশ্র জাতের আমের বাগান। প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ করেন দুই লাখ টাকা। সেই সময়ে নিজেও জানতেন না এই ছোট্ট উদ্যোগ একদিন হয়ে উঠবে তার জীবনের বড় স্বপ্ন। প্রথমবছর গাছ বড় হলেও ফলন হয়নি। তবে দ্বিতীয় বছর থেকেই দেখা মেলে সম্ভাবনার আলো। গাছে আসে পর্যাপ্ত ফলন, যা বিক্রি করে উঠে আসে বিনিয়োগকৃত টাকা। এবার তৃতীয় বছরে রুমার লক্ষ্য লাখ টাকার বেশি আয় করা। শুধু তাই নয়, তার এই বাগান এখন কর্মসংস্থানেরও একটি জায়গা। স্থানীয় নারীদের জন্য সৃষ্টি হয়েছে কাজের সুযোগ।
রুমা বলেন, আমের গাছ লাগানোর পর অনেকেই বলেছিল বিদেশি জাত এখানে হবে না। ফল ধরবে না, গাছ মারা যাবে। ভয় পেয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু হাল ছাড়িনি। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেয়েছি, নিজের পরিশ্রমকে বিশ্বাস করেছি। আজ সেই পরিশ্রমই আমার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই বাগান এখন শুধু আমার জীবিকার মাধ্যম নয়, এলাকার অন্য নারীদেরও আশ্রয়। দিনে দিনে ওরাও স্বপ্ন দেখতে শিখেছে। বাগানে গেলে দেখা যায়, প্রতিটি আম আলাদাভাবে মোড়ানো হয়েছে স্বচ্ছ পলিব্যাগে। এতে করে ফলের রং ও গুণগত মান অক্ষুণ্য থাকে। সেই সঙ্গে আম থাকে কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই থেকে সুরক্ষিত। এসব কাজেই ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কয়েকজন নারী শ্রমিক।
উত্তর বালাপাড়ার এক নারী শ্রমিক বললেন, আগে শহরে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতাম। কাজ পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতো। এখন রুমা দিদির বাগানে কাজ করে আয় করছি, সংসারে শান্তিও এসেছে।
এই উদ্যোগে নিয়মিত সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, রুমার মতো নারী উদ্যোক্তা আমাদের কৃষির ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাকে আমরা প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। বাগানটিতে নিয়মিত পরিদর্শন করি, প্রয়োজনমতো পরামর্শও দিচ্ছি।
নীলফামারী জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা শুধু সামাজিক পরিবর্তন নয়, এটি অর্থনৈতিক পরিবর্তনেরও পূর্বাভাস। রুমার বাগান জেলাপর্যায়ে নারী নেতৃত্বে কৃষির এক উজ্জ্বল উদাহরণ হতে পারে।
বর্তমানে রুমার বাগানে যে আম উৎপাদিত হচ্ছে, সেগুলোর চাহিদা স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে রাজধানীতেও ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই অগ্রিম অর্ডার করছেন বিদেশি আম কিনতে। এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে এক নতুন ধারা তৈরি হচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু ও মাটি উপযোগী করে বিদেশি জাতের ফলের চাষে যে সফলতা রুমা পেয়েছেন, তা আরও বিস্তৃত আকারে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। প্রয়োজন শুধু সঠিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তি সহায়তা। নিজের পরিশ্রম ও সাহসে কৃষিতে স্বাবলম্বী হওয়া রুমা অধিকারী এখন অনেক নারীর জন্য পথপ্রদর্শক। তিনি প্রমাণ করেছেন, নারী চাইলেই কৃষিকে জীবিকার ভিত্তি এবং স্বপ্নপূরণের মাধ্যম করে তুলতে পারেন। রুমার গল্প এখন শুধু একটি বাগানের নয়, বরং নারীর এগিয়ে যাওয়ার গল্প।
নীলফামারী : বিদেশি জাতের আম বাগানে রুমা -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
নীলফামারী সদরের কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়া গ্রামের মাটিতে বিদেশী জাতের আম চাষ করে এখন রঙিন স্বপ্ন বুনছেন এক নারী। চারপাশে তাকালেই চোখে পড়ে ঝলমলে হলুদ, টকটকে লালচে কিংবা হালকা সবুজ রঙের বাহারি আম। এক এক করে গোনা যায় কিওতো, মিয়াজাকি, ব্যানানা, ব্যাঙ্গানপল্লি, থাই আমসহ ১২ জাতের বিদেশি আম। এই ব্যতিক্রমী ও আকর্ষণীয় দৃশ্য তৈরি করেছেন গ্রামের সাহসী নারী রুমা অধিকারী।
তিন বছর আগেও রুমার জীবনে কৃষি ছিল না কোনো মূলধারার ভাবনায়। গৃহস্থালি আর সংসারের কাজ সামলে দিন কেটে যেত। তবে নতুন কিছু করার আগ্রহে তিনি নেমে পড়েন চাষাবাদে। শখের বসে নিজের এক একর জমিতে গড়ে তোলেন মিশ্র জাতের আমের বাগান। প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ করেন দুই লাখ টাকা। সেই সময়ে নিজেও জানতেন না এই ছোট্ট উদ্যোগ একদিন হয়ে উঠবে তার জীবনের বড় স্বপ্ন। প্রথমবছর গাছ বড় হলেও ফলন হয়নি। তবে দ্বিতীয় বছর থেকেই দেখা মেলে সম্ভাবনার আলো। গাছে আসে পর্যাপ্ত ফলন, যা বিক্রি করে উঠে আসে বিনিয়োগকৃত টাকা। এবার তৃতীয় বছরে রুমার লক্ষ্য লাখ টাকার বেশি আয় করা। শুধু তাই নয়, তার এই বাগান এখন কর্মসংস্থানেরও একটি জায়গা। স্থানীয় নারীদের জন্য সৃষ্টি হয়েছে কাজের সুযোগ।
রুমা বলেন, আমের গাছ লাগানোর পর অনেকেই বলেছিল বিদেশি জাত এখানে হবে না। ফল ধরবে না, গাছ মারা যাবে। ভয় পেয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু হাল ছাড়িনি। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেয়েছি, নিজের পরিশ্রমকে বিশ্বাস করেছি। আজ সেই পরিশ্রমই আমার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই বাগান এখন শুধু আমার জীবিকার মাধ্যম নয়, এলাকার অন্য নারীদেরও আশ্রয়। দিনে দিনে ওরাও স্বপ্ন দেখতে শিখেছে। বাগানে গেলে দেখা যায়, প্রতিটি আম আলাদাভাবে মোড়ানো হয়েছে স্বচ্ছ পলিব্যাগে। এতে করে ফলের রং ও গুণগত মান অক্ষুণ্য থাকে। সেই সঙ্গে আম থাকে কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই থেকে সুরক্ষিত। এসব কাজেই ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কয়েকজন নারী শ্রমিক।
উত্তর বালাপাড়ার এক নারী শ্রমিক বললেন, আগে শহরে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতাম। কাজ পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতো। এখন রুমা দিদির বাগানে কাজ করে আয় করছি, সংসারে শান্তিও এসেছে।
এই উদ্যোগে নিয়মিত সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, রুমার মতো নারী উদ্যোক্তা আমাদের কৃষির ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাকে আমরা প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। বাগানটিতে নিয়মিত পরিদর্শন করি, প্রয়োজনমতো পরামর্শও দিচ্ছি।
নীলফামারী জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা শুধু সামাজিক পরিবর্তন নয়, এটি অর্থনৈতিক পরিবর্তনেরও পূর্বাভাস। রুমার বাগান জেলাপর্যায়ে নারী নেতৃত্বে কৃষির এক উজ্জ্বল উদাহরণ হতে পারে।
বর্তমানে রুমার বাগানে যে আম উৎপাদিত হচ্ছে, সেগুলোর চাহিদা স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে রাজধানীতেও ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই অগ্রিম অর্ডার করছেন বিদেশি আম কিনতে। এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে এক নতুন ধারা তৈরি হচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু ও মাটি উপযোগী করে বিদেশি জাতের ফলের চাষে যে সফলতা রুমা পেয়েছেন, তা আরও বিস্তৃত আকারে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। প্রয়োজন শুধু সঠিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তি সহায়তা। নিজের পরিশ্রম ও সাহসে কৃষিতে স্বাবলম্বী হওয়া রুমা অধিকারী এখন অনেক নারীর জন্য পথপ্রদর্শক। তিনি প্রমাণ করেছেন, নারী চাইলেই কৃষিকে জীবিকার ভিত্তি এবং স্বপ্নপূরণের মাধ্যম করে তুলতে পারেন। রুমার গল্প এখন শুধু একটি বাগানের নয়, বরং নারীর এগিয়ে যাওয়ার গল্প।