গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার দিঘলকান্দি চরের আব্দুল খালেক প্রামানিক। এলাকাতেই দৈনিক শ্রমিক হিসেবে ৬ সদস্যের সংসারে ব্যয় পরিচালনা করেন। তবে সারাবছর এলাকাতে কাজ-কর্ম না থাকায় মাঝে মধ্যে সাময়িকভাবে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন।
তিনি শুধু একা না, একই গ্রামের চান্দু মোল্লা, নুর ইসলাম, আব্দুল আজিজ, জামাত আলীসহ অনেকের আয়ের পথ একই। তবে, বর্তমান স্থানীয়ভাবে কৃষি কাজের সুযোগ না থাকায় চরম দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন আব্দুল খালেক প্রামাণিকের হাজারো মানুষ। এই সময়ে অন্য জেলাতেও কৃষি শ্রমিকের কোন কাজ না থাকায় এলাকাও ছাড়তে পারছেন না। এ কারণে পুরো একমাস ধরে তার কোনো কাজ না থাকায় আয়ের পথ পুরোপুরিভাবে বন্ধ।
এখন ধারদেনা ও সুদের ওপর টাকা নিয়ে কোনমতে সংসারের চালাচ্ছেন। বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, একজন মানুষের যদি মাসে গড়ে ৩ হাজার ৮২২ টাকার নিচে আয় করেন তাহলে তিনি দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাবেন। বাংলাদশের প্রেক্ষাপটে ৪ থেকে ৫ সদস্যের পরিবারে আয় করে থাকেন একজন। মাথাপিছু আয় ধরা হয় পরিবারের মোট সদস্যের ওপরভিত্তি করে।
আজ থেকে আট বছর আগেও দেশের শীর্ষ ১০ দরিদ্রপ্রবণ জেলাগুলোর মধ্যে রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও গাইবান্ধার নাম ছিল। কিন্তু কৃষি চাষাবাদে উন্নতি, নদীভাঙনে প্রতিরোধ, মঙ্গা মোকাবিলায় সামাজিক পদক্ষেপ ও সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের কারণে শীর্ষ ১০ দরিদ্র জেলার তালিকার বৃত্ত থেকে বের হয়েছে এসব জেলা। সেরকারি সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী রংপুর বিভাগের ৪৬০টি চরের প্রায় ২৪ লাখ মানুষ কৃষিশ্রম বিক্রি করে প্রতিদিনের জীবিকার ব্যয়ভার বহন করে থাকে। তবে কোন দিন যদি এই শ্রম দিতে না পারেন তাহলে অন্যের কাছে ধারদেনা করে চলতে হয়।
তবে এই অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হযে পড়েছে বলে জানান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এর নির্বাহী প্রধান, উন্নয়ন গবেষক এম.আবদুস্্ সালাম বলেন, উত্তরাঞ্চলে মানুষজনের আয়-উপার্জনের অন্যতম অবলম্বন কৃষি কাজ।
শতকরা ৭০ শতাংশ শ্রমিক কৃষি শ্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে।
কিন্তু সারাবছর কৃষি যোগান দিতে পারে না। এজন্য তিনি বিকল্প কাজের পথ সৃষ্টি করে দেয়া প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে স্থায়ী কর্মসংস্থারের পথ বের করার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্রর একটি তথ্য অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মানুষ নদী ও চরাঞ্চলের জীবনজীবিকা পুরোপুরিভাবে কৃষি, গবাদি পশুপ্রাণী ও মৎস্যনির্ভর। এ ছাড়া ৩০ শতাংশ মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাময়িক গমন করে আয় রোজগার।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া গ্রামের পরিমল পাল জানান, চরাঞ্চলে শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি, কিন্তু বেশিরভাগ সময় কাজ না থাকায় অর্থের অভাবে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
চন্ডিপুর ইউনিয়নের আব্দুর রউফ সরকার জানান, চরের ব্যাপক কৃষি চাষাবাদ হচ্ছে, কিন্তু শ্রমিক সমস্যায় খুব বেশি লাভ হচ্ছে না।
রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার পাওটানা গ্রামের তাহাজুল ইসলাম বলেন, কৃষি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করি। স্থানীয় কৃষি শ্রমিক দিয়েই তিনি জমি চাষাবাদ করেন, কিন্তু এখন তো শ্রমিকের প্রয়োজন নেই।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম উত্তরাঞ্চলে ভারি শিল্পকারখানা স্থাপনের বিকল্প নেই। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ বলেন, তিস্তা রক্ষা করা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আমাদের দাবি কোনো দলীয় ব্যানারে এটি সর্বজনের ব্যানারে। নদী রক্ষা হলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে। বিশিষ্ট সমাজ সেবক ক্ষতিগ্রস্ত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া উত্তরবঙ্গের কৃষিজীবী মানুষজনের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটবে না।
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক বলেন, তিস্তা ও উত্তরের জনপদের মানুষজনের ভারি শিল্প কারখানা স্থাপন না করা হলে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে না।
পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত জানান, কৃষির জন্য প্রয়োজন নায্য পানি। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ প্রদানের জন্য উজানের দেশ এর জন্য দায়ী। এজন্য আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পানির নায্য হিস্যা আদায়ে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন হয়েছে কৃষিতে। আর এই টেকসই উন্নয়ন এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও বেকার মানুষজনের কর্মসংস্থান।
শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার দিঘলকান্দি চরের আব্দুল খালেক প্রামানিক। এলাকাতেই দৈনিক শ্রমিক হিসেবে ৬ সদস্যের সংসারে ব্যয় পরিচালনা করেন। তবে সারাবছর এলাকাতে কাজ-কর্ম না থাকায় মাঝে মধ্যে সাময়িকভাবে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন।
তিনি শুধু একা না, একই গ্রামের চান্দু মোল্লা, নুর ইসলাম, আব্দুল আজিজ, জামাত আলীসহ অনেকের আয়ের পথ একই। তবে, বর্তমান স্থানীয়ভাবে কৃষি কাজের সুযোগ না থাকায় চরম দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন আব্দুল খালেক প্রামাণিকের হাজারো মানুষ। এই সময়ে অন্য জেলাতেও কৃষি শ্রমিকের কোন কাজ না থাকায় এলাকাও ছাড়তে পারছেন না। এ কারণে পুরো একমাস ধরে তার কোনো কাজ না থাকায় আয়ের পথ পুরোপুরিভাবে বন্ধ।
এখন ধারদেনা ও সুদের ওপর টাকা নিয়ে কোনমতে সংসারের চালাচ্ছেন। বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, একজন মানুষের যদি মাসে গড়ে ৩ হাজার ৮২২ টাকার নিচে আয় করেন তাহলে তিনি দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাবেন। বাংলাদশের প্রেক্ষাপটে ৪ থেকে ৫ সদস্যের পরিবারে আয় করে থাকেন একজন। মাথাপিছু আয় ধরা হয় পরিবারের মোট সদস্যের ওপরভিত্তি করে।
আজ থেকে আট বছর আগেও দেশের শীর্ষ ১০ দরিদ্রপ্রবণ জেলাগুলোর মধ্যে রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও গাইবান্ধার নাম ছিল। কিন্তু কৃষি চাষাবাদে উন্নতি, নদীভাঙনে প্রতিরোধ, মঙ্গা মোকাবিলায় সামাজিক পদক্ষেপ ও সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের কারণে শীর্ষ ১০ দরিদ্র জেলার তালিকার বৃত্ত থেকে বের হয়েছে এসব জেলা। সেরকারি সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী রংপুর বিভাগের ৪৬০টি চরের প্রায় ২৪ লাখ মানুষ কৃষিশ্রম বিক্রি করে প্রতিদিনের জীবিকার ব্যয়ভার বহন করে থাকে। তবে কোন দিন যদি এই শ্রম দিতে না পারেন তাহলে অন্যের কাছে ধারদেনা করে চলতে হয়।
তবে এই অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হযে পড়েছে বলে জানান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এর নির্বাহী প্রধান, উন্নয়ন গবেষক এম.আবদুস্্ সালাম বলেন, উত্তরাঞ্চলে মানুষজনের আয়-উপার্জনের অন্যতম অবলম্বন কৃষি কাজ।
শতকরা ৭০ শতাংশ শ্রমিক কৃষি শ্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে।
কিন্তু সারাবছর কৃষি যোগান দিতে পারে না। এজন্য তিনি বিকল্প কাজের পথ সৃষ্টি করে দেয়া প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে স্থায়ী কর্মসংস্থারের পথ বের করার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্রর একটি তথ্য অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মানুষ নদী ও চরাঞ্চলের জীবনজীবিকা পুরোপুরিভাবে কৃষি, গবাদি পশুপ্রাণী ও মৎস্যনির্ভর। এ ছাড়া ৩০ শতাংশ মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাময়িক গমন করে আয় রোজগার।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া গ্রামের পরিমল পাল জানান, চরাঞ্চলে শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি, কিন্তু বেশিরভাগ সময় কাজ না থাকায় অর্থের অভাবে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
চন্ডিপুর ইউনিয়নের আব্দুর রউফ সরকার জানান, চরের ব্যাপক কৃষি চাষাবাদ হচ্ছে, কিন্তু শ্রমিক সমস্যায় খুব বেশি লাভ হচ্ছে না।
রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার পাওটানা গ্রামের তাহাজুল ইসলাম বলেন, কৃষি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করি। স্থানীয় কৃষি শ্রমিক দিয়েই তিনি জমি চাষাবাদ করেন, কিন্তু এখন তো শ্রমিকের প্রয়োজন নেই।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম উত্তরাঞ্চলে ভারি শিল্পকারখানা স্থাপনের বিকল্প নেই। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ বলেন, তিস্তা রক্ষা করা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আমাদের দাবি কোনো দলীয় ব্যানারে এটি সর্বজনের ব্যানারে। নদী রক্ষা হলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে। বিশিষ্ট সমাজ সেবক ক্ষতিগ্রস্ত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া উত্তরবঙ্গের কৃষিজীবী মানুষজনের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটবে না।
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক বলেন, তিস্তা ও উত্তরের জনপদের মানুষজনের ভারি শিল্প কারখানা স্থাপন না করা হলে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে না।
পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত জানান, কৃষির জন্য প্রয়োজন নায্য পানি। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ প্রদানের জন্য উজানের দেশ এর জন্য দায়ী। এজন্য আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পানির নায্য হিস্যা আদায়ে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন হয়েছে কৃষিতে। আর এই টেকসই উন্নয়ন এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও বেকার মানুষজনের কর্মসংস্থান।