অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বললেও সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনও ঘোষণা করেনি। সংস্কার-বিচারের নানা বিষয় সামনে এনে একটি মহল ‘নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করছে’ বলে মনে করে দলটির নেতারা। দেশের উদ্ভুত সংকট ও অস্থিরতা কমাতে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, ‘আমি সরকারকে অনুরোধ করবো, যত দ্রুত সম্ভব ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমে হোক, মাঝে হোক একটি সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা করতে হবে।’

দুদু বলেন, ‘লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের আগে বাংলাদেশ একটা অস্থিরতার মধ্যে চলে গিয়েছিল। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারতো না। বৈঠকের পর বাংলাদেশে নির্বাচন হবে এমন একটা আশার অবস্থা তৈরি হয়েছে।’ এই অবস্থাটা ধরে রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান দুদু।

শুক্রবার,(১১ জুলাই ২০২৫) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী নবীন দল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিবাদ সভায় দুদু বলেন, ‘কায়দা কৌশল করে সংস্কারের নামে বিচারের নামে আরও কী কী সব বিষয় সামনে এনে নির্বাচনটা কীভাবে ঠেকানো যায় সেই চেষ্টা চলছে।’

বিএনপিই আগামীতে ক্ষমতায় আসছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে দুদু বলেন, ‘পাগলও বোঝে কারা আগামী দিন ক্ষমতায় যাবে। কিন্তু কিছু কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, তথাকথিত রাজনীতিবিদ, তথাকথিত বিশেষ মহল মনে করে তারা ক্ষমতায় আসবে। বিএনপি এই প্রথম ক্ষমতায় যাবে এটা না। এর আগেও একাধিকবার বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে ভোটে জিতে ক্ষমতায় গেছে।’

বিএনপির এই নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের বিষোদাগার করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগকে হত্যা করেছে। আর যেসব খুন হয়েছে সেসব খুনের হত্যাকারী হচ্ছেন শেখ হাসিনা।’ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারী পার্শ্ববর্তী দেশে বসে বসে স্বপ্ন দেখায় যে কোনো সময় ফুস করে ঢুকে পড়বে। তবে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।’

স্বৈরতন্ত্র যেন আর বাংলাদেশে ফিরে আসতে না পারে, সেজন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই একমাত্র পথ মন্তব্য করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এখন অনেকেই বিএনপিকে আমলে নিতে চাচ্ছে না। নির্বাচন হলে বোঝা যাবে কোন দল কতটা শক্তিশালী। আমরাও মনে করি নির্বাচনটা খুব জরুরি। নির্বাচন হলে কারা ২টা থেকে ৩টা সিট পাবে, কার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে দেশ ছাড়া হবে, সেটা নির্বাচন ছাড়া বোঝা যাবে না।’

২০১১ সালের ৬ জুলাই তৎকালীন বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিনসহ বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যদের ওপরে পুলিশি হামলার ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ ও বিপ্লব কুমার সরকারের বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী নবীন দলের উদ্যোগে এই প্রতিবাদ সভা হয়।

দুদু বলেন, ‘আমরা মনে করি, জয়নুল আবদিন ফারুকসহ বিএনপির ওপরে যেসব অত্যাচার হয়েছে, আগামী দিনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তার প্রতিশোধ নেয়া হবে। বিএনপির বিজয়ের মধ্য দিয়ে, বিএনপির সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আমরা শান্তির পক্ষে, আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে, আমরা বহুদলীয় মতকে সন্মান জানানোর পক্ষে। আর আওয়ামী লীগ হচ্ছে ঠিক তার উল্টো। তারা সংসদকে অপবিত্র করার পক্ষে, বিরোধী দলকে নির্বংশ করার পক্ষে এবং ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য গণহত্যাসহ যা খুশি তা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে।’ ‘ওই দেখা যায় তাল

গাছ ওই আমাদের গাঁ, ওইখানেতে বাস করে কানা বকের ছাঁ।’ আদর্শলিপির এই পংতি আওরিয়ে আলাল বলেন, ‘কানা বকের ছাঁ থেকে আস্তে আস্তে বড় বক তৈরি হয়। হঠাৎ করে হয় না। আমার সন্তান কিংবা আমার সন্তানের পরবর্তী প্রজন্ম যদি এখনই মুরুব্বিদের কথামত কথা বলেন, এটা বেমানান।’

আলাল এনসিপি নেতাদের ইঙ্গিত করে বলেন, ‘দয়া করে একটু সংযত হোন। গণতন্ত্রের স্বার্থে, সর্বদলীয় মতামতকে গ্রাহ্য করার স্বার্থে এবং জাতীয় একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দিকে আমরা যখন যাচ্ছি, সেটাকে দয়া করে কেউ বাধাগ্রস্ত করবেন না।’

জাতীয়তাবাদী নবীন দলের সভাপতি হুমায়ুন আহমেদ তালুকদারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানার সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বিএনপির মাহবুবুর রহমান হারেস, ইসহাক আলী সরকার, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের জাকির হোসেন বক্তব্য দেন।