রাজশাহী : বিক্রির জন্য বাজারে পাট স্তূপ করে রেখেছেন চাষিরা -সংবাদ
রাজশাহী অঞ্চলে টানা বৃষ্টিতে। উপজেলার আশপাশের এলাকায় পাটের বাম্পার ফলন পেয়েছে। ভালো দাম পেয়েও কৃষক বেজায় খুশি। তবে এখন ভালো দাম থাকলেও গতবারের মতো মৌসুমের মাঝামাঝিতে দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষক। অন্যদিকে টানা বৃষ্টির কারণে মাঠে মরিচ নেই। ফলে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। রাজশাহী নগরসংলগ্ন পবা উপজেলার খড়খড়ি বাইপাস এলাকার হাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মরিচের সরবরাহ খুবই কম।
ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যা হওয়ায় চারিদিকে থৈ থৈ পানি। খালে বিলে পানি থাকায় পাট জাগ দিতে তেমন অসুবিধা হয়নি। পাট জাগ থেকে খোসা ছাড়ানো পর্যন্ত পাটের মান ভালো রয়েছে
যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশিরভাগই পাকা মরিচ যার দাম ২০০ টাকা কেজি। ভালো মানের মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। শনিবার,(১২ জুলাই ২০২৫) সকালে রাজশাহী মহানগর ও আশপাশের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে। অথচ ৫ দিন আগেও এই দাম ছিল মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
এদিকে পাট চাষে জানা গেছে, এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে পাট চাষি ও ব্যবসায়ীরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় পাটের আবাদ হয়েছে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছর এই চাষাবাদের পরিমাণ ছিল সাড়ে বারশ হেক্টর। এখন পাট কাটা ও জাগ দেয়ার কাজ শেষ হয়েছে। এখন কৃষক শুকানো পাটগুলো নিয়ে হাটে যাচ্ছেন।
উপজেলার নরদাশ এলাকার কৃষক আবুল হোসেন জানান, এবার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। এতে প্রতি বিঘা খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। পরে জাগ দিয়ে ও শুকিয়ে পাট পরিমাপ করে দেখেন প্রতি বিঘায় তিনি ৮ থেকে ১০ মণ হারে পাট পেয়েছেন। এবার প্রতি মণ পাটে তিনি ৫০০-৬০০ টাকা বেশি দাম পেয়েছেন।
শ্রীপুরের কৃষক মকবুল হোসেন জানান, এবার ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যা হওয়ায় চারিদিকে থৈ থৈ পানি। খালে বিলে পানি থাকায় পাট জাগ দিতে তেমন অসুবিধা হয়নি। পাট জাগ থেকে খোসা ছাড়ানো পর্যন্ত পাটের মান ভালো রয়েছে। শুরুতেই পাট তিন হাজার থেকে তিন হাজার আটশ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। তবে এখন বাজার চার হাজারের উপর। তার মতে, ভালো দাম পাওয়ায় এবার পাটের আবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি। তবে গত বছরের পুরাতন পাটও অনেক কৃষক বাজারে আনছেন। তবে এই পাট আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
একই এলাকার কৃষক মমতাজ, আয়নাল, হবিবর সহ ১০-১২ জন কৃষক আশাবাদি হয়ে বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় তারা উপযুক্ত পাটের দাম পাবেন এমনটি আশাও করেননি।
তারা আরও আশাবাদি হয়ে বলেন, এই সরকার পলিথিন সহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক দ্রব্যাদি তুলে দিতে চাইছে এটা খুব ভালো পদক্ষেপ। সোনালী আঁশ পাটের সেই হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে এবং তারা আরও বেশি করে পাট চাষ করবেন এমন আশায় বুক বেঁধেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল রাজ্জাক জানান, এবার আবহাওয়া পাট চাষের অনুকূল ছিল। প্রথম থেকে কৃষকরা পাটের দাম ভালো পাওয়ায় বেশ লাভবান হচ্ছেন। ভবিষ্যতে এই উপজেলায় আরও বেশি হারে পাটের আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে চাষি, ও ব্যবসায়ীরা বলছেন কাচামরিচের দাম বিদ্ধিপাওয়ার কারণ টানা বৃষ্টিতে ফলন মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এই পলন বিপর্যয়।
রাজশাহী সাহেববাজার সজ্বি বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, শনিবার, পর্যন্ত মরিচ ৩৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। বৃষ্টি না কমলে দাম আরও বাড়তে পারে। গাছে মরিচ নেই, পানিতে গাছও মরে যাচ্ছে।
পারিলা গ্রামের কৃষক মনির হোসেন এই হাটে মাত্র কয়েক কেজি মরিচ নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, তার মরিচক্ষেতে কয়েক দিন ধরে পানি জমে আছে। সেখান থেকে কিছু মরিচ তুলেই বিক্রি করতে এনেছেন। বললেন, আর দুই-তিন দিন এভাবে থাকলে পুরো খেতটাই নষ্ট হয়ে যাবে। হাটের আরেক ব্যবসায়ী তসলিম জানান, তিনি এক কৃষকের কাছ থেকে ৩২০ টাকা কেজিতে মরিচ কিনে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। বললেন, মরিচ তো নেই বললেই চলে। অথচ এখান থেকেই ঢাকায়ও মরিচ যায়।
একই হাটে আড়াই কেজি মরিচ কেনেন হায়দার হোসেন নামে এক ক্রেতা। তিনি বলেন, বাসায় অনুষ্ঠান, মরিচ দরকার। তাই এত দাম দিয়েও কিনতে হলো। নগরের সাহেববাজার ও বিনোদপুর বাজারেও একই অবস্থা। বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না, সরবরাহও বন্ধ।
রাজশাহী : বিক্রির জন্য বাজারে পাট স্তূপ করে রেখেছেন চাষিরা -সংবাদ
শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
রাজশাহী অঞ্চলে টানা বৃষ্টিতে। উপজেলার আশপাশের এলাকায় পাটের বাম্পার ফলন পেয়েছে। ভালো দাম পেয়েও কৃষক বেজায় খুশি। তবে এখন ভালো দাম থাকলেও গতবারের মতো মৌসুমের মাঝামাঝিতে দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষক। অন্যদিকে টানা বৃষ্টির কারণে মাঠে মরিচ নেই। ফলে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। রাজশাহী নগরসংলগ্ন পবা উপজেলার খড়খড়ি বাইপাস এলাকার হাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মরিচের সরবরাহ খুবই কম।
ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যা হওয়ায় চারিদিকে থৈ থৈ পানি। খালে বিলে পানি থাকায় পাট জাগ দিতে তেমন অসুবিধা হয়নি। পাট জাগ থেকে খোসা ছাড়ানো পর্যন্ত পাটের মান ভালো রয়েছে
যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশিরভাগই পাকা মরিচ যার দাম ২০০ টাকা কেজি। ভালো মানের মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। শনিবার,(১২ জুলাই ২০২৫) সকালে রাজশাহী মহানগর ও আশপাশের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে। অথচ ৫ দিন আগেও এই দাম ছিল মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
এদিকে পাট চাষে জানা গেছে, এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে পাট চাষি ও ব্যবসায়ীরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় পাটের আবাদ হয়েছে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছর এই চাষাবাদের পরিমাণ ছিল সাড়ে বারশ হেক্টর। এখন পাট কাটা ও জাগ দেয়ার কাজ শেষ হয়েছে। এখন কৃষক শুকানো পাটগুলো নিয়ে হাটে যাচ্ছেন।
উপজেলার নরদাশ এলাকার কৃষক আবুল হোসেন জানান, এবার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। এতে প্রতি বিঘা খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। পরে জাগ দিয়ে ও শুকিয়ে পাট পরিমাপ করে দেখেন প্রতি বিঘায় তিনি ৮ থেকে ১০ মণ হারে পাট পেয়েছেন। এবার প্রতি মণ পাটে তিনি ৫০০-৬০০ টাকা বেশি দাম পেয়েছেন।
শ্রীপুরের কৃষক মকবুল হোসেন জানান, এবার ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যা হওয়ায় চারিদিকে থৈ থৈ পানি। খালে বিলে পানি থাকায় পাট জাগ দিতে তেমন অসুবিধা হয়নি। পাট জাগ থেকে খোসা ছাড়ানো পর্যন্ত পাটের মান ভালো রয়েছে। শুরুতেই পাট তিন হাজার থেকে তিন হাজার আটশ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। তবে এখন বাজার চার হাজারের উপর। তার মতে, ভালো দাম পাওয়ায় এবার পাটের আবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি। তবে গত বছরের পুরাতন পাটও অনেক কৃষক বাজারে আনছেন। তবে এই পাট আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
একই এলাকার কৃষক মমতাজ, আয়নাল, হবিবর সহ ১০-১২ জন কৃষক আশাবাদি হয়ে বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় তারা উপযুক্ত পাটের দাম পাবেন এমনটি আশাও করেননি।
তারা আরও আশাবাদি হয়ে বলেন, এই সরকার পলিথিন সহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক দ্রব্যাদি তুলে দিতে চাইছে এটা খুব ভালো পদক্ষেপ। সোনালী আঁশ পাটের সেই হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে এবং তারা আরও বেশি করে পাট চাষ করবেন এমন আশায় বুক বেঁধেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল রাজ্জাক জানান, এবার আবহাওয়া পাট চাষের অনুকূল ছিল। প্রথম থেকে কৃষকরা পাটের দাম ভালো পাওয়ায় বেশ লাভবান হচ্ছেন। ভবিষ্যতে এই উপজেলায় আরও বেশি হারে পাটের আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে চাষি, ও ব্যবসায়ীরা বলছেন কাচামরিচের দাম বিদ্ধিপাওয়ার কারণ টানা বৃষ্টিতে ফলন মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এই পলন বিপর্যয়।
রাজশাহী সাহেববাজার সজ্বি বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, শনিবার, পর্যন্ত মরিচ ৩৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। বৃষ্টি না কমলে দাম আরও বাড়তে পারে। গাছে মরিচ নেই, পানিতে গাছও মরে যাচ্ছে।
পারিলা গ্রামের কৃষক মনির হোসেন এই হাটে মাত্র কয়েক কেজি মরিচ নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, তার মরিচক্ষেতে কয়েক দিন ধরে পানি জমে আছে। সেখান থেকে কিছু মরিচ তুলেই বিক্রি করতে এনেছেন। বললেন, আর দুই-তিন দিন এভাবে থাকলে পুরো খেতটাই নষ্ট হয়ে যাবে। হাটের আরেক ব্যবসায়ী তসলিম জানান, তিনি এক কৃষকের কাছ থেকে ৩২০ টাকা কেজিতে মরিচ কিনে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। বললেন, মরিচ তো নেই বললেই চলে। অথচ এখান থেকেই ঢাকায়ও মরিচ যায়।
একই হাটে আড়াই কেজি মরিচ কেনেন হায়দার হোসেন নামে এক ক্রেতা। তিনি বলেন, বাসায় অনুষ্ঠান, মরিচ দরকার। তাই এত দাম দিয়েও কিনতে হলো। নগরের সাহেববাজার ও বিনোদপুর বাজারেও একই অবস্থা। বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না, সরবরাহও বন্ধ।