সাতক্ষীরা : বিদ্যালয় মাঠে কোমর পানি -সংবাদ
সাতক্ষীরায় টানা বৃষ্টিতে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। শহরের সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের বহু প্রতিষ্ঠানের আঙিনা ও শ্রেণিকক্ষ হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে নিয়মিত পাঠদান। বিশেষ করে চলমান এইচএসসি ও অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস এখন যেন জলাধার। পা রাখতেই নাকে লাগে পচা পানির গন্ধ। কলেজের শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ?প্রতিদিন পরীক্ষা দিতে আসছি ভিজা কাপড়ে, জুতা হাতে। কাদা আর পানির মধ্যে হেঁটে পরীক্ষার হলে যেতে হয়। মনে হয় কলেজ নয়, যেন নদীর ঘাট পার হচ্ছি।
জেলা সদর থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপজেলা, পাটকেলঘাটা আমিরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জের মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সদর উপজেলার বদ্দিপুর প্রাইমারি স্কুল,কলারোয়ার বেত্রবতী হাইস্কুলসহ বহু প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা বসার মতো পরিবেশও পাচ্ছে না।
অভিভাবকদের ভাষ্য, জলাবদ্ধতার কারণে শিশুরা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছে না। অনেকেই ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরের উত্তর কাটিয়া, ইটাগাছা, কুখরালি, ব্রহ্মরাজপুর, ফিংড়ি, আগরদাঁড়ি, বাঁকাল ও তালতলা এলাকাসহ উপশহর ও গ্রামাঞ্চলের কমপক্ষে ৫০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শিশুরা ভেলা, বাঁশ বা জুতা হাতে নিয়ে স্কুলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
শহরের এ করিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়া সুলতানা। সে বলে, ভিজা জামা পরে পরীক্ষা দিতে গেছি। পা কাদায় আটকে যায়। বৃষ্টি হলে তো আর বোঝার উপায়ই থাকে না কোথায় রাস্তা, কোথায় খাল।
শাহানা খাতুন নামের এক স্কুলছাত্রীর মা বলেন, বাচ্চা ভিজে ঠান্ডা-জ্বরে ভুগছে। তবু পরীক্ষা তো বন্ধ নেই। পানির মধ্যে দিয়ে স্কুলে যেতে হবে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষক অলিউর রহমান বলেন, প্রতি বছরই এমন হয়। কিন্তু কেউ স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরেও ড্রেনেজ নেই। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে নাগরিক নেতারা বলেন, শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা অব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত উদাহরণ। খাল দখল ও দূষণের কারণে পানি বের হতে পারছে না। জানে না শিক্ষা বিভাগ!
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করা হলে প্রশিক্ষণ বিষয়ক সমন্বয়ক সোহেল রানা বলেন, আমাদের কাছে জলাবদ্ধতার কোনো তথ্য নেই। তবে দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো। একই সুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারও।
জেলার সাতটি উপজেলায় রয়েছে দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় ১৩০০, মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ৫০০-এর বেশি এবং কলেজ রয়েছে ৬০টির মতো। বিভিন্ন উপজেলায় ইবতেদায়ি মাদরাসা, এনজিও স্কুল, কারিগরি ও কমিউনিটি স্কুলসহ রয়েছে হাজারেরও বেশি।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা ঘের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছি। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নত হবে।
শ্যামনগরের ইউএনও মোছা. রনী খাতুন বলেন, ব্যক্তিগত বা বন্দোবস্তকৃত যে ধরনের সম্পত্তিই হোক না কেন, জলাবদ্ধতা সৃষ্টির জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় সেটিকে গণউপদ্রব হিসেবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, শুধু উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে বাঁধ নির্মাণসহ সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি নির্মাণ এবং প্রভাবশালীদের ঘেরের কারণেই প্রতিবছর এ দুর্ভোগ হচ্ছে।
সাতক্ষীরা : বিদ্যালয় মাঠে কোমর পানি -সংবাদ
সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
সাতক্ষীরায় টানা বৃষ্টিতে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। শহরের সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের বহু প্রতিষ্ঠানের আঙিনা ও শ্রেণিকক্ষ হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে নিয়মিত পাঠদান। বিশেষ করে চলমান এইচএসসি ও অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস এখন যেন জলাধার। পা রাখতেই নাকে লাগে পচা পানির গন্ধ। কলেজের শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ?প্রতিদিন পরীক্ষা দিতে আসছি ভিজা কাপড়ে, জুতা হাতে। কাদা আর পানির মধ্যে হেঁটে পরীক্ষার হলে যেতে হয়। মনে হয় কলেজ নয়, যেন নদীর ঘাট পার হচ্ছি।
জেলা সদর থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপজেলা, পাটকেলঘাটা আমিরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জের মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সদর উপজেলার বদ্দিপুর প্রাইমারি স্কুল,কলারোয়ার বেত্রবতী হাইস্কুলসহ বহু প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা বসার মতো পরিবেশও পাচ্ছে না।
অভিভাবকদের ভাষ্য, জলাবদ্ধতার কারণে শিশুরা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছে না। অনেকেই ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরের উত্তর কাটিয়া, ইটাগাছা, কুখরালি, ব্রহ্মরাজপুর, ফিংড়ি, আগরদাঁড়ি, বাঁকাল ও তালতলা এলাকাসহ উপশহর ও গ্রামাঞ্চলের কমপক্ষে ৫০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শিশুরা ভেলা, বাঁশ বা জুতা হাতে নিয়ে স্কুলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
শহরের এ করিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়া সুলতানা। সে বলে, ভিজা জামা পরে পরীক্ষা দিতে গেছি। পা কাদায় আটকে যায়। বৃষ্টি হলে তো আর বোঝার উপায়ই থাকে না কোথায় রাস্তা, কোথায় খাল।
শাহানা খাতুন নামের এক স্কুলছাত্রীর মা বলেন, বাচ্চা ভিজে ঠান্ডা-জ্বরে ভুগছে। তবু পরীক্ষা তো বন্ধ নেই। পানির মধ্যে দিয়ে স্কুলে যেতে হবে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষক অলিউর রহমান বলেন, প্রতি বছরই এমন হয়। কিন্তু কেউ স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরেও ড্রেনেজ নেই। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে নাগরিক নেতারা বলেন, শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা অব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত উদাহরণ। খাল দখল ও দূষণের কারণে পানি বের হতে পারছে না। জানে না শিক্ষা বিভাগ!
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করা হলে প্রশিক্ষণ বিষয়ক সমন্বয়ক সোহেল রানা বলেন, আমাদের কাছে জলাবদ্ধতার কোনো তথ্য নেই। তবে দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো। একই সুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারও।
জেলার সাতটি উপজেলায় রয়েছে দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় ১৩০০, মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ৫০০-এর বেশি এবং কলেজ রয়েছে ৬০টির মতো। বিভিন্ন উপজেলায় ইবতেদায়ি মাদরাসা, এনজিও স্কুল, কারিগরি ও কমিউনিটি স্কুলসহ রয়েছে হাজারেরও বেশি।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা ঘের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছি। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নত হবে।
শ্যামনগরের ইউএনও মোছা. রনী খাতুন বলেন, ব্যক্তিগত বা বন্দোবস্তকৃত যে ধরনের সম্পত্তিই হোক না কেন, জলাবদ্ধতা সৃষ্টির জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় সেটিকে গণউপদ্রব হিসেবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, শুধু উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে বাঁধ নির্মাণসহ সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি নির্মাণ এবং প্রভাবশালীদের ঘেরের কারণেই প্রতিবছর এ দুর্ভোগ হচ্ছে।