রাজশাহীর মোহনপুরের পানচাষি মোস্তফা কামাল বলেন, পানবরজ যেন আমাদের জন্য এক ধরনের প্রাকৃতিক ব্যাংক। হঠাৎ টাকা প্রয়োজন হলে কাউকে ধার বা ব্যাংকে যেতে হয় না বরজ থেকে পান তুলে আড়তে দিলেই মেলে নগদ টাকা। পান চাষ করে এ অঞ্চলের অনেকেই এখন স্বচ্ছল। আগে যারা কষ্টে চলতেন, তারাও এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। পানই আমাদের অর্থনীতির চাকা শক্তিশালী করেছে।
রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় ৪, ৫০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়, যার বাৎসরিক আয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এখানকার পান ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। পান বহুবর্ষজীবী হওয়ায় বারবার লাগানোর প্রয়োজন হয় না এবং ৫৬ দিন পরপর পাতা তুলে বিক্রি করা যায়, যা একটি ধারাবাহিক আয়ের উৎস।
পান চাষের পরিধি এবং উৎপাদন দুটোই বেড়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবং রপ্তানি না থাকায় বাজারে পানের দাম পড়ে গেছে। এতে লোকসানে পড়েছেন চাষিরা। চলতি বর্ষামৌসুমে প্রতি বিড়া (৬৪টি পান) সর্বোচ্চ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তুলনামূলক ছোট পান প্রতি বিড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র এক টাকা দরে। অথচ ৩২ বিড়ায় এক পোয়া, যার দাম দাঁড়ায় মাত্র ৩২ টাকা।
২০১২ সালে মোহনপুরে পানচাষের জমি ছিল ৬৪৪ হেক্টর, যা ২০২৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১, ৩১৭ হেক্টরে। উৎপাদন বেড়ে হয়েছে প্রায় ২০, ৪০১ মেট্রিক টন। এক যুগে দ্বিগুণ চাষ হলেও উৎপাদন খরচ বেড়েছে বহু গুণ। শ্রমিক মজুরি ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫০-৮০০ টাকা, বাঁশের দাম ১, ২০০ থেকে বেড়ে ৬, ০০০ টাকা, ছাউনির খড়ের দাম ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫০-৬০ টাকা। এমনকি পান গাছ বাঁধার উলার দাম কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা থেকে এখন হয়েছে ১৫০-২০০ টাকা। কিন্তু পানের দাম সেই তুলনায় বাড়েনি। খরা মৌসুমে পুরনো পানের প্রতি বিড়া ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও, এবারের বর্ষায় সেটি নেমে এসেছে ৫০-৬০ টাকায়।
মোহনপুর, বাগমারা ও দুর্গাপুর উপজেলায় পান চাষ বেশি হলেও এখন আশেপাশের জেলাতেও চাষ বাড়ছে।
ফলে সরবরাহ বেড়ে বাজারে ধস নেমেছে। মোহনপুরের একদিলতলা, মৌগাছি, পাকুড়িয়া, কেশরহাটসহ নানা হাটে ঢাকার, ময়মনসিংহের, নওগাঁর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাইকাররা আসেন পান কিনতে।
ঢাকার পাইকার আনিস সিকদার বলেন, গত কয়েক মাস ধরে পানের বাজার একেবারে মন্দা। লোকসান গুনতে হচ্ছে।
নওগাঁর পাইকার মাহাবুব রহমান বলেন, উৎপাদন বেশি হলেও সুপারি, জর্দা ইত্যাদির দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তার আগ্রহ কমেছে।
মোহনপুরের সইপাড়া গ্রামের চাষি ইমরান আলী বলেন, দেড় বিঘা জমিতে পান চাষ করেছি। কিন্তু এ বছর এত কম দাম যে বরজের খরচই উঠে আসছে না।
কেশরহাটের বদর উদ্দিন বলেন, বর্ষার শুরু থেকেই বাজারে ধস। রপ্তানি বন্ধ থাকায় এবং চাহিদা না থাকায় দাম একেবারে তলানিতে।
চাষিরা সরকারি হস্তক্ষেপ চেয়ে বলেন, পান রপ্তানি চালু না হলে পানচাষেটিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বর্ষায় পান উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে। তবে সাদা মাছি ছাড়া এখন পর্যন্ত বড় কোনো রোগ দেখা দেয়নি। আমরা চাষিদের পাশে আছি।
বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
রাজশাহীর মোহনপুরের পানচাষি মোস্তফা কামাল বলেন, পানবরজ যেন আমাদের জন্য এক ধরনের প্রাকৃতিক ব্যাংক। হঠাৎ টাকা প্রয়োজন হলে কাউকে ধার বা ব্যাংকে যেতে হয় না বরজ থেকে পান তুলে আড়তে দিলেই মেলে নগদ টাকা। পান চাষ করে এ অঞ্চলের অনেকেই এখন স্বচ্ছল। আগে যারা কষ্টে চলতেন, তারাও এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। পানই আমাদের অর্থনীতির চাকা শক্তিশালী করেছে।
রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় ৪, ৫০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়, যার বাৎসরিক আয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এখানকার পান ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। পান বহুবর্ষজীবী হওয়ায় বারবার লাগানোর প্রয়োজন হয় না এবং ৫৬ দিন পরপর পাতা তুলে বিক্রি করা যায়, যা একটি ধারাবাহিক আয়ের উৎস।
পান চাষের পরিধি এবং উৎপাদন দুটোই বেড়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবং রপ্তানি না থাকায় বাজারে পানের দাম পড়ে গেছে। এতে লোকসানে পড়েছেন চাষিরা। চলতি বর্ষামৌসুমে প্রতি বিড়া (৬৪টি পান) সর্বোচ্চ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তুলনামূলক ছোট পান প্রতি বিড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র এক টাকা দরে। অথচ ৩২ বিড়ায় এক পোয়া, যার দাম দাঁড়ায় মাত্র ৩২ টাকা।
২০১২ সালে মোহনপুরে পানচাষের জমি ছিল ৬৪৪ হেক্টর, যা ২০২৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১, ৩১৭ হেক্টরে। উৎপাদন বেড়ে হয়েছে প্রায় ২০, ৪০১ মেট্রিক টন। এক যুগে দ্বিগুণ চাষ হলেও উৎপাদন খরচ বেড়েছে বহু গুণ। শ্রমিক মজুরি ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫০-৮০০ টাকা, বাঁশের দাম ১, ২০০ থেকে বেড়ে ৬, ০০০ টাকা, ছাউনির খড়ের দাম ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫০-৬০ টাকা। এমনকি পান গাছ বাঁধার উলার দাম কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা থেকে এখন হয়েছে ১৫০-২০০ টাকা। কিন্তু পানের দাম সেই তুলনায় বাড়েনি। খরা মৌসুমে পুরনো পানের প্রতি বিড়া ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও, এবারের বর্ষায় সেটি নেমে এসেছে ৫০-৬০ টাকায়।
মোহনপুর, বাগমারা ও দুর্গাপুর উপজেলায় পান চাষ বেশি হলেও এখন আশেপাশের জেলাতেও চাষ বাড়ছে।
ফলে সরবরাহ বেড়ে বাজারে ধস নেমেছে। মোহনপুরের একদিলতলা, মৌগাছি, পাকুড়িয়া, কেশরহাটসহ নানা হাটে ঢাকার, ময়মনসিংহের, নওগাঁর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাইকাররা আসেন পান কিনতে।
ঢাকার পাইকার আনিস সিকদার বলেন, গত কয়েক মাস ধরে পানের বাজার একেবারে মন্দা। লোকসান গুনতে হচ্ছে।
নওগাঁর পাইকার মাহাবুব রহমান বলেন, উৎপাদন বেশি হলেও সুপারি, জর্দা ইত্যাদির দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তার আগ্রহ কমেছে।
মোহনপুরের সইপাড়া গ্রামের চাষি ইমরান আলী বলেন, দেড় বিঘা জমিতে পান চাষ করেছি। কিন্তু এ বছর এত কম দাম যে বরজের খরচই উঠে আসছে না।
কেশরহাটের বদর উদ্দিন বলেন, বর্ষার শুরু থেকেই বাজারে ধস। রপ্তানি বন্ধ থাকায় এবং চাহিদা না থাকায় দাম একেবারে তলানিতে।
চাষিরা সরকারি হস্তক্ষেপ চেয়ে বলেন, পান রপ্তানি চালু না হলে পানচাষেটিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বর্ষায় পান উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে। তবে সাদা মাছি ছাড়া এখন পর্যন্ত বড় কোনো রোগ দেখা দেয়নি। আমরা চাষিদের পাশে আছি।