সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার গ্রামীণ রাস্তাগুলোর বেহাল দশা ও হাটবাজারে কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সামান্য বৃষ্টি কিংবা অল্প ঢলেই রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও কোমর সমান পানি জমে থাকে। আবার অনেক রাস্তায় কাঁদা ও খানাখন্দে ভরা এমন পরিস্থিতি, যেখানে হেঁটে চলা কষ্টকর, যানবাহনের চলাচল তো দূরের কথা।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পাঙ্গাশী ইউনিয়নের চকনুর বাজার থেকে গদগাতি গ্রাম হয়ে ভাতহাড়িয়া বাজার হয়ে ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত রাস্তাটির করুণ চিত্র। এ ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য মো. আরিফুল ইসলাম জানান, বহু বছর ধরে এ রাস্তাটি অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন কাঁদা পানিতে ভিজে স্কুলে আসে, অনেক সময় পড়ে গিয়ে আহত হয় বা স্কুলে পৌঁছাতেই পারে না। কারও অসুস্থতার সময় আরও বিপাকে পড়তে হয়।

একই ইউনিয়নের বেং নাই গ্রামের চলাচলের প্রধান ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কাঁচা রাস্তাটি ভাঙা ব্রিজ থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত। বর্ষাকালে তা এতটাই কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে যে, স্বাভাবিক চলাচলই সম্ভব হয় না এমনটি জানান বেং নাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম।

ধানগড়া ইউনিয়নের বেতুয়া পূর্ব পাড়া তিনমাথা মোড় থেকে কবরস্থান হয়ে রায়গঞ্জ থানায় যাওয়ার রাস্তা, একই ইউনিয়নের পলাশতলা তিনমাথা থেকে আবুদিয়া পর্যন্ত রাস্তা, রায়গঞ্জ পৌর কেন্দ্রীয় কবরস্থান থেকে বেতুয়া রাস্তা এবং গুনগাতি ঈদগাহ মাঠ থেকে বুলাকীপুর কবরস্থানে যাওয়ার রাস্তার অবস্থাও একই রকম বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

অন্যদিকে, উপজেলার চান্দাইকোনা, সলঙ্গা, নিমগাছি, ভূয়াগাতী, ধানগড়া, নলকা, ব্রহ্মগাছা, ঘুড়কা, সাহেবগঞ্জ ও পাঙ্গাশীর অধিকাংশ হাটবাজারে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। যেসব বাজারে ড্রেন রয়েছে, সেগুলোর অনেকগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ায় প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থী, পথচারী ও ব্যবসায়ীদের।

সলঙ্গা ফাজিল মাদ্রাসার গেটে বৃষ্টির সময় আশ্রয় নেওয়া আমিরুল ইসলাম ও জাহিদুল ইসলাম বলেন, “কিছু বাজারে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ করা হলেও পানি নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় বাজারগুলোর প্রধান সড়ক ও আশপাশের এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে।” সলঙ্গা বিদ্রোহের স্মৃতিবিজড়িত এলাকাটির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা আক্ষেপ করে বলেন, “এখানে সামান্য বৃষ্টিতেই বাজার চত্বর পানিতে থৈ থৈ করে। এমনকি বাজারে যাওয়া-আসাও বন্ধ হয়ে যায়।”

সরেজমিনে দেখা গেছে, সলঙ্গা বাজারের চৌরাস্তা মোড়ে হাঁটু পানি, থানা মাঠ ডুবে গেছে এবং কৃমি প্রজনন কেন্দ্রের অবস্থাও আরও ভয়াবহ। হাটে লোকজন নেই, অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। এসব চিত্র বৃষ্টির পরবর্তী দুরবস্থারই সাক্ষ্য দেয়।

এ অবস্থায় উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর দ্রুত সংস্কার ও পাকাকরণ এবং যেসব বাজারে ড্রেন নেই সেখানে ড্রেন নির্মাণ ও অকার্যকর ড্রেনগুলো পুনরায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।