কেশবপুর (যশোর) : বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া গমপট্টি সড়ক -সংবাদ
পলীতে নদী ভরাটসহ ব্রিজ, কালর্ভাটের মুখ ভরাট করে অপরিকল্পিত মাছের ঘের করার কারণে গত দু’সপ্তাহের ভারী বর্ষনে কেশবপুর পৌর শহরসহ ৮৩ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাজার, সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়, কেশবপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। বন্যায় আমন বীজতলা, পাট, সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পানি নিষ্কাশনে বুড়িভদ্রা, আপারভদ্রা নদীর পলি অপসারণ কাজ চালিয়ে গেলেও জলাবদ্ধতার সমাধান না হওয়ায় বানভাসিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, কেশবপুর পৌরসভাসহ ৮টি ইউনিয়নের পানি বুড়িভদ্রা, হরিহর, আপারভদ্রা নদী দিয়ে শ্রী নদীতে নিষ্কাশন হয়। এসব নদী ভরাট হওয়ায় ২০১৯ সালে সাড়ে ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হয়। কিন্তু খননের ২ বছর যেতে না যেতেই নদীগুলো আবারও পলিতে ভরাট হয়। চলতি বছর ভারী বর্ষনে নদীর উপচেপড়া পানিতে গেল বারের ন্যায় পৌরসভা, সদর ইউনিয়নসহ ১১টি ইউনিয়নের ৮৩ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে, শহরের পাইকারী ও খুচরা সবজি বাজার, ধানহাটা, সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়, গমপট্টি, পশুহাটা, কেশবপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজ, মহিলা ফাজিল মাদ্রাসাসহ কমপক্ষে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া, পাঁজিয়া সড়ক, মধুসড়ক, গমপট্টি সড়কসহ গ্রামীণ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ পড়েছে মহাবিপাকে। পানিবন্দী ৫ হাজার পরিবারের মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকটসহ জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ গবাদি প্রাণী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বন্যায় কৃষি জমি প্লাবিত হওয়ায় পাট, আমন বীজতলাসহ সাড়ে ৩৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মহিলা ফাজিল মাদ্রাসা তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বেঞ্চ সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরেজমিনে পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড (মধ্যকুল) এলাকায় দেখা যায়, বৃষ্টি ও পানির ভেতর দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে এলাকার মানুষ। এলাকার বাসিন্দা ফতেমা খাতুন বলেন, বসতঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় মালামাল নিয়ে নিরাপদ স্থানে যেতে হচ্ছে। তাদের এলাকাটি গত বছরও ছয় মাস জলাবদ্ধ ছিল। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য এখনও পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্র খোলা বা কোন ত্রান সামগ্রী দেয়া হয়নি। কচুরিপনায় নদী আবদ্ধ থাকায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে উঠতি বয়সের যুবরা নিজ উদ্যোগে হরিহর নদীর কচুরিপনা অপসারণে আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে গতকাল বুধবার পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাঁচ হাজার পরিবারের ২০ হাজার ৬৫০ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৮৩ টি গ্রাম। বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কেশবপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফজল মো. এনামুল হক বলেন, পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডই কমবেশি জলাবদ্ধতা হয়ে পড়েছে। এপর্যন্ত ২৫‘শ পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জলাবদ্ধ পরিবারের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আলা বলেন, তার ইউনিয়নের মধ্যকুল, আলতাপোল, মূলগ্রাম, মাগুরাডাঙা, সুজাপুর ও ব্যাসডাঙা গ্রামে প্রায় দুইশত পরিবার জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এলাকায় টানা বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি ঢুকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন বলেন, নদ-নদীর পানি প্রবাহের জন্য শ্যাওলা অপসারণ অব্যাহত রয়েছে। আপারভদ্রা নদীতে একটি স্কাভেটর মেশিন দিয়ে খনন কাজ চলছে। আরেকটি স্কাভেটর দিয়ে বুড়িভদ্রা ও হরিহর নদীও খনন করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
কেশবপুর (যশোর) : বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া গমপট্টি সড়ক -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
পলীতে নদী ভরাটসহ ব্রিজ, কালর্ভাটের মুখ ভরাট করে অপরিকল্পিত মাছের ঘের করার কারণে গত দু’সপ্তাহের ভারী বর্ষনে কেশবপুর পৌর শহরসহ ৮৩ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাজার, সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়, কেশবপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। বন্যায় আমন বীজতলা, পাট, সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পানি নিষ্কাশনে বুড়িভদ্রা, আপারভদ্রা নদীর পলি অপসারণ কাজ চালিয়ে গেলেও জলাবদ্ধতার সমাধান না হওয়ায় বানভাসিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, কেশবপুর পৌরসভাসহ ৮টি ইউনিয়নের পানি বুড়িভদ্রা, হরিহর, আপারভদ্রা নদী দিয়ে শ্রী নদীতে নিষ্কাশন হয়। এসব নদী ভরাট হওয়ায় ২০১৯ সালে সাড়ে ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হয়। কিন্তু খননের ২ বছর যেতে না যেতেই নদীগুলো আবারও পলিতে ভরাট হয়। চলতি বছর ভারী বর্ষনে নদীর উপচেপড়া পানিতে গেল বারের ন্যায় পৌরসভা, সদর ইউনিয়নসহ ১১টি ইউনিয়নের ৮৩ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে, শহরের পাইকারী ও খুচরা সবজি বাজার, ধানহাটা, সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়, গমপট্টি, পশুহাটা, কেশবপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজ, মহিলা ফাজিল মাদ্রাসাসহ কমপক্ষে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া, পাঁজিয়া সড়ক, মধুসড়ক, গমপট্টি সড়কসহ গ্রামীণ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ পড়েছে মহাবিপাকে। পানিবন্দী ৫ হাজার পরিবারের মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকটসহ জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ গবাদি প্রাণী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বন্যায় কৃষি জমি প্লাবিত হওয়ায় পাট, আমন বীজতলাসহ সাড়ে ৩৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মহিলা ফাজিল মাদ্রাসা তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বেঞ্চ সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরেজমিনে পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড (মধ্যকুল) এলাকায় দেখা যায়, বৃষ্টি ও পানির ভেতর দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে এলাকার মানুষ। এলাকার বাসিন্দা ফতেমা খাতুন বলেন, বসতঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় মালামাল নিয়ে নিরাপদ স্থানে যেতে হচ্ছে। তাদের এলাকাটি গত বছরও ছয় মাস জলাবদ্ধ ছিল। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য এখনও পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্র খোলা বা কোন ত্রান সামগ্রী দেয়া হয়নি। কচুরিপনায় নদী আবদ্ধ থাকায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে উঠতি বয়সের যুবরা নিজ উদ্যোগে হরিহর নদীর কচুরিপনা অপসারণে আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে গতকাল বুধবার পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাঁচ হাজার পরিবারের ২০ হাজার ৬৫০ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৮৩ টি গ্রাম। বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কেশবপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফজল মো. এনামুল হক বলেন, পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডই কমবেশি জলাবদ্ধতা হয়ে পড়েছে। এপর্যন্ত ২৫‘শ পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জলাবদ্ধ পরিবারের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আলা বলেন, তার ইউনিয়নের মধ্যকুল, আলতাপোল, মূলগ্রাম, মাগুরাডাঙা, সুজাপুর ও ব্যাসডাঙা গ্রামে প্রায় দুইশত পরিবার জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এলাকায় টানা বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি ঢুকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন বলেন, নদ-নদীর পানি প্রবাহের জন্য শ্যাওলা অপসারণ অব্যাহত রয়েছে। আপারভদ্রা নদীতে একটি স্কাভেটর মেশিন দিয়ে খনন কাজ চলছে। আরেকটি স্কাভেটর দিয়ে বুড়িভদ্রা ও হরিহর নদীও খনন করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।