বদরগঞ্জ (রংপুর) : নিজ বাগানের পেয়ারা দেখছেন কাউসার আহমেদ -সংবাদ
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে গোপিনাথপুর ইউনিয়নের হাসিনানগর এলাকা। করতোয়া নদী ওই এলাকাকে দু’ভাগ করে রেখেছে। এর একটি অংশ বদরগঞ্জ উপজেলায় অপরটি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায়। আধুনিক যাগাযোগ ব্যবস্থা হাসিনানগরের মানুষের কাছে আজো স্বপ্নের মত। একারণে তাদেরকে অনেকটা সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়।
এলাকার বাসিন্দারা সবাই দরিদ্র কৃষক। তাদের সবারই সামান্য জমি-জিরেত থাকলেও অনুর্বর বেলে মাটিতে মরিচ ছাড়া অন্য ফসল তেমন ফলেনা। তারা বংশ পরম্পরায় শুধুমাত্র মরিচ চাষাবাদই করে আসছেন। ফলে তাদের আর্থ-সামজিক অবস্থার এখনো কোন পরিবর্তন ঘটেনি। এ অবস্থায় তাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন যুবক কাউসার আহমেদ (২৫)। কয়েকবছর আগে তিনি এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ৬ বিঘা (স্থানীয় ১ বিঘা=৬০শতক) জমি লিজ নিয়ে বিভিন্ন জাতের পেযারার চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরেই তিনি পেয়ারা চাষে বাজিমাৎ করেন। তার ওই সাফল্যে অন্যরাও তার সাথে পেয়ারা চাষে আগ্রহী হন। একারণে তিনি কয়েকজনকে পার্টনার হিসেবে নিয়ে পেয়ারার চাষ আরো সম্প্রসারণ করেন। কিন্তু পরের বছর ঠিকভাবে পেয়ারা বাজারজাত করতে না পারায় তাকে লোকসান গুণতে হয়। এটা মেনে নিতে পারেননি তার পার্টনাররা। একারণে তিনি তাদের সাথে দ্বন্দ্বে না গিয়ে নিজ হাতে গড়া বাগান তাদের ছেড়ে দেন। এরপর তিনি ৯০ শতকের আরেকটি জমি লিজ নেন। সেখানে তিনি গোল্ডেন-৮ জাতের পেয়ারা চাষ করেন। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
সরেজমিন এলাকা পরিদর্শণকালে কথা হয় যুবক কাউসারের সাথে। তিনি জানান, তার জন্মস্থান রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায়। বাবা আব্দুল মান্নানের চার সন্তানের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তিনি ২০১৫ সালে এইচএসসি পাস করে আর পড়াশোনা করেননি। কেন পড়াশোনা করেননি এর উত্তরে তিনি বলেন, বড় ভাই-বোনরা উচ্চ শিক্ষিত হয়ে চাকরির আশায় যেখানেই গেছেন সেখানেই টাকা চেয়েছে।
তাদের এ অবস্থা দেখে আমি সিদ্ধান্ত নেই চাকরির পিছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হব। আবার এ সিদ্ধান্ত নেই কিছু করলে বাইরে করব- এলাকায় নয়। একারণে বিভিন্ন জেলা ঘুরে এখানে আসি। তারপর আমি জমি লিজ নিয়ে পেয়ারার চাষ শুরু করি। এলাকার লোকজন প্রথমে বিশ^াস করতে চাননি যে অনুর্বর মাটিতে আমি পেয়ারা চাষ করে জমির লিজ মানি পরিশোধ করতে পারব। সেকারণে তাদের বিশ^াস স্থাপনের জন্য আমি বাগান করার আগেই লিজ মানি পরিশোধ করে দেই। তিনি বলেন, অনেক জাতের পেয়ারা রয়েছে। তবে সেসব জাতের মধ্যে গোল্ডেন- ৮ পেয়ারা পুরোপুরি ব্যতিক্রম। অনন্য স্বাদের এ পেয়ারা সারাবছরই গাছে ধরে। বাজারে অন্যান্য পেয়ারার চেয়ে এর চাহিদা ও দাম বেশি। তিনি আরো বলেন, গাছের কথা বিবেচনায় নিয়ে বছরে দু’বার ফল নেই। আর এ দু’বার বাগান পরিচর্যায় খরচ হয় তিন লাখ টাকা। তবে পেয়ারা বিক্রি করে আয় হয় কম পক্ষে ৮ লাখ টাকা। কাউসার বলেন, বর্তমান বাজারে অন্যান্য জাতের পেয়ারা ১২শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও গোল্ডেন-৮ জাতের পেয়ারা ১৬শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, থাকা খাওয়ার সমস্যা হওয়ায় দু’বছর আগে হাসিনানগরে বিয়ে করেছি। তবে সেখানে স্থায়ীভাবে থাকার ইচ্ছে নেই বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহেববুল ইসলাম বলেন, গেল্ডেন-৮ জাতের পেয়ারা হালকা শক্ত এবং খেতে সুমিষ্ট হয়। একারণে বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাউসার কঠোর পরিশ্রমী ছেলে। সে শ্রমিক না নিয়ে একাই বাগানের পরিচর্যা করে। এছাড়া সে অনুর্বর বেলে মাটিতে লাখ লাখ টাকা আয় করে এলাকার চাষীদের কাছে এক অন্যরকম নজির স্থাপন করেছে- যা অনুকরণীয়।
বদরগঞ্জ (রংপুর) : নিজ বাগানের পেয়ারা দেখছেন কাউসার আহমেদ -সংবাদ
শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে গোপিনাথপুর ইউনিয়নের হাসিনানগর এলাকা। করতোয়া নদী ওই এলাকাকে দু’ভাগ করে রেখেছে। এর একটি অংশ বদরগঞ্জ উপজেলায় অপরটি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায়। আধুনিক যাগাযোগ ব্যবস্থা হাসিনানগরের মানুষের কাছে আজো স্বপ্নের মত। একারণে তাদেরকে অনেকটা সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়।
এলাকার বাসিন্দারা সবাই দরিদ্র কৃষক। তাদের সবারই সামান্য জমি-জিরেত থাকলেও অনুর্বর বেলে মাটিতে মরিচ ছাড়া অন্য ফসল তেমন ফলেনা। তারা বংশ পরম্পরায় শুধুমাত্র মরিচ চাষাবাদই করে আসছেন। ফলে তাদের আর্থ-সামজিক অবস্থার এখনো কোন পরিবর্তন ঘটেনি। এ অবস্থায় তাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন যুবক কাউসার আহমেদ (২৫)। কয়েকবছর আগে তিনি এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ৬ বিঘা (স্থানীয় ১ বিঘা=৬০শতক) জমি লিজ নিয়ে বিভিন্ন জাতের পেযারার চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরেই তিনি পেয়ারা চাষে বাজিমাৎ করেন। তার ওই সাফল্যে অন্যরাও তার সাথে পেয়ারা চাষে আগ্রহী হন। একারণে তিনি কয়েকজনকে পার্টনার হিসেবে নিয়ে পেয়ারার চাষ আরো সম্প্রসারণ করেন। কিন্তু পরের বছর ঠিকভাবে পেয়ারা বাজারজাত করতে না পারায় তাকে লোকসান গুণতে হয়। এটা মেনে নিতে পারেননি তার পার্টনাররা। একারণে তিনি তাদের সাথে দ্বন্দ্বে না গিয়ে নিজ হাতে গড়া বাগান তাদের ছেড়ে দেন। এরপর তিনি ৯০ শতকের আরেকটি জমি লিজ নেন। সেখানে তিনি গোল্ডেন-৮ জাতের পেয়ারা চাষ করেন। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
সরেজমিন এলাকা পরিদর্শণকালে কথা হয় যুবক কাউসারের সাথে। তিনি জানান, তার জন্মস্থান রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায়। বাবা আব্দুল মান্নানের চার সন্তানের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তিনি ২০১৫ সালে এইচএসসি পাস করে আর পড়াশোনা করেননি। কেন পড়াশোনা করেননি এর উত্তরে তিনি বলেন, বড় ভাই-বোনরা উচ্চ শিক্ষিত হয়ে চাকরির আশায় যেখানেই গেছেন সেখানেই টাকা চেয়েছে।
তাদের এ অবস্থা দেখে আমি সিদ্ধান্ত নেই চাকরির পিছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হব। আবার এ সিদ্ধান্ত নেই কিছু করলে বাইরে করব- এলাকায় নয়। একারণে বিভিন্ন জেলা ঘুরে এখানে আসি। তারপর আমি জমি লিজ নিয়ে পেয়ারার চাষ শুরু করি। এলাকার লোকজন প্রথমে বিশ^াস করতে চাননি যে অনুর্বর মাটিতে আমি পেয়ারা চাষ করে জমির লিজ মানি পরিশোধ করতে পারব। সেকারণে তাদের বিশ^াস স্থাপনের জন্য আমি বাগান করার আগেই লিজ মানি পরিশোধ করে দেই। তিনি বলেন, অনেক জাতের পেয়ারা রয়েছে। তবে সেসব জাতের মধ্যে গোল্ডেন- ৮ পেয়ারা পুরোপুরি ব্যতিক্রম। অনন্য স্বাদের এ পেয়ারা সারাবছরই গাছে ধরে। বাজারে অন্যান্য পেয়ারার চেয়ে এর চাহিদা ও দাম বেশি। তিনি আরো বলেন, গাছের কথা বিবেচনায় নিয়ে বছরে দু’বার ফল নেই। আর এ দু’বার বাগান পরিচর্যায় খরচ হয় তিন লাখ টাকা। তবে পেয়ারা বিক্রি করে আয় হয় কম পক্ষে ৮ লাখ টাকা। কাউসার বলেন, বর্তমান বাজারে অন্যান্য জাতের পেয়ারা ১২শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও গোল্ডেন-৮ জাতের পেয়ারা ১৬শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, থাকা খাওয়ার সমস্যা হওয়ায় দু’বছর আগে হাসিনানগরে বিয়ে করেছি। তবে সেখানে স্থায়ীভাবে থাকার ইচ্ছে নেই বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহেববুল ইসলাম বলেন, গেল্ডেন-৮ জাতের পেয়ারা হালকা শক্ত এবং খেতে সুমিষ্ট হয়। একারণে বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাউসার কঠোর পরিশ্রমী ছেলে। সে শ্রমিক না নিয়ে একাই বাগানের পরিচর্যা করে। এছাড়া সে অনুর্বর বেলে মাটিতে লাখ লাখ টাকা আয় করে এলাকার চাষীদের কাছে এক অন্যরকম নজির স্থাপন করেছে- যা অনুকরণীয়।